৬৩ শতাংশ মানুষ ৪০০ আসন নিয়ে জাতীয় সংসদ চান : সুজন


বিশেষ প্রতিনিধি , আপডেট করা হয়েছে : 13-08-2025

৬৩ শতাংশ মানুষ ৪০০ আসন নিয়ে জাতীয় সংসদ চান : সুজন

‘বিগত সরকারের আমলে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে দলীয়করণ করা হয়েছে, সংবিধানের সংশোধনী ও বিভিন্ন নির্বতনমূলক আইন প্রণয়নের মাধ্যমে এককেন্দ্রিক স্বৈরাচারী ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। সুজন পরিচালিত জনমত যাচাইয়ের মাধ্যমে প্রমাণিত হয় মানুষ সংস্কার চায়, যাতে ভবিষ্যতে তাদের অধিকার ভূলণ্ঠিত না হয় এবং স্বৈরাচারী ব্যবস্থা আর ফিরে না আসে’ বলে মন্তব্য করেছেন সুজন সম্পাদক ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার। তিনি গত ১২ আগস্ট নাগরিক সংগঠন সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক-এর উদ্যোগে ‘প্রস্তাবিত জাতীয় সনদ চূড়ান্তকরণে জনমত যাচাইয়ের তথ্য উপস্থাপন’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে উক্ত মন্তব্য করেন। সংবাদ সম্মেলনটি ১২ আগস্ট সকালে ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটির শফিকুল কবির মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়।

সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ও সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সুজন-এর কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস। জনমত যাচাইয়ের তথ্য উপস্থাপন করেন সুজন-এর জাতীয় কমিটির সদস্য একরাম হোসেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সুজন-এর কেন্দ্রীয় সহযোগী সমন্বয়কারী জিল্লুর রহমান।

ড. বদিউল আলম মজুমদার তার বক্তব্যে বলেন, ‘সুজন বহুদিন থেকেই রাষ্ট্রকে মেরামত করা ও রাষ্ট্রকে জনগণের কাছে দায়বদ্ধ করার দাবি জানিয়ে এসেছে। এ লক্ষ্যে ২০১৩ সালে আমরা প্রথম জাতীয় সনদের একটি খসড়া তৈরি করি। পরবর্তীতে জাতীয় সনদে বিভিন্ন পরিবর্তন এসেছে। ২০২৪ সালে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনের আকাক্সক্ষায় জাতীয় সনদের একটি খসড়া আমরা রাজনৈতিক দলকে দিয়েছি, যাতে যাঁরাই ক্ষমতায় আসবেন তাঁরা যেন এই সনদ বাস্তবায়ন করেন।’ 

তিনি বলেন,‘বিগত কয়েক মাসে সারাদেশে ১৫টি সংলাপ আয়োজন এবং জনমত যাচাইয়ের মাধ্যমে আমরা সুজন-এর পক্ষ থেকে একটি ‘জাতীয় সনদ’ প্রণয়ন করেছি। ইতোমধ্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনকে জাতীয় সনদের কপি দেওয়া হয়েছে, যাতে ‘জুুলাই জাতীয় সনদ’ প্রণয়নে এটি কমিশনকে সহায়তা করতে পারে।’

অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, ‘জুলাই জাতীয় সনদ প্রণয়নের লক্ষ্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন অপরিসীম ধৈর্য্য নিয়ে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা মনে করি, কেবল একটি সুষ্ঠু নির্বাচনই আমাদেরকে সুশাসন ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার নিশ্চয়তা দেয় না। এজন্য কতগুলো মৌলিক সংস্কার সাধন ও সরকারের জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করা দরকার।’ সরকারের জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ও আইনের প্রয়োজনীয় সংস্কারের পাশাপাশি নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমকে সোচ্চার ভূমিকা পালন করতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

জনমত যাচাইয়ের তথ্য উপস্থাপনকালে একরাম হোসেন বলেন, ‘সুজন কর্তৃক প্রস্তাবিত জাতীয় সনদ চূড়ান্তকরণে ৪০টি প্রশ্ন নিয়ে বিগত মে-জুলাই মাসে সারাদেশের ৬৪টি জেলায় একটি জনমত জরিপ পরিচালনা করা হয়। জরিপে ১ হাজার ৩৭৩ জন নারী-পুরুষ (নারী: ৩৩৫; পুরুষ: ১,০৩৩; তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ: ০৫) অংশগ্রহণ করেন।’

জরিপের ফলাফল তুলে ধরেন তিনি বলেন, ‘৬৯ শতাংশ মানুষ দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা গঠন করা; ৬৩ শতাংশ মানুষ ৪০০ আসন নিয়ে জাতীয় সংসদ গঠন এবং ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে ১০০ আসন নারীদের জন্য সংরক্ষণ করা; ৮৬ শতাংশ মানুষ জাতীয় সংসদের একজন ডেপুটি স্পীকার থাকা এবং তাঁকে বিরোধী দল থেকে নির্বাচিত করা; ৭১ শতাংশ মানুষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে ১০০টি আসন নিয়ে উচ্চকক্ষ গঠন করা; ৮৭শতাংশ মানুষ একজন ব্যক্তির একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী, সংসদ নেতা এবং দলীয় প্রধান না হওয়ার বিধান করা; ৮৯ শতাংশ মানুষ জাতীয় সংসদের একজন সদস্যের সর্বোচ্চ দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে না পারার বিধান করার পক্ষে মত দিয়েছেন।’

একরাম হোসেন বলেন, ‘উচ্চকক্ষে বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার চান ৮২ শতাংশ মানুষ। নির্বাচনকালে নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে পারে- নির্বাহী বিভাগের এমন কার্যক্রম গ্রহণে নির্বাচন কমিশনের অনুমতি নেওয়ার বিধান করার পক্ষে মত দিয়েছেন ৮৭ শতাংশ মানুষ। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নির্বাচনের সুষ্ঠুতা, বিশ্বাসযোগ্যতা ও গ্রহণযোগ্যতা সম্পর্কে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক প্রত্যয়ন (সার্টিফাই) করে তা গণবিজ্ঞপ্তি হিসেবে প্রকাশ করার পক্ষে ৮৬ শতাংশ মানুষ মত দিয়েছেন। নির্বাচনী ব্যয় নিরীক্ষণ ও অসত্য তথ্য প্রদানকারীদের প্রার্থিতা বা নির্বাচনী ফলাফল বাতিল করার পক্ষে মত দিয়েছেন ৮৮ শতাংশ মানুষ। ৯২ শতাংশ মানুষ মনে করেন, চিহ্নিত সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, দুর্নীতিগ্রস্ত ও সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের দলের সদস্য হওয়ার অযোগ্য ঘোষণা করা উচিত।’


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)