২০ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০৮:৩০:২১ অপরাহ্ন


বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ পর্যায়ের লাগাতার বৈঠকে বার্তা কী
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২২-০২-২০২৩
বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ পর্যায়ের লাগাতার বৈঠকে বার্তা কী


কয়দিন পরপরই বাংলাদেশ সফর করে যাচ্ছেন মার্কিন প্রতিনিধিবৃন্দ। মার্কিন প্রশাসনের বিভিন্ন স্তর থেকে আসছেন তারা। ঢাকায় তারা কথা বলছেন বিভিন্ন পর্যায়ে। সেখানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সুশীল সমাজ, সাংবাদিক, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এমনকি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও। কিন্তু কী এতো আলোচনা আর কী-ই বা তারা এসে বারবার বলছেন এ নিয়ে এখন জনমনে প্রশ্ন। স্বাভাবিকভাবেই সফরের কিছু বিষয় জনসাধারণ জানতে পারেন। এর বাইরেও অনেক কিছু আলোচনা হয়তো হয় সেগুলো জানা সম্ভবপর নয়। অবশ্য সাধারণ মানুষের সবকিছু জানার প্রয়োজনও নেই। 

তবে একটি বিষয় খুব স্পষ্ট সেটা আগামী জাতীয় নির্বাচন। বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে মার্কিন প্রতিনিধিদের আগ্রহটা বেশি। সঙ্গে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে মিয়ানমারের সঙ্গে একটা বোঝাপড়ার বিষয়ও আছে। যেখানে বাংলাদেশের সহযোগিতাও প্রয়োজন। কেননা ১২ লাখের ওপর রোহিঙ্গা মায়ানমার থেকে এসে আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশে। তাদের মায়ানমারে নিজেদের ভিটাবাড়িতে ফেরানোর এক বড় চ্যালেঞ্জও রয়েছে।  

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সারা বিশ্বে আরো এক লড়াইয়ে অবতীর্ণ। সেটা হলো যে দেশে গণতন্ত্র সংকটে জর্জরিত। সে দেশে গণতন্ত্র ফেরানো। জোয়ে বাইডেন তার দ্বিতীয়বারের বৈশ্বিক গণতান্ত্রিক সম্মেলনেও বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি। ফলে বাংলাদেশে কীভাবে গণতন্ত্র ফেরানো যায় তার একটা রোডম্যাপ নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। গণতন্ত্র সম্মেলনে আমন্ত্রণ না পাওয়াটা প্রেস্টিজ ইস্যু। কারণ মিয়ানমার ও উত্তর কোরিয়াকেও তারা আমন্ত্রণ জানায়নি। ভারত, পাকিস্তানের মতো দেশও আমন্ত্রণ পেয়েছে। প্রথমবার আমন্ত্রণ না পাওয়ার পর বাংলাদেশের আগ্রহ অনুসারে গণতন্ত্র ফেরানোর একটা রোডম্যাপ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে দুই দেশের মধ্যে। সম্ভবত সে আলোচনা অনুসারে বাস্তবায়ন মনঃপূত হয়নি মার্কিনিদের। 

এদিকে সর্বশেষ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্তত তিনজন কর্মকর্তা বাংলাদেশ সফর করে গেছেন এদের মধ্যে রয়েছেন জো বাইডেনের প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা এবং হোয়াইট হাউজের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সিনিয়র ডিরেক্টর রিয়ার অ্যাডমিরাল আইলিন লাউবাচার। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সহকারী মন্ত্রী ডোনাল্ড লু, ও সর্বশেষ ডেরেক শোলে। শেষ জনপদের দিক থেকে সিনিয়র। তাছাড়া শোলে হলেন, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এন্থনি জে ব্লিনকেনের বিশেষ দূত, স্টেট ডিপার্টমেন্টের সিনিয়র কাউন্সিলর। আন্ডার সেক্রেটারি পদমর্যাদার ওই কর্মকর্তা বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে। মতবিনিময় হয়েছে গণমাধ্যমের জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধিদের সঙ্গে। সব বৈঠকেই তিনি গণতন্ত্র, নির্বাচন এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছেন। টুইট বার্তা, মিডিয়া ব্রিফিং এবং মার্কিন দূতাবাসের বিবৃতিতে তার বয়ান স্পষ্ট করা হয়েছে। 

