নিউইয়র্ক সিটির স্যাংচুয়ারি নীতি নিয়ে বিচার বিভাগের মামলা


দেশ রিপোর্ট , আপডেট করা হয়েছে : 30-07-2025

নিউইয়র্ক সিটির স্যাংচুয়ারি নীতি নিয়ে বিচার বিভাগের মামলা

নিউইয়র্ক সিটির স্যাংচুয়ারি সিটি নীতিমালার বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস (ডিওজে) গত ২৪ জুলাই ফেডারেল আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছে। মামলায় বলা হয়েছে, নিউইয়র্ক সিটির বর্তমান আইন ও নীতিমালা যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন আইন বাস্তবায়নে ইচ্ছাকৃতভাবে বাধা সৃষ্টি করছে এবং ফেডারেল ও স্থানীয় আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে প্রয়োজনীয় সমন্বয় নষ্ট করছে। মামলায় নিউইয়র্ক সিটির মেয়র এরিক অ্যাডামস, সিটি কাউন্সিল স্পিকার অ্যাড্রিয়েন অ্যাডামস এবং এনওয়াইপিডি কমিশনার জেসিকা টিশসহ আরো কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। বিচার বিভাগের দাবি, স্যাংচুয়ারি নীতির কারণে বহু অপরাধী জেল থেকে মুক্তি পেয়ে পুনরায় সাধারণ মানুষের ওপর সহিংসতা চালানোর সুযোগ পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বোনডি বলেন, নিউইয়র্ক সিটি যদি নিজ শহরের মানুষের নিরাপত্তার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে ফেডারেল সরকার ব্যবস্থা নেবে।

মামলার পটভূমিতে রয়েছে একটি বিতর্কিত নির্বাহী আদেশ, যার মাধ্যমে রিকার্স আইল্যান্ডে অবস্থিত কারাগারে ইউএস ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস) এজেন্টদের কাজ করার অনুমতি দিয়েছিলেন মেয়র অ্যাডামস। কিন্তু সিটি কাউন্সিল আদালতে গিয়ে সে আদেশ স্থগিত করে দেয়। ডিওজের অভিযোগ, এর ফলে অবৈধ অভিবাসী যাদের অপরাধের ইতিহাস রয়েছে, তাদের শনাক্ত করা ও আটক করা কঠিন হয়ে পড়ছে। অন্যদিকে নিউইয়র্ক ইমিগ্রেশন কোয়ালিশন এ মামলাকে ভিত্তিহীন ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে আখ্যা দিয়েছে। সংস্থার প্রেসিডেন্ট মুরাদ আওয়াদেহ বলেন, স্যাংচুয়ারি নীতির মাধ্যমে আমরা অভিবাসী সম্প্রদায়কে আশ্বস্ত করতে চাই যে তারা আইনের সহায়তা পাবে এবং অপরাধের শিকার হলে পুলিশি সহযোগিতা নিতে ভয় পাবে না।

মেয়র এরিক অ্যাডামসের দফতর এক বিবৃতিতে জানায়, মেয়র অ্যাডামস শহরের সব মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে তিনি ইতোমধ্যেই বলেছেন, সহিংস অপরাধীদের ক্ষেত্রে স্যাংচুয়ারি আইনের কিছু দিক পুনর্বিবেচনার প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে সিটি কাউন্সিল এখনো সেই প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি। মামলাটিকে স্বাগত জানিয়েছেন স্ট্যাটেন আইল্যান্ডের কংগ্রেস সদস্য নিকোল মালিওটাকিস এবং সিটি কাউন্সিলের ‘কমন সেন্স ককাস’। তারা বলেন, শহরবাসীর নিরাপত্তার জন্য ফেডারেল আইন কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের কোনো বিকল্প নেই।

গত জানুয়ারি থেকে ট্রাম্প প্রশাসনের সময় থেকেই স্যাংচুয়ারি সিটি নীতির বিরুদ্ধে কেন্দ্র থেকে চাপ দেওয়া হচ্ছিল। অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর পাম বোনডি এক আদেশে ফেডারেল আইনকে বাধাগ্রস্ত করে এমন রাজ্য ও শহরগুলোর বিরুদ্ধে তহবিল বন্ধ ও আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন।

এ মামলার মধ্য দিয়ে নিউইয়র্ক স্টেট এবং ফেডারেল সরকারের মধ্যে অভিবাসন নীতিসংক্রান্ত দীর্ঘদিনের মতপার্থক্য আরো তীব্র আকার ধারণ করতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

