কোটালীপাড়ায় বিএনপির অবস্থান প্রশংসিত


সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ , আপডেট করা হয়েছে : 23-07-2025

কোটালীপাড়ায় বিএনপির অবস্থান প্রশংসিত

কোটালীপাড়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গণগ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে বিএনপির অবস্থান সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে। কারো কারো মতে, এটা বিএনপি অহিংস রাজনীতির বার্তা দিচ্ছে। বিএনপির এমন অবস্থানকে দলটির ব্যাপারে সাধারণ মানুষের আস্থা বাড়বে বলে মনে করেন অনেকে।

গত বুধবার (১৬ জুলাই) দিনভর দফায় দফায় গোপালগঞ্জে হামলা, ভাংচুর, সংঘর্ঘের ঘটনা ঘটে। গোপালগঞ্জ শহরের পৌর পার্কে সমাবেশ শেষে এনসিপির নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালায় আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা। এতে বেশ কয়েকজন গুলিবিদ্ধসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হন। গোপালগঞ্জে সহিংসতার ঘটনায় এ নিয়ে পাঁচজন মারা গেছেন। 

আর এরপরপরই গোপালগঞ্জে এনসিপির ওই পদযাত্রা ও সমাবেশ ঘিরে সহিংসতার ঘটনায় প্রথম চার মৃত্যুর ঘটনার চার দিনের মাথায় চারটি হত্যা মামলা করা হয়েছে । প্রতি মামলাতেই আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের অজ্ঞাতপরিচয় ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ নেতাকর্মীসহ দুষ্কৃতিকারীকে আসামি করা হয়েছে। ১৯ জুলাই শনিবার রাতে এসব মামলার তথ্য ২০ জুলাই রোববার গণমাধ্যমে নিশ্চিত করেন গোপালগঞ্জ সদর থানার ওসি মির মোহাম্মদ সাজেদুর রহমান। এ ঘটনায় আরও একটি হত্যা মামলা হবে বলে জানা গেছে।

পরিবারের সদস্যরা মামলা করতে চান না

তবে চারটি হত্যা মামলা অজ্ঞাতপরিচয়সহ ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ নেতাকর্মীসহ দুষ্কৃতিকারীকে আসামি করা হলেও খোদ গোপালগঞ্জে সংঘর্ষে নিহতদের পরিবারের সদস্যরা মামলা করতে চান না। এব্যাপারে গণমাধ্যমে নিহতদের একজনের পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয় যে, ‘২০১৩ সালে বাবা মারা যাওয়ার পর আমরা দুই ভাই ব্যবসা দেখাশোনা করি। ভাইটাও চলে গেল, আমি একা হয়ে গেলাম। কার কাছে বিচার চাইব? কার বিরুদ্ধে মামলা করব? আমি তো জানি না কোন পুলিশ বা আর্মি গুলি করেছে। আমি যদি জানতাম কে আমার ভাইকে মেরেছে, তাহলে তার বিরুদ্ধে মামলা করতাম। ভাইকে হারিয়ে আমি এখন একা হয়ে গেলাম। তাই এখন আর শোকের মাঝে মামলার ঝামেলায় যেতে চাই না।’ গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জুলাই পদযাত্রা ঘিরে হামলা-সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত হন দীপ্ত সাহা। সে-ই দীপ্ত সাহার ভাই সঞ্জয় সাহা (শুভ) গণমাধ্যমে জানান ‘ওই ঘটনায় নিহত অন্য পরিবারের সদস্যরাও মামলা করতে চাচ্ছেন না।’ আরও জানা গেলো গোপালগঞ্জে সংঘর্ষে নিহতদের পরিবারের সদস্যরা মামলা করতে চান না।

বাস্তব অবস্থা

ঘটনার পর গোপালগঞ্জে কি হয়েছে বা হচ্ছে তা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে। সর্বশেষ রোববারের খবরে বলা হচ্ছে সর্বত্র চলছে যৌথবাহিনীর অভিযান। ভিডিও ফুটেজ দেখে বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। শহর ও গ্রামের বিভিন্ন স্থানে চেক পোস্ট বসানো হয়েছে। গ্রেফতার আতঙ্ক বিরাজ করছে স্থানীয়দের মধ্যে। পুরুষরা গ্রেফতারের ভয়ে বাড়ি ছেড়ে অন্য জেলায় আশ্রয় নিয়েছেন।

