কার হস্তক্ষেপে সব ঠান্ডা


সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ , আপডেট করা হয়েছে : 10-09-2025

কার হস্তক্ষেপে সব ঠান্ডা

ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হওয়া নিয়ে গুঞ্জনের কমতি ছিল না। কেউ ভরসাই পাচ্ছে না যে ভোট হচ্ছে। কিন্তু খুব দ্রুততার সাথেই যেনো সব পথ পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে। এখন বেশ দৃঢ়তার সাথেই বলা হচ্ছে ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবেই।

কিন্তু কিভাবে এখন আশ্বস্ত করা হচ্ছে যে নির্বাচন হবেই। দিনের ভোট রাতে হবে। আর সেই ভোট হবে সুস্থ। আসলে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হচ্ছে কি-না তা নিয়ে সন্দেহ অবিশ্বাসের দোলাচলকে দূর করেছেন খোদ প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ড. মুহাম্মদ ইউনূসই আসলে শুরু থেকে নির্বাচন নিয়ে একটা ধোয়াশার সৃষ্টি করেছেন। কখনো বলেছেন সংস্কার ছাড়া নির্বাচন অর্থহীন। আবার কখনো অনিদিষ্টভাবেই উচ্চারণ করে বলেছেন ২০২৫ সালের মাঝামাঝিতে নির্বাচন হবে। আর তার এমন কনফিউজড মন্তব্য দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল মহা বিপাকে। কারণ দলটি কনফার্ম যে নির্বাচন হলে তারাই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে। কিন্তু ড. মুহাম্মদ ইউনূস তো নির্বাচনের সন, তারিখ সুনির্দিষ্ট করছেন না। তার অবস্থান এখানেই থেমে থাকেনি। জোর গলা বলেছেন, জুলাই বিপ্লবের মূল উদ্দেশ্য রাষ্ট্রব্যবস্থার সংস্কার, ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচারের বিচার ও নির্বাচন। ড. ইউনূসই ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করেন। পরবর্তীকালে তিনি আরও পাঁচটি সংস্কার কমিটি গঠন করেন। মোট ১১টি সংস্কার কমিশন গঠিত হয়। এদিকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এমন কনফিউজসড অবস্থানে রাজনৈতিক মাঠে সবচেয়ে বেশি পুলকিত বোধ করে জামায়াতে ইসলামী। এরা তাদের সাথে আরও কয়েকজনকে নিয়ে পাল্লা ভারি করে। এবং শুরু করে সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হবে না। নির্বাচন হতেই পারে না। নির্বাচন নিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এক দিকে অস্বচ্ছ অবস্থান আর অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামীর সংস্কারের আগে কিছুই হওয়া যাবে না-এমন অবস্থানে বিএনপি পড়ে মহাবিপদে। অন্যদিকে রাজনৈতিক অঙ্গনে দেখা দিতে থাকে নানা ধররের অস্থিরতা। ফলে গুঞ্জন রটতে থাকে ২০২৪ সালে ৫ আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পতিত সরকারের আগমন বার্তা। এছাড়া বাতাসে আরও গুঞ্জন ভাসে দেশে আর নির্বাচন হবে না। ভূ-রাজনৈতিক ম্যারপ্যাঁচে ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লবীদের হাত থেকে বিজয় ফসকে যাচ্ছে। ঠিক এমন সময়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলা চলে তার পূর্ব অবস্থান থেকে আস্তে আস্তে সরতে থাকেন। এখন বলছেন ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচন ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। কেউ যদি নির্বাচন ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নিয়ে ভাবে, সেটি হবে জাতির জন্য গভীর বিপজ্জনক। এর পাশাপাশি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচন পৃথিবীর একটি শ্রেষ্ঠ নির্বাচন হবে। সব ভোটার ভোট দিতে যাবেন। এটি হবে একটি উৎসবমুখর নির্বাচন। এর পাশাপাশি প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস-ই জোর গলায় আরও বলছেন, বাধাগ্রস্ত করার যে চেষ্টাই হোক না কেন, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে উৎসবমুখর পরিবেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সর্বশেষ চলতি মাসের শুরুতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় সাতটি রাজনৈতিক দল ও একটি সংগঠনের সঙ্গে বৈঠকে একথা বলেন বলে জানালেন বৈঠকের পর প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

