২৫ এপ্রিল ২০১২, বৃহস্পতিবার, ০১:৩৭:১৯ অপরাহ্ন


দেশকে বাহাউদ্দিন নাছিম
তারা চায় ক্ষমতা ও নৈরাজ্য তৈরির পথ
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৬-০৪-২০২৩
তারা চায় ক্ষমতা ও নৈরাজ্য তৈরির পথ প্রধানমন্ত্রীর সাথে বাহাউদ্দিন নাসিম


আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেছেন, তারা চায় ক্ষমতা, তারা চায় নৈরাজ্য সৃষ্টি করে লুটপাট তৈরির পথ। দেশ সেবা না। আমেরিকা থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকার সাথে এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি একথা বলেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ

দেশ: আপনারা দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজনের জন্য বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছেন বলে দাবি করছেন। এরপরেও বিএনপি বিশেষ করে সম্প্রতি অনুষ্ঠিতব্য সিটি কর্পোরেশনে অংশ নিচ্ছে না। বিএনপি’র নেতাদের অভিযোগ আপনাদের সরকারের অধীনে কোনোভাবেই একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না-এবিষয়টি কিভাবে দেখেন?

আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম : আমরা প্রথমত বিশ্বাস করি গণতন্ত্র। এখন পর্যন্ত সব চাইতে সর্বোত্তম পদ্ধতি। গণতান্ত্রিক পন্থায়ই সরকার পরিবর্তন হবে। জনগণের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাই দেশ পরিচালনা করবে। গণতান্ত্রিক পথে জনগণ স্বাচ্ছন্দে ভোট দেবে। ভোট যাতে দিতে পারে নির্ভয়ে,বাধাহীনভাবে। এবং অবাধ নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক একটি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। এমন নির্বাচনে জনগণের অংশগ্রহণটাই হবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সেই জনগণের ওপর আমরা দায়বদ্ধ।  এই জনগণের ওপর যারা শ্রদ্ধাশীল তারাইতো গণতন্ত্রের ওপর শ্রদ্ধাশীল হয়। কেননা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন জনগণ। জনগণের কাঠগড়াতেই আমাদের দাঁড়াতে হবে। তাই তাদের কাছেই যখন যেতে হবে তখন নির্বাচনই আমাদের একমাত্র পথ। নির্বাচনের বাইরে অন্যকোনো পথ বা প্রক্রিয়া আছে কি? নির্বাচন ছাড়া কি তারা ক্ষমতায় যেতে পারবে? যারা দেশ পরিচালনা করতে চায় অথচ নির্বাচনে যেতে চায় না এবং জনগণের ওপর আস্থাশীল ছাড়া তারা কিভাবে দেশ পরিচালনা করবে?  আসলে যারা ক্ষমতায় যেতে চায় তারা কিন্তু নির্বাচনে যেতে চায় না। তাহলে তাদের উদ্দেশ্য কি? আসলে তারা যে কোনো পদ্ধতিতে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। সে পদ্ধতি হলো অগণতান্ত্রিক স্বৈরাচারি..। অথবা বিরাজনীতিকরণের কোনো পথ। তারা চায় সন্ত্রাস, নৈরাজ্য এবং অশুভ পদ্ধতি। যারা যেন তেনভাবে ক্ষমতায় যেতে চায় সেই শক্তিতো গণতান্ত্রিক হতে পারে না। সেই শক্তিতো জনগণের প্রতি আস্থাশীল হতে পারে না। জনগণের প্রতি যাদের আস্থা নেই, জনগণের প্রতি যাদের বিশ্বাস নেই, জনগণকে যারা ভয় পায়, জবাবদিহিতার জায়গায় যেতে চায় না- তারা যদি নির্বাচনে না আসে তাহলে কি তাদের উদ্দেশ্য? এটাই যদি তাদের উদ্দেশ্য হয় তাহলে তো হবে না। যারা নির্বাচনে যেতে চায় না তাদের উদ্দেশ্যই যদি একটা হয় যে তাদের ক্ষমতায় যেতে হবে স্বৈরাচারি কায়দায়। যারা সামরিকতন্ত্র জারি করেছিল, অতীতে যারা গণতন্ত্র হত্যা করেছিল, কারফিউ কায়েম করেছিল, যারা এমন শক্তির উপর নির্ভরশীল তারা সিটি কপোরেশনের নির্বাচনে আসতে চায় না, জাতীয় নির্বাচনে আসতে চায় না..তারা সংবিধানের পথে হাটতে চায় না। তারা সাংবিধানিক পদ্ধতি অক্ষুন্ন থাকুক চায় না। তারা জনগণকে ভয় পায়-এজন্য তারা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে কিংবা আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদে আসতে চায় না। তারা চায় ক্ষমতা..তারা চায় লুটপাট তৈরির পথ। দেশ সেবা না। 

