২৬ এপ্রিল ২০১২, শুক্রবার, ০৬:১৭:০৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :


দেশ’কে মেহজাবিন
দর্শকদের কথা চিন্তা করে কাজ করা উচিৎ
আলমগীর কবির
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০-০৪-২০২২
দর্শকদের কথা চিন্তা  করে কাজ করা উচিৎ মেহজাবিন চৌধুরী /ফাইল ছবি


একযুগ আগে বাংলা ভাষাটা পুরোপুরি আয়ত্তে ছিল না যার, সেই তরুণী এখন দেশের নাটকের শীর্ষ অভিনেত্রী! অতুলনীয় সৌন্দর্য্য, পরিশ্রম আর অভিনয় দক্ষতার মাধ্যমেই নিজেকে একজন সুঅভিনেত্রী হিসেবে প্রমাণ করেছেন মেহজাবীন। গত ১৯ এপ্রিল ছিল তার জন্মদিন। বিশেষ এই দিনের আয়োজন এবং ঈদ পরিকল্পনা নিয়ে তিনি কথা বলেছেন নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকার সাথে। 

প্রশ্ন : শুভ জন্মদিন। এবার বিশেষ এই দিনটি কিভাবে কাটালেন?

মেহজাবিন চৌধুরী : আমি জন্মদিনে কোনো আয়োজন করি না। হাতে বিশেষ কোনো কাজও রাখি না। এই দিনটি শুধু আমার পরিবারের জন্য। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। সামনে ঈদ। নাটকের অনেক কাজ বাকি। তবুও জন্মদিনে আমি নাটকের কোনো শুটিং রাখিনি। পরিবারের সাথে একান্তভাবে দিনটি কাটিয়েছি। 

প্রশ্ন : আপনার নাটকের সংখ্যা তিন শতাধিক। কেমন লাগে ভাবতে?

মেহজাবিন চৌধুরী: নিঃসন্দেহে খুব ভালো লাগছে। ভালো লাগে। দর্শকদের ভালোবাসায় আজকের আমি। লাক্সের সুন্দরী হতে পারাটাও দর্শকদের জন্যই। পথ চলার শুরুর সময়টিতে আমি তখন বয়সে ছোট। কোন কিছু না বুঝেই ঢুকে যাই শোবিজে। প্রথম দুই বছর শুধুই শিখেছি। বুঝতে চেয়েছি। বুঝতে পেরেছি। আমার সহযোগী শিল্পী যাঁরাই আমার সাথে ছিলেন সবাই বেশ সহযোগিতা করতেন। বুঝিয়ে দিতেন। একটি সময় ছিলো যখন নারী প্রধান গল্প হতো না। নারী চরিত্রে যারা অভিনয় করতেন তাদের ক্ষেত্রে দেখা যেতো স্ক্রীনে সময় তেমন দেয়া হতো না। খেয়াল করে দেখবেন, আগের দিনের নাটকে নারী প্রধান গল্প তেমন থাকতোই না। স্ক্রীনে নারীদের দেখা গেলেও তা ছিলো অল্প সময়ের জন্য। তবে আমি বেশ সৌভাগ্যবান। এখন নারী প্রধান গল্পের নাটক নির্মাণ হচ্ছে। নারী প্রধান অর্থে আমি নারীই নাটকে থাকবে তা বুঝাইনি। আমি বুঝিয়েছি স্ক্রীন শেয়ারের জায়গাটি। একজন পুরুষ শিল্পীর সমান সময় একজন নারী শিল্পী পাবে। এটিই বোঝাতে চেয়েছি। এখন সে রকমটিই হচ্ছে। এজন্য স্ক্রিপ্ট রাইটার, পরিচালক সকলের প্রতি আমি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ। আরও কৃতজ্ঞ আমার বিভিন্ন নাটকের সহশিল্পীদের প্রতি। যারা নিজেরাও আমার মতো করেই ভাবেন। তাদের কাছ থেকে সহযোগিতা, পেতে পেতে হয়তোবা আমারও কিছুটা অভিজ্ঞতা হয়েছে এতো বছরে। আমার সর্বোচ্চটুকু দিয়ে এখন অভিনয় করছি। বাকি সবটুকুই সম্মানিত দর্শকদের ভালোবাসা।

প্রশ্ন : এবারের ঈদের জন্য কয়টি নাটক করেছেন?

