নিউইয়র্কের সিডিপ্যাপ প্রোগ্রাম নিয়ে ঝড়


দেশ রিপোর্ট , আপডেট করা হয়েছে : 27-08-2025

নিউইয়র্কের সিডিপ্যাপ প্রোগ্রাম নিয়ে ঝড়

নিউইয়র্ক স্টেট জনপ্রিয় হোম কেয়ার প্রোগ্রাম কনসিউমার ডিরেকটেড পারসোনাল অ্যাসিস্ট্যান্স প্রোগ্রাম (সিডিপ্যাপ)-এর দায়িত্ব প্রকাশ্যে দরপত্র ছাড়া একটি মাত্র আটলান্টাভিত্তিক কোম্পানি পাবলিক পার্টনারশিপস এলএলসিকে (পিপিএল) গোপনে দেওয়া নিয়ে তীব্র রাজনৈতিক ও জনমত বিতর্ক তৈরি হয়েছে। স্টেট গভর্নমেন্টের দাবি, ৯ বিলিয়ন ডলারের এই বিশাল চুক্তি একটি প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হয়েছে। কিন্তু নিউইয়র্ক সিনেট তদন্ত কমিটির চেয়ার সিনেটর জেমস স্কুফিস এক চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করে জানান, একটি খসড়া বিলের ভাষা অনুযায়ী, সরকার প্রাথমিকভাবে প্রতিযোগিতাহীনভাবে শুধুমাত্র পিপিএল-এর সঙ্গেই চুক্তির পরিকল্পনা করেছিল। খসড়া ভাষায় বলা হয়, ২০২৫ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে স্বাস্থ্য কমিশনারের মাধ্যমে স্বাস্থ্য বিভাগকে রাজ্যজুড়ে একটি মাত্র ফিসকাল ইন্টারমিডিয়ারি হিসেবে পাবলিক পার্টনারশিপস এলএলসির সঙ্গে অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে হবে।

এ বিষয়ে ১৫ আগস্ট অ্যালবানি, নিউইয়র্কের স্টেট ক্যাপিটলে একটি যৌথ শুনানি অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে সিনেট ইনভেস্টিগেশনস অ্যান্ড গভর্নমেন্ট অপারেশন্স কমিটি এবং সিনেট হেলথ কমিটি যৌথভাবে শুনানির আয়োজন করে। এই শুনানির মূল উদ্দেশ্য ছিল চুক্তি সংক্রান্ত স্বচ্ছতা, ন্যায্যতা এবং গ্রাহকসেবা নিয়ে প্রশ্ন তোলা ও ব্যাখ্যা দাবি করা।

শুনানিতে স্কুফিসসহ অন্যান্য আইনপ্রণেতারা এই খসড়া ভাষা উপস্থাপন করে প্রশ্ন তোলেন যে যদি চুক্তি সত্যিই প্রতিযোগিতামূলক হয়, তবে এমন পূর্বনির্ধারিত নির্দেশনা কেন আইনের খসড়ায় রাখা হয়েছিল? স্বাস্থ্য কমিশনার ড. জেমস ম্যাকডোনাল্ড এবং পিপিএলের ভাইস প্রেসিডেন্ট প্যাটি বায়ার্নস উভয়েই দাবি করেন যে তারা এই প্রস্তাবনার বিষয়ে কিছু জানতেন না এবং গভর্নরের অফিস থেকেও তাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করা হয়নি। এই বক্তব্যে আইনপ্রণেতারা বিস্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। স্কুফিস একে অবিশ্বাস্য বলে মন্তব্য করেন এবং বলেন, এমন একটি খসড়া তৈরির পরও কোম্পানিটি যদি কিছুই না জানে তাহলে এটি অত্যন্ত অস্বাভাবিক।

উল্লেখযোগ্য যে, মেডিকেইড পেমেন্ট প্রসেসিংয়ের দায়িত্ব আগে প্রায় ৭০০টিরও বেশি ফিসকাল ইন্টারমিডিয়ারির হাতে ছিল, যা এখন একটি মাত্র প্রতিষ্ঠানের হাতে কেন্দ্রীভূত করা হয়েছে। দরপত্র প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী ১৩০টিরও বেশি কোম্পানির মধ্যে শর্তাবলী এমনভাবে গঠন করা হয়েছিল, যাতে মাত্র চারটি কোম্পানি যোগ্য বিবেচিত হয। এর মধ্যে পিপিএল ছিল অন্যতম। এতে করে অন্যান্য ছোট ও স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলি কার্যত প্রতিযোগিতা থেকেই বাদ পড়ে যায়।

