২০ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ৬:১২:৩৪ পূর্বাহ্ন


কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারি দিয়ে বাম জোটের হরতাল পালন
নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৫-০৮-২০২২
কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারি দিয়ে বাম জোটের হরতাল পালন হরতালে পথসভায় বক্তব্য রাখছেন বাম জোটের নেতা/নিজস্ব ছবি


জ্বালানি তেল, ইউরিয়া সার, খাদ্যসহ নিত্যপণ্যে, পরিবহনের ভাড়া কমানো ও বিদ্যুৎ-গ্যাসের দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা বন্ধের দাবিতে বাম গণতান্ত্রিক জোট আহূত হরতাল পালিত হয়েছে। জোটের দাবি ও আন্দোলনের প্রতি দেশের ৯৫ ভাগ সাধারণ মানুষের সমর্থন ও হরতালে নৈতিকভাবে সমর্থন এবং সফল করায় দেশবাসীকে অভিনন্দন জানিয়েছে সিপিবি। এক বিবৃতিতে সিপিবি সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেছেন, দেশের সাধারণ মানুষের সংকটের সময় বামপš’ীরা জনগণের পাশে থেকে লড়াই করছে। ভয়-ভীতি উপেক্ষা করে আন্দোলন সংগ্রাম করছে। সংকটে জর্জরিত সাধারণ মানুষ বেঁচে থাকার সংগ্রামে থেকেও এবারের আন্দোলনের প্রতি অভূতপূর্ব সাড়া দিয়েছে, হরতালের প্রতি নৈতিক সমর্থন দিয়েছেন। 

ভোর ৬টা থেকে রাজপথে নেতৃবৃন্দ

ভোর ৬টায় বাম জোটের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ঢাকার পল্টন, গুলিস্তান, তোপখানা রোড, বিজয়নগর এলাকায় হরতালের সমর্থনে মিছিল বের করে। এ সময় বাম জোটের সমন্বয়ক রুহিন হোসেন প্রিন্স, সিপিবি সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম, সিপিবি’র সহ সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ, কেন্দ্রীয় নেতা লক্ষ্মী চক্রবর্তী, ডা. দিবালোক সিংহ, ডা. ফজলুর রহমান, আনোয়ার হোসেন রেজা, রাগিব আহসান মুন্না, অনিরুদ্ধ দাশ অঞ্জন, হাসান তারিক চৌধুরী, আসলাম খান, লুনা নূর, মানবেন্দ্র দেব, বাসদের রাজেকুজ্জামান রতন, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের ডা. হারুন উর রশীদ, বাসদ (মার্কসবাদী)’র ফখরুদ্দিন আতিক, মানস নন্দী, সীমা দত্তসহ বাম জোটের শরীক বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীরা উপ¯ি’ত ছিলেন। হরতাল চলাকালীন সময়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বাম জোটের সমন্বয়ক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে হরতালের কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। আমরা জোর করে কোন যানবাহন আটকাচ্ছি না। ‘যদি মানুষ বলে এই হরতালে মানুষের সমর্থন নেই তাহলে মেনে নেব, কিন্তু মানুষ এমন কথা বলছে না। সাধারণ মানুষ হরতালে অংশগ্রহণ করে রাস্তায় না নামলেও স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন জানিয়েছে। কিন্তু এই সমর্থন সরকারের কানে যায় না। তিনি বলেন, আমরা খবর পেয়েছি মালিকরা জোর করে শ্রমিকদের গাড়ি চালাতে বাধ্য করছে। কিন্তু এই হরতালে যারা বাস চালা”েছন বা জীবিকার প্রয়োজনে কাজে বের হচ্ছেন, সেই শ্রমিক ও শ্রমজীবী মানুষেরাও আমাদের দাবির প্রতি নৈতিক সমর্থন জানাচ্ছেন।  

এদিকে হরতালের সমর্থনে সারাদেশে সব জেলায় কম-বেশি বামপন্থী নেতাকর্মীরা রাজপথে ছিলেন বলে জোটের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।  

পল্টনে সমাবেশ

এদিকে শেষে পুরানা পল্টন মোড়ে অনুষ্ঠিত সমাবেশ থেকে দাম কমানোর দাবি আদায় এবং দুর্নীতি, লুটপাট বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।  বেলা ১১টায় বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক, সিপিবি’র সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্সের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমােেশ বক্তব্য রাখেন সিপিবি’র সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম,বাসদ’র সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী)’র সমন্বয়ক মাসুদ রানা, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের কার্যকরী সভাপতি আব্দুল আলী, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি (মার্কসবাদী)‘র নেতা বিধান রায় প্রমুখ নেতৃবৃন্দ। সমাবেশ পরিচালনা করেন শহীদুল ইসলাম সবুজ।

