১৬ জানুয়ারী ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ০৭:২২:৪৯ পূর্বাহ্ন


নিউইয়র্ক অবৈধ অভিবাসীদের জন্য অনিরাপদ হয়ে উঠছে?
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৮-০১-২০২৫
নিউইয়র্ক অবৈধ অভিবাসীদের জন্য অনিরাপদ হয়ে উঠছে? নিউইয়র্ক সিটিতে অভিবাসী ও কর্মীরা একত্রিত হয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের গণবহিষ্কারের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছেন


নিউইয়র্ক স্টেট দীর্ঘদিন ধরে অভিবাসীদের জন্য একটি নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে পরিচিত। এটি অভিবাসীদের জন্য বিভিন্ন সুরক্ষামূলক আইন এবং নীতি গ্রহণ করেছে, যা স্টেট এবং স্থানীয় সিটি স্তরে অভিবাসীদের সুরক্ষার নিশ্চয়তা দিয়েছে। তবে বর্তমানে এ পদক্ষেপগুলো প্রায়ই বিতর্ক এবং মতপার্থক্যের মধ্যে পড়েছে, বিশেষ করে স্টেট ও সিটি আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো ও কেন্দ্রীয় অভিবাসন কর্তৃপক্ষের মধ্যকার সহযোগিতার প্রশ্নে। ডিসেম্বর ২০২৪-এ, গভর্নর ক্যাথি হোচুল ঘোষণা করেন যে, অপরাধে অভিযুক্ত অভিবাসীদের বহিষ্কারের জন্য তিনি ফেডারেল অভিবাসন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত। তিনি বলেন, যারা দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন এবং নিজেদের জীবিকা গড়ে তুলেছেন, তাদের তিনি রক্ষা করবেন। তবে অপরাধে জড়িতদের ক্ষেত্রে তিনি কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সহযোগিতা করবেন।

অন্যদিকে নিউইয়র্ক সিটির মেয়র এরিক অ্যাডামস ‘বর্ডার সিজার’ টম হোমানের সঙ্গে বৈঠক করেন, যেখানে শহরে সহিংস অপরাধ দমনের জন্য অভিবাসন নীতির কার্যকর প্রয়োগ নিয়ে আলোচনা হয়। অ্যাডামস জানিয়েছেন, তিনি পুনরাবৃত্ত সহিংস অপরাধে জড়িত অবৈধ অভিবাসীদের বহিষ্কারে নতুন প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করতে ইচ্ছুক, তবে আইন মেনে চলা অভিবাসীদের সুরক্ষা অব্যাহত রাখবেন। এ ঘটনাগুলো নিউইয়র্কের অভিবাসন নীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। রাজ্য এবং শহরের নেতারা অপরাধে অভিযুক্ত অবৈধ অভিবাসীদের বহিষ্কারে কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সহযোগিতার বিষয়ে আরো উন্মুক্ত মনোভাব দেখাচ্ছেন। এ পরিবর্তন রাজ্যের সানচুয়ারি (নিরাপদ আশ্রয়) নীতির বর্তমান অবস্থান এবং নিউইয়র্কে বসবাসকারী অভিবাসীদের জীবনে তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। আইন মেনে চলা অভিবাসীদের সুরক্ষা এবং জননিরাপত্তার মধ্যে ভারসাম্য আনার এ প্রচেষ্টা ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি করছে।

উপস্থাপিত এই নীতিগুলো একদিকে জননিরাপত্তা বৃদ্ধির লক্ষ্যে গ্রহণ করা হলেও অন্যদিকে অভিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে আস্থা এবং নিরাপত্তা বজায় রাখা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। নীতিনির্ধারণ এবং কার্যকরতার ওপর এই নতুন পরিবর্তনের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব নিয়ে আলোচনা চলমান রয়েছে। ২০১৭ সালে তৎকালীন গভর্নর অ্যান্ড্রু কুয়োমো নির্বাহী আদেশ ১৭০ স্বাক্ষর করেন, যা স্টেটের আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে কেন্দ্রীয় অভিবাসন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে অভিবাসন সম্পর্কিত তথ্য শেয়ার করতে নিষেধ করে। এই আদেশ অনুযায়ী স্টেট কর্মচারীরা কারো অভিবাসন অবস্থা নিয়ে প্রশ্ন করতে পারবে না এবং শুধু অভিবাসন অবস্থার কারণে কাউকে আটক করা যাবে না। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় অভিবাসন কর্মকর্তারা আদালতের বৈধ ওয়ারেন্ট ছাড়া স্টেট সুবিধায় অভিবাসী আটক করতে পারবেন না।

