২৬ এপ্রিল ২০১২, শুক্রবার, ০৫:২৬:৪৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


অভিবাসীর আলাদা প্রোফাইল তৈরির দাবি
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১২-০৪-২০২৩
অভিবাসীর আলাদা প্রোফাইল তৈরির দাবি


প্রতিটি অভিবাসীর আলাদা আলাদা প্রোফাইল তৈরি করতে হবে। এর পাশাপাশি রিক্রুটিং এজেন্সিদের লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হওয়ার ক্ষেত্রে সময়মতো নবায়ন করতে হবে এবং মেয়াদ শেষের দুই আড়াই মাস আগেই নবায়নের আবেদন করতে হবে। 

নতুন লাইসেন্সপ্রাপ্ত ২০০টি রিক্রুটিং এজেন্সির জন্য কর্মশালার এসব দাবি উঠে আসে। রাজধানীর প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের বিজয় একাত্তর অডিটোরিয়ামে বিএমইটি এবং রামরুর সম্মিলিত উদ্যোগে হেলিভটাস বাংলাদেশের সহায়তায় আয়োজন করা হয়। কর্মশালার প্রথম ব্যাচে ২৫টি রিক্রুটিং এজেন্সি অংশগ্রহণ করে। 

শ্রম অভিবাসীদের অধিকার রক্ষা এবং সুরক্ষা প্রদানে প্রত্যয়ী বিএমইটি এবং রামরুর যৌথ উদ্যোগে নতুন লাইসেন্সপ্রাপ্ত রিক্রুটিং এজেন্সি তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে ওয়াকবিহাল এবং তাদের নৈতিক নিয়োগ চর্চার প্রতি উদ্বুদ্ধ করাই ছিল এই কর্মশালার প্রধান উদ্দেশ্য। অনুষ্ঠানটিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. আহমেদ মুনিরুস সালেহীন এবং কর্মশালাটির সভাপতিত্ব করেন বিএমইটির মহাপরিচালক শহিদুল আলম এনডিসি। এছাড়া কর্মশালার উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারপারসন এবং রামরুর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ার ড. তাসনিম সিদ্দিকি, বায়রার সেক্রেটারি জেনারেল আলি হায়দার এবং হেলিভটাস বাংলাদেশের প্রজেক্ট পরিচালক বাসার। 

ড. তাসনিম সিদ্দিকি তার বক্তব্যে বলেন, নৈতিক নিয়োগকে নিজে অনুভব করতে হবে, আপনারা মানুষের কর্মসংস্থান করে অনেক বড় একটি কাজ করছেন, এই কাজে নিজের নৈতিকতাকে প্রতিনিয়ত প্রশ্ন করতে হবে। যাদেরকে আপনারা বিদেশে পাঠাচ্ছেন তাদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে, তাহলেই তাদের ভালো-মন্দের দায়িত্ব নেওয়ার তাগিদ আপনাদের মাঝে চলে আসবে এবং তাদের সুরক্ষার সঙ্গে সঙ্গে আপনাদের ব্যাবসারও উন্নতি ঘটবে।’

