১৯ এপ্রিল ২০১২, শুক্রবার, ৬:১১:৩৬ পূর্বাহ্ন


ক্রিকেটে পরিবর্তনের সুবাতাস
খন্দকার সালেক
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৯-০৩-২০২৩
ক্রিকেটে পরিবর্তনের সুবাতাস জয়ের আনন্দে বাংলাদেশ জাতীয় দলের কয়েকজন খেলোয়াড়


পর পর দুই টি২০ বিশ্বকাপে বিবর্ণ বাংলাদেশ ক্রিকেটে সম্প্রতি পরিবর্তনের সুবাতাস লেগেছে। প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের বিরুদ্ধে ওডিআই সিরিজ জয়, ঢাকা টেস্ট ম্যাচে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তোলা, বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড দলের বিরুদ্ধে দাপুটে জয়ের পর আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে মাইল ফলক স্থাপনকারী ওডিআই সিরিজ জয় প্রমাণ করে বাংলাদেশ ক্রিকেট রেলগাড়িটা সঠিক পথে উঠে এসেছে। বাংলাদেশ ক্রিকেটে পঞ্চপান্ডব খাত পাঁচ জন বিশ্বমান ক্রিকেটারের গোধূলি বেলায় একাধিক মানসম্পন্ন ক্রিকেটার সঠিক উইকেটে সঠিক পরিচর্যায় বিকশিত হচ্ছে সঠিক সময়ে। মাশরাফি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নেই। তামিম, মুশফিক টি২০ থেকে অবসর নিয়েছে। টেস্ট থেকে অবসর নিয়েছে রিয়াদ। টি২০ এবং ওডিআই দলেও অনিশ্চিত। একমাত্র তুখোড় চৌকশ খেলোয়াড় সাকিব এখনো আপন মহিমায় উজ্জ্বল। ২০২৩ বিশ্বকাপ ক্রিকেট বাংলাদেশের শেষ সুযোগ স্বর্ণযুগের ক্রিকেটারদের সঙ্গে তরুণ প্রতিবাদের মণিকাঞ্চন সংযোগ ঘটিয়ে বিশ্বকাপ জয়ের। 

বাংলাদেশ ক্রিকেটের এই শুভ পরিবর্তন কোনো অলৌকিক কারণে ঘটেনি। হাতুরাসিংহের হাতেও কোনো আলাদীনের প্রদীপ নেই। পরিবর্তন হয়েছে বিসিবির কিছু লাগসই দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে। প্রথম পরিবর্তন ঘরোয়া ক্রিকেটের উইকেটের চরিত্র পাল্টে দেয়া। বাংলাদেশে এখন অন্তত দুটি মাঠে (চট্টগ্রাম এবং সিলেট) পেস বান্ধব স্পোর্টিং উইকেট আছে। শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামের উইকেট অন্তত বিপিএল ২০২৩ থেকে বদলে গেছে। ভালো উইকেটে বিশ্বের অন্যতম সেরা পেস বোলিং প্রতিভা অ্যালেন ডোনাল্ডের সঠিক পরিচর্যায় বদলে গেছে বাংলাদেশের  পেস বোলিং আক্রমণ। বিশ্বমানের স্পিন আক্রমণের সঙ্গী এখন তাসকিন, এবাদত, হাসান মাহমুদ, মুস্তাফিজ সমন্বয়ে গড়া পেস  আক্রমণ। 

বিপিএল ২০২৩ বাংলাদেশের বেশ কয়েক জন ব্যাটসম্যান এবং বলার নজরকাড়া নৈপুণ্য প্রদর্শন করে। ওদের জাতীয় দলে সুযোগ দেয়া বিসিবি নির্বাচকদের দৃষ্টিভঙ্গির শুভ পরিবর্তন। হাতুরাসিংহে পুনরায় যোগদান করে সঙ্গে পেয়েছেন অ্যালেন ডোনাল্ড আর রঙ্গনা হেরাথের মতো নিজেদের কাজে দুই জন বিশ্বসেরা দুই জন সঙ্গী। কোচিং স্টাফ দলকে নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী ভয়-ডরহীন ক্রিকেট খেলায় স্বাধীনতা দিয়েছে। পাশাপাশি সাকিবকে টেস্ট এবং টি২০ দলের এবং তামিমকে ওডিআই দলের নেতৃত্ব দেয়া সঠিক সিদ্ধান্ত  হয়েছে।  

বাংলাদেশ যখন সব ফরম্যাটে ক্রমাগত পরাজয়ের বৃত্তবন্দি ছিল, তখন লিখেছি সঠিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতি পূরণ করছে না। দেশে ধীর, নিচু ঘূর্ণি উইকেট বানানোর সিদ্ধান্ত ছিল আত্মঘাতী। তাসকিন, এবাদতের মতো পেসারদের ওপর ভরসা করা হয়নি। দেশে ভালো খেলা তরুণ বা কয়েক জন মাঝ বয়সী প্রতিভাবানদের সুযোগ দেয়া হয়নি। দল নির্বাচন নানাভাবে প্রভাবিত করা হয়েছে। সাকিব, মাশরাফি বাংলাদেশ ক্রিকেটের সমস্যাগুলো সঠিক সময় তুলে ধরে কিছু শুভ পরিবর্তন হয়েছে। আর এগুলোর সম্মিলিত ফলাফল নতুন বাংলাদেশের ক্রমাগত সাফল্য। তবে বিশ্ব ক্রিকেটে দেশের বাইরে সাফল্য পেতে আরো অনেক কিছুই করতে হবে। তিন ফরম্যাটের জন্য অন্তত ৫০ জন ভালো মানের ক্রিকেটটির পরিচর্যা করে সংরক্ষিত করতে হবে।

স্মরণে রাখতে হবে সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ জাতীয় দল কোনো আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টেই এখন পর্যন্ত শিরোপা জয় করেনি। আশা করি বিচক্ষণ চন্দ্রিকা হাতুরাসিংহে সঠিক কোচিং স্টাফ এবং মেধাবী ক্রিকেটারদের নিয়ে বাংলাদেশকে অধরা শিরোপা এনে দেবে এশিয়া এবং বিশ্ব অঙ্গন থেকে।

শেয়ার করুন