দুদকের সাহসী কর্মকর্তা শরীফুদ্দিন ন্যায়বিচার কোথায়


খন্দকার সালেক , আপডেট করা হয়েছে : 16-07-2025

দুদকের সাহসী কর্মকর্তা শরীফুদ্দিন ন্যায়বিচার কোথায়

দুর্নীতি দমন কমিশনের সৎ, সাহসী কর্মকর্তা চট্টগ্রাম কার্যালয়ের উপ-পরিচালক হিসেবে কর্মরত থাকা অবস্থায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার অঞ্চলে মহাদুর্নীতির চাঞ্চল্যকর তথ্য উদঘাটন করে পূর্ববর্তী সরকারের আমলা, রাজনৈতিক নেতৃত্বের রোষানলে পড়েছিলেন। কক্সবাজার এলাকার মেগাপ্রকল্পসমূহে ভূমি অধিগ্রহণে কোটি কোটি টাকার অর্থ আত্মসাৎ, রোহিঙ্গাদের অবৈধভাবে বাংলাদেশের পাসপোর্ট প্রদান, কর্ণফুলীর গ্যাস বিতরণ, বিনিয়োগ বাণিজ্য, চট্টগ্রাম রেলওয়েতে দুর্নীতিসহ বেশকিছু চাঞ্চল্যকর দুর্নীতির খবর প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় আলোড়ন তুলেছিল। 

সরকারি শীর্ষ আমলা, রাজনৈতিক টাউট, অসৎ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট-সবাই মিলে দুর্নীতি দমন কমিশনের শীর্ষ ব্যক্তিদের প্রভাবিত করে শরীফুদ্দিনকে প্রথম পটুয়াখালীতে বদলি, পর্ববর্তী সময়ে অবৈধভাবে কোনো কারণ না দর্শিয়ে চাকরিচ্যুত করে। নিরপরাধ সৎ কর্মকর্তা প্রতিকার চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ-এমনকি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেও সুবিচার পাননি। এমনকি অসৎ সিন্ডিকেট আদালতে প্রভাব খাটিয়ে এতদসংক্রান্ত মামলা ঝুলিয়ে রাখে। সরকার পরিবর্তনের পর অনেকেই আশা করেছিল শরীফুদ্দিন ন্যায়বিচার পাবেন। একপর্যায়ে শরীফ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছেও আবেদন করেন। অবশেষে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ শরীফের চাকরিচ্যুতির আদেশ অবৈধ ঘোষণা করে তাকে প্রাপ্য জ্যেষ্ঠতা বজায় রেখে পূর্ণ মর্যাদায় চাকরিতে পুনর্বহালের আদেশ দিয়েছে। 

শরীফ যথাযথ পদ্ধতিতে অনুসন্ধান করে মহাদুর্নীতি, অর্থ আত্মসাৎ, ক্ষমতার অপব্যবহারের যেসব রিপোর্ট প্রদান করে মামলা করার সুপারিশ করেছিলেন, দুর্নীতিবাজরা প্রভাব খাটিয়ে সেগুলো স্থগিত করেছে অথবা ক্ষেত্রবিশেষে খারিজ করেছে। দুর্নীতিবাজরা এখনো বহাল তবিয়তে আছে। অথচ নির্দোষ শরীফকে চাকরি হারিয়ে দুঃসহ জীবনযাপন করতে হয়েছে। বর্তমান সরকারের উচিত এখন প্রতিটি ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা। এসব কর্মকাণ্ডে সরকারের শীর্ষস্থানীয় আমলা, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার শীর্ষ ব্যক্তি, সরকারি কর্মকর্তা, প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতারা জড়িত আছে বলে পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে প্রামাণ্য তথ্য আছে।

সবাই জানে কক্সবাজার এ বিদ্যুৎ-জ্বালানি, যোগাযোগ অবকাঠামো খাতের প্রকল্পগুলোর জন্য ভূমি অধিগ্রহণে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি এবং অর্থ আত্মসাৎ হয়েছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শরীফ অনুসন্ধান করে দুর্নীতিগুলো উদঘাটন করে রিপোর্ট প্রদান করে মামলার সুপারিশ করেছিলেন। তার অনুসন্ধানে রোহিঙ্গাদের অবৈধভাবে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব এবং পাসপোর্ট প্রদানের তথ্য উঠে এসেছিল। সর্বোপরি কার্ণফুলী গ্যাস বিতরণ কোম্পানির দুর্নীতিপরায়ণ ব্যবস্থাপনা পরিচালক আয়ুব আলী চোধুরীর অবৈধ গ্যাসসংযোগ প্রদান করে বিপুল অর্থ আত্মসাৎ, নিয়োগ দুর্নীতি, ক্ষমতার ব্যবহারের প্রমাণসহ তথ্য উপস্থাপন করেছিলেন শরীফ। তৎকালীন সরকার এগুলো উপেক্ষা করে আয়ুব আলীকে পদোন্নতি দিয়ে পেট্রোবাংলার পরিচালক নিয়োগ দিয়েছিল। বিগত সরকারের আমলে পেট্রোবাংলার এই মহাদুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা অর্থ ছড়িয়ে মন্ত্রী-সচিবদের প্রভাবিত করে গ্যাস সেক্টরকে দুর্নীতির অভয়ারণ্যে পরিণত করেছিল। এমনকি দুর্নীতি দমন কমিশনের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রভাবিত করে অল ক্লিন প্রত্যয়ন জোগাড় করতেও সক্ষম হয়েছিল। প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় আয়ুব আলী খান চৌধুরীর দুর্নীতির অনেক তথ্য এখনো আছে। শুনছি হাইকোর্টে আদেশ প্রদানকালেও আয়ুব আলী প্রসঙ্গ এসেছে। একজন আয়ুব আলী সিন্ডিকেটের কারণে গ্যাস সেক্টরের সিস্টেম লস এখনো ক্যানসারের মতো বিদ্যমান আছে। এহেন অদক্ষ, অপেশাদার পেট্রোবাংলা পরিচালকের কারণে দেশে গ্যাস সংকট। 

যাহোক, শরীফ চাকরি শুরুর পাশাপাশি তার উদ্যোগে শুরু করা সব দুর্নীতি যথাযথ অনুসন্ধান করে দোষী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা জরুরি। আশা করি, বর্তমান সরকার এবং নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা পরবর্তী সরকার বিষয়গুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নজরদারি করবে। 

শরীফের চাকরি ফিরে পাওয়া সৎ কর্মকর্তাদের সাহসের সঙ্গে কাজ করার উৎসাহ জোগাবে।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)