যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট গত ৯ জুলাই ফ্লোরিডার বিতর্কিত অভিবাসন আইন ‘সিনেট বিল ৪-সি’ কার্যকর করার জন্য দায়ের করা আবেদন খারিজ করে দিয়েছে। এর ফলে ইউএস ডিস্ট্রিক্ট কোর্টের জারি করা প্রাথমিক নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে এবং আপাতত ওই আইন কার্যকর করা যাবে না। এই রায় ফ্লোরিডা ইমিগ্র্যান্ট কোয়ালিশন বনাম উৎমেয়ের মামলার পরিপ্রক্ষিতে দেওয়া হয়েছে, যেখানে অভিবাসন সংস্থা ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা আইনটির বিরোধিতা করে মামলা দায়ের করেছিলেন। সুপ্রিম কোর্ট এই রায়ে কোনো বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেয়নি এবং কোনো বিচারপতি ভিন্নমত পোষণ করেননি। ২০২৪ সালে ফ্লোরিডার রিপাবলিকান-নিয়ন্ত্রিত আইনসভা আইনটি পাস করে এবং গভর্নর রন ডিস্যান্টিস তাতে স্বাক্ষর করেন। আইন অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে অননুমোদিতভাবে বসবাসরত ব্যক্তি যদি ফ্লোরিডা স্টেটে প্রবেশ করেন, তবে তা ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এছাড়া স্থানীয় আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে অবৈধ অভিবাসীদের গ্রেফতারের ক্ষমতা দেওয়া হয় এবং নির্দিষ্ট অভিবাসীদের জামিন ছাড়াই আটক রাখার বিধান রাখা হয়।
এই আইনটি স্পষ্টভাবেই ফেডারেল সরকারের অভিবাসন নীতির ওপর রাজ্যের হস্তক্ষেপ করে। এটি নাগরিকদের মধ্যে জাতিগত প্রোফাইলিং, বৈষম্য এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের আশঙ্কা সৃষ্টি করে। আদালত বলেন, শুধু ফেডারেল সরকারই অভিবাসন আইন প্রয়োগ করতে পারে এবং কেবল কংগ্রেসই এই আইন প্রণয়ন করতে পারে, কোনো পৃথক রাজ্য তা করতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান অনুযায়ী, অভিবাসনের মতো জাতীয় নীতির বিষয়গুলো কেন্দ্রীয় সরকারের এখতিয়ারে পড়ে। রাজ্য সরকারগুলো তাদের নিজ নিজ সীমার মধ্যে বিভিন্ন নীতিমালা বাস্তবায়ন করলেও তারা অভিবাসন আইন তৈরি বা তা কার্যকর করার অধিকার রাখে না। এটি একটি স্পষ্ট ফেডারেল বিষয়, যা শুধু কংগ্রেসের মাধ্যমে নির্ধারিত হয় এবং ফেডারেল কর্তৃপক্ষ তা বাস্তবায়ন করে। গত এপ্রিল মাসে ইউএস ডিস্ট্রিক্ট কোর্টের জজ ক্যাথলিন উইলিয়ামস আইনটির ওপর প্রাথমিক নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। পরবর্তী সময়ে ফ্লোরিডার অ্যাটর্নি জেনারেল জেমস উৎমেয়ার ১১তম সার্কিট কোর্টে এই নিষেধাজ্ঞা স্থগিতের আবেদন জানালেও আদালত তিন বিচারকের সর্বসম্মত রায়ে তা প্রত্যাখ্যান করে। শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টেও আবেদন খারিজ হওয়ায় এখন এই আইনের কার্যকারিতা বন্ধই থাকছে।
এই রায়ের পর মানবাধিকার সংস্থাগুলো একে ‘সংবিধানসম্মত ন্যায়বিচার’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। এসিএলইউ ইমিগ্র্যান্টস’ রাইটস প্রজেক্টের উপ-পরিচালক কোডি উফসি বলেন, এই রায় আবারও প্রমাণ করলো অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ শুধু ফেডারেল সরকারের একক দায়িত্ব। এসিএলইউ ফ্লোরিডার নির্বাহী পরিচালক বাকার্ডি জ্যাকসন মন্তব্য করেন, এই আইন শুধু বেআইনি নয়, বরং এটি হাজারো মানুষকে অন্যায়ভাবে আটক ও নিপীড়নের ঝুঁকিতে ফেলতো। আমেরিকান ফর ইমিগ্র্যান্ট জাস্টিসের পরিচালক পল শাভেজ বলেন, এসবি ৪-সি আইনের মাধ্যমে স্থানীয় পুলিশ ও অভিবাসীদের মধ্যে যে আস্থা ছিল, তা নষ্ট হতো এবং এতে পুরো সমাজের নিরাপত্তা ক্ষতিগ্রস্ত হতো। বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের ফলে এসবি ৪-সি কার্যকর হওয়া থেকে বিরত থাকবে এবং রাজ্যের কোনো সংস্থাই এটি প্রয়োগ করতে পারবে না। তবে মামলার মূল শুনানি এখনো চলমান এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলো আইনটি স্থায়ীভাবে বাতিলের জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।
সার্বিকভাবে সুপ্রিম কোর্টের এই রায় স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, অভিবাসন আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগের একমাত্র কর্তৃপক্ষ হলো ফেডারেল সরকার এবং কোনো রাজ্য এক্ষেত্রে স্বাধীনভাবে আইন করে বা প্রয়োগ করতে পারে না। ফ্লোরিডার বিতর্কিত আইনটি রাজ্যের সীমাবদ্ধতা লঙ্ঘন করে ফেডারেল অভিবাসন নীতির সঙ্গে সংঘর্ষ সৃষ্টি করায় তা আপাতত কার্যকর হওয়া থেকে বিরত রাখা হয়েছে। যদিও মামলার মূল শুনানি এখনো চলছে, মানবাধিকার সংস্থাগুলো এ রায়ের মাধ্যমে অভিবাসীদের অধিকার ও ন্যায়বিচারের স্বার্থে লড়াই অব্যাহত রাখছে। এ রায় একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা পাঠায় যে, অভিবাসন নীতির ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় আইন ও ন্যায়বিচারের যথার্থতা অটুট রাখতে হবে, যাতে জাতিগত বৈষম্য ও অন্যায়ের সুযোগ না থাকে।