২৫ এপ্রিল ২০১২, বৃহস্পতিবার, ৬:২৮:৩৪ পূর্বাহ্ন


শওকতকে বহিষ্কার করে কী বার্তা দিল বিএনপি
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২২-০৩-২০২৩
শওকতকে বহিষ্কার করে কী বার্তা দিল বিএনপি শওকত মাহমুদ


ইনসাফ কমিটি ফর সিভিল রাইটস জাতীয় ইনসাফ কায়েম কমিটির গোপন উদ্দেশ্য নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। হঠাৎ করে রাজনীতির টালমাটাল সময়ে এ কমিটির অবতারণা। সেখানে কেনই বা বিএনপি, জাময়াত, ১২ দলের জোটের নেতৃবৃন্দের উপস্থিতি, বেশ রহস্যের জন্ম দিয়েছে। যাদের মূলে রয়েছেন এই কমিটির আহ্বায়ক কবি ও প্রাবন্ধিক ফরহাদ মজহার। বলা হচ্ছে ২০১৩ সনে সেবার জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে এ কমিটির আবির্ভাব। ২০১৮ বাদ দিয়ে আবার দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে আবার সেই ইনসাফের অবতারণা। মাঝে তারা কোথায় ছিলেন, কী করেছেন এখনই বা কী উদ্দেশ্য বা গোপন বাসনা কী এটাই মূল রহস্যের কারণ। 

এদিকে ইনসাফের গোপন উদ্দেশ্য যে ভাল না, সেটা আর কেউ না পেলেও বিএনপি ভালই টের পেয়েছে। যাতে করে ওই সভায় কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে উপস্থিত থাকা বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সিনিয়র সাংবাদিক শওকত মাহমুদকে প্রাথমিক সদস্য পদ থেকে শুরু করে সর্বস্তর থেকে বহিষ্কার করে দিয়েছে বিএনপি। এবার আর শোকজ টোকজ নয়। সরাসরি।  

তবে শওকত মাহমুদকে নিয়ে বিএনপির দুশ্চিন্তা ছিল আগেও। কিন্তু এবারের অপরাধ গুরুতর। তাই সর্বস্তর থেকেই বহিষ্কার। জানা গেছে, বিএনপি এ ইনসাফ কমিটির দিকে তীক্ষ নজর রাখছে। কারণ নিজের দলই শুধু নয়, জোটে না থাকলেও সহযোগী ১২ দলের জোটের কারা কারা ওই ইনসাফের সঙ্গে যুক্ত তাদের দিকে নজর রাখছে। খবরে প্রকাশ ফরহাদ মাজহারের ডাকে শুধু শওকত মাহমুদই নয়, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন করা মাহমুদুর রহমান মান্না, সাবেক জোটসঙ্গী কল্যাণ পার্টি, জাগপা, লেবার পার্টির নেতারা নৈশভোজে অংশ নিয়েছেন। 

বিএনপি সহ রাজনৈতিক মহল মনে করছেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন কোনো প্লাটফর্ম গঠন হচ্ছে কি না এমনটাই। তাছাড়া সামনেই যেহেতু জাতীয় নির্বাচন, সরকারও চাচ্ছে বিএনপি যেহেতু দলীয় সরকারের ও বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচনে না আসতে অনঢ় সেখানে অন্য দলসমূহকে টানতে পারলে সেটা তাদের জন্য মঙ্গল। ক্ষমতায় যে দলই থাকুক না কেন এমনটাই তারা করবেন। এখন বিষয় হলো কারা সেখানে পা দেবেন এটাই বিষয়। 

বিএনপিও চিহ্নিত করতে চায় আসলেই কারা তাদের মিত্র। বিপদে আন্দোলনে সত্যিকার অর্থেই কাধে কাধে কাধ মিলিয়ে শরিক হবে। মোনাফেকদের চিহ্নিত না করা গেলে দলের অভ্যন্তরেই বড় সমস্যা তৈরি হবে। 

গত ১৬ মার্চ এই সংগঠনের ব্যানারে নৈশভোজে অন্তর্বর্তীকালীন একটি জাতীয় সরকার গঠনের দাবি করে ফরহাদ মজহার নিজেদের মূলমন্ত্রের কথা তুলে ধরে বলেন, এখানে স্বাধীনতার তিন মূলনীতি সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক ন্যায়বিচার বা ইনসাফের বাইরে অন্য কিছু নেই।

এতদিন সেই অর্থে চেনাজানা না থাকলেও ওই অনুষ্ঠানে কবি ফরহাদ মজহার তথ্য দেন, ২০১৩ সালে জাতীয় ইনসাফ কায়েম কমিটি গঠিত হয়। এরপর নানা প্রতিকূলতার কারণে সেটি আর সক্রিয় করা হয়নি। সেখানে তাদের পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তীকালীন একটি জাতীয় সরকার গঠন করে সেই সরকারকে বাংলাদেশের নতুন সংবিধান প্রণয়ন এবং তার অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানানো হয়। 

তবে দীর্ঘদিন ধরে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আন্দোলন করছে বিএনপি। দলটির পক্ষ থেকে ঘোষণা দেয়া হয়েছে,  ভোটে জিতলে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা সবাইকে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠনের।

দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে গত বছরের প্রথমদিকে শওকত মাহমুদকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছিল বিএনপি। সে সময় তিনি পেশাজীবী সমাজের ব্যানারে একটি সমাবেশ ডেকে ঢাকার পল্টনে অবস্থান নিয়ে সরকার পতনের ডাক দিয়েছিলেন। সঙ্গে বিএনপির আরেক নেতা হাফিজ উদ্দিন আহমেদকেও শোকজ করা হয়েছিল সেবার। ওই কর্মসূচির সঙ্গে বিএনপির কোনো সম্পর্ক ছিল না বিএনপির দাবি।

এছাড়া ২০১৯ এবং ২০২০ সালের ডিসেম্বরেও ঢাকায় এ ধরনের দুটি বড় জমায়েত করে রাস্তায় নেমেছিল জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল এবং পেশাজীবী পরিষদ। এরও নেতৃত্বে ছিলেন শওকত মাহমুদ। তখনও তাকে কারণ দর্শনোর নোটিশ দিয়েছিল। তার জবাব দিলে তাকে অভিযোগ মুক্ত করে দেয়া হয়। কিন্তু এবার পরিস্থিতি গুরুতর অনুধাবন করেই তার প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে শুরু করে সবই বাতিল করে দিয়ে মুক্ত করে দিয়েছে বিএনপি।

শওকত মাহমুদ বললেন দুঃখজনক

এ ব্যাপারে শওকত মাহমুদের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। তবে কেন দুঃখজনক তার কোনো ব্যাখ্যা দেননি তিনি।  তিনি বলেন, দু-একদিন পর বিস্তারিত প্রতিক্রিয়া জানাবো।

শেয়ার করুন