২৮ মার্চ ২০১২, বৃহস্পতিবার, ০৫:৩০:০৬ অপরাহ্ন


দেশ’কে ফারুকী
কানে পরিচালক নয় বাবা ফারুকী গিয়েছিলাম
আলমগীর কবির
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৮-০৬-২০২২
কানে পরিচালক নয় বাবা ফারুকী গিয়েছিলাম


বাংলাদেশে চলচ্চিত্র নির্মাণে নিজস্ব ধারা তৈরি করেছেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। প্রযোজক, চিত্রনাট্যকার হিসাবেও তার খ্যাতি আছে। দুনিয়ার বড় বড় চলচ্চিত্র উৎসবে স্বীকৃতি, পেয়েছেন পুরস্কারও। বিচারক হিসেবেও দায়িত্ব পাচ্ছেন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে। কিছুদিন আগে বাবা হয়েছেন এ গুণী নির্মাতা। ব্যস্ত সময়সূচির মধ্যেও কথা বলেছেন নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকার সঙ্গে। 

প্রশ্ন: বাংলাদেশের সিনেমা নিয়ে ইদানিং আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও আলোচনা হয়। বিষয়টি আমাদের দেশের সিনেমার ভবিষত্যের জন্য কতটা সহায়ক বলে আপনার মনে হয়?

মোস্তফা সরয়ার ফরুকী: স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে থেকেই আমাদের এখানে সিনেমা তৈরি হত। অনেক গুণী নির্মাতা, অভিনেতা, অভিনেত্রী এখানে কাজ করেছেন। তবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের যেখানে পৌঁছানোর কথা সেখানে আমরা নেই। কারণ মাঝখানে বেশ কিছু বছর আমাদের এখানে ভালো সিনেমা তৈরি হয়নি। এটা আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যের। তবে এখন আবার নতুন করে ভালো কাজ হচ্ছে এবং সেগুলো নিয়ে বহির্বিশ্ব আলোচনা হচ্ছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের সিনেমা সব দেশের দর্শকদের কাছে পৌঁছে যাবে। 

প্রশ্ন: সিডনি চলচ্চিত্র উৎসবে জুরি হওয়ার আমন্ত্রণ পেয়েছেন। বিচারকের দায়িত্ব পালন করতে কেমন লাগে?

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী: ভালোই তো লাগে। দায়িত্বটা সবসময়ই চাপের। এখানে ১২টি আলোচিত ছবি নির্বাচিত হয়েছে, যার কিছু এসেছে কান থেকে, কিছু বার্লিন, কিছু সানড্যান্স ফেস্টিভ্যাল থেকে। কয়েকটা এর মাঝে অ্যাওয়ার্ডও পেয়েছে। ফলে জুরির কাজের উসিলায় কিছু ভালো ছবির সান্নিধ্যে সময় কাটবে, এই তো!

প্রশ্ন: বাংলাদেশে নো ল্যান্ড’স ম্যান মুক্তি পাবে কবে?

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী: এটা এখনো ঠিক করা হয়নি। তবে আমরা চেষ্টা করছি যত দ্রুত সম্ভব পারা যায় নো ল্যান্ড’স ম্যান মুক্তি দেব।

প্রশ্ন: ছোট্ট ইলহাম কেমন আছে?

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী: ইলহাম ভালো আছে। মেয়েকে নিয়ে আমরা সবাই ভালো আছি।

প্রশ্ন: বাবা হিসেবে কান চলচ্চিত্র উৎসবে যাওয়ার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী: এবার কানে আমি গিয়েছি তিশার সফরসঙ্গী হিসেবে। বঙ্গবন্ধুর বায়োপিকের ট্রেলার কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রকাশিত হলো। তিশা এটার লিড ফিমেল কাস্ট, তাই ওকে কানে যেতে হয়েছে। আমি মূলত আমাদের মেয়েকে দেখাশোনা করার জন্য কান চলচ্চিত্র উৎসবে গিয়েছি। এটা আমার জন্য একদম আলাদা একটা অভিজ্ঞতা। যেকোনো ফেস্টিভ্যালে গেলেই আমার বিভিন্ন কাজ থাকে। তবে এবার প্রথম কোনো ফেস্টিভ্যালে গেলাম, যেখানে আমার মূল দায়িত্ব মেয়ের দেখাশোনা। এটা আমার জন্য খুবই ভিন্নধর্মী রোল, তবে আমি শুরু থেকেই এ দায়িত্ব উপভোগ করেছি। কানের পুরো সময় মেয়ের সঙ্গে কাটিয়েছি। ইলহামকে নিয়ে আমি ও তিশা দু’জনে অনেক ঘুরে বেড়িয়েছি। ঘটনাচক্রে নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকীর জন্মদিন ছিল ওখানে। আমরা ইলহামকে নিয়েই তার জন্মদিনের ডিনারে গিয়েছিলাম। এআর রহমান ভাইয়ের লে মাস্ক সিনেমাটির জন্য তিনি কানে গিয়েছিলেন। আমরা তিনজন তার বাসাতেও ডিনারে গিয়েছি। সব মিলিয়ে এটা একটা সুন্দর অভিজ্ঞতা আমার জন্য। কানে মূলত পরিচালক ফারুকী না, বাবা ফারুকী হিসেবে গিয়েছিলাম!

