২৫ এপ্রিল ২০১২, বৃহস্পতিবার, ০২:৪৯:২০ পূর্বাহ্ন


৩৬ বছরে এমন চিত্র দেখা যায়নি
ডিটমার্সে শ্বশুর-জামাই বর্ণবাদী হামলার শিকার
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৩-০৭-২০২২
ডিটমার্সে শ্বশুর-জামাই বর্ণবাদী  হামলার শিকার ডিটমার্সের টিডি ব্যাংকের গ্লাস ভেঙেডাকাতির চেষ্টা


এস্টোরিয়ার ডিটমার্স। খুবই সুন্দর এবং নিরাপদ জায়গা। এখন আর নিরাপদ বলার কোনো সুযোগ নেই। প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো ঘটনা ঘটছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণেই অপরাধ বেড়ে যাচ্ছে। মানুষের ওপর বর্ণবৈষম্যমূলক হামলা হচ্ছে, ব্যাংক ডাকাতির চেষ্টা করা হচ্ছে। এখন সবাই নিরাপদ এস্টোরিয়াকে অনিরাপদ মনে করছেন। এ নিয়ে এস্টোরিয়াবাসীর মধ্যে উদ্বেগ ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। বিশেষ করে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে। এক সময় এস্টোরিয়া প্রবাসী বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকা ছিলো। কিন্তু এস্টোরিয়ায় ভাড়া এবং জীবনযাত্রারমান বেড়ে যাওয়ায় অনেকেই এস্টোরিয়া থেকে অন্যান্য স্থানে চলে যান। তবে যারা এক সময় এস্টোরিয়ায় বাড়ি ক্রয় করেছেন তারা এখনো এস্টোরিয়ায় থাকেন। তাদের কাছে এস্টোরিয়া সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা ছিলো। এখন অপরাধ বেড়ে যাওয়ায় অনেকেই শঙ্কিত।

গত ৬ জুলাই ভোরে এস্টোরিয়ার ডিটমার্স এলাকায় শ্বশুর ও জামাই বর্ণবাদী হামলার শিকার হয়েছেন। এস্টোরিয়ার ডিটমার্সের টিডি ব্যাংকের গ্লাস ভেঙে ডাকাতির চেষ্টা করা হচ্ছে। ডানকিন ডোনাটের সেফ বক্স নেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে, ডিটমার্সের সাবওয়ের পাশে একটি ভারতীয় দোকানে রবারী করা হয়, আরেক বাংলাদেশি ইয়েলো ট্যাক্সি ড্রাইভারকে হুমকি দেয়া হয়েছে। হামলা শিকার বাংলাদেশি রুনু মোহাম্মদ দেশকে জানান, ১৯৮৬ সাল অর্থাৎ ৩৬ বছর ধরে আমি এস্টোরিয়ার ডিটমার্স এলাকায় থাকি। ইতিমধ্যে কয়েকটি বাড়িও ক্রয় করেছি।

কিন্তু কোনোদিন এমন অবস্থা দেখিনি। তিনি বলেন, আমি সাধারণত সময় পেলেই এস্টোরিয়ার বায়তুল মোকাররম (২২-২১, ৩৩ স্ট্রিট) মসজিদে ফজরের নামাজ পড়তে যাই। ওইদিনও সকালে আমার বাসা থেকে হেঁটে মসজিদের দিকে যাচ্ছিলাম। আমার বাসা থেকে মসজিদে যেতে কয়েক মিনিট সময় লাগে। ওইদিনও আমি অন্যদিনের মতো হেঁটে মসজিদে যাচ্ছিলাম ভোর সাড়ে ৪টার দিকে। আমি যখন হেঁটে যাচ্ছিলাম, তখন দেখলাম আরেকটি শ্বেতাঙ্গ লোকও হেঁটে যাচ্ছেন। আমি নিচে তাকিয়ে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ করেই ওই লোকটি আমার কাছে এসে কোনো কথা না বলেই আমার মুখে প্রচণ্ড ঘুষি মেরে দিলো। প্রচণ্ড ঘুষিতে আমার মাথা ঘুরে গেল, কিছুক্ষণের জন্য আমার ব্রেন শূন্য হয়ে যায়। জ্ঞান ফিরে আসার পর আমি অনুভব করলাম আমার মুখ জ্বলছে। মুখে হাত দিয়ে দেখি যে রক্ত ঝরছে।ওই লোকটি তখনও কাছে ছিলো, আমি তাকে জিজ্ঞেস করি কেন তুমি আমাকে আঘাত করলে? কিছু না বলে সে চলে গেল।

