১৮ এপ্রিল ২০১২, বৃহস্পতিবার, ০১:০৯:২২ অপরাহ্ন


তামিমদের মুখ রক্ষার ব্যাটিং
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৫-০৬-২০২২
তামিমদের মুখ রক্ষার ব্যাটিং সেন্ট লুসিয়ার জর্জ আইল্যান্ডে তামিম ইকবালের ব্যাটিংয়ে এক মুহুর্ত/ছবি সংগৃহীত


২৫ জুন ২০২২। দেশে এবং প্রবাসে বাংলাদেশের আজ জয়ধ্বনি।  প্রমত্তা পদ্মা নদীর বুকে আজ চালু হচ্ছে উত্তর- দক্ষিণ বাংলাদেশের মিলন মোহনা , গর্ব আর অহংকারের প্রতীক বহুমুখী সেতু।  দূরদেশে ক্যারিবিয়ান সাগর পাড়ে  সেন্ট লুসিয়া ড্যারেন সামি স্টেডিয়ামে অনিশ্চিত বাউন্সের উইকেটে প্রথম ব্যাটিং করে  বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে ২৩৪ করে মন্দের ভালো করেছে। শুরুতে তামিমের ৪৬ এবং শেষ দিকে লিটনের ৫৩ ইনিংসের হাইলাইট ছিল।  শরিফুল -এবাদত ৯ম উইকেট জুটির ৩০ বলে ৩৬ রানের জুটি দলকে এই উইকেটে স্বস্তির স্থানে নিয়েছে। দিন শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজ  বিনা উইকেটে ৬৭ করে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণে।

.আবারো দেখা গেলো বাংলাদেশ ব্যাটিং করার সময় উইকেট বোলিং বান্ধব মনে হলে আপাত দৃষ্টিতে উইকেট চরিত্র পাল্টে যায় প্রতিপক্ষের ব্যাটিং করার সময়।. বাংলাদেশ ভুলে যায় খেলাটি ৫ দিন ১৫ সেশনের। দ্রুত ৩০-৪০ রান করার চেয়ে ধীরে স্থিরে খেলে প্রথম ইনিংসে নিদেন পক্ষে ৩০০-৩৫০ রান করার টার্গেট হওয়া উচিত। হতেও পারতো। প্রয়োজন ছিল ধৈর্য। প্রথম দিনে দুই সেশনের কিছু বেশি সময়ে সব উইকেট হারালে প্রতিপক্ষ অনেক সময় পায় পরিকল্পনা করে এগিয়ে যাবার। 


ভাগ্যের কিছুটা সহায়তা পেলে বড় স্কোর করা আওতায় ছিল। ভালো খেলতে থাকা শান্ত (২৬) আর বহুদিন পর দোলে ফেরা বিজয় (২৩) আম্পায়ার্স সিদ্ধান্তে আউট হলে একসময় বাংলাদেশ ইনিংসের ছন্দ পতন ঘটেছিলো। অধিনায়ক সাকিব নিজের বিশ্ব খাতির সাথে অবিচার করে দায়িত্বহীনের মতো আউট হলে দায়িত্ব এসে পরে লিটন দাসের উপর। উইকেটে কিন্ত পেস এবং ল্যাটেরাল মুভমেন্ট সীমিত হলেও অসম বাউন্স আছে। এই উইকেটে ক্র্যাক্স দেখা যাচ্ছে। অনুমান করা যায় এই উইকেটে তৃতীয় চতুর্থ দিনে ব্যাট করা আদৌ সহজ হবে বলে মনে হয়না। তবে তামিম আরো একটু দায়িত্ব নিয়ে খেললে এবং সাকিব অ্যাটাকিং দৃষ্টি ভঙ্গি পরিহার করলে ৩৫০ রান হতে পারতো। তবে যে রান হয়েছে সেটি কিন্ত যুদ্ধ করার মতো পুঁজি।  বাংলাদেশের বোলাররা সঠিক লেংথে বোলিং করলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে এখানে ব্যাটিং করা সহজ হবে না।

জানিনা কেন এই উইকেটে স্বাগতিক দল একমাত্র স্পিনার গুরুকেশ মটিকে পরিবর্তন করেছে। একজন পেসার পরিবর্তন করে  অ্যান্ডার্সন ফিলিপসকে অবশ্যই  খেলানো যেত।  

