২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০২:২২:৩৮ অপরাহ্ন
শিরোনাম :


জাতিসংঘের চিঠির উত্তর দেয়নি তবে দিবে
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০-০৭-২০২২
জাতিসংঘের চিঠির উত্তর  দেয়নি তবে দিবে


অফিস অব দ্য ইউনাইটেড নেশনস হাইকমিশনার ফর হিউম্যান রাইটস (ওএইচসিএইচআর) এর চাওয়া বাংলাদেশে সংঘটিত গুম-খুনসহ মানবাধিকার লঙ্ঘন সংক্রান্ত ঘটনাগুলোর তথ্য উপাত্ত জমা দেয়ার অনুরোধ করে সর্বশেষ সময় বেঁধে দিয়েছিল ১৫ জুলাই। ওই তারিখের মধ্যে তথ্যাদি দিতে ব্যর্থ হলে বাংলাদেশের বক্তব্য ছাড়াই সেটা প্রকাশ করবে বলে জানায় ওএইচসিএইচআর। কিন্তু নির্ধারিত ওই সময়ের মধ্যে কোনো তথ্য দেয়নি বাংলাদেশ। ঈদের ছুটিসহ অন্যান্য কিছু বিষয় তুলে ধরে আরো কিছুদিন সময় চাওয়া হয়েছে। সেটা অবশ্য এপ্রুভ করেছে ওএইচসিএইচআর।

তবে সে সময় কতদিন সেটা জানায়নি বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ। এ ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে জাতিসংঘের বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে কোনো উত্তর পাঠায়নি ঢাকা। ঢাকার পক্ষ থেকে ঈদের ছুটিসহ বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে আরো এক সপ্তাহ সময় চাওয়া হয়েছে জাতিসংঘের কাছে। মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র এক কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, জাতিসংঘ যে বিষয়ে তথ্য জানতে চেয়েছে, সেটা আমরা তাদের পাঠাব। আমরা সংশ্লিষ্টদের এ সংক্রান্ত তথ্য দিতে বলেছি। তথ্য পেলেই আমরা জাতিসংঘের কাছে সাবমিট করব। ঈদের বন্ধসহ নানা কারণে সব উপাত্ত পেতে আমাদের কিছুটা সময় লাগার বিষয়ে জাতিসংঘকে অবহিত করা হয়েছে।

 উল্লেখ্য, বাংলাদেশে সংঘটিত গুম-খুনসহ মানবাধিকার লঙ্ঘন সংক্রান্ত ঘটনাগুলোর তথ্য নিয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে তথ্য দিয়ে সহায়তাকারী ব্যক্তি এবং মানবাধিকার সংগঠনের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আচরণ বিষয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকারের বক্তব্য বা অবস্থান জানতে চেয়েছে জাতিসংঘ।

এ সূত্রে গত ২৭ জুন নিউইয়র্কের বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনকে লেখা অফিস অব দ্য ইউনাইটেড নেশনস হাইকমিশনার ফর হিউম্যান রাইটস (ওএইচসিএইচআর)-এর চিঠিতে বলা হয়, জাতিসংঘ মহাসচিবের রিপোর্টে ১ মে ২০২১ থেকে ৩০ এপ্রিল ২০২২ পর্যন্ত সময়কালে বিভিন্ন দেশে সংঘটিত মানবাধিকার সংশ্লিষ্ট স্পর্শকাতর ঘটনাগুলো স্থান পাবে। ওই সময়ে বাংলাদেশে সংঘটিত মানবাধিকার সংবেদনশীল কিছু ঘটনা রয়েছে, সেসম্পর্কে বাংলাদেশ সরকারের বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়, সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা ওই সব কেসের বিষয়ে আগামী ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে বাংলাদেশের বক্তব্য পাওয়া জরুরি। অন্যথায় হিউম্যান রাইটস কাউন্সিলে আগামী সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ মহাসচিব যে বাৎসরিক রিপোর্ট পেশ করতে যাচ্ছেন তাতে বাংলাদেশের ভাষ্য অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হবে না। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, মহাসচিবের রিপোর্ট তৈরির প্রক্রিয়ায় নির্ধারিত তারিখের পর কারও কোনো বক্তব্য দেওয়ার অবকাশ নেই। বরং তা দিলেও গৃহীত হবে না।

উল্লেখ্য, জাতিসংঘের এ গুম-খুনের বিষয়গুলো নিয়ে তথ্য চাওয়া ও তথ্য দেয়া খুবই একটা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। কারণ ইতিমধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র র‌্যাবসহ তার শীর্ষ সাত কর্মকর্তার উপর শ্যাংসন দিয়েছে। সে রেশ কাটতে না কাটতে এ বিষয়ে জাতিসংঘও তথ্য চেয়েছে। এখানে পর্যাপ্ত তথ্যের অভাব থাকলে বিপদের শঙ্কা রয়েছে। এ রিপোর্টের উপর অনেক দেশের বিশেষ করে ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের কিছু সিদ্ধান্তও আসতে পারে।

তবে সব কিছু যৌক্তিকভাবে উপস্থাপন করতে পারলে সে শঙ্কা আর থাকার কথা না। বাংলাদেশের তৈরি পোষাকের বড় একটা মার্কেট ইউরোপিয়ান ইউনিয়নও। ফলে দেশের আইন শৃংখলাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে তাদেরও কিছু জানতে চাওয়া থাকতেই পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শুধু শ্যাংসনই নয়। এর আগে জিএসপি সুবিধাও স্থগিত করেছে। ফলে সে ভয় এখন ইউরোপিয়ান ইউনিয়নেও (ইউ) রয়েছে। ফলে উন্নয়ন সহযোগীদের এসব মানবাধিকার ইস্যুতে ক্লিয়ার করা অত্যাবশ্যক বলেই তারা মনে করে। 

বাংলাদেশ কখনই চাইবে না, মানবাধিকার প্রসঙ্গ টেনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অনুসরণ করুক ইউ। কিন্তু অধিকাংশ ইস্যুতে বিশেষ করে বিশ্বের বড় বড় ক্রাইসিসে মার্কিনীদের নেয়া বিভিন্ন সিদ্ধান্ত অনুসরণ করে আসছে ইউ। ভয়টা সেখানেই। যেমনটা ইউক্রেন ও রাশিয়া ইস্যুতে মার্কিনীদের সঙ্গে একাকার ইউ ও তাদের মিত্ররা। ফলে ইউক্রেনকে তারা বিভিন্নভাবে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে মার্কিনীদের মতই। বাংলাদেশ অবশ্য আশা করছে এরকম কিছু ঘটবে না। বাংলাদেশ এ ব্যাপারে সবসময়ই সঠিক তথ্যাদি দিয়েই উন্নয়ন সহযোগীদের আশ্বস্থ করতে পারবে।


শেয়ার করুন