২৯ মার্চ ২০১২, শুক্রবার, ০২:৫৩:১৬ অপরাহ্ন


প্রত্যাশা আরো নিষেধাজ্ঞার
বিএনপির হুঙ্কারে সরকারে হাসি-তামাশা
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৩-০৭-২০২২
বিএনপির হুঙ্কারে সরকারে হাসি-তামাশা


কঠোর আন্দোলনের ডাক দিলেও বিএনপি এখন অপেক্ষা করছে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা ও সংগঠন থেকে সরকারের বিরুদ্ধে আরো কঠোর নিষেধাজ্ঞা। দলটি মনে করে আরো কয়েকটি নিষেধাজ্ঞা দেয়া হলে সরকারের অবস্থান আরো নড়বড়ে হয়ে যাবে, এতে তাদের রাজনৈতিক অবস্থান আরো সুদৃঢ হবে। বড়ো ধরনের আন্দোলনই করা লাগবে না। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। 

 বিএনপির হুঙ্কার

সরকারের বিরুদ্ধে একের পর এক হুঙ্কার দিয়ে যাচ্ছে। এসব হুঙ্কারের ভাষা হচ্ছে সরকারকে তারা যে কোনো সময়েই ফেলে দিতে পারে। সরকারের বিরুদ্ধে এপর্যন্ত সর্বশেষ রাজনৈতিক হুঙ্কার দিয়েছেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান। তিনি সরকারের উদ্দেশ্যে বলেছেন, এবার আর কোনো টেস্ট খেলা হবে না। এবার হবে ফাইনাল খেলা। সরকারের পতন ঘটিয়ে, দেশের গণতন্ত্র ফিরিয়েই ঘরে ফিরবো।’ আবার বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগকে দেশের জনগণ আর বিশ্বাস করে না। তাদের ফাঁদে জনগণের দল বিএনপি আর যাবে না। তাদের পাতানো নির্বাচননির্বাচন খেলায় আর অংশ নেবে না। 

এর আগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, যুদ্ধ মানেই সবসময় অস্ত্র নয়, অস্ত্রবিহীন যুদ্ধ হয়। সেই যুদ্ধটা নিখুঁতভাবে করতে হবে। সে জন্য প্রয়োজন মনোবল ও সৎ সাহস। মনোবল যদি অটুট থাকে, সাহসের অভাব ঘটে না। সাহস কাজে লাগানো গেলে যে কোনো অসাধ্য সাধন করা যাবে। এক আলোচনা সভায় গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘আওয়ামী লীগের মতো জ্বালাও-পোড়াও নাইবা করলাম, হরতাল নাইবা করলাম, গাড়ি-ঘোড়ায় আগুন নাইবা দিলাম, আমাদের কিছুই করার দরকার নেই। শুধু অবৈধ সরকারের অধীনে বাংলাদেশের গণতন্ত্রমনা মানুষের পক্ষে রাজনৈতিক দলগুলো যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে, সরকারপ্রধান হেলিকপ্টারে করে দেশত্যাগ করতে বাধ্য হবেন। অবশ্য এ বছরের আরো আগে ফেব্রুয়ারিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছিলেন অপর এক আলোচনা অনুষ্ঠানে যে, পরিস্থিতি দেখে বোঝা যাচ্ছে এই আওয়ামী লীগ সরকার থাকবে না।

ওই আলোচনা সভায় নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে নেতাকর্মীদের আহ্বান জানিয়ে গয়েশ্বর বলেন, পরিস্থিতি বলে দিচ্ছে এই সরকার থাকবে না। আমরা একটু ধাক্কা দিলেই পড়ে যাবে। সেজন্য সবাইকে প্রস্তুত হতে হবে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নিজেরাই তাদের পতন নিশ্চিত করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল্লাহ আল নোমান। তিনি বলেন, জনগণ যে নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে তাকে বলে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। কিন্তু যে নির্বাচনে আগের রাতেই ভোটগ্রহণ সম্পন্ন করা হবে সে নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। এমনকি কাউকে অংশগ্রহণও করতে দেয়া হবে না। অর্থাৎ ভোটারবিহীন নির্বাচন আর করতে দেয়া হবে না।

অন্যদিকে বিএনপির সাথে আন্দোলন করতে জোটবদ্ধ হতে চাওয়া নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, গায়ের জোরে বেশ কিছুদিন ক্ষমতায় থাকা যায়, কিন্তু দীর্ঘদিন থাকা যায় না। এই সরকার যে চুরি, ডাকাতি, গুণ্ডামি করে ক্ষমতায় আছে এটা সারা দুনিয়া জানে।

