ক্রয়কৃত ফ্ল্যাটে উল্টা দখলের অভিযোগ


বিশেষ প্রতিনিধি , আপডেট করা হয়েছে : 10-09-2025

ক্রয়কৃত ফ্ল্যাটে উল্টা দখলের অভিযোগ

গুলশানে নিজেদের ক্রয় করা ফ্ল্যাট কীভাবে ‘দখলের অভিযোগে মামলা হয়’ তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপি নেতা গিয়াস কাদের চৌধুরীর বড় ছেলে সামির কাদের চৌধুরী।

গত ৮ সেপ্টেম্বর সোমবার ফারজানা আন্না ইসলামের দায়েরকৃত মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ৯ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এই প্রশ্ন তুলেন তিনি। সামির কাদের চৌধুরী বলেন, ২০০৫ সাল প্রায় ২০ বছর আগে আমরা এই ফ্ল্যাটটি ডেভেলপার কোম্পানি (সামসুল আলামিন রিয়েল এস্টেট লিমিটেড) থেকে ক্রয় করেছি। তখন এই বাড়িটির নাম ছিলো ওয়াটার ফ্রন্ট.. এখন পরিবর্তন করে ফেলেছে। ২০ বছর ধরে উনার (ফারজানা আন্না ইসলাম) কাছে ডকুমেন্টেশন, বানোয়াট এগুলো উনি খেয়াল করেননি এখন উনার খেয়াল আসছে। আর খেয়াল আসার পরে উনি বিল্ডিংয়ের ভেতরে আছি আর আমরা বাইরে আছি হাউ ভেরি আনফরচুনেট।

৮ সেপ্টেম্বর সোমবার ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম জিয়াদুর রহমানের আদালতে প্রয়াত শিল্পপতি মাইনুল ইসলামের স্ত্রী ফারজানা আন্না ইসলাম ফ্ল্যাট দখলের অভিযোগ এনে গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর দুই ছেলে সামির কাদের চৌধুরী ও শাকির কাদের চৌধুরীসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ‘সামসুল আলামিন রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের’ প্রোপ্রাইটার আরেফিন সামসুল আলম, মেরিনা ইরশাদ, কেশব চন্দ্র নাথ, হারুন অর রশীদ, ফেরদৌস মুনসি, শাহাবুদ্দিন ও ছালাউদ্দিন আব্বাছি নামে আরও সাতজন রয়েছেন আসামি তালিকায়। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে সিআইডিকে তদন্ত করে এক মাসের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দিতে বলেছে।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, গুলশানের মডেল টাউন এলাকায় ছয় তলা ভবন নির্মাণে আরেফিন সামসুল আলমের সঙ্গে ২০০৬ সালে মাইনুল ইসলাম ও ফারজানা আন্না ইসলাম দম্পতি চুক্তিপত্র করেন। ২০০৭ সালের ১৯ ডিসেম্বর তারা বাড়ি বুঝে পান। পরের বছর ২০০৮ সালের ২৪ মার্চ মারা যান মাইনুল ইসলাম। তার মৃত্যুর পর সামসুল আলম অন্য আসামিদের নিয়ে ফ্ল্যাট দখলের চেষ্টা করতে থাকেন। আসামিরা জাল দলিল তৈরি করে বাড়ির দ্বিতীয় তলার সম্পূর্ণ ফ্লোর দখলের চেষ্টা করেন।

সাংবাদিকদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে সামির বলেন, আপনারা যদি একটু বিল্ডিংয়ে জাস্ট গেটের সামনে দিয়ে ঘুরে যান তাহলে দেখবেন কি পরিস্থিতি সেখানে। চারপাশের লোকজনকে জিজ্ঞাসা করলে জানতে পারবেন এই মহিলার (ফারজানা আন্না ইসলাম) সম্পর্কে। ওখানে আশে-পাশে বিল্ডিং আছে, ব্যাংক আছে- আপনারা দেখানে গিয়ে জিজ্ঞাসা করতে পারেন যে, এই বিল্ডিংয়ে স্পা, কফি হাউজ আছে সেখানে কি চলে না চলে।

গত সাপ্তাহে আমাদের গার্ডরা যখন বাইরে দাঁড়িয়েছিলো আমাদের ফ্ল্যাটে রিনোভেশনের কাজ চলছিলো, মাল-সামানা আসছিলো ওই সময়ে উনি ও উনার ছেলেরা উপর থেকে বলতেছে যে, এখান থেকে সরে যা নইলে গরম তেল দিয়ে জানে মেরে ফেলব। এই ভিডিওটা আমাদের কাছে আছে। এখন থ্রেট আমরা কোথায় দিলাম, উনি কোথায় দিলো এটা প্রমাণ হোক।

‘আমরা সুষ্ঠু তদন্ত চাই, আমাদের ফ্ল্যাটে যেতে চাই’