মেহজাবিন চৌধুরী : অনেকগুলো নাটকে কাজ করেছি। আরো করবো। এরই মধ্যে শেষ হয়েছে শিহাব শাহীন, ভিকি জায়েদ, রাফাত মজুমদার রিংকু, মহিদুল মহিম’র পরিচালনায় বেশ কয়েকটি নাটকের কাজ। অপূর্ব ও নিশো’ ভাইয়ার সঙ্গে আগে শেষ হওয়া কয়েকটি নাটক আগামী ঈদে প্রচারে আসবে। এছাড়া শাহেদ শরীফ খান, জোভান, তৌসিফ, ইয়াশ রোহান, খায়রুল বাসার, সুদীপের সঙ্গেও ঈদ নাটক প্রচার হবে আগামী ঈদে। 

প্রশ্ন : সুন্দরী প্রতিযোগিতায় যুক্ত হওয়ার আগের মেহজাবিনের জীবন সম্পর্কে জানতে চাই। 

মেহজাবিন চৌধুরী: আমার বড় হওয়া দেশের বাইরে। সে জীবনের কথা মনে করতে গেলে আমার স্কুলের কথাই মনে পড়ে। আমার বেশির ভাগ বন্ধুরাই ভারতীয়, ক’জন রয়েছে অন্য দেশের। যেহেতু ভারতীয় বন্ধুর সংখ্যা বেশি আমার সে কারণেই হিন্দি ভাষা অনেক ভালোভাবে রপ্ত আমার। তাদের সংস্কৃতি, তাদের আচার অনুষ্ঠান অনেকটুকুই আমার জানা। বাংলা ভালো বলতে পারতাম না। বিদেশে থাকায় আমাদের বাঙালী সংস্কৃতি, খাওয়া-দাওয়া, পোশাক, পরিবেশ সব কিছু মানিয়ে নিতে বেশ কষ্ট হয়েছে প্রথম দিকে। টেলিভিশনে লাক্স-চ্যানেল আইয়ের সুন্দরী প্রতিযোগিতার আগের বেশ কয়েকটি রাউন্ডের খোঁজ খবর আগে থেকেই রাখতাম আমি। যখন নিজের ভেতর থেকে আওয়াজ পেলাম প্রতিযোগিতাটি স্বচ্ছ। পরিবেশ খুব ভালো। তারপরই নিবন্ধন করি। নিবন্ধনের সময় আমার একবারও মনে হয়নি আমিই সেরা হবো। আমি নিজেকে যাচাই করতে চেয়েছিলাম মাত্র। নিবন্ধন করার পর বাবা মাকে জানালাম তারাও উৎসাহ দিয়েছিলেন। তারা খুশি হয়েছিলেন আমি চেষ্টা করছি কিছু একটা করার জন্য এই ভেবে। লাক্স-চ্যানেল আইয়ের সেই প্রতিযোগিতা আমাকে সামনে নিয়ে এসেছে। সেরাদের সেরা করেছে। এই প্রাপ্তিতে আমার চেয়ে আমার বাবা মা বেশি খুশি হয়েছিলেন।

প্রশ্ন : এখন ছোট পর্দায় সবচেয়ে জনপ্রিয় অভিনেত্রী বলা হয় আপনাকে। বিষয়টি আপনি কিভাবে দেখেন?

মেহজাবিন চৌধুরী : আমি শীর্ষ তারকাভিনেত্রী- এটা কখনোই মাথায় আনি না, মাথায় আনলেই আমার কাজ খারাপ হওয়া শুরু হবে। আমি প্রতিদিনই পরিচালক, সহশিল্পীদের কাছ থেকে নতুন কিছু শেখার চেষ্টা করি। প্রতিদিনই মনে হয় আমি একেবারেই নতুন। পাশাপাশি আমি তেমন গল্পই খুঁজি যেখানে আমি নতুন কিছু করতে পারবো। সত্যি বলতে কী পৃথিবীর অনেক গল্পের কাজই করা শেষ। এখন আমরা যে কাজগুলো করছি সেগুলো বলা যায় পুরোনো কাজ। সেই কাজগুলোই অর্থাৎ পুরোনো গল্প নতুন করে উপস্থাপন করা। কিন্তু সেই নতুন করে উপস্থাপনার সুযোগ আসলে কম পাই। বাজেট’সহ আনুষঙ্গিক অন্যান্য বিষয় এবং স্ক্রিপ্ট রাইটারের স্বাধীনতা থাকে না বলে দুর্দান্ত চ্যালেঞ্জিং গল্প এখন কমই আসে। তারপরও আমি আশাবাদী। ধীরে সুস্থে হলেও আমাদের ইণ্ডাষ্ট্রি এগিয়েই যাচ্ছে। 

প্রশ্ন : ইদানিং নাটকে ভিউ সংক্রান্ত একটি বিষয় চলছে। আপনি যেসব নাটকে অভিনয় করেন সে গুলোর মিলিয়ন ভিউ হতে বড় জোর মাস খানেক লাগছে। আবার অন্য অনেকের নাটকে ‘ভিউ’ বাড়ে না। তাদের কি করা উচিৎ?

