জানুয়ারি থেকে জুনে ১৬ লাখ অবৈধ অভিবাসীর স্বেচ্ছায় যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ


দেশ রিপোর্ট , আপডেট করা হয়েছে : 27-08-2025

জানুয়ারি থেকে জুনে ১৬ লাখ অবৈধ অভিবাসীর স্বেচ্ছায় যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ

যুক্তরাষ্ট্রে ৫০ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো অভিবাসী জনসংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে জুনের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসী সংখ্যা ১৪ লাখ কমে দাঁড়িয়েছে ৫১ দশমিক ৯ মিলিয়নে, যেখানে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার সময় এ সংখ্যা ছিল ৫৩ দশমিক ৩ মিলিয়ন। এই হ্রাসকে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ইতিহাসে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন হিসেবে দেখা হচ্ছে।নিরপেক্ষ গবেষণা সংস্থা পিউ রিসার্চ সেন্টারের তথ্যমতে, এই পরিবর্তনের মূল কারণ ট্রাম্প প্রশাসনের কড়া অভিবাসন নীতি ও ব্যাপক বহিষ্কার অভিযান। ২০২৫ সালের শুরু থেকেই বেআইনি অভিবাসন ঠেকাতে সীমান্ত কার্যত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং যারা এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন, তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি জানিয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসন অভিযানের পর থেকে এখন পর্যন্ত ১৬ লাখের বেশি অবৈধ অভিবাসী স্বেচ্ছায় যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করেছেন। পাশাপাশি স্টেট ডিপার্টমেন্ট ঘোষণা করেছে যে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে বৈধভাবে অবস্থানকারী ৫ দশমিক ৫ কোটি ভিসাধারী অভিবাসীর ভিসা যাচাই-বাছাই করা হবে এবং যে কোনো নিয়ম লঙ্ঘনকারীর বিরুদ্ধে বহিষ্কারের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।অভিবাসী জনসংখ্যা হ্রাস পেলেও এখনো যুক্তরাষ্ট্রের মোট জনসংখ্যার ১৫ দশমিক ৪ শতাংশই বিদেশে জন্ম নেওয়া ব্যক্তি। এটি এখনো ইতিহাসের সর্বোচ্চ স্তরের কাছাকাছি-এমনকি এলিস আইল্যান্ড যুগকেও ছাড়িয়ে গেছে। কর্মক্ষেত্রেও অভিবাসীদের উপস্থিতি রয়েছে, তবে সেটিও কমেছে। বছরের শুরুতে যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমশক্তির ২০ শতাংশ অভিবাসী ছিলেন, এখন সেই হার ১৯ শতাংশে নেমে এসেছে। এতে শ্রমবাজার থেকে প্রায় ৭ দশমিক ৫ লাখ অভিবাসী কর্মী বাদ পড়েছেন।

সীমান্ত নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রেও ট্রাম্প প্রশাসন কড়া ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। চলতি বছরে সীমান্ত পেরিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশকারীর সংখ্যা প্রতি মাসে ৫ হাজারের নিচে নেমে এসেছে এবং আর কাউকে অভ্যন্তরে প্রবেশ করে থাকার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। একই সঙ্গে প্রশাসন ঘোষণা করেছে, বছরে অন্তত ১০ লাখ অবৈধ অভিবাসীকে দেশ থেকে বহিষ্কারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

ট্রাম্পপন্থী সমর্থকরা এ পদক্ষেপকে যুক্তরাষ্ট্রের আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠার একটি প্রয়াস হিসেবে দেখছেন। তবে মানবাধিকার সংস্থা ও অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই নীতিমালা মানবিক দিক থেকে উদ্বেগজনক। তারা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন, এর ফলে বহু পরিবার বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে এবং যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিও দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, বিশেষ করে কৃষি, নির্মাণ এবং সেবা খাতে।

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে অভিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে। বহু মানুষ যারা বহু বছর ধরে দেশটিতে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করছেন, এখন হঠাৎ করে নিজেদের অনিরাপদ মনে করছেন। বিশ্লেষকদের মতে, এই প্রবণতা শুধু অভিবাসন নীতির রূপান্তর নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের সামাজিক কাঠামো ও অর্থনীতির ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)