২৫ এপ্রিল ২০১২, বৃহস্পতিবার, ০৭:০২:০৮ পূর্বাহ্ন


দেশকে তৌকীর আহমেদ
অতৃপ্তিই শিল্পীকে এগিয়ে নিয়ে যায়
আলমগীর কবির
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৬-১১-২০২২
অতৃপ্তিই শিল্পীকে এগিয়ে নিয়ে যায় তৌকির আহমেদ


তৌকীর আহমেদ। দেশের শোবিজ অঙ্গনের পরিচিত এক নাম। সম্প্রতি তিনি পরিচালক হিসাবে ক্যারিয়ারের দেড় যুগ পূর্ণ করেছেন। ২০০৪ সালের ১৫ নভেম্বর মুক্তি পেয়েছিল তাঁর পরিচালিত প্রথম ছবি ‘জয়যাত্রা’। ওই ছবি এবং বর্তমান চলচ্চিত্রের অবস্থা নিয়ে তিনি কথা বলেছেন নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকার সাথে। সাক্ষাতকার নিয়েছেন আলমগীর কবির

প্রশ্ন: পরিচালক হিসাবে দেড় যুগ কাটিয়ে দিয়েছেন। এই সময়ের মধ্যে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং কি মনে হয়েছে?

তৌকীর আহমেদ: এই দেড় যুগ ধরে পরিচালার সঙ্গে যুক্ত আছি এটাকেই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ মনে হয়েছে। আমি যখন বুয়েটে ভর্তি হয়েছিলাম তখন থেকেই সিনেমার প্রতি আগ্রহ বাড়ছিল। পরবর্তীতে ফিল্ম ক্লাবের সদস্য হয়েছিলাম এই সিনেমার জন্যই। ব্রিটিশ কাউন্সিল, আলিয়ঁস ফ্রঁসেজে ভর্তি হয়েছিলাম বিশ্ব সিনেমার সঙ্গে পরিচিত হওয়ার জন্য। মঞ্চ আর টেলিভিশন দিয়ে আমার পরিচিতিটা আসলেও আমার মনে সব সময় সিনেমাই ছিল। ২০০২ সালে নিউইয়র্ক ফিল্ম একাডেমিতে ডিপ্লোমা আমার সাহস আরো বেড়ে যায়। এরপর ২০০৪ সালে মৃক্তি পায় আমার প্রথম সিনেমা ‘জয়যাত্রা’। 

প্রশ্ন: জয়যাত্রা আলোচনায় এসেছে ইউটিউবে দেওয়ার পর। আপনি কি মনে করেন এই সময়ে মুক্তি পেলে ছবিটি আরো ভালো ব্যবসা করতো?

তৌকীর আহমেদ: সিনেমাকে ঠিকঠাকভাবে প্রচার করা বা আকর্ষণীয়ভাবে তুলে ধরতে যে যোগ্যতা লাগে, আমার সেটা নেই। একটা সিনেমা হিট হওয়া বা না হওয়ার সঙ্গে সেই সিনেমার ভালো বা খারাপ হওয়ার কোনো সম্পর্ক আছে বলে মনে হয় না। তাই আমি বিষয়টি নিয়ে খুব বেশি চিন্তা করিনি। 

প্রশ্ন: আপনি কি নিজেকে স্বাধীন নির্মাতা মনে করেন?

তৌকীর আহমেদ: আমি গল্পটা স্বাধীনভাবে বলতে চাই। যে কারণে গত ১৮ বছরে আমি মাত্র ৭টি সিনেমা বানিয়েছি। তবে বছরে অন্তত একটি সিমেনা বানাতে পারলে আরো ভালো লাগতো। সংখ্যা না বাড়াতে পেরে আমার আক্ষেপ আছে। সিনেমা বানাতে মেধা, প্রস্তুতি থেকে বিনিয়োগ পর্যন্ত অনেক ধরনের বিষয় থাকে। সিনেমা বানাতে গিয়ে নানাভাবে নিরুৎসাহিত হয়েছি, অনেক ছবির প্রযোজকও জোগাড় করতে পারিনি।’

প্রশ্ন: সিনেমা বানাতে উদ্যোগ নিয়েছিলেন অথচ প্রযোজক জোড়ার করতে পারেননি এমন একটি উদাহারণ দিবেন?

