দুই বার দক্ষিণ এশিয়ায় ফুটবল শিরোপা জয়ী সাবিনা, সানজিদা, ঋতুপর্ণা বাফুফে নিয়োজিত বিদেশী কোচের অধীনে প্রশিক্ষণ গ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়ে অকালে গণ অবসরের ঘোষণা দিয়েছে। একই সময়ে দেশের উত্তরাঞ্চলে মেয়েদের ফুটবল খেলার বিরুদ্ধে কিছু বিভ্রান্ত মানুষ লঙ্কাকাণ্ড ঘটিয়েছে। অযত্ন, অবহেলা, ফুটবল অঙ্গনে নানা কেলেঙ্কারি এবং দুর্নীতির কারণে তৃণমূলে বিপুল জনপ্রিয়তা থাকা সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশ পুরুষ ফুটবল দলের মান এখন তলানিতে। সেই সময় সমাজের নানা কুসংস্কার, বাধা বিপত্তির অচলায়তন পেরিয়ে প্রান্তিক অঞ্চল থেকে উঠে আসা মেয়েরা পর পর দুইবার দক্ষিণ এশিয়ার সেরা হয়ে বাংলাদেশী জাতিকে আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে গৌরবান্বিত করেছে।
প্রযুক্তির বিশ্বায়নের যুগে মেয়েদের খেলা দেখে মন আনন্দে ভরে গেছে। জাতীয় দল এবং বয়সভিত্তিক দলের প্রতিটি মেয়ের বর্তমান পর্যায়ে আসার পথে কাঁটা বেছানো পথ পেরুতে হয়েছে। সামান্য বেতন (তাও নিয়মিত পরিশোধ করা হয় না) এবং শিরোপা জয়ে প্রাপ্ত পুরষ্কার ছাড়া প্রতিটি খেলোয়াড় সরকার থেকে বিভিন্ন সময় কিছু পারিতোষিক ছাড়া পেয়েছে বিদ্রুপ ও অসম্মান।
বিদেশী প্রশিক্ষক কেন? দেশের বিভিন্ন প্রশিক্ষক বিভিন্ন সময়ে এই মেয়েদের বর্তমান পর্যায়ে নিয়ে আসার বিষয়ে কঠোর পরিশ্রম করলেও কেন একজন বিতর্কিত বিদেশিকে জোর করে চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে? মেয়েদের নিঃসন্দেহে অনেক কিছুই বলার আছে।
কেন বিষয়টি নিয়ে বাফুফে কর্তারা সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সাথে আলাপ আলোচনার উদ্যোগ নিচ্ছে না? কাদের স্বার্থে মেয়েদের দাবি উপেক্ষা করে বিদেশী কোচকে মেয়েদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে? এখানে জেদাজিদির কিছু নেই। নিঃসন্দেহে অনুশীলন চলাকালে বা খেলার সময় এমন কোনো আচরণ করেছে বিদেশী কোচ যা মেয়েগুলোর আত্মসম্মান বা অহম বোধ আহত করেছে। বর্তমান সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেল জয়ী ডক্টর মোহাম্মদ ইউনুস বিজয়ী নারীদের আমন্ত্রণ জানিয়ে ওদের কথা শুনেছেন।
আশা করি বিএফএফ সভাপতি কাল বিলম্ব না করে অচলাবস্থা নিরসনে কার্যকরি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। চরম কিছু না হয়ে থাকলে মেয়েরা একযোগে অবসর ঘোষণা করার মত বিষয় ভাবতো না। বাংলাদেশের নিজস্ব সংস্কৃতির সঙ্গে বিদেশী কোচের ভাবধারা সঙ্গতিপূর্ণ না। ছেলেরা তবুও মানিয়ে নিতে পারে। মেয়েদের সামাজিক এবং পারিপার্শিক অনেক বিষয় আছে। সেগুলো ভাবতে হবে। বাংলাদেশ ক্রিয়াঙ্গনের আঁতুড়ঘরের সারথি হিসেবে বিষয়টির সম্মানজনক নিষ্পত্তি করার প্রত্যাশা সকলের। দেশের মানুষ চায় না যে ফুলগুলো অসময়ে ঝরে যাক। মেয়েগুলোর প্রতিভার সৌরভ দক্ষিণ এশিয়া ছাড়িয়ে আরো বিকশিত হোক। প্রয়োজন শুধু যথাযথ পরিবেশ আর প্রণোদনা।