মত প্রকাশে স্বাধীনতায় বিশ্বাসীদের ওপর হামলা হচ্ছে


সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ , আপডেট করা হয়েছে : 03-09-2025

মত প্রকাশে স্বাধীনতায় বিশ্বাসীদের ওপর হামলা হচ্ছে

চিন্তা, বিবেক ও মত প্রকাশে স্বাধীনতায় বিশ্বাসীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটছে। সন্ত্রাসী কর্মকান্ড, প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দুর্নীতি উন্মোচন ও সত্য প্রকাশের ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের হত্যা, হত্যার পরিকল্পনা, প্রাণনাশের হুমকি, হামলায় আহত, ভয়ভীতির পাশাপাশি মামলা ও গ্রেফতারের ঘটনা ঘটেছে যা পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সত্য তুলে ধরার ক্ষেত্রে পদে পদে বাধা করতে গিয়ে চরম বিপদের মুখোমুখি ফেলছেন দেশের সাংবাদিকদের সংবিধান প্রদত্ত অধিকার প্রয়োগের পথ রুদ্ধ করার মত ঘটনার ঘটেই চলেছে। দেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, মত প্রকাশের অধিকার, গণমাধ্যমের ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা জন্য চরম হুমকিস্বরূপ। 

গত আগস্ট মাসে মানবাধিকার পরিস্থিতি মনিটরিং প্রতিবেদন পেশ করতে গিয়ে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) এসব তথ্য দিয়েছে। এমএসএফ’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল।

এতে দেখানো হয় যে, সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে হুমকি ও হামলা তথা সাংবাদিকতা এবং মত প্রকাশের সংবিধান প্রদত্ত অধিকার প্রয়োগের পথ রুদ্ধ করার ঘটনায় একজন সাংবাদিককে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা, ফেনীতে ৫ জন সাংবাদিককে হামলা ও হত্যার পরিকল্পনা, হত্যার হুমকি প্রদান করা হয়েছে ২ জন সাংবাদিককে, ১১ জন সাংবাদিক উপর হামলা চালিয়ে গুরুতর আহত করা, নানাভাবে হুমকি প্রদান করা হয়েছে ৪৫ জন সাংবাদিককে। এ মাসে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ৩টি মামলা করা হয়েছে, যেখানে ৩৩ জন সাংবাদিককে আসামি করা হয়েছে, গ্রেফতার করা হয়েছে ২ জন সাংবাদিককে। চিন্তা, বিবেক ও মত প্রকাশে স্বাধীনতায় বিশ্বাসীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটছে। উদহরণ হিসেবে বলা যায়, মঞ্চ ৭১ নামের একটি সংগঠন গোলটেবিল আলোচনা অনুষ্ঠানে পন্ড করে দেওয়া হয়। এরপর পুলিশ হেফাজতে থাকা সাবেক সংসদ সদস্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালিয়ে শিক্ষক ও সাংবাদিকসহ ১৪ জনকে সন্ত্রাস দমন আইনে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। গণমাধ্যমের নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করা না হলে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ভবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ থেকেই যাবে।

এসব ঘটনাকে সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের অধিকারের লংঘন বলে অভিহিত করে বলা হয় চলতি মাসে সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে যেভাবে শারীরিক মানসিক এবং আইনি হয়রানি, আক্রমণ, হুমকি ও লাঞ্ছিত করা হচ্ছে তা শুধুমাত্র অনাকাঙ্খিতই নয় বরং সৎ সাংবাদিকতার কন্ঠরোধ করে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশে বাধা দেওয়া হচ্ছে। গণমাধ্যম যখন অবাধে কাজ করতে পারে, তখন মানবাধিকারের সুরক্ষা, দুর্নীতির উন্মোচন এবং সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা সহজতর হয়। অপরদিকে সাংবাদিকদের উপর হামলা, হুমকি, নির্যাতন, নিপীড়ন, মামলা, গ্রেফতার, সেন্সরশিপ বা ভীতি প্রদর্শনের সংস্কৃতি চালু হয়, তখন তা কেবল সংবাদপত্র নয়, বরং সমগ্র গণতান্ত্রিক সমাজকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়ার কথা ব্যক্ত করলেও বাস্তব ক্ষেত্রে তার কোন প্রতিফলন দেখা যায় নি। এ মাসেও সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে মানবাধিকার লংঘনের চিত্র ছিল অত্যন্ত উদ্বেগজনক। 

আগস্ট মাসে চাঁদাবাজিসহ, সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের পাশাপাশি প্রভাবশালী ও রাষ্ট্রীয় বাহিনীর দুর্নীতি ও অনিয়ম উন্মোচন করতে গিয়ে চরম বিপদের মুখোমুখি হয়েছেন দেশের সাংবাদিকরা। ঢাকার পাশের শহর গাজীপুরে এক দিনের ব্যবধানে দুই সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনা এবং সাংবাদিক মো. আসাদুজ্জামান তুহিনকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে যেমন প্রশ্ন উঠেছে, তেমনি গণমাধ্যমকর্মীদের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। 

তদন্ত ছাড়া সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হবে না-সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে এমনটি আশ্বস্থ করা হলেও বাস্তবে তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। ৩১ জন পেশাদার সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ মাসেও জুলাই গণঅভ্যুত্থান সংক্রান্ত হত্যা মামলা করা হয়েছে। 

দেশের বিভিন্ন জেলায় পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় ৩৩ টি ঘটনায় ৯৬ সাংবাদিক নানাভাবে হামলা, আইনি হয়রানি, হুমকি হত্যা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। আক্রান্ত সাংবাদিকদের সংখ্যা গত মাসের তুলনায় প্রায় তিনগুণ। আক্রান্ত সাংবাদিকদের মধ্যে ১ জনকে হত্যা, ৩৬ জন সাংবাদিক আইনি হয়রানির শিকার হয়েছেন, যাদের মধ্যে ১ জন সাংবাদিককে গ্রেফতার করা হয়েছে। ২৩ জন সাংবাদিক তাঁদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় আহত ও হামলার শিকার হয়েছেন। লাঞ্ছিত এবং হুমকির শিকার হয়েছেন ১৬ জন সাংবাদিক এবং ২০ জন সাংবাদিককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাগুলোর মধ্যে রয়েছে হত্যা, চাঁদাবাজি এবং মানহানির মামলা। 

এ মাসের ৩৩টি সাংবাদিক নির্যাতন সংক্রান্ত ঘটনায় ৭টি বিএনপি, ৬টিতে পুলিশ, ৩টি ঘটনায় শিক্ষক, ৫টি ঘটনায় সন্ত্রাসী বাহিনী, ২টিতে চোরাকারবারি, ১টি ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে মামলার শিকার, ১টিতে এনজিও, ১টিতে পেশকার, ৪টিতে দুস্কৃতিকারি, ১টিতে পত্রিকা অফিস এবং ২টিতে সাময়িক কার্যক্রম নিষিদ্ধ সংগঠন আওয়ামি লীগের সংশ্লিষ্টতা ছিল।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)