সমাবেশে রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, বামপন্থীদের হরতালের কর্মকাণ্ড গত ৬ আগস্ট থেকে শুরু হয়েছে। দাম বাড়ানো সরকারের গণবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে ও দাম কমানোর দাবিতে আমাদের আন্দোলনে ও আজকের হরতালে আমরা নৈতিক সমর্থন পেয়েছি। এই সমর্থনকে গণসংগ্রামে পরিণত করতে সাধারণ মানুষকে রাজপথে নেমে এসে দুঃশাসনের অবসান ঘটাতে হবে। বাম বিকল্প শক্তি সমাবেশ গড়ে তুলতে হবে। তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে নেতাকর্মীদের ওপর হামলা, হুমকি-ধামকি দেওয়া হয়েছে। ঢাকায় হরতালের আগের রাতে ছাত্রনেতা দীপক শীলসহ নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হয়েছে। আজ দিনাজপুরে ছাত্রনেতা লিটন রায়কে গ্রেফতার ও ঢাকার শাহবাগে হামলা চালিয়ে ছাত্রদের আহত করা হয়েছে।  এতসবের মধ্যেও আমাদের নেতাকর্মীরা ধৈর্য্য ধরে হরতাল সফল করেছে। তিনি বলেন, জ্বালানি তেল, ইউরিয়া সার, খাদ্যসহ নিত্যপণ্যের দাম, পরিবহনের ভাড়া কমানোর দাবিতে ও বিদ্যুৎ-গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া বন্ধের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। আগামীতে অন্যান্য বামপš’ী দল, সংগঠনের সাথে কথা বলে অবরোধ, ঘেরাওসহ আন্দোলনের কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে। 


হরতাল চলাকালে /নিজস্ব ছবি 


ফ্যাসিবাদী শাসনের

অবসান হবে - ৯ সংগঠন

জ্বালানী তেলের মূল্যবৃদ্ধির গণবিরোধী সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবীতে আজ বৃহসপতিবার দেশব্যাপী অর্ধ দিবস হরতাল কর্মসূচীর অংশ হিসেবে ঢাকায় পুরানা পল্টন,প্রেসক্লাব,বিজয় নগর এলাকায় হরতালের পক্ষে সকাল ৬ টা হতে ৯ সংগঠনের মিছিল  সমাবেশ প্রচারণা অনুষ্ঠিত হয়।হরতাল শেষে সকাল ১১-৩০ পুরানা পল্টন মোড়ে ৯ সংগঠনের এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

৯ সংগঠনের সমন্বয়ক ও নয়াগণতান্ত্রিক গণমোর্চা সভাপতি জাফর হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে বক্তব্যে বাংলাদেশের সাম্যবাদী আন্দোলনের সমন্বয়ক শুভ্রাংশু চক্রবর্তী  সরকার ইউরিয়া সারের দাম কেজি প্রতি ৬ টাকা বৃদ্ধির ফলে কৃষকের মাথায় বাজ পড়েছে। ইতিমধ্যে বিদ্যুৎ এর লোডশেডিং এর ফলে শিল্প-কৃষি উৎপাদনে সংকট সৃষ্টি হয়েছে। জনগণের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন নীরব থাকা মানে পৃষ্ঠ হওয়া।

জাফর হোসেন বলেন, ৫ আগষ্ট গভীর রাতে জ্বালানী তেলের দাম অযৌক্তিকভাবে বৃদ্ধি করে সরকার জনগণের ওপর এক হামলা চালিয়েছে।জ্বালানী তেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে নিত্যপন্যের দাম লাগামহীনভাবে বেড়ে চলেছে, পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধি পেয়ে জনজীবনকে দুর্বিষহ করে চলেছে। জ্বালানী তেলের মূল্যবৃদ্ধি বিরোধী আন্দোলনকে দমন করার সরকারী অপচেষ্টার বিরুদ্ধে আন্দোলন বেগবান করার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন,দমন করে ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না।

জাতীয় গণফ্রন্ট সমন্বয়ক টিপু বিশ্বাস,  পাড়া-মহল্লাসহ সর্বত্র সরকারের গণবিরোধী নীতি লন্ঠন দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শাসন হঠাতে হবে।

জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল সম্পাদক ফয়জুল হাকিম বলেন, জ্বালানী তেলের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক। রাজনৈতিকভাবে একে মোকাবেলা করতে হবে। দেশের শাসন ক্ষমতা থেকে লুন্ঠনজীবী ব্যবসায়ী শ্রেণীর খেদমতগার সরকার হঠাতে জাতীয় ভিত্তিতে সংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে।তিনি বলেন,প্রতিরোধেই জনগণের মুক্তি।

জাতীয় গণতান্ত্রিক গণমঞ্চ সভাপতি মাসুদ খান বলেন, ফ্যাসিবাদী সরকার গুলি করে, হামলা-মামলা করে জনগণের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন দমন করতে উদ্যত হয়েছে, একে রুখে দাঁড়াতে হবে।

কমিউনিস্ট ইউনিয়ন আহ্বায়ক ইমাম গাজ্জালী বলেন, শেখ হাসিনার সরকারের গণবিরোধী নীতি, দুর্নীতি, লুন্ঠনের ফলে দেশ এক মহাবিপর্যয়ের পথে। এই লুন্ঠনজীবী সরকারকে রুখে দাঁড়াতে হবে।

গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের আরিফ মইনুদ্দীন গত ৭ আগস্ট জ্বালানী তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে শহবাগে অনুষ্ঠিত প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের সমাবেশে  পুলিশের বর্বরোচিত হামলার ও হামলা পরবর্তীতে মামলা দায়েরের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, হামলা মামলা করে ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন দমন করা যাবে না।

ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মিতু সরকার হরতালকে জনগণের হরতাল বলে উল্লেখ করে বলেন, আগামী দিনে আন্দোলন তীব্রতর করে সরকারের ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসান ঘটানো হবে। গণমুক্তি ইউনিয়ন আহ্বায়ক নাসিরউদ্দিন আহমেদ নাসু এবং বাসদ (মাহবুব) মহিনউদ্দিন চৌধুরী লিটন সমাবেশ পরিচালনা করেন। সমাবেশে শেষে এক মিছিল পল্টন হয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এসে শেষ হয়।


শেয়ার করুন