১৩ মে ২০২৫, মঙ্গলবার, ০৭:২৭:১৯ পূর্বাহ্ন


কাদের স্বার্থে নির্বাচনের তারিখ দিচ্ছে না অন্তর্বর্তী সরকার?
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৬-০৪-২০২৫
কাদের স্বার্থে নির্বাচনের তারিখ দিচ্ছে না অন্তর্বর্তী সরকার?


ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কবে হবে আদৌও হবে কি-না তা নিয়ে বিএনপি’র মধ্যে ধোয়াশার শেষ নেই। এমনই অনিশ্চিত অবস্থার মধ্যে বলা যায় ধোয়াশা দূর করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাচ্ছেন বিএনপি’র নেতারা। ধারণা করা হচ্ছে বুধবার (১৬ এপ্রিল) প্রধান উপদেষ্টা বাসভবন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে জাতীয় নির্বাচনের জন্য সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ এবং নির্বাচন ঘিরে বিভ্রান্তি দূর করা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। এছাড়া নির্বাচন নিয়ে সরকারের মনোভাব কী, তা স্পষ্ট হওয়ার চেষ্টা থাকতে পারে। তবে এরই ফাঁকে সর্বত্র সন্দেহ কেনো অন্তর্বর্তী সরকার চাইছে নির্বাচনের রোড ম্যাপ দিতে। কেনো এখনো সুনিদিষ্ট তারিখ দেয়া হচ্ছে না। কাদের পরামর্শে বা সুবিধায় অন্তর্বর্তী সরকার এমনটা করছেন? এসব নিয়ে ধোয়াশার শেষ নেই। 

বিএনপি বারবারই দাবি করে আসছেন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য নির্বাচন ব্যবস্থার যতটুকু সংস্কার প্রয়োজন ততটুকু করেই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হোক। তবে এ নিয়ে এখন পর্যন্ত সরকারের অবস্থান স্পষ্ট নয়। সরকার ঠিক কতটুকু সংস্কার করতে চায়, সেটাও স্পষ্ট করছে না। ‘কম সংস্কার’ ও ‘বেশি সংস্কার’-এমন বক্তব্য সামনে নিয়ে এসে এর দায়দায়িত্ব অনেকটাই রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর ছেড়ে দিতে চাইছে। কিন্তু কেনো? 

তরুণদের দলকে সমর্থন দিচ্ছে ড. ইউনুস?

বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে যুক্ত হওয়া নতুন ভোটারদের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দেওয়ার সুযোগ দিতে চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এমন খবর গণমাধ্যমের খবরে দেখা গেছে। এতে বলা হয়েছে এ লক্ষ্যে ভোটার তালিকা আইন এবং ভোটার তালিকা বিধিমালায় সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে ইসি সচিবালয়। এই সংশোধনীর মাধ্যমে প্রতিবছর ২ জানুয়ারি খসড়া ভোটার তালিকা এবং ২ মার্চ চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশে বর্তমানে যে নিয়ম রয়েছে, সেটির পাশাপাশি নতুন বিধান যুক্ত করা হচ্ছে। ওই বিধান যুক্ত হলে বছরের যে কোনো সময়ে হালনাগাদ ভোটার তালিকা প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা পাবে নির্বাচন কমিশন। আগামী সংসদ নির্বাচনের আগে অর্থাৎ চলতি বছরের যে কোনো সময়ে খসড়া ও চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করতে পারবে। এর ফলে ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশনের তালিকায় যুক্ত হওয়া অন্তত ৪৩ লাখ ২৭ হাজারের বেশি নতুন ভোটার আগামী জাতীয় নির্বাচনে ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবেন। আর ভোটারদের সিংহভাগই তরুণ। মজার ব্যাপার হচ্ছে গণমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে নির্বাচন যত বিলম্ব হবে, তরুণ ভোটারের সংখ্যা তত বাড়বে। 

নতুন দলকে সুযোগ দিতে চান ড.ইউনুস?

জুলাই অভ্যুত্থানের সামনের সারির নেতাদের নিয়ে নতুন দলের যাত্রা শুরু হয়েছে। এই নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক হয়েছেন নাহিদ ইসলাম। সদস্য সচিব হয়েছেন আখতার হোসেন। জাতীয় নাগরিক পার্টির ২১৭ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদনও দেওয়া হয়েছে। দেশের জনগণের স্বার্থকে সামনে রেখে রাষ্ট্রকে বিনির্মাণ করার কথা ঘোষণা করেছেন দলের তরুণ ওই নেতারা। বলেছেন, তারা সামনের কথা বলতে চায়। পেছনের ইতিহাস অতিক্রম করে সম্ভাবনার বাংলাদেশের কথা বলতে চায়। এর পাশাপাশি নাগরিক পার্টির নেতারা ভারত ও পাকিস্তানপন্থি’ রাজনীতির ঠাঁই বাংলাদেশে হবে না বলেও সাফ সাফ জানিয়ে দিয়েয়েছেন। আর বলা হচ্ছে, সংসদে কে যাবে তা জনগণ নির্ধারণ করবে, ভারত নয়। আশাবাদের বাণী শুনিয়ে বলেছেন, বিভাজনের রাজনীতির দিন শেষ। তরুণরা নেতৃত্ব দিয়ে চাঁদাবাজ ও দখলদারমুক্ত বাংলাদেশ গড়বে। সেখানে দিনের ভোট রাতে হবে না। বলেছেন, নেতা নির্ভর নয় নীতিনির্ভর বাংলাদেশ হবে। এদিকে আরেকটি নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটতে যাচ্ছে শোনা যাচ্ছে। জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের নেতাদের উদ্যোগে এই রাজনৈতিক দলটি এপ্রিলে আত্মপ্রকাশ করার কথা শোনা যাচ্ছে। নতুন এখনো নিবন্ধন পায়নি। আশা করা যাচ্ছে তারা দ্রুতই নিবন্ধন পেয়ে যাবে। কিন্ত তার চেয়ে বড়ো বিষয় হচ্ছে নতুনদের নিবন্ধন পাওয়া ও দলের ভিত্তি মজবুত করতে বেশ সময়ের প্রয়োজন। এদিকে বিএনপি চাইছে দ্রুত নির্বাচন। আবার নির্বাচন যতো দেরি হবে ততই প্রতিবছর তরুণ ভোটার বাড়তে থাকবে। কারো কারো মতে তরুণ ভোটাররা নতুন দলের প্রতি আসক্তি থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে বিএনপি’র মত পুরোনো দলের পক্ষে তরুণদের কাছে টানা কষ্টকর হতে পারে বলে মনে করেন কেউ কেউ। আর এমনটাই বুঝে এর পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ইমেজে গড়ে উঠা নতুন দলগুলি হয়তবা সুযোগ করে দিতে কেউ তৎপর কি-না সে প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সর্বত্র। আবার সন্দেহ বেশি খুরপাক খায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে তাত্ত্বিক ভূমিকা রাখা যখন কবি ও রাষ্ট্রচিন্তক ফরহাদ মজহার বলে বসেন, কমিউনিটি যখন দাঁড়িয়ে যায়, এলাকা যখন দাঁড়িয়ে যায়, তখনই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের উন্মেষ ঘটে। ভোট দিয়ে হয় না, ভোটে লুটেরা-মাফিয়া শ্রেণি আসে।

শেয়ার করুন