কিন্তু তাতে কি? সন্দেহ তারপরেও লাগাতারভাবে এগিয়েই চলেছে। সন্দেহ আরও পোক্ত হতে থাকে সারাদেশে বেশ কয়েকটি ঘটনায়। বিশেষ করে ফ্যাসিবাদী শাসনের অন্যতম সহযোগী বলে যাদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ সেই জাতীয় পার্টির কার্যালয়ের সামনে গণঅধিকার পরিষদের মিছিল নিয়ে যাওয়ার সময় জাপা নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তাদের আকস্মিক সংঘর্ষের মতো আরও বেশ কয়েকটি ঘটনা। জল্পনা-কল্পনা দেখা দেয় যে, দেশে একধরনের বিশৃংখল অবস্থা তৈরি করা হচ্ছে। এটা এমনভাবে করা হবে যেনো ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পথ রুদ্ধ করে দেয়া যায়। 

সব ভেস্তে গেলো বিএনপি’র কৌশলে

ধরে নেয়া যায় নির্ধারিত বছরে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে না দিয়ে ভিন্ন একটি প্রেক্ষাপট তৈরি করে তা আরও পিছিয়ে দেওয়া হচ্ছে। চক্রান্ত মোটামুটি বেশ দ্রুততার দিকেই সামনে দিকে এগুচ্ছিল। যখন দেখা যায় কথা নাই বার্তা নাই জাতীয় পার্টিকে নিয়ে এক হুলস্থুল অবস্থা তৈরি হয়ে যায়। কিন্তু সব চক্রান্ত হঠাৎ করে যেনো প্রচণ্ড বাধা পায়। এক্ষেত্রে কারো কারো মতে, বিএনপি একটি বড়ো ভূমিকা রেখেছে। তারা কোনোভাবেই জাতীয় পার্টির কার্যালয় ভাংচুর বা দলটি নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে একপাও অগ্রসর হয়নি। যদিও গত ৩০ আগস্ট জাতীয় পার্টির কার্যালয়ের সামনে গণঅধিকার পরিষদের মিছিল নিয়ে যাওয়ার সময় জাপা নেতা-কর্মীদের সঙ্গে গুরুতর নুরুল হক নুর গুরুতর আহত হলে সমবেদনা জানায় বিএনপি নেতৃবৃন্দ। তবে রাজনৈতিক অঙ্গনে জাপা কার্যালয় ভাংচুর আর নুরুল হক নুর গুরুতর আহতের ঘটনাসহ পারিপাশ্বিক পরিস্থিতি পুরো দেশজুড়ে একটা অস্বস্তিকর পরিবেশ সৃষ্টি করে। ফলে সন্দেহের ডালপালা আরও মেলতে থাকে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস আর বিএনপি চাইলেও ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে না। হতে দেওয়া-ও হবে না। হতে যাচ্ছে অন্য কিছু...। 

ক্ষমতাধর দেশের হস্তক্ষেপে সব ঠান্ডা?

এদিকে জানা গেছে, এত্তোসব ঘটনা পর পেছনে কি আছে বা হতে পারে সে নিয়ে চুলচেরা হিসাব করতে থাকে বিশেষ সর্বাপেক্ষা ক্ষমতাধর দেশটি। যারা ২০২৪ সালে বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সরাসরি নেপথ্যে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে বলে কারো কারো শক্ত ধারণা। একটি সূত্র জানায়, বিশ্বের সেই ক্ষমতাধর দেশটি বাংলাদেশে হঠাৎ করে উত্তপ্ত হয়ে যাওয়া মতো পরিস্থিতিতে নড়েচড়ে বসে। একটি সূত্র জানায়, বিশ্বের ওই ক্ষমতাধর দেশটি মনে করে এখানে শুধু নির্বাচন ইস্যুই না। অন্য কিছুর উর্বর ভূমি তৈরির প্রেক্ষাপট তৈরির চেষ্টা হচ্ছে। অন্যদিকে তাদের কাছে তখন আরো একটি ইস্যু চলে আসে, তা হলো ভূ-রাজনীতিসহ আরও বেশ কয়েকটি ইস্যু। কেননা তারা লক্ষ্য করেন ২০২৮ সবালে জুলাই বিপ্লবের ইমেজকে ধারণা করে গড়ে উঠা নয়া রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ৮ নেতা চীন সফরে ব্যস্ত। আবার তারা এমন সময় চীন সফর করছেন তখন বলা যায় তখন বিশ্বের আরেক রকম পরিস্থিরির আভাস মিলছে। কেনন সেই চীনের নেতৃত্বে বা বলা যায় সঞ্চালনায় তারাসহ প্রায় সবাই একমঞ্চে উঠেন যা বিশ্বের সেই ক্ষমতাধর দেশটিকে নয়া ভূ-রাজনৈতিক ক্ষেত্রের কঠোর বার্তা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। খবর চাওর হয়ে যায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উনকে নিয়ে বেইজিংয়ে সামরিক কুচকাওয়াজের বিশাল আয়োজনের আয়োজন মূলত আমেরিকা ঠেকাও কৌশল। আর এটা সফল হলে ভূ-রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বড়ো ভূমিকা পড়বে, বাংলাদেশ তাদের হাতছাড়া হয়ে যাবে মার্কিনীদের। 