বিএমইটির মহাপরিচালক বিদেশে পাঠানো প্রতিটি অভিবাসীর আলাদা আলাদা প্রোফাইল তৈরির ওপর জোর দেন। তিনি লাইসেন্স নবায়নের ক্ষেত্রে রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক ও ব্যবস্থাপককে এই কর্মশালায় অংশগ্রহণের গুরুত্ব তুলে ধরেন। লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হওয়ার ক্ষেত্রে সময়মতো নবায়নের প্রতি উনি জোর দেন এবং মেয়াদ শেষের দুই-আড়াই মাস আগেই নবায়নের আবেদন করবার প্রতি উপদেশ দেন। তিনি বলেন রিক্রুটিং এজেন্সির লাইসেন্স বাতিল হলে তাদের অধীনে যারা বিদেশ যাবার স্বপ্ন দেখছেন তারা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হতো তেমনি হাইকোর্টে শত শত রিট হতো। নবায়নের সময় ত্রুটি এড়ানোর জন্যই এই সম্পর্কিত আইন ও নিয়ম জানা জরুরি।  রিক্রুটিং এজেন্সির অফিস পরিবর্তনের নিয়ম এবং একই সঙ্গে অভিবাসী কর্মীর পাসপোর্ট ও ব্যক্তিগত নথিপত্র আটকে না রাখা এবং আটকে রাখবার শাস্তি  সম্পর্কে কথা বলেন। দালালের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে নিয়ম অনুযায়ী নিয়োগের ক্ষেত্রে বিএমইটির ডাটাবেজে নিবন্ধিত কর্মীদের সুযোগ এবং পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে কর্মী খোঁজার বিষয়টি তুলে ধরেন। লাইসেন্সপ্রাপ্ত রিক্রুটিং এজেন্সিকে দালালের সঙ্গে সম্পর্ক না করে বিদেশে গিয়ে নিজেদের কাজ খুঁজে আনবার প্রতি জোর দেন বিএমইটির মহা পরিচালক। তিনি অভিবাসন আইন ২০১৩, এই সম্পর্কিত বিধি ও নীতিসমূহ এবং রিক্রুটিং এজেন্সির বাধ্য বাধকতা সম্পর্কে জানবার জন্য রিক্রুটিং এজেন্ট লাইসেন্স ও আচরণ বিধিমালা ২০১৯-এর ব্যাপারে জানার প্রতি আহ্বান জানান। চাকরি হারিয়েও যাওয়ার আগে ইন্স্যুরেন্সের মাধ্যমে অভিবাসী যেন কমপক্ষে তিন লাখ টাকা দেশে ফেরত আসার পর পাবেন সেই বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বিএমইটি কাজ করছে যা অভিবাসীকে অর্থনৈতিক এবং মানসিক সুরক্ষা প্রদান করবে বলে আশা করছে বিএমইটি। এছাড়া স্মার্ট কার্ডের ডিজিলাটাইজেশনের ক্ষেত্রেও ভবিষ্যৎ নানা পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন তিনি।  

আলি হায়দার, সেক্রেটারি জেনারেল, বায়রা এই কর্মশালাটিকে বিশাল কর্মযজ্ঞ বলে আখ্যায়িত করেন। তার বক্তব্যে তিনি রিক্রুটমেন্ট এজেন্সির কাজে প্রবাসী মন্ত্রণালয়ের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে প্রতিফলন ঘটানোর ক্ষেত্রে জোর দেন। বিদেশে পাঠানো প্রতিটি কর্মীকে প্রোডাক্টের বদলে মানুষ হিসেবে বিবেচনা করার জন্য আহ্বান জানান।  

কর্মশালাটির প্রধান অতিথি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. আহমেদ মুনিরুস সালেহীন তার বক্তব্যে রিক্রুটিং এজেন্সির দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। তিনি রিক্রুটিং এজেন্সির লাইসেন্স প্রাপ্তির ক্ষেত্রে দুই দিনের এই কর্মশালায় পূর্ণ অংশগ্রহণ অবধারিত হিসেবে ঘোষণা দেন। অংশগ্রহণকারীদের সবাইকে তিনি এই কর্মশালার প্রতিটি সেশনকে মনোযোগের সঙ্গে অংশগ্রহণ করবার অনুরোধ জানান। রিক্রুটিং এজেন্সির লাইসেন্স গ্রহণ, বাতিল, বিদেশে পাঠানো সমস্ত কর্মীর ভালো-মন্দ দেখার দায়িত্ব ও অন্যান্য বিষয়ে পূর্ণ জ্ঞান লাভের প্রয়োজনীয়তার ওপর তিনি আলোকপাত করেন এবং রিক্রুটিং এজেন্সির কাজকে মানবিক একটি কাজ হিসেবে দেখার আহ্বান জানান। ভবিষ্যতে রিক্রুটিং এজেন্সির লাইসেন্স প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সঠিক, যোগ্য ও নৈতিক রিক্রুটিং এজেন্সি নির্বাচনে লিখিত পরীক্ষার নেওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন।  

নতুন লাইসেন্সপ্রাপ্ত রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক এবং সিনিয়র ম্যানেজমেন্টের প্রতিনিধিরা এই কর্মশালায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন। কর্মশালাটির বিভিন্ন সেশন ডিজাইন করা হয় যেখানে বাংলাদেশে অভিবাসনের প্রেক্ষাপট থেকে শুরু করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়োগ ব্যবস্থাপনা করার ক্ষেত্রে আইন ও নীতি নিয়ে আলোচনা করা হয়। গ্রুপ ওয়ার্কের মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীদের অভিজ্ঞতা থেকেই এই কর্মশালায় নৈতিক নিয়োগ চর্চার অন্তরায়গুলোকে চিহ্নিত করা হয় এবং তা অপসারণ করবার উপায় নিয়েও আলোচনা করা হয়।

শেয়ার করুন