০৩ মে ২০১২, শুক্রবার, ০৮:৫৯:৩৪ পূর্বাহ্ন


ওয়াশিংটন ডিসিতে লাখ মানুষের বিক্ষোভ
গাজায় যুদ্ধ চাই না শান্তি চাই : বাইডেনের প্রতি ক্ষোভ
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৭-০১-২০২৪
গাজায় যুদ্ধ চাই না শান্তি চাই : বাইডেনের প্রতি ক্ষোভ ওয়াশিংটনে যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে র‌্যালিতে অংশগ্রহণকারীরা


যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই। হিংসা চাই না, সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি চাই, প্রতিহিংসা চাই না, মানবতা চাই, রক্ত চাই না, ভালবাসা চাই- এই সব স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে আমেরিকার রাজনীতি ওয়াশিংটন, বড় বড় সিটি এবং বিশ্বের বড় শহর। গত ১৩ জানুয়ারি শনিবার ওয়াশিংটন ডিসিতে ফ্রিডম প্লাজায় লাখো লাখো মানুষের অংশগ্রহণে গাজায় স্থায়ী যুদ্ধ বিরতির দাবিতে ব্যাপক বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। ইসরাইলের প্রতি আমেরিকান প্রশাসনের সমর্থনের বিরোধিতা করে ‘বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদ দিবসের’ অংশ হিসেবে ওয়াশিংটন ডিসিতে ৭ অক্টোবরের পর আবারও ব্যাপক বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। “বাইডেন, তুমি লুকাতে পারবে না, তোমার বিরুদ্ধে আমরা গণহত্যার অভিযোগ আনছি”। (বাইডেন, বাইডেন, ইউ ক্যানট হাইড; উই চার্জ ইউ উইথ জেনোসাইড) স্লোগানে প্রকম্পিত হয় ফ্রিডম প্লাজা থেকে হোয়াইট হাউস সংলগ্ন ফ্রিডম মল। ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে গণহত্যায় সাহায্য ও মদদ দেওয়ার অভিযোগ তুলে ওয়াশিংটন ডিসিতে আগত বিক্ষোভকারীরা মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। 

ইসরায়েলের আগ্রাসন থেকে গাজা উপত্যাকায় অবিলম্বে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি কার্যকর, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গাজায় গণহত্যা বন্ধ এবং ফিলিস্তিন দখলে মার্কিন সামরিক সাহায্য ও অর্থায়ন বন্ধ, ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে সংগঠিত যুদ্ধাপরাধ এবং আন্তর্জাতিক আইনের ক্রমাগত লঙ্ঘনের জন্য ইসরায়েলকে দায়বদ্ধ করতে বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে বাইডেন প্রশাসনের নিকট দাবি জানানো হয়। ফ্রিডম প্লাজা থেকে হোয়াইট হাউসের সামনে ভিডের কালো, সবুজ, লাল এবং সাদা পতাকার একটি সাগর ভেসে ওঠে। বিক্ষোভকারীরা ’ফ্রি ফ্রি প্যালেস্টাইন’ ’এখনই যুদ্ধ বন্ধ করুন’ এবং ’শেষ করুন’ স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। বিক্ষোভকারীরা ইসরায়েলি সরকারকে বর্ণবাদ অনুশীলনের জন্য অভিযুক্ত করে। সমাবেশে যোগ দেয়া বেশিরভাগ বিক্ষোভকারী ফিলিস্তিনের ঐতিহ্যবাহী কেফিয়াহ মাথায় দিয়ে এবং ফিলিস্তিনী পতাকা নেড়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।