দেশ : কিন্তু বিএনপি’র মতো দল নির্বাচনে না এলে সেই নির্বাচনকে তো কেউ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন বলবে না। এব্যাপারে আপনার মন্তব্য কি?

আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম: আসলে নির্বাচনে জনগণের অংশগ্রহণটাকেই আমরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। এবং রাজনৈতিক দলগুলিতো জনগণের অংশ। তো এখানে কোনো রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নিতে না চায় সেক্ষেত্রে সব দায় দায়িত্ব নিতে হবে নিবন্ধিত সেইসব রাজনৈতিক দলকে। জনগণ যদি ভোট কেন্দ্রে এসে ভোট দেয় সেক্ষেত্রে ওই নির্বাচন কি জনগণের অংশগ্রহণমূলক হবে না? সেই নির্বাচনে জনগণ বেশি অংশ নিলো না বলে ধরে নেয়া যাবে না? তবে আমরা বিশ্বাস করি সকল রাজনৈতিক দলই নির্বাচনে অংশ নেবে। আমরা বিশ্বাস করি তারা নির্বাচনে মাধ্যমেই ক্ষমতা পরিবর্তনে অংশ নেবে। জনগণ যদি ভোট কেন্দ্রে আসে ভোট দিতে পারে নির্বিগ্নে তাকেও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন বলা যাবে। আমরা জনগণের অংশগ্রহণকেই গুরুত্ব দিচ্ছে। 

দেশ: বিএনপি’র নেতারা বলে যাচ্ছেন যে আপনারা নির্বাচনে জিততে পারবেন না বলেই দেশে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চান না। বিএনপি’ নির্বাচনে আসুক এটা আপনারা চান না ভয়ে..

আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম: (একটু হাসি দিয়ে...) আমরা দেশে সংবিধান ও প্রথম আইন অনুযায়ী দেশে স্বাধীন নির্বাচন কমিশন করেছি। এটাই প্রথম একটি স্বাধীন স্বার্বভৌম নির্বাচন কমিশন। সমস্ত ক্ষমতা দেয়া হয়েছে তাদেরকে সাংবিধানিকভাবে। দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করার ব্যাপারে তাদেরকে পূর্ণ ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। আর বলা আছেই যে যারা দেশ পরিচালনা করছেন তারাই নির্বাচনের সময় শুধু রুটিন দায়িত্ব পালন করবেন। সেক্ষেত্রে সরকার ক্ষমতায় থাকা না থাকা এখানে কোনো ব্যাপারই না। তাই বলবো এটা একটা অসত্য কল্পনাপ্রসুত কথা। বিভ্রান্তিমূলক।

দেশ: বিএনপি যুক্তি দেখাচ্ছে যে এখনই আপনারা তাদের সভা-সমাবেশে বাধা দিচ্ছেন। শান্তি সমাবেশের নামে অশান্তি সৃষ্টি করছেন। তাই এমন সরকারের অধীনে কি করে বিএনপি নির্বাচনে যাবে? বিএনপি একারণে আপনাদের ওপর আস্থা রাখতে পারছে না। 

আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম: আন্দোলনতো তারা তাদের মতো করে করছে। আমরাও আমাদের মতো করে এধরনের আন্দোলনেই আছি। জনগণকে নিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি দিচ্ছি। আমরা শান্তিপ্রিয় জনগণকে নিয়ে বিএনপি জামায়াতের ধবংসাত্মক কাজের বিপরীতে সভা-সমাবেশ করছি। আমরা যদি আমাদের উন্নয়ন কর্মকান্ড জনগণের কাছে তুলে ধরতে সভা-সমাবেশ করি, শোভাযাত্রা করি, তাহলে ভয় পাওয়ার তো কিছু না। আমরাতো তাদের জনসভাস্থলে গিয়ে সমাবেশ করছি না। আমরা কি তাদের জনসভাস্থলের পাশে গিয়েই সভা-সমাবেশ করে বক্তৃতা দিয়ে তাদের ওপর কাউকে ঝাপিয়ে পড়তে বলেছি? আক্রমণ চালাচ্ছি? তেমন কোনো উদাহরণ কি কারো কাছে আছে? এমন ঘটনা কি কোথাও ঘটেছে? এগুলা অসত্য কথা। বিভ্রান্তিমূলক কথাবার্তা। এগুলো হচ্ছে দেশি বিদেশীর কাছে নালিশকারি এক ধরনের রাজনীতির বহি:প্রকাশ। যারা দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব নষ্ট করতে চায় তারাই এধরনের অপপ্রচার মিথ্যাচার করতে চায়। এরা অতীতে যেমন দেশের মানুষকে  বিভ্রান্ত করছে ভবিষ্যতেই এটা করতে চায়। এটা আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র যারা আমাদের পাশে থাকে বিভিন্ন সময় তাদের কাছে গিয়ে এসব কথা বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এরা এসব করে অতীতে দেশের মানুষকে বিভান্তি করেছে। 

দেশ: বলা হচ্ছে আপনারা চাপে পড়েই অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দাবি মনে নেবেন। এটা কি ঠিক?

আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম : বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ একটি ঐতিহ্যবাহি রাজনৈতিক দল। সংগ্রাম সাফল্যগাথা দল এটি। বাংলাদেশের সকল অর্জনের নেতৃত্ব দিয়েছে আওয়ামী লীগ। আর এই আওয়ামী লীগের অবিসংবাদিত নেতা হচ্ছে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তারই কন্যা সৎ সাহসী সুযোগ্য রাষ্ট্রনায়নের দ্বারা দেশ এখন পরিচালিত হচ্ছে। এই নেতৃত্ব দেশের শত্রু সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে মোকাবেলা করেই দেশ পরিচালনা করছে। সেই আওয়ামী লীগ দেশী বিদেশী কোনো যড়যন্ত্রকারীদের কাছে মাথা নত করতে পারে-এটা কি ভাবা যায়? এটা কি বিশ্বাস করা যায়? ন্যূনতম প্রমাণ কেউ কি দিতে পারবে? এটা তো আমি কেনো কেউই বিশ্বাস করে না। কোনো শক্তির কাছেই বঙ্গবন্ধুর সৈনিকরা নতি স্বীকার করে না। যদি নতি স্বীকার করতো তাহলে আমরা এই মহান স্বাধীনতা পেতাম না। স্বাধীন সার্বভৌম লালসবুজের বাংলাদেশ পেতামই না। তাই বঙ্গবন্ধুর সৈনিকরা উর্ধ্বচাপ, নিম্নচাপ- কোনো চাপেই নতি স্বীকার করার শিক্ষা পায়নি। ১৯৭১ সালে ১৬ ডিসেম্বরের পরেও তো আমাদের ওপর কতোই না চাপ ছিল। আমরা যখন জাতিসংঘের সদস্যপদ পেতে যাচ্ছিলাম কারা তখন ভেটো প্রয়োগ করেছিলো? তখন কি আমাদের জাতির পিতা কি ভয়ে অন্য দেশে পালিয়ে গিয়েছিল? 

দেশ: আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। 

আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম: আপনাকেও।

শেয়ার করুন