সিনেট হেলথ কমিটির চেয়ার সেনেটর গুস্তাভো রিভেরা শুনানিতে প্রকাশ্যে বলেন, স্বাস্থ্য কমিশনারের বক্তব্য হতাশাজনক এবং তিনি যেসব প্রশ্নের উত্তর দেননি, তা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, আমরা কিছু অযৌক্তিক প্রশ্ন করছি না-আমরা জবাব চাই, কারণ এটি হাজার হাজার মানুষের স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে সরাসরি জড়িত।

শুনানিতে আরও উত্তেজনা তৈরি হয় যখন দেখা যায়, পিপিএল-এর সিইও, প্রেসিডেন্ট ও সিএফও শুনানির ঠিক আগেই পদত্যাগ করেন এবং নতুন নেতৃত্বের কেউই উপস্থিত হননি। শুধুমাত্র ভাইস প্রেসিডেন্ট বায়ার্নস উপস্থিত ছিলেন, যা আইনপ্রণেতাদের অসন্তুষ্ট করে। সিনেটর করডেল ক্লেয়ার বলেন, যে কোম্পানি এই বিশাল দায়িত্ব নিতে চলেছে, তাদের শীর্ষ নেতৃত্ব যদি মনে করে তারা আমন্ত্রণ পায়নি বলে শুনানিতে না আসে, তা সত্যিই অবিশ্বাস্য এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন।

শুনানিতে গভর্নরের দফতরের কোনো প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না, যদিও নিউ ইয়র্ক স্টেটের বাজেট পরিচালক ব্লেক ওয়াশিংটন শুনানির দিন সকালে একটি মতামত কলামে সিডিপ্যাপ রূপান্তরের পক্ষে যুক্তি দেন। এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে গভর্নর ক্যাথি হোকুল-এর মুখপাত্র বলেন, আইন অনুযায়ী প্রতিযোগিতামূলক প্রক্রিয়ায় চূড়ান্ত প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করা হয়েছে এবং সরকার সিডিপ্যাপ প্রোগ্রামকে আর্থিক সংকট থেকে বাঁচিয়েছে।

তবে প্রশ্ন রয়ে গেছে এই চুক্তিটি কি সত্যিই প্রতিযোগিতামূলক ছিল, নাকি গোড়া থেকেই নির্দিষ্ট একটি সংস্থার পক্ষে সুবিধাজনকভাবে পরিকল্পনা করা হয়েছিল? এই বিতর্ক এখন নিউইয়র্কের রাজনৈতিক অঙ্গনের অন্যতম আলোচিত ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। সিনেটর স্কুফিস ও রিভেরা উভয়েই স্পষ্ট করেছেন, এখানেই বিষয়টি শেষ হচ্ছে না। তারা ঘোষণা করেছেন, এই প্রক্রিয়া আরো গভীরভাবে তদন্ত করা হবে এবং ভবিষ্যতে আরো জবাবদিহি নিশ্চিত করা হবে।

উল্লেখ্য, সিডিপ্যাপ একটি গুরুত্বপূর্ণ মেডিকেইডভিত্তিক প্রোগ্রাম, যা বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিজ পছন্দ অনুযায়ী কেয়ারগিভার যেমন আত্মীয় বা বন্ধু নিয়োগের সুযোগ দেয়। এই ধরনের একটি প্রোগ্রামে রাজনৈতিক স্বচ্ছতার অভাব সরাসরি উপকারভোগীদের জীবনযাত্রার মান ও নিরাপত্তার ওপর প্রভাব ফেলে। তাই এই বিতর্ক শুধু একটি আর্থিক চুক্তি নিয়ে নয়-বরং এটি নিউইয়র্কবাসীর স্বাস্থ্যসেবা, ন্যায়বিচার ও সরকারি জবাবদিহির প্রতীক হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)