শিকাগোর স্যাংচুয়ারি সিটি নীতিমালার বিরুদ্ধে ট্রাম্প প্রশাসনের মামলা খারিজ

ইউএস ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট ফর দ্য ইস্টার্ন ডিস্ট্রিক্ট অব ইলিনয় ২৫ জুলাই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে শিকাগো সিটির স্যাংচুয়ারি সিটি নীতিমালার বিরুদ্ধে দায়ের করা একটি মামলাকে খারিজ করে দিয়েছেন। মামলায় ইলিনয় স্টেট, শিকাগো শহর এবং কুক কাউন্টির অভিবাসন সহায়তা-সংক্রান্ত নীতিমালার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিল। ৬৪ পৃষ্ঠার রায়ে বিচারক লিন্ডসে সি জেনকিন্স বলেন, এসব স্যাংচুয়ারি নীতিমালা যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ১০ম সংশোধনী দ্বারা সুরক্ষিত, যেগুলো সরাসরি ফেডারেল সরকারের হাতে অর্পিত নয় রাজ্যগুলোকে নির্দিষ্ট ক্ষমতা প্রয়োগের অধিকার দেয়। বিচারক মন্তব্য করেন, এ নীতিমালাগুলো ইলিনয় ও স্থানীয় সরকারগুলোর সিদ্ধান্ত, যা বেসামরিক অভিবাসন আইন বাস্তবায়নে রাজ্যের অংশগ্রহণ না করার অধিকারকে সুরক্ষা দেয়। তিনি আরো বলেন, ফেডারেল সরকারের হস্তক্ষেপ ১০ম সংশোধনী লঙ্ঘনের শামিল এবং এটি রাজ্যগুলোর ওপর সরাসরি নিয়ন্ত্রণ আরোপের প্রচেষ্টা।

এ মামলাটি দায়ের করা হয়েছিল ফেব্রুয়ারিতে, ট্রাম্প-নিযুক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বোনডির দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই। এতে দাবি করা হয়, ইলিনয়, শিকাগো ও কুক কাউন্টির কিছু নীতিমালা ফেডারেল অভিবাসন কর্তৃপক্ষকে সহায়তা প্রদানে স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে নিষিদ্ধ বা সীমিত করে এবং এর ফলে অভিবাসন আইন প্রয়োগে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। মামলার রায়ের পর ইলিনয়ের গভর্নর জে বি প্রিটজকার বলেন, এই রায় নিশ্চিত করেছে যে আমাদের রাজ্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ট্রাম্প প্রশাসনের অবৈধ ও ক্ষমতার অপব্যবহারমূলক নীতি বাস্তবায়নে বাধ্য করা যাবে না। তিনি আরও বলেন, ফেডারেল সরকার যদি সঠিক ওয়ারেন্ট উপস্থাপন করে, ইলিনয় তখন সহায়তা করবে। কিন্তু অবৈধভাবে অভিবাসীদের টার্গেট করার নীতিতে আমরা অংশ নেবো না।

হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে জানানো হয়, মামলাটি খারিজ হলেও প্রশাসন আত্মবিশ্বাসী এবং পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য প্রস্তুত। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মুখপাত্র আবিগেল জ্যাকসন বলেন, আমেরিকান নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য সব স্তরের সরকার দায়বদ্ধ। স্যাংচুয়ারি শহরগুলো ফেডারেল অভিবাসন কার্যক্রমে বাধা দিয়ে জননিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলছে। উল্লেখযোগ্য যে, ট্রাম্প প্রশাসনের সময় অভিবাসন-বিষয়ক কঠোর অবস্থানের অংশ হিসেবে নিউইয়র্ক সিটি, ক্যালিফোর্নিয়া এবং লস অ্যাঞ্জেলেসসহ একাধিক শহরের বিরুদ্ধে অনুরূপ মামলা দায়ের করা হয়েছিল। এমনকি ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশে স্যাংচুয়ারি শহরগুলোকে ফেডারেল তহবিল থেকে বঞ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছিলেন, যা আদালতে সংবিধানবিরোধী ঘোষণা করে স্থগিত করা হয়।

এই রায় ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসন নীতি ও স্যাংচুয়ারি সিটির বিরুদ্ধে নেওয়া পদক্ষেপগুলোর জন্য একটি বড় ধাক্কা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে এবং এটি রাজ্য ও ফেডারেল সরকারের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য-সংক্রান্ত আইনি বিতর্কে একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)