২৩ এপ্রিল ২০১২, মঙ্গলবার, ০৬:৩৪:২৭ অপরাহ্ন


দেশকে শামসুজ্জামান দুদু
পারবে না বলে কোনো শব্দ বিএনপি’র অভিধানে নেই
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২২-০৩-২০২৩
পারবে না বলে কোনো শব্দ বিএনপি’র অভিধানে নেই শামসুজ্জামান দুদু


বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, বিএনপি যা বলে তা-ই করে। এটা আওয়ামী লীগও জানে, দেশবাসীও জানে। পারবে না বলে কোনো শব্দ বিএনপি’র অভিধানে নেই। আমেরিকা থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকাকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু একথা বলেছেন। রাজনৈতিক অঙ্গনে দেশের বিভিন্ন পরিস্থিতি সামনে রেখে শামসুজ্জামান দুদুর মুখোমুখি হয়েছেন পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ। 

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে বিএনপির সঙ্গে সংলাপের কোনো প্রশ্নই আসে না, বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। আবার সরকারের অনেক মন্ত্রী বলেছেন, বিএনপি বিদেশীদের কাছে ক্ষমতায় যাবার জন্য ছুটোছুটি করছেন। সম্প্রতি ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মার আমন্ত্রণে তাঁর বাসভবনে নৈশভোজে অংশ নিয়েছেন বিএনপির পাঁচ শীর্ষ নেতা। এসবের ব্যাপারেই বিস্তারিত কথা বলেন বিএনপির এ নেতা। 

দেশ : বিএনপি ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য এবার বিদেশীদের কাছে ধর্ণা দিচ্ছে। দূতাবাসে দূতাবাসে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের এমন মন্তব্যে উত্তর কিভাবে দেবেন? 

শামসুজ্জামান দুদু: সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের এমন মন্তব্য আসলে রাজনৈতিক অঙ্গনে একটা বিভ্রান্তি সৃষ্টি জন্য করা হচ্ছে। কারণ, আমরা আছি একটি আন্দোলনে। দেশে কেয়ার টেকার সরকারের অধীনে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সরকারকে বলেছি। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা ১০ দফা প্রনয়ণ করেছি। সরকার এবং তাদের সমর্থিত কয়েকটি দল বাদে সব রাজনৈতিক দল এখন একটি ঐক্যমতে পৌছেছে যে, জনগণ কেয়ার টেকার সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন করবে। সরকার বরং গো ধরেছে সংবিধানের দোহাই দিয়ে। তারা ২০১৪ এবং ২০১৮ মতো নির্বাচন করে পার পাইতে চাইছে। সে ধরনের একটি নির্বাচনের কথা বলে কখনো বেগম জিয়াকে মুক্তি দেয়ার ব্যপারে বিভিন্ন বক্তব্য দেয়া হচ্ছে। কখনো আরো অন্য রকম কথা বলা হচ্ছে। এসবই বিভ্রান্তি সৃষ্টির জন্যই করা হচ্ছে। আমরা মনে করি, সরকার যতো বিভ্রান্তি সৃষ্টি করুক না কেনো আবারো ২০১৪ বা ২০১৮ মতো নির্বাচন করে বাঁচতে পারবো না। আগামী নির্বাচন হবে কেয়ার টেকার সরকারের অধীনে, যেটা পার্লামেন্টের মাধ্যমে অনুমোদন করিয়ে নিতে হবে। এর বিপরীতে সরকার বিভ্রান্তি ছড়িয়ে কেনো লাভ হবে না। একটি ভালো নির্বাচন ছাড়া সরকারের সামনে কোনো পথ নেই। 

দেশ: আপনি কি মনে করেন, আপনাদের কথায় সরকার একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দিয়ে দেবে? কি এমন শক্তি দেখাচ্ছেন সরকারকে যে তারা দাবি মেনে নেবে? বলা হচ্ছে বর্তমান সরকার রাজনৈতিকভাবে অনেক শক্ত অবস্থানে আছে। আপনাদের তেমন কোনো অবস্থান নেই রাজনীতিতে। কি বলেন আপনি?

শামসুজ্জামান দুদু: এদেশ স্বাধীন হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে। ভোটের মাধ্যমে গণতন্ত্র আসেনি, স্বাধীনত আসেনি। স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র এসেছে একটি রক্তস্নাত মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে। এটা হলো শুরু। তেমনি যতোবারই যতো পরিবর্তন হয়েছে সেক্ষেত্রে আমরা বাঁকে বাঁকেই রক্তের দেখা পাই। বাঙালী কখনো নরম কখনো শক্ত। প্রয়োজনেই বাঙালী গর্জে উঠেছে। সে কারণে বর্তমানে কর্তত্ববাদী সরকার যদি মনে করে থাকে সে একাই শুধু পারে, বাকিরা পারে না-এটা তাদের ভুল। মনে রাখবেন, সামরিক শাসককে মোকাবিলা করে বেগম খালেদা জিয়া আপোসহীন নেত্রী। তিনি বলেছিলেন, তিনি এরশাদের (সাবেক রাষ্ট্রপতি) অধীনে নির্বাচন করবেন না। সে সময়ে হাসিনাও (বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে) বলেছিলেন যে ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে সে অংশ নেবে না। কিন্তু শেখ হাসিনা টুস করে এরশাদের অধীনে নির্বাচনে গিয়েছেন। জামায়াতও সে পথ অনুসরণ করেছিল। বিএনপি তা করেনি। বিএনপি যা বলে তা-ই করে। এটা আওয়ামী লীগও জানে, দেশবাসীও জানে। পারবে না বলে কোনো শব্দ বিএনপি’র অভিধানে নেই। 

দেশ: কিন্তু এই বিএনপি’তো ২০১৮ নিবাচনে এসরকারের অধ্যনেই নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। এখন বলছেন যাবেন না। তখন কিভাবে অংশ নিলেন?

শামসুজ্জামান দুদু: ২০১৮ সালে শেখ মুজিবের কন্যাকে আমরা তার কথা ও কাজে বিশ্বাস করতে চেয়েছিলাম। কারণ তিনি ওয়াদাবদ্ধ হয়েছিলেন। সে সময়ে তিনি তাকে একটিবারের জন্য সুযোগ দেয়ার কথাও বলেছিলেন। আমরা তার কথায় আস্থা রাখতে চেয়েছিলাম। বিশ্বাস রাখতে চেয়েছিলাম। শেখ মুজিবের কন্যা, তার ওয়াদা থেকে সরে যাবেন- এটা আমরা বিশ্বাস করতে পারিনা। সেসময়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলাম বলে আবার যেতে হবে- এমন দাসখততো আমরা লিখে দেইনি। সেকারণেই বলছি আমরা নির্বাচনে যাবোই। কিন্তু কেয়ার টেকার সরকারের অধীনে। এটাই জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য। আমরা সে দাবি বাস্তবায়নের আন্দোলনে আছি। 

দেশ: সরকার যদি রাজনৈতিক সংলাপ বা সমঝোতার কোনো প্রস্তাব দেয় তাতে কি সাড়া দেবেন?

শামসুজ্জামান দুদু: প্রস্তাব যদি আসে যে কেয়ার টেকার সরকারের। তারা কিভাবে গঠন করবে সেক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে তাদের পদত্যাগের ঘোষণা দিতে হবে। তারপরে কেয়ার টেকার সরকারের প্রস্তাবনা এলে আলোচনা হতে পারে। তার আগে সরকার যদি কেয়ার টেকার সরকারের দাবি মেনে নেয়। কেবল তখনই ওই সংলাপ বা আলোচনা প্রসঙ্গ।

শেয়ার করুন