তৌকীর আহমেদ: এই গুলো উদাহরণ দিয়ে আর কি হবে। তবে একটার কথা বলি, সেটা হলো ‘ফাগুন হাওয়ায়’। এই সিনেমাটা আমি ২০০৮ সালে নির্মাণ করতে চেয়েছিলাম। শেষ পর্যন্ত সিনেমাটা করতে পেরেছি ৯ বছর পর। সময়মতো সিনেমাটি না করায় ৯ বছর আমার পরিচালনায় বিরতি ছিল। ২০০৭ সালে বানিয়েছিলাম ‘দারুচিনি দ্বীপ’ এরপর ‘অজ্ঞাতনাম ‘ নির্মাণ করেছি ২০১৬ সালে। তখন পরিবেশ-পরিস্থিতি মিলিয়ে হতাশ হয়ে পড়েছিলাম, অভিমানও হয়। পরিচালনা থেকে সরে গিয়ে অন্য কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। মাঝখানে কাজ করলে আরও চারটি ছবি হতেই পারত।

প্রশ্ন: মাঝখানের লম্বা বিরতির জন্য কি আনুশোচনা হয়?

তৌকীর আহমেদ: কিছুটা অনুশোচনা তো আছেই। এ কারণেই সুযোগ পেলেই পিছনে ফিরে আগের কাজগুলো কাটাছেঁড়া করি। কারণ আমার মনে হয় আগের কাজগুলোর মধ্যে ক্রটি আমি, যা আমাকে পীড়া দেয়। আবার মনে হয়, এটা তো অভিজ্ঞতারই অংশ। পরিতৃপ্ত হওয়ার সুযোগ শিল্পীর কমই থাকে, অতৃপ্তিই শিল্পীকে এগিয়ে নিয়ে যায়।

প্রশ্ন: আপনি এ পর্যন্ত সাতটি সিনেমা বানিয়েছিন। এর মধ্যে কোন কাজগুলো এগিয়ে রাখবেন?

তৌকীর আহমেদ: জয়যাত্রায় আমরা অনেক কিছুই ঠিকঠাকভাবে করতে পেরেছিলাম, অজ্ঞাতনামা অনেক বেশি দর্শকের গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছিল। আমার কাছে হালদা অনেক পরিশীলিত নির্মাণ মনে হয়।

প্রশ্ন: করোনার পর ‘হাওয়া’, ‘পরাণ’ ভালো ব্যবসা করেছে। এগুলো কি বাংলাদেশের সিনেমা নিয়ে আশা জাগায়?

তৌকীর আহমেদ: সম্প্রতি সময় যা ঘটেছে তা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। মাল্টিপ্লেক্সের সংখ্যা এখন অনেক বেড়েছে এটা অবশ্যই ইতিবাচক দিক। তবে এই ধরনের সিনেমা হলে টিকিটের মূল্য বেশি হওয়ায় সব শ্রেণীর দর্শক যেতে পারেন না। এ ছাড়া মাল্টিপ্লেক্সগুলো স্বাধীন ধারার নির্মাতাদের ছবি চালাতে কতটা আগ্রহী, সেটি নিয়েও প্রশ্ন আছে। সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া ‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’ ও ‘দেশান্তর’-এর উদাহরণ । আমি মনে করি, বাণিজ্যিক ছবির বাইরে অন্য ধারার কাজ যাঁরা করতে চাইবেন, তাঁদের জন্য সিনেমার বাজার এখনো কঠিন।

শেয়ার করুন