আমেরিকান মুসলিম টাস্ক ফোর্স ফর প্যালেস্টাইন ও আমেরিকাভিত্তিক সারা বিশ্বে যুদ্ধ এবং বর্ণবাদ বন্ধ করতে কাজ করা মানবাধিকার সংগঠন- এ্যাক্ট নাও টু স্টপ ওয়ার এন্ড স্টপ রেসিজম (এএনএসএআর) এর পার্টনারশীপে কোয়ালিশনের সাথে অংশীদারিত্বে এই বিক্ষোভের আয়োজন। বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের কে-স্পন্সর হিসেবে রয়েছে আমেরিকান মুসলিম টাস্ক ফোর্স অন প্যালেস্টাইন (এএমপি), মুসলিম আমেরিকান সোসাইটি (এমএএস), ইসলামিক সার্কেল অফ নর্থ আমেরিকা (আইসিএনএ), মুসলিম উম্মাহ অফ নর্থ আমেরিকা (মুনা), কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনস (কেয়ার), মুসলিম স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন-ন্যাশনাল (এমএসএ), মুসলিম লিগ্যাল ফান্ড অফ আমেরিকা (এমএলএফএ) এবং ইয়াং মুসলিম (ওয়াইএম)। যুক্তরাষ্টের ৩৫০টি বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ও ধর্মীয় সংগঠন বিক্ষোভ মিছিলের সমর্থন ও বিক্ষোভে যোগদান করে বলে আমেরিকান মুসলিম টাস্কফোর্স ফর প্যালেস্টাইন জানিয়েছে।

সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ২০২৪ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সত্য এবং ন্যায়ের জন্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ড. কর্নেল ওয়েস্ট, গ্রিন পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জিল স্টেইন, ম্যালকম এক্সের কন্যা মিসেস ইলিয়াসাহ শাব্বাজ, ইমাম ওমর সুলেমান, ডাঃ ওসামা আবুরিশাইদ, কেয়ারের এক্সেকিউটিভ ডিরেক্টর নিহাদ আওয়াদ, ইন্ডিয়ানার কংগ্রেসম্যান আন্দ্রে কারসন, কলারাডো স্টেট সিনেটর ইমান জোদেহ, মুনা ন্যাশনাল প্রেসিডেন্ট হারুন অর রশিদ, কোড পিঙ্ক ডিরেক্টর মেডিয়া বেঞ্জামিনসহ গাজা এবং ফিলিস্তিনি পরিবার যাদের পরিবারের সদস্যরা গত তিন মাসে গাজায় ইসরায়েলের হামলায় নিহত, আহত, বাস্তুচ্যুত এবং অপহৃত হয়েছে তারাও সমাবেশে তাদের গল্প শেয়ার করেন। 

গ্রিণ পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জিল স্টেইন বলেন, আমরা আজ এসেছি ওয়ার মেশিনের বিরুদ্ধে ক্ষোভের জন্য নয়, যুদ্ধযন্ত্রকে ভেঙে ফেলার জন্য। আমি গাজার জন্য ওয়াশিংটনের র‌্যালিতে এসেছি। কারণ এই মার্কিন-সমর্থিত গণহত্যা বন্ধ করার জন্য আমাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করতে হবে। জরিপ দেখা যাচ্ছে আমরা একা নই। প্রকৃতপক্ষে, আমরা একটি অপ্রতিরোধ্য সংখ্যাগরিষ্ঠ। শান্তি, ন্যায়বিচার এবং এখন গণহত্যার অবসানের জন্য একটি অপ্রতিরোধ্য শক্তি।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রাথী ড. কর্নেল ওয়েস্ট বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে বাইডেন ও তার সঙ্গীদের বলছি আপনি শুধু ইসরাইলকে অন্যায় সুবিধা দিচ্ছেন না, গণহত্যার জঘন্য অপরাধের সাথে জোটবদ্ধ হচ্ছেন এবং সহযোগিতা করছেন। আপনার সহযোগী হিসাবে হ্যারিস, অস্টিন, ব্লিঙ্কেন, সুলিভান এবং কিরবিসহ আমি সমস্ত নাম উল্লেখ করতে পারি। তারা একই অপরাধ করছেন। আপনারা আধিপত্য, দখলদারিত্ব, পরাধীনতা, নির্বাসনসহ সকল অন্যায়ের সাথে জড়িয়ে গেছেন। আমি ঘৃণার সাথে কথা বলি না। আমি নিপীড়িত লোকদের প্রতি ভালবাসার চেতনায় কথা বলি। আপনারা নিজেই নিজেদের যুদ্ধাপরাধী করে তুলছেন। আপনার লজ্জা হওয়া উচিত। আপনি কি মনে করেন যে, আপনি আমাদের ফিলিস্তিনি ভাই ও বোনদের জন্য আমাদের ভালবাসাকে দমন করতে পারবেন। বিশ্ব যখন এগিয়ে যাচ্ছে তখন আমরা রক্তমাখা ফিলিস্তিনি ভাই ও বোনদের ব্যানার এবং অশ্রু ধরে রাখচ্ছি। আমি প্যালাস্টাইন ভালোবাসি। আমি নির্যাতিত মানুষকে ভালোবাসি। তারা কোথায় আছে বা পৃথিবীর কোন কোণে আছে তা বিবেচ্য নয়। আমি চাই ফিলিস্তিনিরা মর্যাদার সঙ্গে জীবনযাপন করুক। আমি যখন স্বাধীন ফিলিস্তিনের কথা বলি এবং তখন আমি বিশ্বাস করি একদিন এটি ঘটতে যাচ্ছে। আমি নিজে এটি দেখার জন্য বেঁচে থাকবো কি না তা জানি না কিন্তু ফিলিস্তিনিরা একদিন স্বাধীন হবে। তখন আমার শরীরের প্রতিটি হাড় শান্তি পাবে। আমরা সবসময় ইসরাইলের নিরাপত্তা নিয়ে কথা বলি কিন্তু আমরা ফিলিস্তিনিদের নিরাপত্তা নিয়ে কোনো কথা বলি না। যদি ফিলিস্তিনিদের নিরাপত্তা না থাকে, ডিগনিটি না থাকে-তাহলে ইসরাইলের কখনো নিরাপত্তা হবে না। ইসরাইলের জনগণ ডিগনিটি নিয়ে কি বিশ্বে জীবন যাপন করতে পারবে। আমরা ফিলিস্তিনি ভাই ও বোনদের সাথে ইসরাইলি ভাই ও বোনদের সমতা চাই।