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, এমন টালমাটাল ভূ-রাজনৈতিক ইস্যু যখন সক্রিয় হয়ে উঠে তখন-ই জাতিসংঘের তরফে আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনকে পুরোপুরি সমর্থন করার কথা বলেছেন সংস্থাটির আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস। প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে তিনি বলেন, “জাতিসংঘ ফেব্রুয়ারির সাধারণ নির্বাচনের পূর্ণ সমর্থন করছে। দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।” এদিকে শোনা যায় যে নির্বাচন নিয়ে সব জল্পনা-কল্পনার আরও অবসান ঘটাতে মাঠে নামেন বাংলাদেশের যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত এবং এক্সিলারেট এনার্জির উপদেষ্টা পিটার হাস, যাকে বলা হয় বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারে একটি শক্তিশালি কণ্ঠস্বর। যদিও গণমাধ্যমের খবরের দেখা হচ্ছে যে তিনি মূলত এসেছেন পররাষ্ট্রসচিব আসাদ আলম সিয়ামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে। কিন্তু ব্যাপারটি মোটেও তা নয় বলে বেশ কয়েকটি সূত্র নিশ্চিত করেছেন। বলা যায় বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত এবং এক্সিলারেট এনার্জির উপদেষ্টা পিটার হাসই একটি সর্বশেষ কঠোর বার্তা দেন ২০২৪ সালে জুলাই বিপ্লবের ফলশ্রুতিতে গড়া অন্তর্বর্তী সরকারের পাশাপাশি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নানা দাবি-দাওয়া নিয়ে মাঠ ঘোলাকারীদের। যারা সংস্কার কিংবা পিআর পদ্ধতি নিয়ে মাঠ ঘোলার করার চেষ্টা করছিলেন বলে তাদের ধারণা হয়। জানা গেছে, এরপরেরই বলা চলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সমসাময়িক বিষয় নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে অত্যন্ত দৃঢ়তার সালে বলেছেন। তিনি বলেছেন, নির্বাচন যে করেই হোক ফেব্রুয়ারির (২০২৬ সালের) প্রথমার্ধে হবে। পৃথিবীর কোনো শক্তি নেই এই নির্বাচনকে ঠেকাতে পারে। সে জন্য যত প্রস্তুতি লাগে সেগুলো নেওয়া হচ্ছে। আবার তার এমন বক্তব্যের পর ঠাকুরগাঁওয়ে বিএনপির সম্মেলনস্থল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপ করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন ‘জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কোনো শঙ্কা দেখছি না। তবে আমরা কিছুটা উদ্বিগ্ন। কিছুসংখ্যক ব্যক্তি বা রাজনৈতিক দল অযাচিতভাবে শঙ্কা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। তবে বাংলাদেশের মানুষ সেসব দূরভিসন্ধি কখনোই সমর্থন করবে না। যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই নির্বাচন জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে।’

শেষের কিছু কথা

বেশ কয়েকদির ধরে চলছিল নানা কানাঘুষা। তাহলো কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবেই না। কিন্তু আপাতত বাতাস গুঞ্জনের উল্টো দিকে প্রবাহিত হতে দেখা যাচ্ছে। যারা সংস্কার বা পিআর পদ্ধতির বাস্তবায়ন ছাড়া নির্বাচন হবে না বলে জোর গলায় বলছেন তাদের গলার সুর কিছুটা নেমে যাচ্ছে। তাহলে কি ওই বক্তব্যই সত্য হতে যাচ্ছে যে, যুক্তরাষ্ট্র চাইলে যেকোনো দেশের ক্ষমতা উল্টাতে পাল্টাতে পারে....।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)