বাংলাদেশে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায় পশ্চিমারা। সে নির্বাচন খুব দ্রুতই দেখতে চায় তারা। একটি প্রকৃত গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য সেই নির্বাচন এবছরই তারা দেখতে চায়। তবে কোনোভাবেই কোন দল বা মতকে বাদ দিয়ে সে ধরনের নির্বাচন আয়োজনে পশ্চিমারা ঘোর বিরোধী। রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সূত্রগুলি এমন তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছে।
দেরিতে নির্বাচন নিয়ে দেশে-বিদেশে আশঙ্কা
এদিকে একটি সূত্র জানায় বাংলাদেশে যেনো একটি দ্রুত অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হয় সেব্যাপারে দেশের ভেতরেও প্রচণ্ড চাপ আছে। দেশের ভেতরে বিএনপি-ও চায় বাংলাদেশে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হউক। কারণ তারা ভালোভাবেই জানে একটি বির্তকিত নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এলে তা টেকসই হবে না। আবার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় এলে গায়ের জোড়ে তা অতীতের সরকারগুলির মতো তা টিকিয়ে রাখাও যাবে না। কেননা আন্তর্জাতিক চাপও থাকবে। এমন আশঙ্কার কথা ফুটে উঠেছে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদুর বক্তব্যেও। স্বচ্ছ স্বাভাবিক গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের যদি ঘাটতি থাকে তাহলে এই জাতি আবার একটি ভয়ংকর বিপদের মধ্যে পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু। এর পাশাপাশি দেরিতে নির্বাচনের ব্যাপারে একটা আশঙ্কার পরিণতির কথাও শামসুজ্জামান দুদু বক্তব্যে ফুটে উঠেছে। তিনি বলেছেন, সরকার বলেছে এই বছরের মধ্যেই যাতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয় সরকার সেই উদ্যোগ গ্রহণ করবে। এটা যদি কথার কথা না হয়, তাহলে বাংলাদেশের জন্য ভালো কিছু অপেক্ষা করছে। আর যদি অন্য সময়ের মতো কথা দিয়ে কথা না রাখা হয়? যেমন ৭২ থেকে ৭৫ সালের আগে গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার কথা বলেছিল, কিন্তু ক্ষমতায় এসে সেগুলো রাখেনি। গত ১৫/১৬ বছর শেখ হাসিনা আমল দেখেছি। এরকম যদি হয়। স্বচ্ছ স্বাভাবিক গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের যদি ঘাটতি থাকে, তাহলে এই জাতি আবার একটি ভয়ংকর বিপদের মধ্যে পড়ে যাবে। অন্যদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, নির্বাচন যত দেরি হবে, দেশ তত ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ৩ মার্চ সোমবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে চন্দ্রিমা উদ্যানে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা শেষে আমির খসরু বলেছেন, গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে এনে নির্বাচিত প্রতিনিধির মাধ্যমে জনগণের কাছে দায়বদ্ধ, জবাবদিহি সরকার হবে, জনগণ সেই অপেক্ষায় আছে। এজন্য নির্বাচনের দ্রুততার সম্পর্কে জনগণের মনে একই প্রশ্ন জাগছে, এটা যত দেরি হবে দেশ তত ক্ষতিগ্রস্ত।
কেনো নেতারা এত শঙ্কায়
বিএনপি নেতারা বারবার দ্রুত নির্বাচনের তাগিদ দিচ্ছেন এর পেছনে রয়েছে নানান ধরনের ব্যাখা। কারো কারো মতে, বিএনপি মনে করে ছাত্ররা নতুন দল করবে না করবে না বলে শেষমেষ রাজনৈতিক দল গঠন করে ফেলেছে। এখন এরা-ও জাতীয় নির্বাচনের দিকে যাবে। কিন্তু ছাত্রদের দলটি এখনো মাঠে তেমনভাবে প্রতিষ্ঠা পায়নি। কোনোভাবে বা কোনো প্রক্রিয়ায় যদি তাদেকে অদৃশ্য কোনো জায়গায় থেকে নির্বাচন করতে গ্রাউন্ড তৈরি করা দেযা হয় সেক্ষেত্রে সময় লাগবে। আর সে সময়টি যদি দীর্ঘমেয়াদী সংস্কারের নামে সরকার জাতীয় নির্বাচন দেরিতে আয়োজন করার পথে হাঁটে? অন্যদিকে মাঠে এমনিতেই দীর্ঘমেয়াদী সংস্কারের নামে একটি রাজনৈদিক দল মাঠে পানি ঘোরা করে রেখেছে। সেক্ষেত্রে ছাত্রদের নতুন প্লাটফরমও যদি একই দাবি করতে থাকে তাহলে সঙ্কট আরও ঘনীভূত হবে। সেজন্যও বিএনপি পক্ষ থেকে দ্রুত নির্বাচনের ব্যাপারে পশ্চিমাদের কাছেও বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। পশ্চিমাদের সাথে বেশ কয়েকটি বৈঠকে বিএনপি জানিয়েরছ বাংলাদেশের রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা বৈশ্বিক রাজনৈতিক দিক থেকেও জরুরি। আর সেকারণে সম্প্রতি বেশ কয়েকটি বৈঠকে বিাএনপি নেতারা পশ্চিমাদের জানিয়ে দিয়েছে তারা যেনো একটি দ্রুত নির্বাচনের ব্যাপারে অন্তর্বর্তী সরকারতে তাগাদা দেয়। আরেকটি সূত্র জানায় একটি প্রতিবেশী দেশও বাংলাদেশে একটি দ্রুত নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারে ভূ-রাজনৈতিক কারণে তাগাদা দিচ্ছে।
অবশেষে পশ্চিমাদের আশ্বস্ত করলেন করলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস
অবশেষে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবছরই হচ্ছে তা আশ্বস্ত করলেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আর সে নির্বাচন ডিসেম্বরের মধ্যেই হবে বলে জানালেন তিনি। ৩ মার্চ সোমবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসও এমনটাই জোড়ালোভাবে আশ্বস্ত করেছেন পশ্চিমাদের। তিনি বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং ভোট সম্ভবত এই বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে। সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় সফররত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) কমিশনার হাদিজা লাহবিব প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এলে তিনি এ কথা বলেন। জানা গেছে একিইসাথে ইউনুস সরকারের সরকারের সংস্কার কর্মসূচির ব্যাপারে তাদের গভীর পর্যবেক্ষণের বিষয়টিও উঠে আসে। এতে বাংলাদেশে কোনোভাবেই অগণতান্ত্রিক ফ্যাসিস্ট সরকার ভবিষ্যত মানুষের কণ্ঠরোধ করতে না পারে সে সংস্কারকে তারা সমর্থন দিচ্ছে এবং দিবে। আর একারণে কমিশনার ড. ইউনুসকে বলেন, আপনি এক ব্যতিক্রমী সময়ে অসাধারণ কাজ করেছেন। আমরা আপনাদের সঙ্গে সহযোগিতা আরও জোরদার করতে প্রস্তুত।
কিন্তু নির্বাচন কি অংশগ্রহণমূলক?