মেহজাবিন চৌধুরী: আমার ভাবনাটা এমন যা হয়নি তা হয়নি। আগামীকাল যা করবো তা নিয়ে ভেবে চিন্তে এগিয়ে যাওয়া উচিৎ বলে মনে করি। শুধু আমি না সবারই এই ভাবনা থাকা উচিৎ আগামীকাল ভালো কিছু করতে পারছি কি না। ভিউ মানেই কিন্তু দর্শক। দর্শক যত বাড়বে আমাদের কাজের ক্ষেত্র তত বড় হবে। যতো ভালো কাজ হবে ততো ভালো বাজেট হবে। সে দৃষ্টিকোন থেকে দর্শকদের রুচির কথা চিন্তা করে কাজ করা উচিৎ। আজকে যে জায়গাটি তৈরি হচ্ছে তা কিন্তু দেশের এই শিল্পের জন্য টিকে থাকার নতুন মাধ্যম। ওটিটি প্ল্যাটফরমে একটি কাজ যাওয়া মানে বিশ্বের জন্য উন্মোচিত হওয়া। আমাদের জেনারেশন তো বটেই ভবিষ্যতে যারা অভিনয়ে আসবে সকলের জন্য একটি বিশাল সুযোগ এটি। আগের দিন গুলোতে নাটকের দর্শক ছিলো কিনা তা বিচার করার নির্ধারক যেহেতু ছিলো না, তখন বলা মুশকিল ছিলো নাটক মানুষ দেখছে কি না। তবে এখন কিন্তু কোন ভাবেই বলার উপায় নেই যে নাটক মানুষ দেখছে না। কারণ এখন নির্ধারক রয়েছে। যে কারনেই ভিউ সংক্রান্ত বিষয়টি উঠে এসেছে। আমি বা আমরা এ শিল্পের সাথে যারা জড়িত তারাই যে বিষয়টি বলছি তা কিন্তু নয়। এর প্রমাণ রয়েছে। এই যে তৈরি হওয়া নতুন দর্শক তারা কিন্তু অনেক সচেতন। সে কারণেই বলছি বাংলাদেশের নাটকের চমৎকার একটি সময় চলে এসেছে। আমি বিশ্বাস করি এ সময়কালে দীর্ঘ স্থায়ী হবে।

প্রশ্ন : যদি প্রশ্ন করি অভিনেত্রী মেহজাবিনকে নিয়ে সমালোচনা করতে তাহলে ব্যক্তি মেহজাবিন কি বলবেন?

