১৯ এপ্রিল ২০১২, শুক্রবার, ০১:৫৯:২৬ অপরাহ্ন


রফতানিমুখী শিল্পখাত মহাসংকটে
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ২২-০৯-২০২২
রফতানিমুখী শিল্পখাত মহাসংকটে


স্বাধীনতার ৫১ বছর পর সবচেয়ে কঠিন জ্বালানি সংকটে পড়েছে বাংলাদেশের জ্বালানি খাত। গ্যাস সরবরাহও সংকটে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত, শিল্পকারখানাগুলোতে চলছে আহাজারি। বিশেষ করে যে পণ্য রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে দেশের রিজার্ভ সমৃদ্ধ রাখার চ্যালেঞ্জ চলছে সেসব রফতানিমুখী পোশাক শিল্প, টেক্সটাইলসহ প্রায় সকল গ্রাহক তীব্র সংকটে। যাকে মহাসংকট বললে মোটেও বাড়িয়ে বলা হবে না। এখনো লাখ লাখ অবৈধ গ্যাস গ্রাহক। সঞ্চালন আর বিতরণ ব্যবস্থায় প্রচুর লিকেজ অপচয়। বর্তমান অবস্থায় গ্যাস চুরি সামাল দেয়া প্রায় অসম্ভব। গ্যাস চুরি সীমা ছাড়িয়েছে ২০১০-১৪ বর্তমান সরকারের সূচনায়। আশঙ্কা করা হচ্ছে ২০২৫ নাগাদ মহাসংকট হতে পারে জ্বালানি সেক্টরে। নিজেদের উৎপাদন খুব একটা বাড়বে না। এই সময়ের মাঝে এলএনজি আমদানি বাড়ানোর সুযোগ সীমিত। 

নুন আন্তে পান্তা ফুরানোর দেশে ভ্রান্ত জ্বালানি নীতি আর জরাগ্রস্ত আমলা প্রভাবিত বাস্তবায়ন কৌশলের কারণে কয়লা রয়েছে মাটির নিচে, জলে স্থলে ন্যূনতম গ্যাস অনুসন্ধান হয়নি। অথচ কঠিন চ্যালেঞ্জ জেনেও আমদানিকৃত জ্বালানির দিকে ঝুঁকেছে বাংলাদেশ। ফলাফল কঠিন সময়ে বিশ্ববাজারে অগ্নিমূল্যের কারণে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি স্থগিত।

 উচ্চমূল্য আর ডলার সংকটে তরল জ্বালানি আমদানির কঠিন চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশ। দেশের গ্যাস উৎপাদন কমে এখন ২৩০০ এমএমসিএফডি। আমদানিকৃত জ্বালানিসহ মোট সরবরাহ ২৮০০ এমএমসিএফডি। ঘাটতি নিদেন পক্ষে ১৫০০ এমএমসিএফডি। একটা বস্তায় শ্যাম রাখি না, কূল রাখি অবস্থা। সকল শ্রেণির গ্রাহক গ্যাস সংকটে ভুগছে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, কোভিড-১৯ অতিমারী বা ইউক্রেন যুদ্ধ না হলেও এ সেক্টরে সংকট ছিল অনিবার্য। কিন্তু একটু চোখ খুললেই দেখা যাবে কোনো ধরনের সংকট মোকাবিলার প্রস্তুতি নেই পেট্রোবাংলা কোম্পানিগুলোর। বাপেক্সের একার পক্ষে অনুসন্ধান আর উৎপাদন বৃদ্ধি করে সংকট সামাল দেয়া অসম্ভব। 