প্রশ্ন: বাবা হিসেবে নতুন দায়িত্ব আর কাজ কীভাবে সামাল দিচ্ছেন?

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী: কিছুদিন আগে আমার বড় বোন বাসায় এসেছিলেন। উনি এসে দেখেন যে মশারির ভেতরে তিশা, আমি ও ইলহাম। তিশা মেয়েকে খাওয়াচ্ছিল আর আমি মশারির ভেতরে মশা খুঁজছি। এটা দেখে আমার বড় বোন বলছিল, তোমার মনে আছে ছোটবেলায় আব্বা কাজ শেষ করে রাত ১০টায় বাসায় ফিরতেন। ততক্ষণে আমরা ঘুমিয়ে যেতাম। আব্বা বাসায় এসেই আগে মশারির ভেতরে দেখতেন কোনো মশা আছে কিনা। এরপর আব্বা খাওয়া-দাওয়া করে ঘুমাতে যেতেন। এত ছোটবেলার কথা আমার মনে নেই। তবে বাবার দায়িত্ব পালন করতে হয় এটা দেখেই আমরা বড় হয়েছি। অবশ্যই মায়ের দায়িত্বের সঙ্গে বাবার দায়িত্বের তুলনা হয় না। সন্তানের জীবনে মায়ের ভূমিকা অনেক বড়। বাবা যদি ২৪ ঘণ্টাও থাকে সন্তানের সঙ্গে, তবু মায়ের ভূমিকার সঙ্গে সেটা তুলনা করা যায় না। মা হচ্ছেন এ ছবির মূল তারকা আর বাবা পার্শ্বচরিত্র। বাবা হিসেবে সন্তানের প্রতি দায়িত্ব পালন খুবই স্বাভাবিক একটা বিষয়। এটার জন্য কোনো আলাদা ভূমিকার দরকার হয় না।

প্রশ্ন: শিশুদের জন্য সিনেমা নির্মাণ করার পরিকল্পনা রয়েছে কি?

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী : হ্যাঁ, অবশ্যই শিশুদের নিয়ে কোনো না কোনো সময় আমি সিনেমা নির্মাণ করব। কারণ এখন যখন আমি ইলহামকে গান শোনাই, তখন দেখি আগের সব ছড়া ভুলে গিয়েছি। এখন ওর জন্য ছড়া মুখস্থ করতে হচ্ছে, এমনকি অনেক সময় আমাকেই ছড়া বানাতে হচ্ছে। এমন করতে গিয়ে আমার মনে হয় ও যখন বড় হবে, সিনেমা দেখার বয়স হবে, তার বয়সীদের জন্য নিশ্চয় কোনো সিনেমা নির্মাণ করব। এর মধ্যে কিছু ভাবনা আসছে, যা নিয়ে পরে ভাবব।

প্রশ্ন: মাল্টিপ্লেক্স বাড়ছে এবং সিঙ্গেল স্ক্রিন কমে যাচ্ছে। এটা কীভাবে দেখছেন?

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী: এটা খুব স্বাভাবিক একটি ব্যাপার। আমরা আরো কয়েক বছর আগে থেকেই বলছি এটাই বাস্তবতা। আমাদের বেশি করে মাল্টিপ্লেক্স বানানো দরকার, কারণ এটাই ভবিষ্যৎ। কথা হচ্ছে আমরা সেদিকে হাঁটছি। সামনে হয়তো আরো অনেক মাল্টিপ্লেক্স আসবে ঢাকা ও বাইরের বড় শহরে।


শেয়ার করুন