এ সময় ঢাকায় মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের কাউন্সেলর ডেরেক শোলে বলেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে যুক্তরাষ্ট্র কতটা গুরুত্ব দেয়, তারই প্রতিফলন তাঁর ওই ঢাকা সফর। সফরকালে তিনি দুই দেশের অভিন্ন চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেছেন।

ডেরেক শোলে রাজধানীর একটি হোটেলে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে প্রাতঃরাশ বৈঠক করেন। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন এবং দুপুরে তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এ সময় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের ডেরেক শোলে বলেন, ‘রাজনৈতিক, নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিকভাবে আমাদের অংশীদারিত্ব বাড়ছে। আমরা সম্পর্কের পরবর্তী ৫০ বছরের বিষয়ে আশাবাদী।’ একইসঙ্গে তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা সমস্যার মূল উৎস মিয়ানমারে। আমরা এ সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করে যাব।’ তবে বিভিন্ন প্রসঙ্গে আলোচনা হলেও বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের চোখ দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের দিকে। ওই ইস্যুতে মার্কিন বক্তব্য কী সেটাই জানার ইচ্ছা সকলের। কারণ মার্কিনিরা বাংলাদেশের নির্বাচনের ইস্যুতে এবার বেশ সোচ্চার এবং একটি সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও সব দলের অংশগ্রহণে একটি অংশীদারিমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের তাগাদা। তবে যারা ইতিমধ্যে সফর করে গেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে, এরা একটা সিরিয়াল মেনেই এসেছেন যতদূর মনে হচ্ছে। এর ওপরে যারা তারা আবার বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রেই আলোচনা করবে। তাহলে এই আলোচনা পর্ব এখন কোনো পর্যায়ে সেটাও দেখার বিষয়। 

বাংলাদেশি প্রতিনিধিদের যুক্তরাষ্ট্র সফর 

এদিকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের দুই উচ্চপদস্থ প্রতিনিধিদের সফর শেষে আগামী এপ্রিলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এবং পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের আলাদাভাবে ওয়াশিংটনে যাওয়ার কথা রয়েছে। এপ্রিলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিনকেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক এবং পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন ও রাজনীতিবিষয়ক মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ডের অংশীদারিত্ব সংলাপ হওয়ার কথা রয়েছে।  

মূলত বাংলাদেশের ওই দুই প্রতিনিধির সফরে কী আলোচনা বা নির্দেশনা প্রদান করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তার আগে মার্কিন দুই প্রতিনিধি ডোনাল্ড লু ও ডেরেক শোলের সফরও খুবই তৎপর্যপূর্ণ ছিল বলে কূটনীতিক মহল মনে করছেন। 

উল্লেখ্য, ডেরেক শোলের ঢাকায় আসার ঠিক আগ মুহূর্তে আরেক মার্কিন শীর্ষ কর্মকর্তার ঢাকায় সফর বাতিল হয়েছে। মার্কিন সেই প্রতিনিধি কারা ম্যাকডোনাল্ড। যিনি যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও শ্রমবিষয়ক উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী। কারা ম্যাকডোনাল্ড তার বাংলাদেশ সফরে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও শ্রম অধিকারের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা ছিল। একই সঙ্গে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গেও তার বৈঠকের শিডিউল ছিল। এর পাশাপাশি শ্রমিক শ্রেণির প্রতিনিধি এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করার কথা ছিল। কিন্তু তার ওই সফর বাতিল হয়ে যায়।

শেয়ার করুন