২৫ এপ্রিল ২০১২, বৃহস্পতিবার, ০৭:৩৪:০৪ পূর্বাহ্ন


নজিরবিহীন প্লাবন প্রকৃতির প্রতিশোধ
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৩-০৬-২০২২
নজিরবিহীন প্লাবন প্রকৃতির প্রতিশোধ


ভারত বাংলাদেশে নজিরবিহীন প্লাবন প্রকৃতির প্রতিশোধ। ভারতের আসাম, মেঘালয়ে ১২০ বছরের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাতের কারণে উজান থেকে নেমে আসা ঢলে বাংলাদেশের জলাশয়গুলো উঁচিয়ে সিলেট, সুনামগঞ্জ নেত্রকোনায় নজিরবিহীন প্লাবন হয়েছে। খবরে প্রকাশ প্রায় ৪০ লাখ বানভাসি মানুষ, গবাদিপশু পানিবন্দি হয়ে দুঃসহ দিন কাটাচ্ছে। সরকার সাধারণ জনসাধারণ সর্বস্ব নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লেও দুর্গম এলাকায় যাতায়াত সীমাবদ্ধতার কারণে ত্রাণ, খাদ্যদ্রব্য,ঔষধ পৌঁছানো সম্ভব হয়নি।

উত্তরাঞ্চল থেকে পানি ক্রমান্বয়ে মধ্যাচল প্লাবিত করবে এবং পর্যায়ক্রমে দক্ষিণ অঞ্চল দিয়ে বেরিয়ে যাবে। ভারত, বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে সব গঙ্গা যমুনার এবং শাখগুলোর জল বাংলাদেশে দ্রুত ঢুকে পড়ে উজানের বাঁধগুলোর গেট খুলে দেয়ায়। শুনেছি, এবারে নাকি দুদিনে ৮-১০ ফুট পানি বেড়ে সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনাতে প্লাবিত করে গেছে।

ডুবে গেছে বিস্তীর্ণ এলাকায় ফসল, ভেসে গেছে কোটি কোটি টাকার পুকুর জলাশয়ের মাছ। বিদ্যুৎ, গ্যাস, খবার পানি সংকটে ৫০ লাখ মানুষ অবর্ণনীয় কষ্টে দিন-রাত দুঃসহ জীবনযাপন করছে। আসন্ন অমাবস্যার সময় পরিস্থিতি আরো সংকটাপন্ন হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রতি বছর সীমিত আকারে ফ্ল্যাশ ফ্লাড হয় হাওরাঞ্চলে। কিন্তু এবারের মতো এতো দ্রুত, এতো বেশি পানি নেমে আসতে দেখেনি বেঁচে থাকা কেউ। অতিবর্ষণে প্লাবন ভারত বাংলাদেশ উভয়ের সমস্যা। কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও দুটি বন্ধু প্রতিবেশী দলের অভিন্ন নদীগুলোর পানিবণ্টন সমস্যা সমাধান না হওয়ার কারণ ভারতের একমুখী নীতি, বাংলাদেশের নদীশাসন, বাঁধ নির্মাণে যথাযথ নির্মাণ কৌশল অবলম্বনে ব্যর্থতা, সর্বোপরি জনসম্পৃক্ততার অভাব।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, সিলেট অঞ্চলের অধিবাসী এখন ভারত সফর করছেন। আশা করি, যৌথ সম্মেলনে সমতার ভিত্তিতে সমস্যা সমাধানের বিষয় আলোচিত হবে টেকসই সমাধানের লক্ষ্যে। যদিও এ নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। কারণ দীর্ঘদিন বহু উদ্যোগেও যখন হয়নি। এ মুহূর্তে একা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কথা কতটা শুনবে একমুখী নীতি নিয়ে চলা ভারত সেটা সন্দেহের অবকাশও আছে। হাওরগুলো এখন বিপুল জনগোষ্ঠীর অভিশাপে পরিণত হয়েছে। দেখছি সরকার, সরকারি দলের অঙ্গসংগঠনসমূহ, সেবা প্রতিষ্ঠান এবং স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানগুলো যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। প্রার্থনা করি আমার অত্যন্ত প্রিয় শহর সিলেট অঞ্চলের মানুষ অতি শীঘ্রই প্রকৃতির প্রতিশোধ থেকে মুক্তি পাবে। এই ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয় প্রকৃতির প্রতি মানুষদের অবিরাম অনাচারের প্রতিক্রিয়া। তথাকথিত নগরায়নের নাম নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন, যদি জলাশয় ভরাট করা, নিয়মিত যদি জলাশয় যখন করে গভীরতা বৃদ্ধি না করাএবং সংশ্লিষ্ট এলাকায় যদি কূলে বাঁধ সড়ক নির্মাণে দুর্নীতির সম্মিলিত কারণে এই ধরনের দুর্যোগ প্রাকৃতিক প্রতিশোধ। দুর্যোগ সমাধানে ভারত বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে অবিলম্বে অভিন্ন নদীগুলোর পানি বন্টনে স্থায়ী সমাধান করতে হবে। নির্বিচারে বৃক্ষনিধন সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে।  বাংলাদেশ সাগর বালুকাভূমির ২-৩ মিটার নিচে থাকা নেদারল্যান্ডস আদলে হাওর এলাকায় ডায়িক নির্মাণ করতে পারে। আশা করি এগুলো ডেল্টা পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করা আছে বা হবে। 

পাশাপাশি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়কে আরো আধুনিক যন্ত্রপাতি, উদ্ধার সরঞ্জাম, প্রশিক্ষিত জনবল দিয়ে শক্তিশালী করতে হবে। হাওর এলাকাগুলোর জন্য পৃথক সংযুক্ত ইউনিট (সেনা, নৌ, বিমানবাহিনী,অগ্নিনির্বাপক দল) সমন্বিত ভিজিল্যান্স দল গড়ে তোলার বাস্তবতা মূল্যায়ন করা জরুরি। একইসঙ্গে ব্যাপক যেন সচেনতা সৃষ্টি করতে হবে। সিলেট সুনামগঞ্জ অঞ্চলের মানুষ অপেক্ষাকৃত বিত্তশালী। তাই সমন্বিত উদ্যোগ নিলে অত্র অঞ্চলসহ নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ অঞ্চলের যদি জলাশয় গুলো মহাপরিকল্পনার অধীনে খনন, বাঁধ নির্মাণ করা যেতে পারে। এগুলো কিন্তু ঢাকা মহানগরে মাটির তলে মেট্রোরেল নির্মাণের থেকেও জরুরি। 

এই ধরনের সংকট জাতীয় দুর্যোগ। এগুলো নিয়ে গুজব ছড়ানো, রাজনীতি করা অশোভনীয়। আশা করি সমগ্র বাংলাদেশি, সমাজ, দেশ এবং প্রবাস থেকে রেমিটেন্স যোদ্ধাসহ সকলেই এর সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে দুর্যোগ মোকাবিলা করে এ সময় বাংলাদেশের দুর্যোগকবলিত মানুষকে স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে দিতে একাকার হয়ে কাজ করবে।


শেয়ার করুন