মুনা ন্যাশনাল প্রেসিডেন্ট হারুন অর রশিদ বলেন, আজ আমরা ইসরায়েল কর্তৃক গাজায় ফিলিস্তিনিদের উপর গণহত্যার প্রতিবাদ জানাতে এখানে সমবেত হয়েছি। ইসরাইল গভর্নমেন্ট নিবির্চারে ফিলিস্তিনি জনগণকে হত্যা, হাসপাতালে, স্কুল, জাতিসংঘের আশ্রয় কেন্দ্র, মসজিদ, চার্চ, সিভিলিয়ান বাড়িতে হামলা করে ধ্বংস করছে। এখন পর্যন্ত জাতিসংঘ পরিচালিত জরিপে দেখা যায় ১০০টির বেশি অবকাঠামো বোমা বর্ষণ করে ধ্বংস করেছে। ১৩৭ জন এইড ওয়ার্কারসহ অসংখ্য ডাক্তার, নার্স, শিক্ষকসহ বুদ্বিজীবীকে হত্যা করছে। তারা শতাধিক সাংবাদিককে হত্যা করেছে। এ পর্যন্ত ২৩,৭০৩ জন গাজাবাসীকে হত্যা করেছে। সাত হাজারের বেশি প্যালেস্টাইনি ধ্বংসস্তুপের নিচে রয়েছে। ইসরায়েল খাদ্য, পানি, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, চিকিৎসা সরবরাহ পথ বন্ধ করে দিয়েছে তারা ফিলিস্তিনিদের সাথে পশুর চেয়েও খারাপ আচরণ করছে। যুক্তরাষ্ট্র এ হত্যাকান্ডে বোমা ও সব ধরনের অস্ত্র সাপ্লাই দিচ্ছে যা আমেরিকা ও আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। আল শিফা হাসপাতালে ইসরায়েলের হামলা আমাদের চোখের সামনে একটি ভয়ঙ্কর এবং নির্লজ্জ যুদ্ধাপরাধ। বোমা এবং স্নাইপার দিয়ে একটি হাসপাতালে আক্রমণ করা, ডাক্তার এবং রোগীদের গুলি করা, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করা এবং অকাল শিশুসহ রোগীদের বাঁচিয়ে রাখার সরবরাহ বন্ধ করা- এগুলো যুদ্ধের কাজ নয়, এগুলি গণহত্যার কাজ। ইসরায়েল কর্তৃক গাজায় ফিলিস্তিনিদের অত্যাচারে সাহযোগিতা করে যুক্তরাষ্ট্রের ইমেজ বিশ্বে প্রশ্নবিদ্ধ। সারা বিশ্ব দেখছে আপনি একজন অত্যাচারি। ইতিহাসের পাতায় অত্যাচারি হিসেবে আপনার নাম লিখা থাকবে।