অন্যদিকে বাংলাদেশ অফ ফর্মে থাকা প্রাক্তন অধিনায়ক মুমিনুল হককে পরিবর্তন করে ঘরোয়া ক্রিকেটে দুর্দান্ত খেলে চলা এনামুল হক বিজয়কে এবং কাঁটার মাস্টার মুস্তাফিজকে বিশ্রাম দিয়ে দেশ থেকে জরুরি ভিত্তিতে উড়িয়ে আনা শরিফুলকে অন্তর্ভুক্ত করে। শুরুতে তামিম রিভিউ করে রক্ষা পেয়ে স্বভাব সুলভ ছন্দে ব্যাটিং করছিলো। ওপর প্রান্তে জয় ছিল অস্বস্তিতে। অভিষিক্ত ফিলিপ্স টেস্ট জীবনের দ্বিতীয় বলে জয়ের উইকেট ভেঙে দিয়ে প্রথম আঘাত হানে। ক্যারিবিয়ান বোলাররা একটু বেশি হালকা বল করছিল, যাতে বাউন্ডারি আসছিলো সহজে। নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে জোসেফের বলে ব্লাকউডের হাতে ক্যাচ দিয়ে ৪৬ রান করে অসময়ে ফিরে যায় তামিম। তার মতো অভিজ্ঞ ব্যাটসমান নিজের উইকেটের প্রকৃত মূল্য দিলে দলের উপকার হতো। 

বলবো, ভালো খেলছিল বহুদিন পর শান্ত, দলে ফেরা বিজয়ের বাটিংয়েও ছিল আত্মবিশ্বাস।  কিন্ত আগেই বলেছি ভাগ্য মুখ ফিরিয়ে নেয়ায় দুইজনই আম্পায়ার্স কলে  উইকেট হারায়। সোহান, সাকিব , মেরাজের আউট হবার ধরণ আনাড়ির মতো ছিল. একমাত্র লিটনের ৫৩ রানের ইনিংসটি ছিল দেখার মত। ঘুরে দাঁড়িয়েছিল এবাদত -শরিফুল জুটি।  ৯ম উইকেটে ওদের যোগাযোগে যোগ হয় মূল্যবান। ৩৬ রান খেলায় বড় ভূমিকা রাখলে অবাক হবো না। ৫ টি বাউন্ডারি সমৃদ্ধ ২৬ রান শরিফুলকে ভালো বোলিং করতে উৎবুদ্ধ করবে হয় তো। 

৩৯ টি বাউন্ডারি হয়েছে বাংলাদেশ ইনিংসে।  এন্টিগুয়া টেস্টের প্রথম ইনিংসের ১০৩ রানের তুলনায় ২৩৪ রান অনেক উন্নত। তবে খেলাটা যেহেতু টেস্ট ম্যাচ।  ৬৪.২ ওভারে গুটিয়ে যাওয়া প্রতিদ্বন্দ্বী দলকে কিন্ত রয়ে শোয়ে খেয়ালের সুযোগ উপহার দেয়। আজারি জোসেফ (৩/৫৩) , জেইডেন সিলসের (৩/৫০) , অ্যান্ডারসন ফিলিপসের ( ২/৩০) আবারো প্রমান করলো বাংলাদেশ পেস বোলিং খেলতে এখনো গুলিয়ে ফেলে। 

ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোলারসরা ওদের ইনিংসে যেভাবে বোলিং করেছে বাংলাদেশ কিন্ত নতুন বলে সেটি করতে পারে নি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ওপেনেররা অনেক স্বচ্ছন্দে ব্যাটিং  করে  স্বস্তির অবস্থানে  আছে। ব্রাফেট ৩২ রানে এবং ক্যাম্পবেল ৩০ রানে অপরাজিত আছে।  এই টেস্টে প্রথম ইনিংস এগিয়ে থাকা মূল ভূমিকা পালন করবে।  বলবো না, বাংলাদেশ খেলা থেকে ছিটকে পড়েছে। তবে টেস্ট ম্যাচ জিততে হলে ভালো ব্যাটসম্যানদের ৪০-৫০ যথেষ্ট নয়।  তামিম , লিটনের অন্তত একজনের  শতরান দলকে এগিয়ে দিতো। সাকিবের আরো দায়িত্ব নিয়ে ব্যাটিং করা উচিত ছিল। বাংলাদেশ তাদের করা ১৬ ওভার- ভালো বোলিং করেছে বলবো না।

শেয়ার করুন