২৫ এপ্রিল ২০১২, বৃহস্পতিবার, ০৬:২৮:৫৪ অপরাহ্ন


ফখরুল বললেন
নির্বাচনের মাঠে আবারও ‘পুরনো খেলা’
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১০-০৫-২০২৩
নির্বাচনের মাঠে আবারও ‘পুরনো খেলা’ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর


নির্বাচনী মাঠ শূণ্য করতে সরকার আবারও ‘পুরনো খেলা’ শুরু করেছে বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সারাদেশে মিথ্যা মামলা ও গ্রেফতারের ঘটনা তুলে ধরে গত ৯ মে মঙ্গলবার দুপুরে গুলশানের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব এই অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, এই সরকার যারা নির্বাচিত নয়, যাদের কোনো জনগণের ম্যান্ডেট নেই তারা আবারও ২৩ ডিসেম্বর অথবা ২৪ সালের জানুয়ারি মাসের মধ্যে যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা- সেই নির্বাচন নিয়ে আবার সেই আগের খেলাতে মেতে উঠেছে। তারা যেভাবে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনকে সম্পূর্ণভাবে তাদের নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ফলাফলটাকে তাদের পক্ষে নিয়েছিলো ঠিক একই কায়দায় আজকে এখন থেকে বিরোধী দলকে সম্পূর্ণভাবে মাঠ থেকে সরে যাওয়ার জন্য তারা নির্বাচনে যেটা আমরা বলি ‘রিগিং প্রসেস দে স্টার্ট, সেটা শুরু করে দিয়েছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে আপনাদের নিশ্চিয়ই মনে আছে যে, তফসিল ঘোষণার সময় থেকে তারা শুরু করেছিলো। এবার তারা অনেক আগে থেকে শুরু করেছে যে, মামলা-মোকাদ্দমা, সন্ত্রাস-ত্রাস, বিভিন্ন আইনের মধ্য দিয়ে মিথ্যা মামলা ও গায়েবি মামলা করে আবারো নেতা-কর্মীদেরকে মাঠ থেকে পুরোপুরিভাবে সরিয়ে দেয়ার সেই কাজটি তারা শুরু করে দিয়েছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, তাদের (সরকার) লক্ষ্য হচ্ছে একটা নীলনকশার নির্বাচন করা। বিরোধী দলকে পুরো মাঠ থেকে বের করে দেয়া এবং এরপর সেই নীলনকশার নির্বাচন করে আবার ক্ষমতায় আসা-এটাই হচ্ছে মূল লক্ষ্য। সেই লক্ষ্যেই তারা কাজ করছে।”

‘এবার কি পারবে?’

জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, একেবারেই পারবে না। কারণ এবার জনগণ ইতিমধ্যে রাস্তায় নেমেছে, জনগণ আন্দোলন শুরু করেছে। ইতিমধ্যে আপনারা জানেন যে, আমাদের ১৭ জন মানুষ এই আন্দোলনে রাজপথে প্রাণ হারিয়েছে, আমাদের অসংখ্য নেতা-কর্মী গ্রেফতার হয়েছে। আন্দোলন চলমান আছে, এই আন্দোলন চলছে। এই আন্দোলন আরো বেগবান হবে, আরো তীব্র হবে। এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই সরকার বাধ্য হবে জনগণের দাবি মেনে নিতে।

‘পুরনো মামলার চূড়ান্ত রায় দিতে তালিকা’

মির্জা ফখরুল বলেন, শুধুমাত্র বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করছে তাই না। তারা যে সমস্ত মিথ্যা মামলা অতীতে তারা দিয়েছিলো সেই মিথ্যা মামলাগুলোর চূড়ান্তভাবে রায় দেয়ার জন্যে তারা খুব দ্রুততার সঙ্গে আইন মন্ত্রণালয় থেকে একটা তালিকা প্রস্তুত করে সেই তালিকা অনুযায়ী বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করে তারা সেটাকে দ্রুততার সাথে এগিয়ে নিচ্ছে। গোটা রাষ্ট্রযন্ত্রকে তারা (সরকার) এখন ব্যবহার করতে শুরু করেছে ইনক্লুডিং জুডিশিয়ারি এন্ড এডমিনিস্ট্রেশন- যে কিভাবে বিরোধী দলের সিনিয়ন নেতৃবৃন্দ, নেতৃবৃন্দ এবং যারা এই চলমান আন্দোলনে নেতৃত্বের দায়িত্ব পালন করছেন তাদেরকে কিভাবে মাঠ থেকে সরিয়ে দেয়া যায় সেজন্য তারা কাজ করছে। তিনি বলেন, সারাদেশে বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের নামে ১ লাখ, ১১ হাজার, ৫৪৩টির অধিক মামলা দায়ের করেছে এই অবৈধ সরকার। আসামীর সংখ্যা প্রায় ৩৯ লাখ ৭৮ হাজার ৪৮১ অধিক। তার মধ্যে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে ২ হাজার ৮৩০ এর অধিক মামলা রয়েছে, ঢাকাতেই আছে ১৫শ’ মামলা বিরোধী মত ও বিভিন্ন শ্রেণী পশার মুক্ত মত প্রকাশের মানুষের বিরুদ্ধে।

‘ওদের অধীনে নির্বাচনকালীন সরকার: প্রশ্নই উঠে না’