ইহুদি-আমেরিকান মানবাধিকারকর্মী ডেভিড হরোউইটজ বলেন, বাইডেন প্রশাসন বেসামরিক নাগরিক হতাহতের পরিমাণ ’ন্যূনতম’ পর্যায়ে নামিয়ে আনতে ইসরায়েলের প্রতি আহবান জানিয়েছে। তবে একই সঙ্গে ইসরায়েলের প্রতি নিজেদের সমর্থনও স্পষ্ট করে দিয়েছে। গাজায় চলমান যুদ্ধে সহায়তার জন্য কংগ্রেস থেকে ইসরায়েলের জন্য ১৪ বিলিয়ন ডলারের বেশি সহায়তা দেওয়ার অনুরোধও করেছেন বাইডেন। ’গাজায় ওরা সহায়তা নিয়ে ট্রাক যেতে দিচ্ছে, আবার যুদ্ধও চালিয়ে যাচ্ছে।’ এটিকে দ্বিচারিতা বলে উল্লেখ করেন তিনি।

এএমপি এবং এজেপি-অ্যাকশনের নির্বাহী পরিচালক ড. ওসামা আবু-ইরশাইদ বলেন, বর্তমানে ১৯৪৮ সালের নাকবার চেয়ে ফিলিস্তিনিরা বেশি গণহত্যা এবং বাস্তুচ্যুতির সম্মুখীন। আমেরিকানদের একটি ক্রমবর্ধমান প্রজন্মের মধ্যে সচেতনতা এবং নৈতিক শুদ্ধতার দৃশ্যমান পরিবর্তন গভীরভাবে এগিয়ে চলেছে। বেশিরভাগ আমেরিকান অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি করছে। ফিলিস্তিনি অধিকার আন্দোলনের জন্য এটি সত্যিই একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। আমরা একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন দেখতে পাব।

বাইডেন প্রশাসনের ইসরায়েল নীতির প্রতিবাদে পদত্যাগকারী স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রাক্তন কর্মকর্তা জশ পল বলেন, বাইডেন এবং তার মন্ত্রিসভার সদস্যদের অবশ্যই যুদ্ধবিরতি কথা বলতে হবে এবং ফিলিস্তিনিদের মুক্তির আহ্বান জানাতে হবে। হামাসের হাতে বন্দী সমস্ত জিম্মি এবং সেইসাথে ইসরায়েল দ্বারা অন্যায়ভাবে আটক থাকা ফিলিস্তিনিদের মুক্তির আহ্বান জানাতে হবে। তিনি ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তা দেওয়া বন্ধ করার দাবি জানিয়েছেন।

আমেরিকান ফর প্যালেস্টাইন এর পরিচালক এবং শনিবারের অনুষ্ঠানের প্রধান সংগঠক মোহাম্মদ হাবেহ বলেন, আমরা ক্রমাগত হত্যার তিন মাস শেষ করছি। প্রায় ১০০ দিন যুদ্ধের জন্য এবং আসন্ন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র দিবসের ছুটিকে সম্মান জানাতে আয়োজকরা এই সপ্তাহকে বেছে নিয়েছে। “আমরা মনে করি যে মার্টিন লুথার কিং -এর চেতনায় এই ছুটির উইকেন্ডে বিক্ষোভে আসা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ যখন মার্টিন লুথার কিং বলেছিলেন যে “বিশ্বের যেকোন জায়গায় সংগঠিত অন্যায় বিশ্বের সর্বত্র ন্যায়বিচারের জন্য হুমকি”। আমরা এখন গাজায় যে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াচ্ছি, আর আমাদের সরকার ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে গণহত্যায় সাহায্য ও মদদ দিয়ে তার সমর্থন দিচ্ছে। তিনি বাইডেন প্রশাসন দ্বারা সমর্থিত এবং প্রচারিত নৃশংসতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহবান জানান ।” তিনি বলেন, বিজয় আমাদের আসবেই।

