যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য অভিবাসন প্রক্রিয়াকে আরো কঠিন ও ব্যয়বহুল করে তোলার উদ্যোগ নিয়েছেন কংগ্রেসের রিপাবলিকান সদস্যরা। হাউস জুডিশিয়ারি কমিটির চেয়ারম্যান ও ওহাইওর কংগ্রেসম্যান জিম জর্ডান গত ৩০ এপ্রিল কমিটির একটি বাজেট রিকনসিলিয়েশন বিলের শুনানিতে জানান, আশ্রয় প্রার্থনার জন্য ১ হাজার ডলার ফি ধার্য করা হবে। পাশাপাশি, ছয় মাস অন্তর কাজের অনুমতির জন্য ৫০০ ডলার এবং আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে চাইলে শত শত ডলার ফি দিতে হবে। এই বিলটি হাউস জুডিশিয়ারি কমিটি অনুমোদন করেছে। বিলটি বাস্তবায়িত হলে আগামী ১০ বছরে সরকার প্রায় ৭৭ বিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করতে পারবে বলে জর্ডান আশা প্রকাশ করেছেন। এই অর্থ ব্যবহৃত হবে অভিবাসন আদালত পরিচালনার দায়িত্বে থাকা এক্সিকিউটিভে অফিস ফর ইমিগ্রেশন রিভিউ এবং বৈধ অভিবাসন আবেদন প্রক্রিয়া পরিচালনাকারী ইউএস সিটিজেনাশপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসেস (ইউএসসি আইএস)-এর কার্যক্রমে। বিলটি বিভিন্ন আবেদন প্রক্রিয়ায় বাধ্যতামূলক ফি আরোপ করছে। প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয়ের জন্য আবেদন করতেও ১ হাজার ডলার ফি দিতে হবে, যা মওকুফযোগ্য নয়। ফলে অনাথ শিশু এবং আটক থাকা আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য আশ্রয় পাওয়া কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়বে। এমনকি মুক্ত অবস্থায় থাকা আবেদনকারীরাও প্রতি ছয় মাস অন্তর ৫৫০ ডলার এবং বছরে অতিরিক্ত ১০০ ডলার ফি দিয়ে কাজের অনুমতি পেতে হিমশিম খাবে।
নতুন এই নিয়ম অনুযায়ী, যদি একজন আবেদনকারীকে সিদ্ধান্তের জন্য পাঁচ বছর অপেক্ষা করতে হয়, তাহলে তাকে প্রায় ৭ হাজার ডলার পর্যন্ত ফি দিতে হতে পারে। আবেদনের জন্য ১ হাজার ডলার প্রতি ছয় মাসে ৫৫০ ডলার করে ও পাঁচ বছরের জন্য অতিরিক্ত ৫০০ ডলার। সিদ্ধান্ত নেতিবাচক হলে আবেদনকারীকে আপিল করতে ৯০০ ডলার ফি দিতে হবে, যা বর্তমানে ১১০ ডলার। শুধু আশ্রয়ই নয়, মানবিক প্যারোলের জন্য ১ হাজার ডলার, টেম্পোরারি প্রোটেকটেড স্ট্যাটাসের (টিপিএস) জন্য ৫০০ ডলার (বর্তমানে ৫০ ডলার) এবং স্পেশাল ইমিগ্র্যান্ট জুভেনাইল স্ট্যাটাসের জন্য ৫০০ ডলার ফি ধার্য করা হবে। এমনকি যারা শিশুদের আশ্রয় দিতে চান, তাদেরও গুনতে হবে ৮ হাজার ৫০০ ডলার, যার মধ্যে ৫ হাজার ডলার ফেরত দেওয়া হতে পারে যদি শিশু প্রতিটি শুনানিতে উপস্থিত থাকে। এই ফি একাই শিশুদের সরকারি শেল্টার থেকে মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা রুদ্ধ করে দেবে।
বিলটি আরো দুটি নতুন ‘শাস্তিমূলক ফি’ আরোপ করছে। সীমান্ত পেরিয়ে ধরা পড়া প্রত্যেক ব্যক্তি ৫ হাজার ডলার ফি দিতে বাধ্য হবেন, যেখানে বর্তমানে সর্বোচ্চ জরিমানা ২৫০ ডলার। একইভাবে আদালতে হাজির না হওয়া অভিবাসীদের ক্ষেত্রেও একই পরিমাণ ফি আরোপ করা হবে। আরো চমকপ্রদ বিষয় হলো, বিল অনুযায়ী যে কোনো ব্যক্তি যদি আদালতে শুনানি মুলতবি রাখতে চান, তাকে ১০০ ডলার ফি দিতে হবে। এই নিয়ম বন্দি অবস্থায় থাকা ব্যক্তিদের জন্যও প্রযোজ্য, ফলে আইনি সহায়তা পাওয়ার জন্য সময় চাওয়াটাও অনেকের জন্য কঠিন হয়ে পড়বে। এই প্রস্তাব নিয়ে অভিবাসন বিশেষজ্ঞ ও মানবাধিকার কর্মীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। আমেরিকান ইমিগ্রেশন ল ইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র পরিচালক গ্রেগ চেন বলেন, এই ‘নিষ্ঠুর ফি’ অনেক মানুষের জন্য বৈধ অভিবাসনের পথ বন্ধ করে দেবে। তার ভাষায়, ঐতিহাসিকভাবে আশ্রয় আবেদন বিনামূল্যে বা খুব কম খরচে করা যেতো। কারণ মানবিক দিক বিবেচনায় রাখা হতো। নতুন প্রস্তাবে কোনো ধরনের ফি মওকুফের সুযোগ রাখা হয়নি, যা এই ব্যবস্থাকে আরো নিষ্ঠুর করে তুলবে।
জাতীয় অভিবাসন ফোরামের নির্বাহী পরিচালক জেনি মারে বলেন, ইউএসসি আইএস মূলত আবেদনকারীদের ফি থেকেই চলে এবং কিছু ফি নির্ধারণ যৌক্তিক হলেও আশ্রয়প্রার্থীদের ওপর ফি চাপানো মানবিক সহায়তা কর্মসূচিগুলোর মূল উদ্দেশ্যকে ব্যর্থ করে দেবে। প্রস্তাবিত ফি কাঠামো অনুযায়ী, শুধু আশ্রয় আবেদন থেকেই আগামী ১০ বছরে ৭৪৮ মিলিয়ন ডলার, টিপিএস ও কাজের অনুমতি নবায়ন ফি থেকে যথাক্রমে- ২ বিলিয়ন ডলার এবং ৪.৭ বিলিয়ন ডলার আয় হবে বলে দাবি করা হয়েছে। যদিও এতো বড় ফি বৃদ্ধির কারণে আবেদনকারীর সংখ্যা হ্রাস পেতে পারে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে ১১ লাখেরও বেশি অভিবাসন মামলা বিচারাধীন, যা ২০২০ সালের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। রিপাবলিকানদের মতে, দীর্ঘদিন ধরে ফি হালনাগাদ না হওয়ায় এমন পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। তবে অভিবাসন বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের কঠোর আর্থিক বাধা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল এবং বাস্তবতার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।