পাশে দাঁড়াল বিএনপি

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলায় নিরীহ সাধারণ মানুষদের হয়রানি ও গ্রেফতারের অভিযোগ এনে প্রথমে সংবাদ সম্মেলন করেছে উপজেলা বিএনপি। রোববার উপজেলার ঘাঘর বাজারের দলীয় কার্যালয়ে তারা এ সংবাদ সম্মেলন করেন। এতে উপজেলা বিএনপির সভাপতি এসএম মহিউদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক আবুল বশার হাওলাদার ও পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ওলিউর রহমান হাওলাদার সাংবাদিকদের কাছে তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন। এতে বলা হয় গত বুধবার (১৬ জুলাই) উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা কোটালীপাড়া-পয়সারহাট সড়ক বন্ধ করে উপজেলার ওয়াবদার হাটে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশ করেন। তারা সড়কের বিভিন্ন স্থানে গাছ কেটে সাধারণ মানুষের চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে। এ ঘটনায় কোটালীপাড়া থানা পুলিশ ১৫৫ জনকে জ্ঞাত ও ১ হাজার ৫শ জনকে অজ্ঞাত দেখিয়ে একটি মামলা দায়ের করে। এ মামলায় উপজেলা সাধারণ মানুষদের গ্রেফতারের নামে হয়রানি করা হচ্ছে। আমরা আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। তারা বাস্তব অবস্থা তুলে ধরে জানান, এ মামলায় অধিকাংশ আসামিই সাধারণ মানুষ। বেশির ভাগই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নেই। তা হলে কিভাবে কাদের মদদে এই নিরীহ মানুষদের আসামি করা হলো? নেতারা কোটালীপাড়া থানা পুলিশকে উদ্দেশ করে বলেন, বিক্ষোভের সময় সেখানে আপনারা উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু তখন একজন ব্যক্তিকেও আপনারা আটক করতে পারেননি। আপনাদের কাছে তো ফুটেজ আছে। আপনারা এই ফুটেজ দেখে আসামি করে গ্রেফতার করতে পারতেন। কিন্তু আপনার তা না করে নিরীহ মানুষদের গ্রেফতার করছেন। এর পাশাপাশি বিএনপি নেতারা সর্তক করে দিয়ে সাফ জানিয়ে দেন তাদের দল মানুষের জন্য রাজনীতি করে। আপনারা (সরকারকে উদ্দেশ্য করে) যদি সেই মানুষদের হয়রানি করেন তা হলে সাধারণ মানুষদের সাথে নিয়ে এর প্রতিরোধ করব। 

সংবাদ সম্মেলন করে জেলা বিএনপি

গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় মামলায় নিরহ নাগরিকরা যাতে হয়রানির শিকার না হয় সেজন্য সংবাদ সম্মেলন করে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে জেলা বিএনপি। ২১ জুলাই সোমবার বেলা ১১টায় গোপালগঞ্জ পৌর মার্কেটে বিএনপির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে তাঁরা এ আহ্বান জানান। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শরীফ রফিকুজ্জামান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সদস্যসচিব কাজী আবুল খায়েরসহ বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা।

সরকারের ভাষ্য

এদিকে গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জুলাই পদযাত্রা ঘিরে হামলা ও সংঘর্ষের পর হাজার হাজার মানুষের বিরুদ্ধে মামলা করা নিয়ে অবশেষে মুখে খুলে সরকার। স্থানীয় বিএনপির অভিযোগ প্রসঙ্গে কোটালীপাড়া থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমরা কোনো গণগ্রেপ্তার করছি না। ঘটনার সঙ্গে জড়িত যাঁরা আছেন, তাঁদেরকেই আমরা গ্রেপ্তার করছি। ওই ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ৩০ জনকে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এখানে গণগ্রেপ্তার কীভাবে হলো?’

