১৯ এপ্রিল ২০২৫, শনিবার, ০৪:০৯:৩০ পূর্বাহ্ন


ব্লগার সাংবাদিকদের বয়ানে দল চালাবে এনসিপি?
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৬-০৩-২০২৫
ব্লগার সাংবাদিকদের বয়ানে দল চালাবে এনসিপি?


নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি)’র নেতাদের রাজকীয় ঢংয়ে চলাফেরা আর লাগামহীন বক্তব্য নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইছে। এর পাশাপাশি প্রশ্ন দেখা দিয়েছে প্রকৃতপক্ষে এরা কাদের এজেন্ডা বাস্তাবায়নে মাঠে নেমেছে? এরা কেনো ২৪’র জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের এক বিশেষ সময়ে পাশে দাঁড়ানো দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী নিয়ে জাতির কাছে এমন বক্তব্য হাজির করেছে? প্রশ্ন দেখা দিয়েছে এরা কি দেশী-বিদেশী ব্লগার সাংবাদিকদের বয়ান শুনে দল চালাবে? 

কি করছে এনসিপি

জুলাই অভ্যুত্থানের সামনের সারির নেতাদের নিয়ে এনসিপি’র যাত্রা শুরু। এনসিপি আহ্বায়ক হয়েছেন নাহিদ ইসলাম। দল গঠন করেই এনসিপি’র নেতারা বলেছেন, তারা সামনের কথা বলতে চায়। পেছনের ইতিহাস অতিক্রম করে সম্ভাবনার বাংলাদেশের কথা বলতে চায়। এর পাশাপাশি নাগরিক পার্টির নেতারা ভারত ও পাকিস্তানপন্থী রাজনীতির ঠাঁই বাংলাদেশে হবে না বলেও সাফ সাফ জানিয়ে দিয়েয়েছেন। পরিস্কার বার্তা দিয়েছেন সংসদে কে যাবে তা জনগণ নির্ধারণ করবে, ভারত নয়। বলেছেন, বিভাজনের রাজনীতির দিন শেষ। তরুণরা নেতৃত্ব দিয়ে চাঁদাবাজ ও দখলদারমুক্ত বাংলাদেশ গড়বে। সেখানে দিনের ভোট রাতে হবে না। বলেছেন, নেতা নির্ভর নয় নীতিনির্ভর বাংলাদেশ হবে। থাকবে না পরিবারতন্ত্র । ক্ষমতা শুধু ব্যক্তি বা পরিবারের কাছে কুক্ষিগত থাকবে না।


এনসিপির শীর্ষ নেতৃত্বের ক’জন। জুলাই আন্দোলনে যারা ছিলেন সর্বাগ্রে, এখনও মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে তারা/ফাইল ছবি


কথার সাথে কাজের মিল নেই

এমন জ্বালাময়ী আশ্বাস দিয়ে এনসিপি’র নেতারা রাজনৈতিক অঙ্গনে বলা যায় চমক ফেলে দেয়। কিন্তু বর্তমানে চমকে দিয়েছে তাদের বেশভুশায়। এনসিপি উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠকের পদ পাওয়ার সারজিস আলম গত ২৪ মার্চ সোমবার তার নিজ জেলা পঞ্চগড়ে যান। গণমাধ্যমের খবরে দেখা যায়, ব্যান্ড পার্টি বাজিয়ে শতাধিক গাড়ির বহর নিয়ে বিরাট শোডাউন করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক থেকে রাজনৈতিক নেতা বনে যাওয়া সারজিস। উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠকের পদ পাওয়ার পর থেকেই সারজিস আলমের ছবিসংবলিত পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে গেছে পঞ্চগড়। 

পঞ্চগড়বাসীর সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতেই বিলাসবহুল সব গাড়ি নিয়ে সারজিস শোডাউনে সবমহলই অবাক। দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। পুরোনো রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তনের লম্বা লম্বা কথা বলে এনসিপির প্রথম সারির এই নেতার চোখ ধাঁধানো মহড়ায় হতবাক সকলে। অভ্যুত্থানে জড়িত ছাত্রনেতা থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষও সমালোচনা করেছেন। নবগঠিত এনসিপির এক নবীন নেতাও যে এভাবে শোডাউন করবেন তা পঞ্চগড়ের অনেকে কল্পনা করতে পারেননি। 


মানিক মিয়ায় দলের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠান পানে দেশের মানুষের আগ্রহ ছিল ব্যাপক/ফাইল ছবি


