দীর্ঘ দেড় যুগ পর স্মৃতির শহর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আবারো ঈদ করছি। চাকুরী জীবনের দীর্ঘ সময় নিয়মিত ঈদ করতাম স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে এই শহরে। তিতাস গ্যাস ক্ষেত্র জুড়ে বেশ কয়েকটি বড় গ্যাস সঞ্চালন পাইপ লাইন নির্মাণ কাজে যুক্ত ছিলাম। গ্যাস গ্রিড পরিচালনা কাজেও আশুগঞ্জ ,ব্রাহ্মণবাড়িয়া ছিল গুরুত্বপূর্ণ। প্রায় দুই দশক পরে শহরটি অনেক পাল্টে গাছে। বিশাল অট্টালিকা শহর জুড়ে। শহরের রাস্তা ঘাট পরিষ্কার পরিছন্ন। একপাশ দিয়ে নির্মিত হচ্ছে আশুগঞ্জ -আখাউড়া ৮ যেন মহাসড়ক। বিজিএফসিএলের সংলগ্ন এলাকায় আমার শশুর পরিবারের আবাস মেড্ডা এলাকায়। রোজী সহ আমি আসায় সাজ সাজ রব পরে গাছে। ভায়রা পরলোকগত ফিরোজ ভাইয়ের দুই সন্তান প্রতিষ্ঠিত ব্যাবসায়ী। রানার আছে বিশাল গরুর ফার্ম। সেখান থেকে একটি গরু আর মহিষ এবার কোরবানি দেয়া হয়েছে।
ফিরোজ ভাইয়ের বহুতল বাড়িটিকে মনোরম ভাবে সাজিয়েছে দুই ভাই রানা ,মান্না। দুই ভাইয়ের বউ সুমি ,সুজাত আমাকে বাবা ডাকে আর অনেক শ্রদ্ধা করে. ছেলে মেয়েগুলো আমার খুব ভক্ত।
কাল বিকেলে এখানে মুসল ধারায় বৃষ্টি হলেও গুমোট ভাব কাটেনি। আজ সকাল হয়েছে টি ২০ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ নেপাল গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ দেখতে দেখতে। ব্যাটসম্যানদের মৃত্যুকূপ সেন্ট ভিনসেন্ট উইকেটে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের সংগ্রাম করে ১০৬ করতে দেখেই মনে হয়েছিল বাংলাদেশের উঁচু মানের বোলাররা উপযোগী উইকেটে যুদ্ধ করবে। ঈদের নামাজ পরে পারিবারিক গোরস্থানে দোআ করে ফিরে এসে দেখি তানজিম =মুস্তাফিজ -সাকিবের বুদ্ধিদীপ্ত স্মার্ট ক্রিকেট কোনঠাসা করে ফেলেছে নেপাল দলকে। বিশেষত তানজিম (৪/৭) এবং মুস্তাফিজ ( ৩/৭) ৮ ওভার বল করে ১৪ রানে ৭ উইকেট তুলে নিয়ে ধসিয়ে দিলো নেপাল দলকে। শেষ ওভারে সাকিব শেষ দুটি উইকেট তুলে নিলে ২১ রানে জয় পেলো বাংলাদেশ।গ্রুপ পর্বে ৪ ম্যাচের তিনটি জিতে নিয়ে গ্রুপ অফএইট দ্বিতীয় পর্বে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। অনেক নতুন মাইল ফলক স্থাপনকরা বাংলাদেশের এই জয় ছিল দেশবাসীর জন্য ঈদ উপহার।
বলতে দ্বিধা নেই ছেলেদের বৌ দের আদর আপ্পায়ন রীতিমত অত্যাচারের পর্যায়ে পৌঁছেছে। কোরবানির মাংসের নানা উপাদেয় রান্না ,সেই সঙ্গে চালের আটার রুটি প্রাণ ভরে খাচ্ছি। আর আছে নানা পদের মিষ্টি ,মৌসুমী ফল. টেলিভিশনে ঈদের অনুষ্ঠান দেখছি। শুধু অনুভব করছি এই বাড়ির অভিবাভক আমার প্রিয় ভায়েরা ফিরোজ ভাইয়ের অনুপস্থিত।
দুই একদিনের পরেই ফিরে যাবো.হয়ত আর এই জীবনে কখনো ঈদ উপলক্ষে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আসা হবে না. এমনিতেই জীবনের গোধূলী বেলায় অস্ট্রেলিয়া থেকে এসে বাংলাদেশে মানিয়ে নিতে কষ্ট হয়। তার পরেও ঢাকা এসে সংক্ষিপ্ত সময়ে নানা কাজে ব্যাস্ত হয়ে পড়ি. অবসর মেলে না। বাংলাদেশের উন্নয়নে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অবদান অনস্বীকার্য। সবচেযে বড় তিতাস গ্যাস ক্ষেত্র, বিশাল আশুগঞ্জ বিদ্যুৎ উন্নয়ন হাব , সাংস্কৃতিক ভাবে সমৃদ্ধ ব্রাহ্মণবাড়িয়া দীর্ঘদিন যাবৎ অবহেলিত থাকার পর এখন উন্নয়নের পথে হাটছে। সীমান্ত শহরটির সমৃদ্ধি দেশের সর্বাঙ্গীন উন্নয়নকেই ত্বরান্বিত করবে। এখানে রুফ টপ সোলার ,ফ্লোটিং সোলার করার অবকাশ আছে. তিতাস গ্যাস ক্ষেত্র আরও উন্নয়নরের সুযোগ আছে. একটি বিশেষায়িত শিল্প অঞ্চল গড়ে তোলার সুযোগ আছে।
আশা করবো দেশের অন্নান্য অংশের মত গ্যাস নগরীটির উন্নয়ন অব্যাহত থাকবে