বর্তমান গভর্নর ক্যাথি হোচুল একটি ‘সর্বজনীন পদ্ধতি’ প্রণয়নের কথা বলেছেন, যা কেন্দ্রীয় এবং স্টেট আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার মধ্যে আরো কার্যকর সমন্বয় নিশ্চিত করবে। তিনি অপরাধীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার পক্ষে, কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে বসবাসরত এবং অপরাধে জড়িত নয় এমন অভিবাসীদের রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে নিউইয়র্ক সিটি অভিবাসীদের জন্য শক্তিশালী সানচুয়ারি নীতি গ্রহণ করেছে। এটি স্থানীয় আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে কেন্দ্রীয় অভিবাসন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সহযোগিতা সীমিত করতে বাধ্য করে।

নিউইয়র্ক স্টেট অভিবাসীদের সুরক্ষায় আরো কিছু উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিয়েছে। গ্রিন লাইট আইন (২০১৯) অবৈধ অভিবাসীদের ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার অনুমতি দেয়। প্রোটেক্ট আওয়ার কোর্টস অ্যাক্ট (২০২০) আদালতের আশপাশে আইসের অভিবাসী গ্রেফতার কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে। এছাড়া ২০২১ সালে সই করা একটি আইন অভিবাসনের হুমকিকে চাঁদাবাজি বা ব্ল্যাকমেইল হিসেবে বিবেচনা করে।

তবে স্টেট এবং স্থানীয় স্তরে অভিবাসন নীতির অভিন্নতার অভাব স্পষ্ট। রিপাবলিকানরা ‘লেকেনের আইন’ নামে একটি বিল প্রস্তাব করেছেন, যা অপরাধী অভিবাসীদের সম্পর্কে কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষকে জানানো বাধ্যতামূলক করবে। অন্যদিকে অভিবাসী অধিকার কর্মীরা ‘নিউইয়র্ক ফর অল অ্যাক্ট’ নামে একটি বিলের পক্ষে জোরালো প্রচারণা চালাচ্ছেন। এটি রাজ্য ও স্থানীয় আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর জন্য কেন্দ্রীয় অভিবাসন কর্মকর্তাদের সঙ্গে তথ্য শেয়ার করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করবে।

যদিও নিউইয়র্ক স্টেট নিজেকে সানচুয়ারি স্টেট হিসেবে উপস্থাপন করতে চায়, এটি পুরোপুরি ঐতিহ্যবাহী সান্চুয়ারি নীতির আওতায় পড়ে না। নিউইয়র্ক সিটি শক্তিশালী অভিবাসী সুরক্ষা নীতি গ্রহণ করেছে, কিন্তু স্টেট স্তরে অভিন্ন নীতির অভাব এবং রাজনৈতিক বিভাজন এটিকে জটিল করে তুলেছে।

নিউইয়র্ক স্টেট অভিবাসন নীতিতে মানবিকতা এবং ন্যায়বিচার বজায় রাখতে একটি ভারসাম্যমূলক ভূমিকা পালন করছে। তবে রাজ্যটি যদি সত্যিই একটি সন্তোষজনক বা সান্কচুয়ারি স্টেট হিসেবে নিজের অবস্থান নিশ্চিত করতে চায়, তবে আরো সমন্বিত এবং কার্যকর নীতির প্রয়োজন। একমাত্র সুসংহত নীতিমালা এবং অভিন্ন পদক্ষেপের মাধ্যমেই রাজ্য তার বহুজাতিক পরিচয় রক্ষা করতে পারবে এবং অভিবাসীদের জন্য একটি নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে নিজের অবস্থান আরো দৃঢ় করতে পারবে।

শেয়ার করুন