সামির দাবি জানিয়ে বলেন, আমরা চাই, এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হোক। আর আমরা আমাদের ফ্ল্যাটে এই মুহূর্তে ঢুকতে চাই। এটা তো আমাদের প্রোপার্টি, আমরা আমাদের প্রপোর্টিতে কেনো ঢুকতে পারব না? আমরা বিষয়টি পুলিশ প্রশাসনকে জানিয়েছি, থানায় অবহিত করা আছে। আমি শিগগিরই আমাদের প্রপোর্টিতে গিয়ে আমাদের ফ্ল্যাটের রিনোভেশনের কাজ চালু করতে চাচ্ছি।

গুলশানে নাভানা টাওয়ারে ‘কিউসি’ অফিসে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। সংবাদ সম্মেলনে সামির কাদেন চৌধুরীর ছোট ভাই সাকির কাদের চৌধুরীও উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে ওই বাড়ির দ্বিতীয় তলার ফ্ল্যাটে ‘এমএফ ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড’ এর কর্মকর্তা হারুনুর রশীদ বলেন, আমাদের অফিস এখন বন্ধ। কারণ আমাদেরকে ঢুকতে দিচ্ছে না। আজকে ১০/১২ যাবত অফিসে যেতে পারছি না।

‘মামলাটি বানোয়াট’

সামির কাদের গতকাল যে মামলাটা হয়েছে এটা কমপ্লিট একটা বানোয়াট মামলা। গতকাল উনি কী উদ্দেশ্যে মামলা করেছেন এটা চিন্তার বিষয়- এটার পেছেনে কোনো না কোনো ষড়যন্ত্র থাকতে পারে। তিনি বলেন, আমরা ফার্স্ট ফ্লোরে আছি। আমাদের সাথে এই সংবাদ সম্মেলনে আছেন উনারা সেকেন্ড ফ্লোরে আছেন। ২০২২ পর্যন্ত ওই বিল্ডিং আমাদের একটি কোম্পানি ‘রেডিও আমার’ এর অফিস অপারেশনে ছিলেন। এরপর আমরা ওইটা বিল্ডিং এর যে পরিস্থিতি হয়ে গেছে আমি নিজে পার্সোনালি গত চার বছরে ওই বিল্ডিং এই পর্যন্ত যাইনি- আমার ভাই বোধহয় আরো বেশি সময় ধরে ওখানে যাননি।

সামির অভিযোগ করে বলেন, গত সপ্তাহে সেখানে একটা হামলার ঘটনা ঘটেছে। আপনারা গণমাধ্যমে যে ওই ঘটনার যে ভিডিওটা দেখছেন ভিডিওটার শুরুর পার্ট কিন্তু আপনাদেরকে দেখানো হচ্ছে না। এটা পুলিশের কাছেও চাওয়া হয়েছে- পুলিশও ওনাদের কাছে চেয়েছে। আপনারা নিজেরা বিল্ডিং এ গেলে দেখতে পারবেন ওখানে কত প্রকারের সিসিটিভি ক্যামেরা প্লেস করা আছে। ৫ আগস্টের পরে গত নভেম্বর মাসে এই বিল্ডিং এর যখন অভিযান চলে আপনারা নিউজে দেখতে পারবেন ওখানে যে স্পা সেন্টার অপারেশনাল ছিল ওখানে কারা জড়িত ছিল এগুলো সবকিছু নিউজে এসেছে। এরপরে আমরা গত সপ্তাহে যেই এটেম্প টু মার্ডার আমাদের একজন অফিস কর্মচারির ওপরে যে হামলা আপনারা ভিডিওতে যেটা দেখছেন ওনার শরীরে যেই ইলেকট্রিক অস্ত্রটা নিয়ে শক দিয়ে দিয়ে তাকে লোহার লাঠি দিয়ে মাথা ফাটিয়ে ফেলেছে- এগুলো ভিডিওতে ক্লিয়ার আছে। ওনার হাতে ও ইলেকট্রিক অস্ত্রটা আগুন জ্বলছিল ওটাও পরিষ্কার দেখা যায়। আমরা মামলাটি সেদিনই করি।

সামির বলেন, এই মহিলা চার-পাঁচ বছর ধরে এখানে একটি স্পা সেন্টার চালাতেন। ওই বিল্ডিং কী হয় এটা সেখানকার লোকজন জানে, গুলশান সোসাইটি জানে, ওখানে রাস্তাঘাটের রিক্সাওয়ালা, দোকানদার সবাই জানে। এখানে লুকোচুরির কিছু নেই। আপনারা (সাংবাদিকরা) নিজেরা গিয়ে যাচাই করে ইনভেস্টিগেশন করলে আপনারা নিজেরাই সব দেখতে পাবেন। ওনার (ফারজানা আন্না ইসলাম) সাথে আমাদের বহু বছর কোন যোগাযোগই নেই, আমার সাথেও তো নেই। আমাদের ফ্ল্যাটের রেনোভেশনের কাজ অলমোস্ট শেষ। এর মধ্যে পানি ছাড়াছাড়ি নিয়ে কথা কাটাকাটিতে হামলার ঘটনা ঘটে। উনার সাথে রেগুলার আমাদের অফিস এমপ্লয়ীদের শুধু নয়, দ্বিতীয় তলার বাসিন্দাদের সাথে রেগুলার এরকম ঝগড়াঝাটি চলে।”


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)