১৯ এপ্রিল ২০২৫, শনিবার, ০৫:০২:১৫ পূর্বাহ্ন


কেউ চায় না বাংলাদেশ ভূরাজনীতির ক্রীড়া ভূমিতে পরিণত হোক
দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ হবে কী?
খন্দকার সালেক
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৯-০৪-২০২৫
দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ হবে কী? নির্বাচন কমিশন ভবন


বাংলাদেশের মতো বহুমুখী রাজনৈতিক বিভাজন থাকা অস্থির সমাজে একটি সুষ্ঠু, অবাধ নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য প্রয়োজন শক্তিশালী পুলিশ প্রশাসন, নিরপেক্ষ ক্রিয়াশীল বেসামরিক-সামরিক প্রশাসন এবং সর্বোপরি একটি স্বাধীন শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন। অন্তর্বর্তী সরকার আগস্ট ২০২৪ থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ৮ মাসে শক্তিশালী পুলিশ প্রশাসন, বেসামরিক প্রশাসন গড়ে তুলতে পারেনি। জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় পুলিশ প্রশাসনের মনোবল ভেঙে গেছে। অনেক পুলিশ ছাত্র-জনতাকে হত্যা করেছে, অসংখ্য থানা ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, অস্ত্র লুটপাট হয়েছে, অনেক পুলিশ সদস্যকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।

একইভাবে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় প্রশাসনেও ব্যাপক পরিবর্তন করা হয়েছে। দেশব্যাপী প্রশাসনিক ব্যবস্থা এখনো পুরো মাত্রায় ক্রিয়াশীল হয়নি। বিভিন্ন পর্যায়ে এখনো খুন রাহাজানি, লুটপাট, দখলদারি চলছে। সেনা প্রশাসন, বেসামরিক প্রশাসন, কেন্দ্রীয় প্রশাসনের মধ্যে প্রত্যাশিত সমন্বয় না থাকায় এবং বিশেষত মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে ন্যূনতম ঐক্য সৃষ্টি না হওয়ায় বর্তমান সরকারের পক্ষে ২০২৫-এর মধ্যে কাক্সিক্ষত অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান কতটা সম্ভব, সেই বিষয়ে সচেতন মহলের মধ্যে সন্দেহ দানা বাঁধতে শুরু করেছে। 

অথচ যতদিন যাচ্ছে দেশের ঘনীভূত সমস্যা সমাধানে অন্তর্বর্তী সরকারের সীমাবদ্ধতা সুস্পষ্ট হয়ে উঠছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা সুস্পষ্ট থাকলেও এ বিষয়গুলো নিয়ে ঐকমত্য দূরের কথা ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। মূলধারার রাজনৈতিক দল বিএনপির সঙ্গে সম্প্রতি গঠিত তরুণ নেতৃত্বের দল জাতীয় নাগরিক পার্টির মতপার্থক্য ধীরে ধীরে সংঘর্ষের পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। 

যতদিন যাচ্ছে নতুন দলটির প্রতি সরকারের সহানুভূতি প্রকাশিত হতে থাকায় সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। সরকার থেকে পক্ষপাতদুষ্ট কয়েকজন বিতর্কিত উপদেষ্টার অপসারণ করার বিষয়েও দাবি উঠতে শুরু করেছে। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকার প্রধানকে দীর্ঘ সময়ের জন্য রাষ্ট্র প্রধান করার কথাও শোনা যাচ্ছে। প্রধান প্রতিবেশ দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সহঅবস্থান নিয়েও তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। কেউ চায় না বাংলাদেশ আঞ্চলিক এবং গ্লোবাল ভূরাজনীতির ক্রীড়া ভূমিতে পরিণত হোক।

যাই হোক দেশি-বিদেশি সচেতন মহল চায় সংবিধানের কিছু ধারা বিশেষত নির্বাচনব্যবস্থা, সরকারের ধরন, বিচার, আইন, স্থানীয় সরকারবিষয়ক বিষয়াদির দ্রুত সংস্কার করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং জনগণের অবাধ ভোটাধিকার নিশ্চিত করা। জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি ছাড়া দেশের মৌলিক সমস্যাগুলো সমাধান কোনোভাবেই সম্ভব না। যতদিন যাচ্ছে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের পটভূমি, বিভিন্ন পর্যায়ে দেশি-বিদেশি নানা মহলের ষড়যন্ত্র এবং সম্পৃক্ততা নিয়ে নানা তথ্যউপাত্ত সমন্বিত সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে। সব হত্যাকাণ্ড, ধ্বংসযজ্ঞ, মব জাস্টিসের নিরপেক্ষ বিচার হোক সেটি সবার কাম্য। কিন্তু বর্তমান অবস্থায় সেই বিচার কতটা নিরপেক্ষ হবে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ আছে। ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে বিভিন্ন বিষয়ে নানা সংবাদ প্রকাশিত হতে শুরু করেছে। সরকারঘনিষ্ঠ একটি মহলের বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী অবস্থান সুস্পষ্ট হয়ে ওঠায় সরকারের অবস্থান বিতর্কিত হয়ে যাচ্ছে। ২৪-কে ৭১-এর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দাঁড় করানোর দূরভিসন্ধি দৃশ্যমান। 

এখনো ডিসেম্বর ২০২৫ আট মাস সময় আছে। সরকার এবং রাজনৈতিক দলগুলো আন্তরিক হলে নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের এখনো পর্যাপ্ত সময় আছে। তবে দেশপ্রেমিক সব মহলকে সংযমী হয়ে ন্যূনতম সমঝোতার ভিত্তিতে একতাবদ্ধ হতে হবে। জনতার শক্তির ওপর আস্থা রাখতে হবে। নিজেদের রাজনৈতিক অঙ্গীকারসমূহ নিয়ে দেশের মালিক জনতার দরবারে যেতে হবে। বিশেষ প্রয়োজন পুলিশ এবং মাঠপর্যায়ের বেসামরিক প্রশাসন শক্তিশালী করা। অবিলম্বে অসামাজিক কার্যক্রম কঠোর হস্তে দমন করা। রাজনৈতিক দলগুলোকেও নিজেদের ক্যাডার বাহিনী কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কোন দল নির্বাচন করবে, কোন দল করবে না, সেটি নির্ধারণের ভার জনগণের ওপর ছেড়ে দিতে হবে। জনগণ জানে কারা, কখন, কীভাবে জনগণকে অধিকার বঞ্চিত করে দেশকে অবাধ লুটপাটের চারণ ভূমি বানিয়েছে। সবাইকে পরিবেশ সৃষ্টি করেই নির্বাচনের মাধ্যমে বর্তমান সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। 

যথাসম্ভব সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করে নির্বাচন দ্রুততম সময়ে করে এখন প্রাধিকার হওয়া প্রাসঙ্গিক। 

শেয়ার করুন