হঠাৎ করেই আওয়ামী লীগের প্রতি নাখোশ কেন হয়েছেন শাহরিয়ার কবির এ প্রশ্ন এখন জনমনে ঘুরপাক খাচ্ছে। দীর্ঘদিন বিভিন্ন ইস্যুতে চুপ থাকা ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির চেয়ারম্যান একরকম সতর্কতা জারি করেছেন আওয়ামী লীগের প্রতি। সংখ্যালঘুদের পক্ষ হয়ে যেসব কথা তিনি বলেছেন, তাতে মনে হচ্ছে সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধি তিনিই। যেখানে বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ,খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ কথা বলছে, দাবি তুলছে, বাংলাদেশ হিন্দু মহাজোট দাবি তুলছে,আন্দোলন করার জন্য হুমকি দিচ্ছে সেখানে শাহরিয়ার কবির উদীচীর ব্যানারে একরকম সতর্ক করেছেন আওয়ামী লীগকে। যাকে আবার হুমকিও বলা চলে।
গত ২ জুলাই শাহবাগে এক সমাবেশে ‘অব্যাহত শিক্ষক নির্যাতন, নিপীড়ন ও হত্যার প্রতিবাদে’ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক সমাবেশে বক্তব্য দেন শাহরিয়ার কবির। তিনি আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্য করে বলেন, সংখ্যালঘু সম্প্রদায় যদি সিদ্ধান্ত নেয় ভোট দেবে না, তাহলে জাতীয় সংসদের নির্দিষ্ট ৬২টি নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগ জয়ী হতে পারবে না বলে মনে করেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির।
আওয়ামী লীগের উদ্দেশে শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘আপনারা আবার নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কী জবাব দেবেন বাংলাদেশের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে? আপনাদের বলতে হবে, যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম রক্ষা করিনি। ৬২টি নির্বাচনী এলাকা (সংসদীয় আসন) আছে, যদি সংখ্যালঘু সম্প্রদায় সিদ্ধান্ত নেয় যে আওয়ামী লীগকে ভোট দেব না। এসব নির্বাচনী এলাকা থেকে আপনারা নির্বাচিত হতে পারবেন না। আপনাদের স্বার্থে, আওয়ামী লীগের স্বার্থে বলছি, সংখ্যালঘু স্বার্থকে আলাদা করে দেখবেন না।’ সমাবেশ থেকে শাহরিয়ার কবির ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সংখ্যালঘু কমিশন গঠনের দাবি জানান।
এ সভায় সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন অন্যান্য বক্তারা। এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, মৌলবাদীরা এতোটাই সাহসী হয়েছে যে তারা পোশাক, সংস্কৃতি, পয়লা বৈশাখ, শিক্ষানীতি, পাঠ্যসূচি সব বিষয়ে এখন প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে। সামনে নির্বাচন, রাষ্ট্র এখন কিছুই করবে না। কয়েকজন বুদ্ধিজীবীর ভোটের চেয়ে হেফাজতের ভোট তাদের (ক্ষমতাসীন দল) কাছে গুরুত্বপূর্ণ। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রক্ষা করার চেয়ে তারা বরং ঋতখেলাপি, করখেলাপি এবং টাকা পাচারকারীদের ওপর নির্ভর করছে।
মুন্সীগঞ্জে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নির্যাতিত শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডল বলেন, ‘মানুষ মরে যাবে, কিন্তু মনুষ্যত্ব যদি মরে যায়, জাতি হিসেবে আমরা টিকতে পারবো না।’ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন উদীচীর সভাপতি বদিউর রহমান। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সব অর্জন ক্রমশ বিসর্জন দেওয়া হচ্ছে। ক্রমশ পেছনের দিকে যাচ্ছে দেশ। এখন যেসব ঘটনা ঘটছে, তা কল্পনারও অতীত। অনাসৃষ্টি ঘটানো হচ্ছে। এসবের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।
উদীচীর পাশাপাশি মহিলা পরিষদ, খেলাঘর, প্রজন্ম ৭১, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা বক্তব্য দেন।
এদিকে শাহাবাগে শাহরিয়ার কবিরের সমাবেশের পাশাপাশি জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বাংলাদেশ হিন্দু মহাজোট পৃথক সমাবেশ ও সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
