জাতীয় নির্বাচনের নির্ধারিত সময়সীমা নিয়ে কিছুটা নিশ্চয়তা পাওয়া গেলেও জুলাই ঘোষণার প্রধান নিয়ামক জাতীয় ঐকমত্য বিষয়ে ৩২ দলের সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের ধারাবাহিক আলোচনায় জটিলতা কাটেনি। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রণীত সংস্কার কমিশনগুলো অতি প্রয়োজনীয়, প্রয়োজনীয় এবং অপেক্ষাকৃত কম প্রয়োজনীয় সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছে। এগুলোকে সমন্বিত করে সংস্কার কমিশন বিএনপি, জামায়াতসহ অধিকাংশ প্রান্তিক দলের মতামত গ্রহণ করে। দফায় দফায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা হয়। কিন্তু হাতেগোনা কয়েকটি বিষয়ে সম্মতি ছাড়া অর্জন সামান্য। প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমানো, সর্বোচ্চ দুই টার্ম অথবা ১০ বছর কার্যকাল এবং একই সঙ্গে সংবিধানের মূলনীতি পরিবর্তন প্রস্তাব নিয়ে ঐকমত্য হচ্ছে না। সরকারের বর্ষপূর্তি হতে চলেছে। জুলাই মাসে জুলাই সনদ ঘোষণার আগে মৌলিক কিছু বিষয়ে ঐক্যমত হতেই হবে। কিন্তু বিদ্যমান অবস্থায় সেটি হবে কি না সন্দেহ সংশয়।
সরকার যে ৩২ দলের সঙ্গে আলোচনা করছে তার বাইরেও বিশাল জনগোষ্ঠী এবং রাজনৈতিক সমাজ রয়েছে। বাংলাদেশের বাস্তবতায় বিএনপি এবং জামায়াত ছাড়া সরকারের সঙ্গে আলোচনায় থাকা রাজনৈতিক দলগুলোর রাজনৈতিক ভিত্তি নেই। এমতাবস্তায় অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত হবে না বিশাল পরিসরের সংস্কার বিষয়ে ঐকমত্য আশা করা। সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান নিয়োগ বিষয়ে নির্বাচিত সরকারের নির্বাহী ক্ষমতা সীমিত করার বিষয়ে বিএনপির মতামতের যৌক্তিকতা আছে। এই সমস্ত স্পর্শকাতর বিষয়গুলো নির্বাচিত সরকার এবং নির্বাচিত সংসদের ওপর ছেড়ে দেওয়াই যুক্তিযুক্ত হবে। কনস্টিটিউশন সংস্কার বা মৌলিক পরিবর্তন নির্ভর করবে নির্বাচিত সংসদের ওপর। বিশাল ফর্দের সংস্কার তালিকা নিয়ে সময় নষ্ট না করে সম্মত কিছু মৌলিক সংস্কার ঘোষণা দিয়ে সরকারের উচিত নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট পথে অগ্রসর হওয়া।
এখন মৌলিক প্রশ্ন নির্বাচনের আগে নির্দলীয়, নিরপেক্ষ, কেয়ার টেকার সরকার গঠন হবে কি না? বিশেষত যখন অন্তর্বর্তী সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, জামায়াত নির্বাচনের আগে সকল দলের জন্য লেভেল প্লে গ্রাউন্ড নিশ্চিত করার কথা বলছে, নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। আশা করি অন্তর্বর্তী সরকার সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলার জন্য সময় উপযোগী কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
১২ দিনব্যাপী ইরান-ইসরায়েল রক্তক্ষয়ী সংঘাত কিন্তু বাংলাদেশসহ বিশ্বসমাজকে ঘুম ভাঙার সংকেত দিয়ে গেছে। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, কঠোর মুদ্রানীতি, ভঙ্গুর ব্যাংকিং সেক্টর, বিনিয়োগে বান্ধতা কিন্তু বাংলাদেশ অর্থনীতির ওপর কালো ছায়া ফেলেছে। অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়েছে, অনেকগুলো রুগ্ণ হয়ে পড়েছে, ১ লাখ মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে, সরকারি অফিস, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে অরাজকতা চলছে। ডেঙ্গু, করোনা চোখ রাঙাচ্ছে। এই ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলার ক্ষমতা অন্তর্বর্তী সরকারের সীমিত সেটি এখন প্রমাণিত।
সাধারণ জনসাধারণ সংস্কারের বিশাল ফর্দ বুঝবে না। ওরা চায় নুন আনতে যেন পান্তা না ফুরোয়, নিজেদের ভোট নিজেরা যাকে খুশি তাকে দিয়ে নিজেদের পছন্দের মানুষদের সরকারে পাঠাতে। ডাল-ভাত-মাছে শান্তিতে নিরাপদে বসবাস করতে।
আশা করি জাতীয় ঐকমত্য প্রচেষ্টায় যতটুকু অর্জন হয়েছে সেগুলোর ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে নির্বাচনে সহায়ক সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রস্তুত করা।