১২ এপ্রিল ২০১২, বুধবার, ১১:৪৮:৩৯ পূর্বাহ্ন


সাধারণ মানুষের মুক্তি কোথায়?
শিষ্টের দমন আর দুষ্টের তোষণ এখন সমাজনীতি
খন্দকার সালেক
  • আপডেট করা হয়েছে : ২২-০৩-২০২৩
শিষ্টের দমন আর দুষ্টের তোষণ এখন সমাজনীতি


বাংলাদেশে এখন সুধী সমাজ ভীষণভাবে পক্ষপাতদুষ্ট। সাদাকে সাদা বলার মানুষের সন্ধান পাওয়া দুষ্কর। সমাজে দুর্নীতি, অনাচার আর বিচারহীনতার এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, সাধারণ মানুষের নুন আন্তে পান্তা ফুরানোর অবস্থা। বলা যায় সাধারণ মানুষের এখন বেঁচে থাকা দায়। বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন একান্তই রপ্তানি এবং রেমিটেন্সনির্ভর। কোনো কারণে কোনটি সংকুচিত হলেই ভঙ্গুর অর্থনীতিতে শুরু হয় টানাপোড়েন। কেউ স্বীকার করুক বা নাইবা করুক, ২০২৩ সালের অর্থনীতির আকার কিন্তু ব্যাপক পাল্টে গেছে। 

কৃষিনির্ভর অর্থনীতি কিন্তু শিল্পনির্ভর হওয়ার প্রচেষ্টায় বিবিধ কারণে হোঁচট খেয়েছে। সুশাসন আর নির্ভেজাল গণতন্ত্রের অভাবে দুর্নীতি অক্টোপাস বাঁধনে বেঁধে ফেলেছে সমাজ ব্যবস্থাকে।  শিষ্টের দমন আর দুষ্টের তোষণ এখন সমাজনীতি। এহেন অবস্থায় করোনার অভিঘাত আর ইউক্রেন যুদ্ধ উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার মিছিলে থাকা বাংলাদেশকে আবারো অনুন্নত দেশে পিছিয়ে যাওয়ার চোখ রাঙ্গাচ্ছে।  ধারাবাহিকভাবে তিন টার্মসে ১৫ বছর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকার পরেও সরকারি দলের আস্থা নেই স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ নির্বাচনে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে আসন্ন নির্বাচনে জয়ী হবার। 

দেশে বিরোধী রাজনীতি বলতে শুধু সরকার বিরোধিতা। জনস্বার্থে রাজনীতি বলে দেশে কিছু নেই। যদি থাকতো তাহলে দুর্নীতি, অর্থপাচার এমনভাবে জাতির মেরুদণ্ড ঋজু করে দিতো না। সমন্বিত প্রতিবাদ হতো, প্রতিরোধ হতো। 

একটা প্রশ্ন খুবই মনে উকি দিচ্ছে! প্রশ্ন করি, সমগ্র দেশবাসীকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এনেও সরকার কেন টেকসই জ্বালানি নিরাপত্তা দিতে পারছে না? কেন নিজেদের প্রাকৃতিক সম্পদ মাটির নিচে রেখে অস্থিতিশীল বিশ্ববাজার থেকে উঁচু মূল্যে জ্বালানি ক্রয়ের দিকে ধাবিত হয়ে সংকট সৃষ্টি হয়েছে? পর্যাপ্ত উৎপাদন ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও কেন আদানি গ্রুপের মতো বিতর্কিত কোম্পানির নিকট থেকে বিতর্কিত চুক্তির মাধ্যমে বিদ্যুৎ কিনতে হচ্ছে? কেন তিস্তা নদীর পানি বন্টন চুক্তি ১৫ বছরেও সমাধান হলো না? কেন ক্ষণে ক্ষণে গ্যাস বিতরণ সিস্টেম বিভ্রাটের জন্য আগুনে পুড়ে নির্বিচারে মানুষ মারা যাচ্ছে? পুলিশ অফিসার খুনের মামলার আসামি কাদের প্রশ্রয়ে দেশান্তরী হয়ে দুবাইতে শতকোটির টাকার ব্যবসা করছে?

মানলাম, পদ্মা বহুমুখী সেতু দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। জানি, কর্ণফুলী নদী তলদেশের সুড়ঙ্গ পথ অর্থনৈতিক উন্নয়নের বাতায়ন খুলে দিবে। মেট্রোরেল স্বস্তি না দিলেও এলেভেটেড এক্সপ্রেস হাইওয়ে হয়তো সে স্বস্তি এনে দিবে। এতো অধিক খরুচে মেগা প্রকল্পগুলো অচিরে গলার কাঁটা হবে কিনা প্রশ্ন জেগেছে? চীন, ভারত, কোরিয়া, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়ার কোম্পানিগুলো থেকে সঠিকভাবে প্রকল্পগুলো বুঝে নেয়ার ক্ষমতা নেই বাংলাদেশের। তাই অনেক প্রকল্প বছরের পর বছর চলছে। খরচ বাড়ছে, দুর্ভোগে জনগণ। কেননা সূদসহ ঋণ পরিশোধ করতে এ সাধারণ মানুষকেই হিমশিম খেতে হবে। 

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না কেন? মধ্য বিত্ত এখন নিম্নবিত্ত হয়ে গেছে। নিম্নবিত্তের কিছু মানুষকে সামাজিক প্রতিরক্ষার আওতায় আনলেই সব সমস্যার সমাধান হবে না। 

প্রশ্ন করছি সাধারণ মানুষের মুক্তি কোথায়? জনগণ ১৫ বছর আওয়ামী লীগ সরকার দেখছে, কয়েক দফায় বিএনপি সরকার দেখেছে, জাতীয় পার্টি দেখেছে। বিপুল সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ বেঁচে আছে দরিদ্র কৃষক, মজুর আর বিদেশে কাজ করা সাধারণ শ্রমিকদের অবদানে।

বাংলাদেশের রাজনীতি নির্বাচন নিয়ে প্রতিবেশী দেশ,পরাশক্তিদের কেন এতো মাথা ব্যাথা সেটি সহজেই অনুমেয়। রাজনৈতিক দলগুলোর জনগণের উপর আশা নেই। কিছু মুখচেনা স্বার্থপর মানুষ সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় তোষামোদি করছে। অন্যদিকে দুর্নীতিবাজ কিছু মানুষ দেশ বিদেশে সরকার বিরোধী প্রচারে মত্ত। তাই আম জনগণকে বলছি নিজেদের অধিকার সচেতন হতে। নিজেদের এলাকার সৎ মানুষদের উদ্বুদ্ধ করে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করতে। আগামী নির্বাচন দেশের বাঁচা মরার সন্ধান দিবে। কোনো ভাবেই যেন অসৎ দুর্নীতি পরায়ণ কেউ নির্বাচনে অবতীর্ণ হতে না পারে। প্রশাসন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো যেন কারো পক্ষ প্রতিপক্ষ হতে না পারে।

শেয়ার করুন