০১ জুলাই ২০১২, সোমবার, ১১:৪০:০৪ অপরাহ্ন


গুমের কুশীলব বেনজীরকে পালাতে সুযোগ করে দিয়েছে সরকার
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৫-০৬-২০২৪
গুমের কুশীলব বেনজীরকে পালাতে সুযোগ করে দিয়েছে সরকার আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখছেন হাসনাত কাইয়ূম


গুমের অন্যতম কুশীলব বেনজীরকে দেশ থেকে পালাতে সুযোগ করে দিয়েছে সরকার। তবে জনগণকে গুম-খুনের ভয় দেখিয়ে আর দাবিয়ে রাখা যাবে না। গুমের কুশীলবদের বিচার বাংলাদেশের মাটিতে হবেই।

সম্প্রতি রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান কার্যালয়ে ’মাফিয়াতান্ত্রিক ক্ষমতার ভয়াবহ বহিঃপ্রকাশ গুম বন্ধ করতে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বানে, গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিক সপ্তাহ’ উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। সভায় সংগঠনের সাংগঠনিক সমন্বয়ক ইমরান ইমনের পরিচালনায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের জাতীয় সমন্বয় কমিটির সদস্য জাকিয়া শিশির। বক্তব্য রাখেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ূম, কেন্দ্রীয় সংগঠক হাবিবুর রহমান রিজু, ২০২০ সালে গুমের শিকার সংগঠনের অর্থ সমন্বয়ক দিদারুল ভূঁইয়া, ডিএসএ ভিকটিম নেটওয়ার্ক এর আহবায়ক গোলাম মাহফুজ জোয়ার্দার প্রমুখ।

হাসনাত কাইয়ূম বলেন, রাষ্ট্র দ্বারা হওয়া নির্যাতন, নিপীড়নের মধ্যে সব থেকে নির্মম, নিষ্ঠুরতম জুলুম হচ্ছে গুম। সরকার মানুষকে বোঝাতে চায় যে যেকোন সময়, যেকোন কারণে বা অকারণে এই রাষ্ট্র চাইলেই যেকেউ গুম হয়ে যেতে পারে। এজন্য হয়তো ১০০ মানুষকে গুম করে, কিন্তু তারা ভয় দেখাতে চায় কোটি কোটি মানুষকে। যাতে করে তাদের অন্যায্য ক্ষমতার বিরুদ্ধে জনগণ ঐক্যবদ্ধ হতে না পারে। বেনজীরকে যখন শুদ্ধাচার পুরস্কার দেওয়া হয় তখন কি সে নিরাপরাধ ছিলো? সে তো একদিনে গড়ে উঠেনি। সরকার তার হীনস্বার্থে বেনজীরদেরকে ব্যবহার করেছে। এটা এখন ফ্যাসিবাদের ধাপ অতিক্রম করে মাফিয়াতন্ত্র। এই মাফিয়ারা কয়েকজন, এদের কোন রাজনৈতিক ভিত্তি নেই। এজন্য মানুষ ঐক্যবদ্ধ হলে এদের টিকে থাকার কোন সম্ভবনা নেই। মানুষ ঐক্যবদ্ধ হলে বেনজীরের মতো সবাই পালাবে। এই রাষ্ট্রকে গণক্ষমতাতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার জন্য রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানাচ্ছে। আমরা ঐক্যবদ্ধ হলে মুক্তিযুদ্ধের আকাক্সক্ষার সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের বাংলাদেশ গড়তে পারবো।

হাবিবুর রহমান রিজু বলেন, স্বাধীনতার পরে জহির রায়হান থেকে শুরু করে আজ অবধি গুমের শিকার মানুষদের দায় প্রায় সকল রাজনৈতিক দলের। এই দায় নিয়েও সরকারগুলো টিকে থাকতে পারে সংবিধানের একপদকেন্দ্রিক ক্ষমতাকাঠামোর কারণে। তাই রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন ডামি নির্বাচন করা এই মাফিয়াদের পতনের সাথে সাথে সংবিধান সংস্কারের জন্য লড়াই করছে।

দিদারুল ভূঁইয়া বলেন, হিউম্যান রাইট ওয়াচের ২০২১ সালের একটা রিপোর্ট অনুযায়ী ৮৬ জনকে গুম করার তথ্য প্রকাশ হওয়ার পরে তাদের আর কোন খবর পাওয়া যায়নি। যারা আমাকে অন্যায়ভাবে গুম করেছিলো আমি কি তাদের বিরুদ্ধে কোন বিচার চাইতে পারবো? কিংবা আমার পরিবার যে ভোগান্তির শিকার হয়েছিলো তার জন্য যারা দায়ী তাদের বিচার কার কাছে কিভাবে চাইবো? জনগণের সাথে হওয়া রাষ্ট্রীয় জুলুমের বিচারের আইন কি? জনগণের উপর হওয়া জুলুমের বিচার পাওয়ার ব্যবস্থা কি?

ডিএসএ ভিকটিম নেটওয়ার্ক এর আহবায়ক গোলাম মাহফুজ জোয়ার্দার বলেন, আমাদের জন্য দুর্ভাগ্য যারা গুম-নির্যাতন-নীপিড়নের শিকার হচ্ছে তাদেরকে দেশ থেকে পালাতে হচ্ছে। আর যারা এগুলো করছে তারা বহাল তবিয়তে আছে। গুম-খুন, নির্যাতন-নীপড়নমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে জাকিয়া শিশির বলেন, গুমের শিকার মানুষের স্বজনদের অবস্থা একবার ভাবেন। তারা তো জানেননা তাদের সন্তান, বাবা, স্বামী আসলে জীবিত না মৃত। একজন মায়ের প্রশ্ন তার সন্তান জীবিত না মৃত? একজন সন্তানের প্রশ্ন তার বাবা বেঁচে আছে নাকি সে এতিম? একজন স্ত্রী জানেন না সে সধবা নাকি বিধবা? গুমের শিকার পরিবার যখন দাবি করে অন্তত লাশটা হলেও দেন তাকে কবর দেই বা শ্মশানে পোড়াই। তখন মানুষের যে অসহায়ত্ব প্রকাশ পায় এর জন্য নিশ্চয়ই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়নি। এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে আমাদের ঐক্যবদ্ধ ভাবে লড়াই করতে হবে।

এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন, ২০১৯ সালে গুমের শিকার ইসমাইল হোসেন বাতেনের পরিবারের সদস্য ছোট ভাই খাইরুল আলম, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের জাতীয় নির্বাহী কমিটির দপ্তর সমন্বয়ক নাঈমুল নয়ন, জাতীয় সমন্বয় কমিটির সদস্য মোহাম্মদ আব্দুল জলিল, ঢাকা জেলার সমন্বয়ক শাহাবুদ্দিন কবিরাজ লিটন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের দপ্তর সমন্বয়ক সারোয়ার আলম ও এহসান আহমেদ, ঢাকা মহানগর উত্তরের দপ্তর সমন্বয়ক জাহিদ রশিদ রানা ও মোহাম্মদ আজিজ, রাষ্ট্র সংস্কার যুব আন্দোলনের সমন্বয়ক মাশকুর রাতুল, উম্মে হাবিবা মায়া প্রমুখ।

শেয়ার করুন