সোশ্যাল সিকিউরিটি তহবিল সংকটে : কমে যাবে সুবিধা


দেশ রিপোর্ট , আপডেট করা হয়েছে : 16-07-2025

সোশ্যাল সিকিউরিটি তহবিল সংকটে : কমে যাবে সুবিধা

যুক্তরাষ্ট্রের সোশ্যাল সিকিউরিটি ব্যবস্থা এক গভীর আর্থিক সংকটের দিকে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। এই সংকট ভবিষ্যতের অবসরভোগী নাগরিকদের জন্য এক অনিশ্চিত পরিস্থিতির জন্ম দিচ্ছে। ২০২৫ সালের ফেডারেল বার্ষিক প্রতিবেদনে প্রকাশিত হালনাগাদ তথ্যে জানানো হয়েছে, সোশ্যাল সিকিউরিটির সম্মিলিত ট্রাস্ট ফান্ড ২০৩৪ সালের মধ্যে নিঃশেষ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, যা গত বছরের পূর্বাভাসের তুলনায় এক বছর আগে। অর্থাৎ যদি কোনো নীতিগত পরিবর্তন না আসে, তবে ২০৩৪ সালের পর থেকে এই গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা কর্মসূচি শুধু ৮১ শতাংশ নির্ধারিত সুবিধা দিতে পারবে এবং অবসরপ্রাপ্ত নাগরিকদের আয় ১৯ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে।

সোশ্যাল সিকিউরিটির দুটি প্রধান তহবিল ওল্ড এজ অ্যান্ড সারভাইভার্স ইন্স্যুরেন্স এবং ডিজেবিলিটি ইন্সু্যুরেন্স থেকে সম্মিলিতভাবে ২০৩৪ সাল পর্যন্ত ১০০ শতাংশ নির্ধারিত সুবিধা প্রদানে সক্ষম হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে ট্রাস্টি বোর্ড। ২০৩৪ সালের পর এই তহবিল নিঃশেষ হয়ে গেলে, কেবল চলমান পে-রোল ট্যাক্স বা অন্যান্য রাজস্ব আয়ের ভিত্তিতে ৮১ শতাংশ পর্যন্ত সুবিধা প্রদান সম্ভব হবে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘাটতির মূল কারণ দুটি। একদিকে জনসংখ্যার গড় বয়স বেড়ে চলেছে, অন্যদিকে নতুন কর্মজীবী জনগোষ্ঠীর হার কমছে। অর্থাৎ যারা বর্তমানে কর্মরত এবং সোশ্যাল সিকিউরিটিতে অবদান রাখছেন, তাদের তুলনায় সুবিধাভোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। এই ভারসাম্যহীনতা দীর্ঘমেয়াদে তহবিলের ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করছে। বর্তমানে ওল্ড এজ অ্যান্ড সারভাইভার্স ইন্স্যুরেন্স এবং ডিজেবিলিটি ইন্স্যুরেন্স ট্রাস্ট ফান্ডের মধ্যে শুধু ডিজেবিলিটি ইন্স্যুরেন্স ট্রাস্ট ফান্ড ২০৯৯ সাল পর্যন্ত সম্পূর্ণ অর্থায়িত থাকবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, যা তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল। তবে সমস্যা এখানেই শেষ নয়। মেডিকেয়ার হসপিটাল ইন্স্যুরেন্স ফান্ড, যা হাসপাতাল, নার্সিং হোমসহ বিভিন্ন চিকিৎসা ব্যয় বহন করে, সেটিও ২০৩৩ সালের মধ্যে ঘাটতিতে পড়বে বলে জানানো হয়েছে। এই পূর্বাভাসটি গত বছরের তুলনায় তিন বছর আগে এসেছে।

প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, অবসরভোগীদের জন্য নির্ধারিত সুবিধা প্রদানের ঘাটতির পরিমাণ বেড়ে ২০৯৯ সাল পর্যন্ত ২৫.১ ট্রিলিয়ন ডলারে দাঁড়াবে, যা গত বছর ছিল ২২.৬ ট্রিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ মাত্র এক বছরে ঘাটতি বেড়েছে ২.৫ ট্রিলিয়ন ডলার। ওল্ড এজ অ্যান্ড সারভাইভার্স ইন্স্যুরেন্স ট্রাস্ট ফান্ড, যা অবসরপ্রাপ্ত নাগরিক ও তাদের পরিবারের জন্য সুবিধা প্রদান করে, ২০৩৩ সাল পর্যন্ত নির্ধারিত সব সুবিধা দিতে পারবে। এরপর তহবিল নিঃশেষ হলে কেবলমাত্র ৭৭ শতাংশ সুবিধা প্রদান সম্ভব হবে। অন্যদিকে ডিজেবিলিটি ইন্স্যুরেন্স ট্রাস্ট ফান্ড অন্তত ২০৯৯ সাল পর্যন্ত পূর্ণ অর্থায়িত থাকবে।