মেহজাবিন চৌধুরী: আমার অভিনয় বিষয়ে সমলোচনার বিষয়টি যদি আমার কাছের মানুষদের জিজ্ঞেস করা হতো তাহলে তারা ভালো উত্তর দিতে পারতো। নিজের ব্যাপারে যখন বলতে হয় আমরা তো সেরা হিসেবেই নিজেকে উপস্থাপন করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। আমি আমার জায়গা থেকে যে বিষয়গুলো নিয়ে সমালোচনা করা উচিৎ সেগুলো হয়তো বুঝবোই না। বা কিছু চোখে পড়লেও সেটি না দেখার মতো করেই রাখবো। তারপরও যদি সমালোচনার কথা বলেন- খুব কঠিন প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ায় আমার জন্য। তারপরও বলি মানুষ হিসেবে আমি খুবই আবেগপ্রবণ। অল্পতেই ভেঙে পড়ি। খুব অল্প কথাতেই ভীষন কষ্ট পাই। আমার মনে হয় এখনকার দিনে অনেক শক্ত হওয়া জরুরি। কারো সামান্য কথাতেই নিজের আত্মবিশ্বাস ভেঙে যাবে এই ধরনের দুর্বলতা থাকা উচিৎ নয়। আমার উচিৎ আবেগ নিয়ন্ত্রণ করা। আবেগ থাকা ভালো তবে অতি মাত্রায় আবেগ থাকা ভালো না। আমার মনে হয় আমার সমালোচনার ক্ষেত্রে বেশি আবেগ থাকা আমার জন্য একটি নেতিবাচক দিক। আরও নেতিবাচক দিক যেমন আমি গান গাইতে পারি না। ছবি আঁকতে পারি না। আমি যদি আমার নামটিকে একটু সরিয়ে রাখি। দেশের অন্য স্বাভাবিক মানুষদের মতো করে ভাবি। তাহলে দেখা যাবে আমি অনেক কাজই করতে পারি না। আমার সামনে কারো বিপদ দেখলে আমি সেখানে ছুটে যেতে চাই। তার পাশে দাঁড়াতে চাই। যেমন কেউ একেবারে সামনে থেকে কাজ করে আবার কেউ হয়তো ভূমিকায় না থেকে পেছনে পেছনে চুপ থেকে কাজ করে যায়। আমি সেই দলের আমি পারি না সামাজিক কোন কাজের পর তা সবাইকে জানিয়ে বাহ বাহ কুড়াতে। আপনি কারো জন্য কিছু করে সেখান থেকে কিছু অর্জন করতে চাওয়া কিন্তু সঠিক নয়। আমি অন্তত এভাবেই বিশ্বাস করি। আমি আরও বিশ্বাস করি একজন মানুষের ভালো সময়ের চেয়ে খারাপ সময়ে তার পাশে দাঁড়ালে সে পুনরায় ঠিক জায়গায় দাঁড়াতে পারে। আমার গন্ডি অনেক ছোট। ছোট করেই রেখেছি। তবে সে গন্ডিতে যতগুলো বন্ধু আছে তারা সবাই খুবই কাছের। সেই ছেলে বেলা থেকে তারা আছে। আমার ব্যস্ততা বেড়েছে আমি তাদের সময় দিতে পারি না। তারপরও তারা আমার পাশে আছে। সেক্ষেত্রে আমিও চেষ্টা করি যদি ফিজিক্যালি তাদের কাছে যেতে না পারি তবে মানসিক ভাবে তাদের পাশে দাঁড়ানোর। কারো মন খারাপ থাকলে তাকে আমি এড়িয়ে চলতে পারি না।

প্রশ্ন : প্রিয় চরিত্র সম্পর্কে বলুন?

মেহজাবিন চৌধুরী: প্রিয় চরিত্রের উত্তর সেদিনই দিতে পারবো যেদিন অভিনয় ছেড়ে দেবো। অসংখ্য চরিত্র আছে যে গুলো করা হয়নি। আইনজীবী, সাংবাদিকসহ অসংখ্য চরিত্র রয়েছে যে চরিত্র গুলোতে অভিনয় করা হয়নি। আমার বিশ্বাস যেসব চরিত্রে আমি কাজ করিনি সেসব চরিত্র নিয়ে আমাকে ভাবা হবে। স্বপ্ন দেখি মহাকাশচারী হিসেবে অভিনয় করছি। অনেক অনেক চরিত্র বাকি রয়েছে। প্রিয় চরিত্রের প্রশ্নে সে জন্যই বলবো আমার অভিজ্ঞতা আরও বৃদ্ধি পাওয়া উচিৎ। আমার দেখার, শেখার, বোঝার জন্য আরও সময়ের প্রয়োজন। আমি আরও কিছুদিন খুব ভালো ভাবে অভিনয় করে যেতে চাই।

প্রশ্ন: আপনার ক্রাশ সম্পর্কে বলুন?

মেহজাবিন চৌধুরী: এ প্রশ্নের উত্তর আমার বিয়ের দিন পর্যন্ত তোলা থাকুক। সেদিন আপনারা সবাই জানবেন। যেহেতু এই প্রশ্নটি আমার ব্যক্তিগত জীবনের তাই এই জায়গাটুকু শেয়ার করতে চাই না।


প্রশ্ন: মেহজাবিন-অপূর্ব নাকি মেহজাবি-আফরান মধুর জুটি কোনটি?

মেহজাবিন চৌধুরী: এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারবে দর্শকরা। দু’জনেই আমার প্রিয় দুই অভিনেতা। তাদের দু’জনের সাথে আমার যতো কাজ সব গুলোর ফলাফল ভালো। জুঁটি হিসেবে কোনটি মধুর বা সফল এটা প্রিয় দর্শক যারা রয়েছেন তাদের উপরই থাক। আমি চাই ভালো নাটক হোক। আমি ভালো চরিত্রে অভিনয় করি। সবার স্নেহ আমার জন্য থাকুক। দুই জন্যই অভিজ্ঞ, দুইজনই মানুষ হিসেবে অসাধারণ। দু’জনই আমার খুবই কাছের, খুবই প্রিয়। আমরা খুব ভালো বন্ধু। বলতে পারেন পরিবারের বাইরে তারা আমার আরেকটি পরিবার। তাদের পরিবারেও আমি একজন সদস্য।


শেয়ার করুন