যে কারণে বিএনপি প্রশংসা প্রায়

দীর্ঘ সতের বছর বিএনপি আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে। দলটির হাজার হাজার নেতাকর্মী হারিযেছে এই বছরগুলিতে। বহু বিএনপি নেতাকর্মী দলের কর্মর্সচি পালন করতে গিয়ে অকাতরে প্রাণ হারিয়েছেন, কেউ বছরে পর বছর জেলে কাটিয়েছেন। এছাড়া দীর্ঘ সতের বছরে লাখ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা মোকাদ্দমা হয়েছে। এতে অনেতে সর্বশান্ত হয়ে গেছে। কিন্তু ২০২৪ সালে ক্ষমতা পটপরিবর্তনে বিএনপি প্রতিশোধ নেওয়ার পরিবর্তে অহিংস নীতি অবলম্বনের কঠোর বার্তা দেয় দলের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি প্রশাসনকে। অথচ অতীতে বারবার আশঙ্কা প্রকাশ করে বলা হতো যে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থেকে সরে গেলে দলটির হাজার হাজার নেতাকর্মী মারা যাবে, শিকার হবে প্রতিহিংসার। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেলো বিএনপি প্রতিহিংসার রাজনীতি বাদ দিয়ে সুস্থ রাজনীতির পথ বেছে নেয়। এরপরেও বিএনপি নিয়ে প্রতিনিয়তই গণমাধ্যমে অনেক নেতিবাচক খবর বের হয়। এসব খবরে দেখা যায় বিএনপি এক শ্রেণীর নেতাকর্মীরা বিভিন্ন ধরনের নেতিবাচক কর্মকান্ড করেই যাচ্ছে। এসব নেতিবাচক কর্মকান্ডের ব্যাপারে বিএনপি’র হাই কমান্ড অবশ্য দফায় দফায় কঠোর হচ্ছেন। বিএনপি’র পক্ষ থেকেও বলা হচ্ছে যে গত বছর পাঁচই আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে নানা অপরাধমূলক ঘটনায় নাম আসার পর দলটির বিভিন্ন স্তরের বহু নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে বিএনপি। কিন্তু তারপরে দুর্নাম পিছু ছাড়ছে না বিএনপিকে নিয়ে। আর এমন নেতিবাচক খবরের ভীড়ে গোপালগঞ্জে সাধারণ মানুষের পক্ষে দাঁড়ানো বিএনপি’কে অনেকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। ‘যদি সেই মানুষদের হয়রানি করেন তা হলে সাধারণ মানুষদের সাথে নিয়ে এর প্রতিরোধ করব’-গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলা বিএনপি নেতাদের এমন অবস্থান সবমহলেই প্রশংসিত হয়েছে। কেননা কারো কারো মতে, এধরনের পরিস্থিতিতে আইন শৃংখলা বাহিনীর পাশাপাশি দলেরই অনেক সুযোগ সন্ধানীরা গোপালগঞ্জের ঘটনাকে কেন্দ্র কয়ে মামলা বাণিজ্যে লিপ্ত হতে পারে। এমনকি বিএনপি’র খেতরে ঘাপটি মেরে থাকা কিছু নেতাকর্মীও মামলা বাণিজ্যে লিপ্ত হয়ে সাধারণ মানুষের জীবনকে বিষিয়ে তুলতে পারে। 

যদিও কোটালীপাড়া থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ বলেছেন যে, গোপালগঞ্জের ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ৩০ জনকে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এখানে গণগ্রেপ্তার কীভাবে হলো?’ প্রশ্ন হচ্ছে গ্রেপ্তারের সংখ্যা কম হলেও মামলার জালে ফেলে তো বহু সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিসহ করে হবে। তাই এমন পরিস্থিতিতে বিএনপি সর্তক অবস্থান মামলা বাণিজ্যবাজদের পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়াবে এটা নিশ্চিত। রাজনৈতিক অঙ্গনে একারণে অনেকে বিএনপি’র এমন অহিংস সর্তক জনদরদী অবস্থানকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)