তবে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কি অংশগ্রহণমূলক হবে? জানা গেছে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হলে ভবিষ্যতে তা আরেক সঙ্কট সৃষ্টি করবে। তবে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে কারা কারা অংশ নেবে বা নিতে পারে তা এখনো বলা যাচ্ছে না। তবে একটি সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক একটি সংস্থা সম্প্রতি বাংলাদেশে এসেছিলেন সবদলের সাথে কথা বলে নির্বাচনের একটি পরিবেশের ব্যাপারে ধারণা নিতে। আন্তর্জাতিক সংস্থাটি সম্প্রতি পতিত সরকারের দল আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার সাথে কথা বলতেও চান। জানা গেছে সরকারের পক্ষ থেকে সায় দেয়া হয়নি। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে বাংলাদেশে যখন নির্বাচনের আয়োজন শুরু হয়ে যাবে তখন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির দৃষ্টি দেশটির প্রতি নিবন্ধ থাকবে। পশ্চিমারা সেসময়ে বাংলাদেশে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দাবিতে সরব হবে। প্রশ্ন হচ্ছে সেক্ষেত্রে সরকার কতটা সাড়া দেবে তা দেখতে জাতিকে একটু অপেক্ষা করতে হবে। তবে সম্প্রতি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশ নেয়ার ব্যাপারে একটি ধারণা পাওয়া গেছে। বিবিসি’তে ড. ইউনুস একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন কয়েকদিন আগে। এতে তিনি সাংবাদিকের এক প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন কিছু ইঙ্গিতপূর্ণ কথা। সাংবাদিকের প্রশ্ন ছিল আওয়ামী লীগ কি নিষিদ্ধ হবে বা নির্বাচনে অংশ নেবে কি না? আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতভেদ দেখা গেছে। বিভিন্নজন বিভিন্ন কথা বলছেন। এটা নিয়ে আপনার অবস্থানটা কী? এতে ড. ইউনুস বলেছেন, তিনি একটি ঐকমত্যের ওপর জোড় দিয়েছেন। বলেছেন, আমরা বরাবরই ফিরে যাচ্ছি ঐকমত্যে। সবাই মিলে যা ঠিক করবে আমরা তাই করব। এসময় বিবিসি সাংবাদিকের আরেকটি প্রশ্ন ছিল ড. ইউনুসের কাছে। জানতে চাওয়া হয় আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের ব্যাপারে তার (ড. ইউনুসের) সরাসরি অবস্থান নেই বা আওয়ামী লীগ কি নিষিদ্ধ হবে বা রাজনীতি করবে কিনা নির্বাচনে অংশ নেবে কি না? উত্তরে ড. ইউসুস বললেন, ‘আমি অত ডিটেইলসে যাচ্ছি না। আমার বরাবরই পজিশন হলো, আমরা সবাই এই দেশের নাগরিক। আমাদের এই দেশের ওপরে সমান অধিকার। আমরা সব ভাই ভাই। আমাদের এই দেশেই বাঁচতে হবে। এ দেশকেই বড় করতে হবে। কাজেই যে মত-দল করবে, তার মতো করে, সবকিছু করবে। এই দেশ থেকে কারও অধিকার কেড়ে নেওয়ার কোনো উপায় নেই। কিন্তু যে অন্যায় করেছে, যার বিচার হওয়া উচিত, তার বিচার হতে হবে। এটুকুই শুধু।’ ড. ইউনুসের উত্তরের মধ্যেই নিহিত আছে বাংলাদেশে আসলে অংশগ্রহণমূলক না দু’টি একটি দলের অংশগ্রহণের ত্রয়োদশ নির্বাচন হতে যাচ্ছে? তবে একটি বিষয় নিশ্চিত হওয়া গেছে পশ্চিমাদের চাপে সরকার দ্রুত নির্বাচনের দিকেই যাচ্ছে। কাউকে বাদ দিয়ে সে নির্বাচনের আয়োজনের ব্যপারে ড. ইউনুস খুব একটা আগ্রহ নেই। তবে এসব বিষয়গুলি দেকতে একটু অপেক্ষাই করতে হবে জাতিকে।