গাজায় ইসরায়েলের হামলায় নিহত, আহত, বাস্তুচ্যুত এবং অপহৃত হয়েছে তাদের পরিবারের সদস্যরাও সমাবেশে উপস্থিত হন । তারা ইসরাইলি গণহত্যার গল্প শেয়ার করেন। গাজা থেকে ভিডিও দ্বারা গাজায় আল জাজিরার ব্যুরো চিফ, ওয়ায়েল আল-দাহদুহ, যার স্ত্রী, মেয়ে, দুই ছেলে এবং এক নাতি ইসরায়েলি হামলায় নিহত হন তিনিও বক্তব্য দেন। আল জাজিরার সাংবাদিক ওয়ায়েল আল-দাহদুহ বলেন, ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের হামলায় তার স্ত্রী ও দুই সন্তান নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলি বিমান হামলায় তার পরিবারের ক্ষতি এবং একজন সাংবাদিক হিসাবে যুদ্ধের তার কভারেজ নিয়ে আলোচনা করেন। গত তিন মাসে বিমান হামলায় ১১২ জন সাংবাদিক ও ফটোগ্রাফার নিহত হয়েছেন উল্লেখ করে আল-দাহদুহ বলেন, ভিয়েতনামের ২০ বছরের যুদ্ধসহ অন্য কোনো যুদ্ধে এতো সাংবাদিক ও ফটোগ্রাফার নিহতের ঘটনা ঘটেনি। দুই মিলিয়নের গাজাবাসী আজ সবাই এক পরিবার। আমি এই পরিবারের একজন মেম্বার।

টেক্সাস থেকে আগত আবেদ আজরামি বলেন, তার পরিবারের ৩২ জন সদস্যকে জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরেই ইসরায়েলি বাহিনী হত্যা করেছে। তার ভাগিনা, একজন ফুটবল খেলোয়াড়, সে কীভাবে এখন ইসরায়েলি বিস্ফোরণে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। ’দয়া করে এই পাগলামি বন্ধ করুন, এই গণহত্যা বন্ধ করুন’।

নিউ জার্সি থেকে আগত অ্যাডাম অ্যাবোশেরিয়াহ বলেন, যারা গাজা শহরে তার বৃদ্ধ মা, বাবা এবং ভাইসহ ১০৪ জনের বেশি পরিবারের সদস্যরা পরপর ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হন। তা সমাবেশে শেয়ার করেন। 

মিশিগান থেকে আগত ডক্টর আলা হুসেন আলি বলেন, গত নভেম্বরে ইসরায়েলি হামলায় তার পরিবারের ১০০ জনেরও বেশি সদস্য নিহত হন। যার মধ্যে তার ভাইকে পানি আনার সময় ইসরায়েলি স্নাইপার দ্বারা গাজার দক্ষিণে হত্যা করা হয়। 

ভার্জিনিয়া থেকে আগত মাজিন বদর বলেন, তার অন্ধ বোন এবং তার ৮৪ বছর বয়সী মাসহ তার নিকটতম পরিবারের ১০জন সদস্যকে হত্যার বিষয়ে কথা বলেন। তার মা যিনি ১২টিরও বেশি যুদ্ধে বেঁচে ছিলেন। গাজায় তার মা যিনি অন্যান্য বাস্তুচ্যুত পরিবারকে আতিথিয়তার করার জন্য তার বাড়ি ছেড়ে দিয়েছিলেন।

মেরিল্যান্ড থেকে আগত বক্তা রান্ডা মুহতাসেব বলেন, ইসরায়েলি বোমায় তার স্বামী এবং সন্তান নিহত হওয়ার পর কীভাবে তার চাচাতো ভাইকে অ্যানেসথেসিয়া ছাড়াই অপারেশন করা হয়েছিল সে সম্পর্কে কথা বলেন। ইসরায়েলি বিমান হামলায় তার পরিবারের ৩৬ জন সদস্য নিহত হয়েছেন।

সমাবেশ শেষ হওয়ার সাথে সাথে প্রতিবাদকারীরা একটি লাইন তৈরি করে এবং ১৪ স্ট্রিট নর্থ ওয়েস্ট এর দিকে মিছিল করতে শুরু করে, যার সাথে ড্রাম এবং স্লোগানের ধ্বনি ছিল, ’হে হে হো হো, জেনোসাইড জো যেতে হবে।’ স্লোগানের ধ্বনি দিয়ে হোয়াইট হাউস অভিমুখে রওয়ানা হন। প্রেসিডেন্ট বাইডেন উইকএন্ডের ছুটি কাটাতে আগের দিন হোয়াইট হাউস থেকে ক্যাম্প ডেভিডে চলে যান।

শেয়ার করুন