জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের এক পর্যায়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রোফাইল ‘রক্ত লাল’ করেছিলেন সমন্বয়করা। সেটা ফলো করেছিলেন লাখ লাখ মানুষ। শেখ হাসিনা পালিয়েছে। আওয়ামী লীগ এখন পতিত, চিহ্নও নেই। প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে কিছু রয়ে গেছে। সেগুলোও সিসি ক্যামেরা আওতায় অন্তর্বর্তী সরকারের। তিন সমন্বয়ক এখন উপদেষ্টা। কিন্তু এমনকি হলো সমন্বয়কদের অনেকেই তাদেও প্রোফাইল ‘রক্ত লাল’ করতে শুরু করেছেন। ইনিয়ে-বিনিয়ে বলতে চেষ্টা করছেন, এবার আরো একটি লড়াইয়ের সম্মুখে নাকি তারা। কিন্তু সেটা কী, কারা তাদের প্রতিপক্ষ, সাধারণ মানুষ এতো জটিলতা বুঝতে পারছে না। সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ প্রায় রহস্যময় স্ট্যাটাস দিচ্ছেন। দেন সারজিস আলমও। আহ্বান জানান প্রস্তুত থাকার। উপদেষ্টা মাহফুজও তার প্রোফাইলে দিয়েছেন রহস্যময় স্ট্যাটাস। কী বলতে চান তারা।
যে লেখার শিরোনাম দিয়েছেন-
‘গণঅভ্যুত্থান ও ছাত্র-তরুণবিরোধী শক্তি’
২৫ নভেম্বর দেওয়া স্ট্যাটাসে তিনি বলেন-
‘মুক্তিযুদ্ধের পরের ১০-১৫ বছরের ইতিহাস মুক্তিযোদ্ধাদের একে অন্যকে হত্যার ইতিহাস। যারা চায়নি বাংলাদেশ শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়াক, তারা মুক্তিযোদ্ধাদের একে অপরকে দিয়ে হত্যা করিয়েছে। তাদের নিজেদের ভুল ছিল না তা নয়, কিন্তু আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের একের পর এক হত্যা বাংলাদেশকে কীভাবে পিছিয়ে দিলো, তা ইতিহাস একদিন বলবে।
এবারের আন্দোলন সাহসী ছাত্র-তরুণদের নেতৃত্বে জনগণের আন্দোলন। কিন্তু, একটি দল এবং দেশি-বিদেশি সুযোগসন্ধানী এস্টাবলিশমেন্ট গত তিন মাসে ছাত্রদের ভেরিফাই করেছে, বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন দিয়ে ছাত্রদের মধ্যে বিভেদ ঘটিয়েছে, অন্য একটি তরুণ দলকে লেলিয়ে দিয়েছে ছাত্রদের বিরুদ্ধে, তদুপরি ছাত্রদের সঙ্গে সম্মানজনকভাবে ডিল তো করেইনি, বরং ছাত্রদের তারা শত্রু গণ্য করেছে। তার পরিণতি কি ভালো হচ্ছে বা হবে?
মনে রাখতে হবে, বিদেশি শক্তির কোনো সাধ্য নেই এ দেশের মানুষকে পদানত করার। কিন্তু গোলামির মানসিকতার কিছু গাদ্দার আর হঠকারীর এ শক্তি আছে। তারা গত তিন মাসে তা দেখালো।
ছাত্রদের আজ সংঘাতের মুখে ঠেলে দিয়ে হত্যার মাধ্যমে ছাত্রদের বৈধতার সংকট হলে, যারা যারা লাভবান হবে, তারা সবাই এ উসকানি এবং প্রশাসনিক ব্যর্থতার সঙ্গে জড়িত। ধীরে ধীরে আমরা সবই বলবো। অথবা আপনারা চোখ খুললেই দেখতে পাবেন।
এদিকে, বাম এবং ডান মানসিকতার কতিপয় নেতৃত্ব বা ব্যক্তি গণঅভ্যুত্থানে এবং পরবর্তীতে সরকারে নিজেদের শরিকানা নিশ্চিত না করতে পেরে উন্মত্ত হয়ে গেছেন। তাদের উন্মত্ততা, বিপ্লবী জোশ এবং উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড দেশটাকে অস্থির করে রেখেছে। অনেক মিত্রই আজ হঠকারীর ভূমিকায়। আমরা আমাদের ব্যর্থতা স্বীকার করি। আমরা শিখেছি এবং ব্যর্থতা কাটানোর চেষ্টাও করছি। আমরা আরো চেষ্টা করবো সবাইকে নিয়ে এগোনোর। কিন্তু হঠকারিতা এবং ছাত্রদের অন্যায্যতার চেষ্টা এ জাতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
হঠকারিতা, উসকানি, ছাত্র-তরুণদের মধ্যে বিভেদ ও বিরোধ তৈরি, অভ্যুত্থানের শক্তিকে প্রতিক্রিয়াশীল করে তোলার অপচেষ্টা-সবই ব্যর্থ করে দেওয়া হবে, ইনশাআল্লাহ। আমরা ৫ আগস্টের সকালের মতন ঐক্যবদ্ধ হওয়ার দিকে অগ্রসর হচ্ছি। এবারের সাংগঠনিকভাবে গড়ে ওঠা ঐক্য দীর্ঘস্থায়ী মুক্তির সুযোগ তৈরি করবে, ইনশাআল্লাহ।