অনেক অপ্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরি করতে বাদ্ধ করে জিটিসিএলের আর্থিক বুনিয়াদ ভেঙে ফেলা হয়েছে। অনেক পাইপলাইন আর স্থাপনা চলছে ক্ষমতার অনেক নিচে। এলেঙ্গা কম্প্রেসর দীর্ঘদিন অব্যবহৃত পড়ে রয়েছে। ধানুয়ায় দেখলাম, একটি আধুনিক আর এমএস ব্যবহার হচ্ছে না। বহুপূর্বে কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনায় গ্যাস সঞ্চালন লাইন সম্প্রসারণ করা হলেও গ্যাস দেয়া হয়নি। রাজশাহী, বগুড়া অঞ্চলেও গ্যাস সরবরাহের পরিমাণ সীমিত। একটা বস্তায় গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন দিনাজপুর, রংপুর সম্প্রসারণ হচ্ছে। মেঘাগাহাট অঞ্চলে গ্যাস সরবরাহ বাড়ানোর জন্য ৪২ ইঞ্চি বাসের নতুন পাইপলাইন নির্মিত হচ্ছে। 

শুধু নতুন ক্রয় আর নতুন নির্মাণ। গ্যাস সঞ্চালন ব্যাবস্থার রক্ষণাবেক্ষণ দুর্বল হয়ে পড়েছে। অনেক পুরোনো পাইপলাইন আর স্থাপনায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণ গ্যাস লিকেজ হচ্ছে।

বিতরণ ব্যবস্থায় তিতাস গ্যাস, বিজিডিসিএল, কেজিডিডিসিএলে গ্যাস চুরি হচ্ছে অনিয়ন্ত্রিতভাবে। অনেক কিছু করেও পরিস্থিতি সামাল দেয়া যাচ্ছে। বৈধ গ্রাহক রায় অবৈধভাবে গ্যাস ব্যবহার করছে। শিল্পকারখানা বিশেষত রফতানিমুখী শিল্পগুলো আছে মহাসংকটে। আমি নিজে দেখেছি ক্যাপটিভ জেনারেটর গ্যাস পাচ্ছে না। বয়লারগুলো গ্যাস সমস্যা। কবে, কীভাবে হবে সমাধান কেউ বলতে পারছে না।

অনেকের ধারণা সংকট জিইয়ে রেখে অশুভ মহলকে বাড়তি সুবিধা দেয়ার পাঁয়তারা চলছে। ইতিমধ্যে তরল জ্বালানি, গ্যাস, বিদ্যুৎ মূল্য বাড়ানো হয়েছে। ২০২৩ শেষ বা ২০১৪ শুরু জাতীয় নির্বাচন। সরকারপ্রধান জ্বালানি বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত না নিলে সংকটে পড়তে পারে শাসকদল। 

অবিলম্বে চিরুনি অভিযান করে গ্যাস চুরি বন্ধ করতে হবে। প্রয়োজনে গৃহস্থালি গ্যাসের ব্যবহার বন্ধ করে এলপিজি দিতে হবে। এলপিজির ব্যবহার বহুমুখী করতে হবে। সঞ্চালন এবং বিতরণ ব্যাবস্থার গ্যাস লিকেজ বন্ধ করতে হবে। এগুলো স্বল্পকালীন ব্যবস্থা।

মাধ্যম মেয়াদে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে ধীরে ধীরে সরে এসে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার দ্রুত বাড়াতে হবে। যতোটা না হলেই নয়, ততোটা এলএনজি আমদানি করতে হবে। রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্র থেকে উৎপাদন শুরু হলে স্বস্তি আসবে। তবে নিজেদের কয়লা উৎপাদনবের সিদ্ধান্ত নিতেই হবে। তবে এমন সংকট মোকাবিলায় দীর্ঘমেয়াদে সাগরে গ্যাস তেল অনুসন্ধান জোরদার বাঞ্ছনীয়। 

মনে রাখতে হবে এখন তরল জ্বালানি নির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৭ হাজার মেগাওয়াট। এগুলো কিন্তু পর্যায়ক্রমে কমাতে হবে। তবে উন্নত প্রযুক্তির কয়লা বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থা যতটা নিয়ন্ত্রণ যোগ্য চলতে পারে। সাগরে বায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদন, হাইড্রোজেন ফুয়েল নিয়ে গবেষণা প্রয়োজন। 

শেষ কথা, জ্বালানি সেক্টরকে নিরঙ্কুশ আমলা নিয়ন্ত্রণ মুক্ত করতেই হবে। জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে উন্নত দেশ গড়ার ঘোষণা স্লোগান হয়েই থাকবে।

শেয়ার করুন