কৃষিখাতে বহুজাতিক কোম্পানির অনুপ্রবেশ বিপর্যয়ে ফেলবে


বিশেষ প্রতিনিধি , আপডেট করা হয়েছে : 20-08-2025

কৃষিখাতে বহুজাতিক কোম্পানির অনুপ্রবেশ বিপর্যয়ে ফেলবে

বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক কমরেড ইকবাল কবির জাহিদ এক বিবৃতিতে ড. ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের বাংলাদেশের কৃষিতে জিএমও (জেনেটিক্যালি মোডিফায়েড অর্গানিজম)-এর অনুপ্রবেশ ঘটানোর তৎপরতার তীব্র প্রতিবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘জিএমও’ শুধু কৃষি উৎপাদনের প্রশ্ন নয়, এর সাথে স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত ঝুঁকির প্রশ্ন জড়িত। জিএমও-র মাধ্যমে মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানিগুলো বহুদিন ধরে বাংলাদেশের কৃষিখাতে অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালাচ্ছে। ড. ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার মার্কিনের সেই পুরানো ‘বাণিজ্য প্রকল্প’ গোপনে বাস্তবায়নের তৎপরতা শুরু করেছে। উল্লেখ্য, উপদেষ্টা ফরিদা আখতারই শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের কৃষি খাতকে দখলে নিতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র। তাঁর মতে, যুক্তরাষ্ট্র কৃষিতে জিএমও আনবেই এবং দেশটির বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে এই খাতে প্রবেশ করাবে।

গত ১৩ আগস্ট ‘২৫ বুধবার ঢাকায় প্রেস ইনস্টিটিউটে নাগরিক উদ্যোগ ও পিপলস হেলথ মুভমেন্ট আয়োজিত ‘বাংলাদেশের ভবিষ্যত নির্ধারণী উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উত্তরণ ও দ্বিপাক্ষিক মুক্ত বাণিজ্যচুক্তি বিষয়ে সতর্ক পুনর্বিবেচনা প্রয়োজন’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সভায় তিনি আরও বলেন, ‘একটি ওয়ার্নিং দিয়ে রাখি’- এরই মধ্যে আমেরিকানদের সঙ্গে যত কথাবার্তা হয়েছে, তারমধ্যে তারা কৃষিতে জিএমও এনেই ছাড়বে। আমেরিকানদের সঙ্গে যতই কথাবার্তা হচ্ছে, দেখা যাচ্ছে- তাদের জিএমও আনার জন্য কৃষিটাকে ওরা দখলে নিয়ে নেবে এবং কোম্পানিগুলো চলে আসবে। ‘ব্রাজিল ও জাপান তো অনুরোধ করে, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র যদি বলে তা মানতেই হবে। এরকম একটা অবস্থায় আছি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নন-ডিসক্লোজার এগ্রিমেন্টের বিষয়ে আমার মত হলো- একজন নাগরিক হিসেবে এটি আমরা গ্রহণ করতে পারি না। আমি নিজেই অসহায় বোধ করছি এটার জন্য।’

কমরেড ইকবাল কবির জাহিদ বলেন, সরকারের একজন হয়ে জনসম্মুখে উপদেষ্টা ফরিদা আখতার যা বলেছেন তার স্পষ্ট জবাব সরকার প্রধানকেই দিতে হবে। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর থেকেই সরকার জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের জনআকাঙ্খাকে বাস্তবায়নের চেয়ে সাম্রাজ্যবাদের মোড়ল মার্কিনের এজেন্ডা বাস্তবায়নে বেশি মনোযোগী। উপদেষ্টার বক্তব্যে তা আরও স্পষ্ট হয়েছে। তিনি কৃষিতে জিএমও বীজের ব্যবহার এবং বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে যা বলেছেন তারসাথে দেশের সার্বভৌমত্ব, কৃষি ও স্বাস্থ্য, ভূ-প্রকৃতি ও পরিবেশগত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যুক্ত। ‘জিএমও’ বীজ চালু হলে কৃষি পুরোপুরি যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে। আবার বাংলাদেশের মানুষ জিনগত স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। কৃত্রিম উপায়ে বিভিন্ন শস্যের বীজে জিনগত পরিবর্তনের মাধ্যমে উৎপাদিত খাদ্যপণ্যের কারণে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির বিষয়ে বৈজ্ঞানিক মহলে বড় ধরনের উদ্বেগ রয়েছে।

জিএমও খাদ্য খেলে মানবদেহে বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়তে পারে। মানবদেহে অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যক্ষমতা হ্রাস পায়। এই পদ্ধতিতে উৎপাদিত শস্য কর্তৃক পরাগায়নের মাধ্যমে অন্য শস্য বা জীব ধ্বংস হওয়ার আশঙ্কা থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের ‘ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’-এর তথ্য অনুযায়ী, জিএমও খাদ্যে অনাকাঙ্খিত বিষাক্ত উপাদান তৈরি হওয়ায় দীর্ঘদিন ঐ খাদ্য গ্রহণে মানবদেহে বিষাক্ততার মাত্রা বৃদ্ধির আশঙ্কা সৃষ্টি হয়। ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের বিদায় হলেও ড. ইউনুসের অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনায় অনেক ক্ষেত্রেই পতিত সরকারের পথ অনুসরণ করছেন।

কমরেড ইকবাল কবির জাহিদ বলেন, দেশের সার্বভৌমত্ব, কৃষি উৎপাদন, জনস্বাস্থ্য ও ভূপ্রকৃতির সাথে যুক্ত বিষয়সহ বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক নীতিমালা সংক্রান্ত কোন ধরনের মৌলিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার অন্তর্বর্তী সরকারের নেই। তিনি অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের অজুহাতে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সরকার নন-ডিসক্লোজার কি চুক্তি করেছেন তা অনতিবলম্বে প্রকাশ করার দাবি জানান। বিবৃতিতে কমরেড জাহিদ সমুদ্র বন্দরের ব্যবস্থাপনা বিদেশি কোম্পানিকে প্রদানের অপতৎপরতা বন্ধ, কৃষিখাতকে বাঁচাতে ‘জিএমও’ চালুর উদ্যোগ বন্ধসহ বাংলাদেশের রাজনীতিতে মার্কিন-ভারতের হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী ছাত্র-শ্রমিক-কৃষক-জনতার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)