রক্ত দেখে আমি বাসায় চলে গেলাম। বাসায় যাবার পর আমার স্ত্রী, আমার মেয়ে এবং মেয়ের জামাই ছুটে আসে। আমার মেয়েই পুলিশ কল করে। সাথে সাথেই পুলিশ আসে। পুলিশ এসে আমার কাছ থেকে ঘটনার বর্ণনা নেয় এবং রিপোর্ট লেখে চলে যায়। যাবার সময় বলে যায়, একটি সতর্কভাবে চলাফেরা করতে। কারণ সিটির আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনত হয়েছে। পুলিশ চলে যাবার পর এক পর্যায়ে আমার স্ত্রী আমাকে বলে, আপনার চশমা কোথায়? আমি বুঝতে পারলাম ঘুষির কারণে আমার চোখ থেকে চশমা পড়ে যায়। এই লোকটি আমাদের এলাকাতেই থাকে। তবে পুরো চেহারা শনাক্ত করতে সমস্যা হচ্ছিলো। ওই অবস্থায় আমি চশমা আনার জন্য যাচ্ছিলাম। আমার স্ত্রী, মেয়ে এবং মেয়ের জামাই আমাকে যেতে দিলো না। আমার মেয়ে-জামাই ক্যালভিন বললেন, আপনার যাবার দরকার নেই। আমি যাচ্ছি। এই কথা বলেই ক্যালভিন চমশা খুঁজতে চলে যায়। অনেক সময় হয়ে যায় ক্যালভিন আসছিলো না। আমার সন্দেহ হয়। আমি আবার তো ঘটনাস্থলের দিকে হাঁটা শুরু করি। এই সময় আমার মেয়েও আমার সাথে আসছিলেন। আমার আসতে ক্যালভিন বললো, সে আমার ওপর হামলা করেছে। দেখলাম, আমার ওপর যে হামলা করেছে সেই একই ব্যক্তি আমার মেয়ে-জামাইয়ের ওপর হামলা করেছে। তিনি বলেন, আমার চেয়ে বেশি মেরেছে আমার মেয়ে-জামাইকে। তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখেই আমার মেয়ে আবারো পুলিশ কল করে। এরইমধ্যে আমার ওই হামলাকারীকে ধরতে যাচ্ছিলাম। সে দৌড়ে তার বাড়িতে ঢুকে গেল। এরই মধ্যে পুলিশ এলো এবং রিপোর্ট করলো। পুলিশকে আমার ওই লোকের বাড়ি দেখিয়ে দিলাম। কিন্তু ওয়ারেন্ট ছাড়া পুলিশ বাড়িতে ঢুকতে চাইলো না। আমাদের অ্যাম্বুলেন্সে করে এলেমহার্স্ট হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো। এলেমহার্স্ট হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ১৪ ঘণ্টা ছেড়ে দেয়া হলো। আমি দেখতে পারলাম সে শুধু আমার মুখে মারেনি, আমার বুকেও ঘুষি মেরেছে। যে কারণে আমার বুকের অংশ কালো এবং মুখ কালো হয়ে যায় এবং ফুলে যায়। আমার একটি দাঁতও নড়ছে। আমার আবারো ডাক্তারে যেতে হবে এবং চিকিৎসা করাতে হবে। একই অবস্থা আমার মেয়ের জামাইয়েরও। তাকেও চিকিৎসা নিতে হবে।

দেশের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পুলিশ এখনো ওই দুর্বৃত্তকে গ্রেফতার করতে পারেনি। যদিও পরদিন ৭ জুলাই ১১৪ প্রিসেক্টে ডাকা হয়। সেখানে আমাদের সাথে মসজিদের ইমাম আব্দুল্লাহ কামাল, তাজুল ইসলাম গিয়েছিলেন। পুলিশ আমাকে কয়েকজনের ছবি দেখায়, কিন্তু সেই ছবিতে ওই লোক ছিলো না। পুলিশ আমাদের বলেছে দুর্বৃত্তকে ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে। পুলিশ মসজিদের ইমাম আব্দুল্লাহ কামালকে বলেছেন, সতর্কভাবে চলাফেরা করতে। তারা আশ্বস্ত করেন মুসল্লিদের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ টহল বাড়াবেন।

এদিকে এস্টোরিয়ায় বসবাসকারী তাজুল ইসলাম জানান, ২৬ জুন এস্টোরিয়ার ডিটমার্সের টিডি ব্যাংকের গ্লাস ভেঙে ডাকাতির চেষ্টা করা হচ্ছে। ডানকিন ডোনাটের সেফ বক্স নেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে, ডিটমার্সের সাবওয়ের পাশে একটি ভারতীয় দোকানে রবারী করা হয়, আরেক বাংলাদেশি ইয়েলো ট্যাক্সি ড্রাইভারকে হুমকি দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আমারা এখন আর নিজেদের নিরাপদ মনে করছি না। পরপর কয়েকটি ঘটনায় আমাদের মধ্যে উদ্বেগ এবং উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে।


শেয়ার করুন