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নির্বাচনকালীন সরকারের বিএনপিকেও আমন্ত্রণ জানানোর ইঙ্গিতের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা (সাংবাদিকরা) কি বিশ্বাস করেন? ২০১৮ সালে প্রধান যিনি এই বাড়িতে (গণভবনে) আছেন শেখ হাসিনাকে বিশ্বাস করে আমরা তার সাথে সংলাপে বসেছিলাম। সেই সংলাপে যে সমস্ত কথা তিনি দিয়েছিলেন সেগুলোর একটাও তারা রক্ষা করেননি। সুতরাং ওবায়দুল কাদের সাহেবের কথায় আস্থা রাখা, বিশ্বাস করা-এটার প্রশ্নই উঠতে পারে না। এগুলোকে আমি মনে করি, এটা আরেকটি চক্রান্ত জনগণকে বিভ্রান্ত করবার। তারা বলবে যে এই তো  আমরা প্রস্তাব দিয়েছি, ওরা শুনছে না, যাচ্ছে না। তিনি বলেন, আমাদের কথা খুব পরিষ্কার- আমরা বিএনপিকে ক্ষমতায় নেয়া বা বিরোধী দলকে ক্ষমতায় নেয়া এজন্য আন্দোলন করছি না। আমাদের জনগণের যে ভোটের অধিকার কেড়ে ফেলেছে, মানুষের যেন ভোট দিতে পারে, গত দুইটি নির্বাচনে মানুষ ভোটই দিতে পারেনি এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতেও তারা ভোট দিতে পারে না। কয়েকদিন আগে চট্টগ্রামে একটা উপনির্বাচন হয়েছে নির্বাচন কমিশন বলছে যে, মাত্র ১৪% মানুষ ভোট দিয়েছে। তাহলে নির্বাচন প্রক্রিয়াটাকে কোন জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে? যে জায়গায় ১৪% লোক ভোট দিতে যায়, ভোটে মানুষের টোটাল যে একটা আগ্রহ সেটাকে হারিয়ে ফেলেছে। কারণ তারা ইচ্ছাকৃতভাবে পরিকল্পিতভাবে জনগণের সেই আগ্রহটাকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে যাতে করে তারা নিজের মতো করে ব্যালট ভোট বাক্সে ভরতে পারে।  

‘স্থানীয় সরকার নির্বাচন প্রসঙ্গে’

মির্জা ফখরুল বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন আমরা না করলেও আমাদের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার, নির্যাতন, বাড়ি-বাড়ি তল্লাশি অব্যাহত রেখেছে তারা। গাজীপুরে একট ইউনিয়ন পরিষদের  নির্বাচনেও বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা হয়েছে। একতরফা বিভিন্ন সিটি করপোরেশনে তফসিল ঘোষণার পর থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার, নির্যাতন করছে। সিলেটে বিএনপির নেতা-কর্মীদের গণহারে গ্রেফতার ও বাসায় বাসায় তল্লাশি করছে। এই বিষয়টি সিলেটের নেতৃবৃন্দ সেখানকার পুলিশ কমিশনারকে অবহিত করেছে। এই অবৈধ সরকারের অধীনের কোনো নির্বাচনই নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হতে পারে না এবং জনগণ স্বাধীনভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে না। সেজন্য এই সংসদ ভেঙে দিয়ে এই অবৈধ সরকার পদত্যাগ করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি আজ গণদাবিতে পরিণত হয়েছে। তাই জনগণের মনোভাব বুঝে বিএনপির ঘোষিত ১০ দফা মেনে সরকারকে পদত্যাগের আহ্ববান জানাচ্ছি। ‘অন্যথায় রাজপথে এই দাবির ফয়সালা হবে’ বলে হুঁশিয়ারি দেন বিএনপি মহাসচিব।

‘আমরাও কাউকে নালিশ করি না’

জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক গোয়েন লুইসের সাথে গত ৮ মে বিএনপির প্রতিনিধি দলের বৈঠক সম্পর্কে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা কাউকে কোনো নালিশ করি না, আমরা কাউকে কিছু বলতে যাই না- এটা মনে রাখতে হবে। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে এখানে বিদেশী যেসমস্ত মিশন আছে অথবা যারা কাজ করছেন তাদের সঙ্গে রুটিন আলোচনা হয়, সেই আলোচনা হয়েছে।

‘খুব শিগগিরই নতুন কর্মসূচি’

মির্জা ফখরুল বলেন, আন্দোলন একটা ওয়েবের মতো। এটা কখনো উঠে, কখনো নামে। সেটা জনগণের সব পরিপ্রেক্ষিত বুঝে নিয়ে আমাদেরকে আন্দোলনটা করতে হয়। যেমন রোজার মাস, রোজার মাসে তো স্বাভাবিকভাবে তো যারা রোজা রাখেন, সেটাতে খেয়াল রাখতে হয়। তখনও আমরা কর্মসূচি দিয়েছি এবং আপনারা দেখেছেন ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি পালন হয়েছে, আমাদের পদযাত্রা হয়েছে, আমাদের সমাবেশ হয়েছে। এখন আমরা যারা আন্দোলনের অংশীদার আছেন, শরিক দলগুলো আছেন তাদের সঙ্গে আলোচনা করে আমরা চূড়ান্ত আলোচনার পর্যায় এসছি। খুব শিগগিরই নতুন করে কর্মসূচি জানতে পারবেন।

সোমবার দুপুরে গুলশানে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কের বাসভবনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেখা করতে যান। এই সময়ে মহাসচিবের সঙ্গে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামা ওবায়েদ ছিলেন। 

শেয়ার করুন