সোশ্যাল সিকিউরিটির ব্যয় বর্তমানে এর আয়ের তুলনায় বেশি। উদাহরণস্বরূপ ২০২৪ সালে ওল্ড এজ অ্যান্ড সারভাইভার্স ইন্স্যুরেন্স ট্রাস্ট ফান্ডের ব্যয় ছিল ১ হাজার ৩২৭ বিলিয়ন ডলার, কিন্তু আয় হয়েছিল মাত্র ১ হাজার ২২৪ বিলিয়ন ডলার। ফলে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়ায় ১০৩ বিলিয়ন ডলার।

এই আশঙ্কাজনক পরিস্থিতি কেবল প্রবীণ নাগরিকদের নয়, তরুণ প্রজন্মের মধ্যেও দুশ্চিন্তা তৈরি করেছে। অনেক তরুণ এখন থেকে ভবিষ্যতের জন্য বেশি করে সঞ্চয় করছেন। কারণ তারা মনে করেন, অবসরের সময় শুধু সোশ্যাল সিকিউরিটির ওপর নির্ভর করা সম্ভব হবে না। সমস্যাটি আরো জটিল হয়ে উঠেছে, কারণ মেডিকেয়ার হসপিটাল ইন্স্যুরেন্স ট্রাস্ট ফান্ডও ২০৩৩ সালের মধ্যে শুধুমাত্র ৮৯ শতাংশ নির্ধারিত সুবিধা দিতে পারবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

সোশ্যাল সিকিউরিটি কমিশনার ফ্র‍্যাংক বিজিনিয়ানো এক বিবৃতিতে বলেন, ট্রাস্ট ফান্ডের আর্থিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি ট্রাম্প প্রশাসনের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারগুলোর একটি। এএআরপি-এর প্রধান নির্বাহী ড. মাইশিয়া মিন্টার-জর্ডান বলেন, নতুন পূর্বাভাস অনুযায়ী, সোশ্যাল সিকিউরিটি ট্রাস্ট ফান্ড এক বছর আগে নিঃশেষ হয়ে যেতে পারে, যার মানে সুবিধাভোগীদের আয় ১৯ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। কংগ্রেসকে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে এই গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা রক্ষায়, যা লাখ লাখ আমেরিকান নাগরিকের কর্মজীবনের উপার্জনের অংশ।

তিনি আরো বলেন, সোশ্যাল সিকিউরিটি তহবিলের আগাম নিঃশেষ হওয়ার এই পূর্বাভাস শুধু একটি হিসাব নয়, বরং এটি একটি জাতীয় সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংকেত। সময়মতো পদক্ষেপ না নিলে, লাখ লাখ নাগরিক বিশেষ করে অবসরের পর জীবনে চরম আর্থিক অনিশ্চয়তার মুখে পড়তে পারেন।

সম্ভাব্য সমাধান হিসেবে গবেষকরা কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব দিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে-প্রথমত, পে-রোল ট্যাক্স বা বেতনের ওপর করহার বৃদ্ধি করা, যাতে কর্মজীবীদের কাছ থেকে আরো বেশি রাজস্ব সংগ্রহ করা যায়। দ্বিতীয়ত, উচ্চ আয়ভুক্ত নাগরিকদের জন্য সুবিধা সীমিত করা যেতে পারে, যাতে তা অপেক্ষাকৃত নিম্ন আয়ের জনগণের জন্য আরো কার্যকর হয়। তৃতীয়ত, অবসরের ন্যূনতম বয়সসীমা ধীরে ধীরে বাড়ানো যেতে পারে, যাতে সরকার কিছুটা ব্যয় সাশ্রয় করতে পারে। চতুর্থত, নতুন কর উৎস যেমন সম্পদ কর, আর্থিক লেনদেন কর বা অন্যান্য অর্থনৈতিক কার্যক্রম থেকে রাজস্ব আদায়ের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

গবেষকদের মতে, এই নীতিগুলো সময়োপযোগীভাবে বাস্তবায়ন করলে সামাজিক নিরাপত্তা তহবিল দীর্ঘমেয়াদে আরো স্থিতিশীল ও টেকসই হয়ে উঠবে।

সবশেষে কংগ্রেসকে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে এই গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি রক্ষায়। যুক্তরাষ্ট্রের সোশ্যাল সিকিউরিটি ব্যবস্থার ক্রমবর্ধমান আর্থিক দুর্বলতা, জনগণের ওপর সম্ভাব্য প্রভাব এবং ভবিষ্যতের নীতিগত সিদ্ধান্তের ওপর জাতির অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। এই প্রেক্ষাপটে একটি প্রশ্ন সামনে এসেছে-আসন্ন এই সংকট মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র কতটা প্রস্তুত এবং কত দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারবে?


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)