বিএনপির  হুঙ্কার ও সরকারের হাসি-তামাশা

এদিকে একের পর এক হুঙ্কার ছাড়লেও বিএনপি, তাদের দল বা জোট এটি কীভাবে বাস্তবায়ন করবেন তার রূপরেখা জানায়নি কোথাও। আর একারণে এসব নিয়ে নানান তামাশাপূর্ণ মন্তব্য ছুড়ে দিচ্ছেন সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক, পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি আন্দোলনের ঘোষণা দেয়। রোজার ঈদ আসলে বলে কোরবানির ঈদে, আবার কোরবানির ঈদ আসলে বলে রোজার ঈদের পরে আন্দোলন শুরু হবে। দেখতে দেখতে এভাবে দশটি বছর কেটে গেল। বিএনপি দশ বছরে যা পারে নাই, দশদিনে কী তা পারবে? বিএনপির আন্দোলনের ডাক ভুয়া। আবার অন্য এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরই বলেছেন বিএনপি গত ১৩ বছরে ২৬ বার আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। কিন্তু সেই ডাক, আন্দোলনের মুখ দেখেনি। এখন বিএনপি আন্দোলনের কথা বললে মানুষ হাসে।

আসলে কি হচ্ছে ও শেষ কথা

‘শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন নয়’এই একদফা দাবিতে বিএনপি অন্য দলগুলোর সাথে ‘বৃহত্তর ঐক্য’ করে যুগপৎ আন্দোলনের হাঁকডাক শোনা যাচ্ছে। তবে তেমন গণআন্দোলন দলটি গড়ে তুলতে পারেনি বা পারছে না। এর পেছনে অবশ্য বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে সরকারের দমন-পীড়ন,মামলা -হামলা। কিন্তু এসব ভয়ভীতি কাটিয়ে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে দলটি বেশ কয়েকবারই ডাক দিয়েছে। কিন্তু এসব হুঙ্কার গণমাধ্যমেই দেখা যায়। মাঠে খুব একটা দেখা যায় না। তবে মাঝে দরটি বিভিন্ন ইস্যুতে আন্দোলনের ডাক দিয়ে চুপ করে আছে। এই প্রতিবেদক এব্যাপারে বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতার পাশাপাশি মাঠে কর্মীদের সাথে কথা বলেছেন একান্তে। তাদের অভিমত হলো বিএনপির একটি বড় অংশ মনে করে তারা এতোদিন ধরে আন্দোলন-সংগ্রাম করে দেশে-বিদেশে একটা অর্জন করেছে, তাহলো সরকার হামলা-মামলা, গুম করে বিরোধীদের আন্দোলন-সংগ্রাম ঠেকিয়ে দিয়েছে।

তাদের মতে, গত বছরের শেষে র‌্যাব ও তার ছয় কর্মকর্তার ওপর মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আরোপের মধ্য দিয়েই দেশের মাটিতে বিএনপিসহ গণতন্ত্র রক্ষায় আন্দোলনরত দলগুলির আন্দোলন এমনিতেই সফল হয়ে গেছে। তাই এখন বিএনপির আর কিছু না করলেও চলবে বলে তাদের অভিমত। নাম প্রকাশে বিএনপির একজন নেতা বলেন, তাদের দল মনে করে এখন মাঠ গরম করলে লাভ হবে আওয়ামী লীগ ও সরকারের। তার মতে, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সরকারের বিরুদ্ধে যে ধরনের অভিযোগ উঠেছে তাতে সরকার মুখে যা-ই বলুক না কেন মানসিকভাবে অনেক অসহায় ও দুর্বল।

তাই তারা বড় ধরনের আন্দোলনের চেয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে আরো কি কি পদক্ষেপ আসে তা দেখতেই উদগ্রীব তারা। এদিকে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকমহলের মতের‌্যাব ও তার ছয় কর্মকর্তার ওপর মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আরোপের মতো আচমকা এমন খবরে বিএনপি ও তার সমর্থিতরা বেশ পুলকিত,চাঙ্গা। অন্যদিকে সম্প্রতি জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করে বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের প্রত্যাশার কথা ইসির কাছে যেভাবে তুলে ধরেছেন দেশের উন্নয়ন সহযোগী ১৪ দেশের কূটনীতিক-তাতেও বিএনপি পুলকিত।

বিএনপি এখন মনে করে আর্ন্তজাতিক আরো চাপেই সরকার কাহিল হয়ে পড়বে। মাঠকর্মীদের মতে, র‌্যাব ও তার ছয় কর্মকর্তার ওপর মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর বিএনপি মাঠকে আরো গরম করা বাদ দিয়ে ভিন্ন আশায় দিন গুনছে। তারা কেবলই হাটে-মাঠে-ঘাটে আশায় বুক বেঁধে আছে আরো কৌতুহল প্রকাশ করে জানতে চাইছে আরো নিষেধাজ্ঞা আসবে কি-না? বিএনপির বিশেষ করে একেবারে প্রভাবশালী বেশ কয়েকজন নেতা হিসাব কষেও বসে আছেন নিষেধাজ্ঞা দিলেই বিএনপি ক্ষমতার কাছাকাছি চলে যেতে পারবে। তাদের মতে, বিএনপির এমন আশাবাদী হয়ে ওঠার কারণে দলের সাংগঠনিকের পাশাপাশি রাজনৈতিক কর্মসূচিকে ধীরগতিতে নিয়ে এসেছে। বিএনপির বিশেষ করে শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের আশা বর্তমান সরকারের ওপর আরো নিষেধাজ্ঞা আসুক, এমন আশাতে দিন যাচ্ছে বিএনপির। 

 

শেয়ার করুন