ফুলবাড়ী চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, জাতীয় সম্পদ রক্ষা এবং সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতারা।তারা অভিযোগ করেন, অন্তর্ভুক্তিকালীন সরকারও ফুলবাড়ী চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে হবে। ফুলবাড়ীকে ঘিরে নতুন করে যেসব ষড়যন্ত্র হচ্ছে তা সারা দেশের মানুষকে রুখে দাঁড়াতে হবে।
ফুলবাড়ী অভ্যুত্থানের ১৯তম বার্ষিকীতে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে তারা এসব কথা বলেন। এরপর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
পুষ্পস্তবক অর্পণের আগে শহীদ মিনারের পাদদেশে অনুষ্ঠিত সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জাতীয় কমিটির অন্যতম সংগঠক, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক, বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাংলাদেশের সাম্যবাদী আন্দোলনের সমন্বয়ক, ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চার সমন্বয়ক শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, জাতীয় কমিটির ঢাকা মহানগর সংগঠক জুলফিকার আলী ও খান আসাদুজ্জামান মাসুম। সমাবেশ পরিচালনা করেন বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের নেতা নজরুল ইসলাম।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের অন্যতম নেতা অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার, বাসদ (মার্কসবাদীর) সমন্বয়ক মাসুদ রানা, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাসদ (মাহবুবের) সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ ভূঁইয়া, বাংলাদেশের সোসালিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, গণমঞ্চের মাসুদ খান, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবিরসহ বিভিন্ন ছাত্র যুব শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সমাবেশে রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ফুলবাড়ী অভ্যুত্থানের ১৯ বছর পেরিয়ে গেলেও ফুলবাড়ী চুক্তি পূর্ণ বাস্তবায়ন হয়নি। অতীতের শাসকগোষ্ঠী এই দায়িত্ব পালন করেনি। এখনকার অন্তর্ভুক্তিকালীন সরকারও কোনো দায়িত্ব পালন করছে না। তারা আমাদের নেতৃবৃন্দের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করেনি, এশিয়া এনার্জিকে দেশ থেকে বহিষ্কারের কোনো উদ্যোগ নেয়নি। বরং এশিয়া এনার্জি নানাভাবে তার কার্যক্রম পরিচালনা করছে, লন্ডনের শেয়ার বাজারে তাদের কর্মকাণ্ড অব্যাহত আছে। উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলনের ষড়যন্ত্র থামেনি, বরং নতুন করে ষড়যন্ত্র করছে।
তিনি বলেন, বিগত দিনে দেশের সমুদ্রের গ্যাস সম্পদ অসম চুক্তিতে সাম্রাজ্যবাদী বহুজাতিক কোম্পানিকে দেওয়া, চট্টগ্রাম বন্দর বেসরকারি মালিকানায় দিয়ে লুটপাটের আয়োজন চলছিল। এ সময়েও বিদেশি আধিপত্যবাদী শক্তির তৎপরতা অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরকে বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার প্রচেষ্টা চলছে। রাখাইনে করিডোর দেওয়ার নামে এ অঞ্চলের সাম্রাজ্যবাদী অপতৎপরতার সুযোগ তৈরি করা হচ্ছে। দেশের মাটিতে বিদেশিদের সমরাস্ত্র তৈরির কারখানা করার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তির নামে গোপন চুক্তি করা হচ্ছে। এই সামগ্রিক ঘটনাবলি দেশকে সাম্রাজ্যবাদের আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলার প্রচেষ্টা চলছে। তাই দেশের জাতীয় সম্পদ রক্ষা, দেশকে সাম্রাজ্যবাদের ছোবল থেকে মুক্ত রাখতে এই মুহূর্তেও ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন অব্যাহত রাখা জরুরি হয়ে পড়েছে।
শুভ্রাংশু চক্রবর্তী বলেন, ফুলবাড়ীর মানুষ জীবন দিয়ে শুধু ফুলবাড়ী রক্ষা করেনি, দেশের সম্পদ রক্ষায় নতুন বার্তা দিয়েছে। ফুলবাড়ীকে ঘিরে নতুন করে যেসব ষড়যন্ত্র হচ্ছে তা সারা দেশের মানুষকে রুখে দাঁড়াতে হবে। তিনি বলেন, শাসকগোষ্ঠী তাদের স্বার্থে দেশের সম্পদের রক্ষা দায়িত্ব পালন করবে না। এ দায়িত্ব বাম গণতান্ত্রিক দেশপ্রেমিক শক্তিতেই নিতে হবে। তিনি সারা দেশের জাতীয় সম্পদ রক্ষায় আন্দোলন অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ জাতীয় সম্পদ রক্ষা ও তার সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে গণআন্দোলন গড়ে তোলায় সচেতন দেশবাসীকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। এছাড়া ফুলবাড়ী দিবসে দেশের বিভিন্ন স্থানে কর্মসূচি পালিত হয়।