লাগামহীন বক্তব্য

সম্প্রতি এনসিপি’র শীর্ষ নেতার লাগামহীন বক্তব্য পুরো দেশবাসীকে অবাক করে দেয়। বিশেষ করে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গে বৈঠক নিয়ে ফেসবুকে এনসিপি’র মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলমের ভিন্ন ভিন্ন পোস্ট নিয়ে খোদ দলটির ভেতরেই অস্বস্তি দেখা দিয়েছে। দলের এমন শীর্ষ নেতার বক্তব্যকে পার্টির নেতাকর্মীদের পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পাশে সেনাবাহিনীর পাশে দাঁড়ানোর বিষয়টিকে অপমান করা হয়েছে। এনসিপি’র নেতাদের এমন পোস্ট হাস্যরসের সৃষ্টি করেছে যেমন তেমন উদ্বেগও তৈরি করেছে। ‘রিফাইন্ড (পরিশুদ্ধ) আওয়ামী লীগ’ গঠনে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে চাপ দেওয়ার বিষয়ে হাসনাত আবদুল্লাহ সম্প্রতি ফেসবুকে যে পোস্ট দিয়েছেন, তাতে প্রতিক্রিয়া-ও জানিয়েছে সেনাবাহিনী সদর দপ্তর। সুইডেনভিত্তিক নেত্র নিউজের এক প্রতিবেদনে এ প্রতিক্রিয়া জানানোর তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে সেনাসদরকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, হাসনাত আবদুল্লাহর পোস্ট ‘সম্পূর্ণ রাজনৈতিক স্ট্যান্টবাজি বৈ অন্য কিছু নয়’।

শেষ কথা

দলটির যাত্রা শুরু করতে না করতে প্রশ্ন দেখা দেয় এদের পেছনে কারা? এদের বিপুল অর্থের যোগানদাতা কোন কোন সে-ই এলিট গোষ্ঠি? এরা কাদের আদর্শ প্রতিষ্ঠায় মাঠে নেমেছে। আর এমন জল্পনা-কল্পনার মাঝে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে বুর্জোয়া পার্টির লেবাস পরে আসলে এরা কি পারবে কিছু একটা পরিবর্তন আনতে? পারবে কি একটি রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি বিকল্প বন্দোবস্থ তৈরি করতে? পারবে কি ব্যতিক্রম কিছু করে দেখাতে? উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠকের পদ পাওয়ার পর থেকেই পঞ্চগড়ের মাটিতে সারজিস আলমরে সফরে দেবীগঞ্জ ও বোদায় পথসভায় বক্তব্যে বলে গেছেন কিছু জ্বালাময়ী কথা। 

তিনি বলেছেন ‘আগামীর বাংলাদেশে কেউ আর দলের নাম ও মার্কা দেখে ভোট দেবে না। এতদিন সাধারণ মানুষকে নেতারা বিভিন্নভাবে ব্যবহার করেছেন। ভোটের আগের দিন যান আর কিছু টাকা ধরিয়ে দেন। ভোটের পরে যে কোনো কাজের জন্য গেলে, আগে টাকার জন্য হাত পেতে থাকেন। নতুন বাংলাদেশে এগুলো হতে দেওয়া যাবে না।’ স্থানীয়দের উদ্দেশে সারজিস বলেন, ‘আমরা ভুল করলে শুধরে দেবেন। কোনো দলের অন্ধ ভক্ত হবেন না। 

প্রশ্ন হচ্ছে এগুলো কি কথার কথা? আরও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে যে, আওয়ামী লীগ’ গঠনে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে চাপ দেওয়ার বিষয়ে হাসনাত আবদুল্লাহ সম্প্রতি ফেসবুকে যে পোস্ট দিয়েছেন, তার প্রতিক্রিয়াও সেনাবাহিনী সদর দপ্তর যে বক্তব্য দিয়েছে তার ভাষা নিয়ে। এতে বলা হয়েছে , হাসনাত আবদুল্লাহর পোস্ট ‘সম্পূর্ণ রাজনৈতিক স্ট্যান্টবাজি বৈ অন্য কিছু নয়’। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী যারা দেশের সব সঙ্কটময় মুহূর্তে জনগণের পাশে দাঁড়ায় তাদের পক্ষ থেকে একটি দল সম্পর্কে এধরনের মন্তব্য সাধারণভাবে দেখা ঠিক হবে না। সেক্ষেত্রে নতুন গর্জে ওঠা এই এনসিপি নামের দলটির ভবিষ্যত কি হবে তা জানতে হয়তো বেশি সময় নেবে না।

শেয়ার করুন