২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০৪:১৬:০৭ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান ‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়


মেডিকেল বোর্ডের পক্ষে অধ্যাপক এফএম সিদ্দিকী
খালেদা জিয়াকে দ্রুত বিদেশে মাল্টিডিসিপ্ল্যানারি সেন্টারে প্রেরণের সুপারিশ
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৯-১০-২০২৩
খালেদা জিয়াকে দ্রুত বিদেশে মাল্টিডিসিপ্ল্যানারি সেন্টারে প্রেরণের সুপারিশ


বাংলাদেশে খালেদা জিয়ার চিকিতসার সুযোগ প্রায় শেষ । তাকে দ্রুত বিদেশে মাল্টিডিসিপ্ল্যানারি সেন্টারে প্রেরণের সুপারিশ করেছে এভার কেয়ার হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ড। সোমবার সকালে এভারকেয়ার হাসপাতালের ব্রিফিং কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের পক্ষে অধ্যাপক এফএম সিদ্দিকী এই কথা জানান।

তিনি বলেন, ‘‘ ম্যাডামের পেটে পানি জমছে, ফুসফুসে সংক্রামণ, পেটে অল্প অল্প রক্তক্ষরন হতে থাকে। এবারে হাসপাতালে ভর্তিতে উনাকে চার ব্যাগ রক্ত দেয়া হয়েছে। বাস্তব অবস্থা অত্যন্ত জটিল ও কঠিন। আমাদের এই মেডিকেল বোর্ড এবং এর সাথে চিকিতসক সম্পৃক্ত সবাই চব্বিশ ঘন্টা উনাকে নিবিড় পর্যাবেক্ষনে রেখে এর মধ্যে চিকিতসা চালিয়ে যাচ্ছে।

‘‘ কিন্তু এমন একটা অবস্থায় আমরা উপনীতি হয়েছি যে অবস্থায় এখন পরবর্তিতে আমাদের সমস্ত চিকিতসার অপশনগুলো সবগুলো প্রায় শেষ হয়ে এসছে। আমাদের হাতে কোনো অপশন নাই। যদি আমরা দুই বছর আগে ট্রিপস প্রসিডিউরটা করতে পারতাম তাহলে আজকে উনার পেটে ও বুকে কোনো পানি জমা হতো না, উনার পেটে কোনো রক্তক্ষরন হতো না।”

এফএম সিদ্দিকী বলেন, ‘‘ চিকিতসক হিসেবে চোখের সামনে একটা প্রতিকার যোগ্য অসুস্থতা যেটা করার সম্ভব, যেটা করা যাচ্ছে না বিধায় যে একজন রোগী ক্রমশ আস্তে আস্তে আস্তে খারাপ হয়ে যাচ্ছে.. এটা আমাদের পক্ষে বিহেভ করা অনেক কঠিন। এখনো সময় শেষ হয়ে যায়নি।”

‘‘ আজকে আমি মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে সর্বসম্মতিভাবে আপনাদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানাতে চাই যে, এখনো সময় আছে যদি ‘ট্রিপস’ করা হয় এবং বিদেশে উন্নত মাল্টিডিসিপ্ল্যানারি সেন্টারে নিয়ে উনার ‘ট্রিপস’ পরবর্তি লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য ব্যবস্থা করা হয় সম্ভবত এখনো আমাদের হাতে অপশন আছে যে, আমরা হয়ত উনার অবস্থার উন্নতি ঘটাতে পারবো।”

‘ট্রিপস’ এর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘‘ এই ‘ট্রিপস’ প্রসিডিউরটার কথা বলেছি এটা ইমিডিয়েট দরকার। এই ট্রিপস বাংলাদেশে হয় না। এটা হলে উনার বুকে যে পানি আসছে এটা চলে যাবে, রক্তক্ষরন হবে না। এটা লাইভ সেভিংস প্রসিডিউর। এটি বাংলাদেশে হয় না।লিভার ট্রান্সপারেন্টও বাংলাদেশে হয় না।”

লিভার প্রতিস্থাপন তো বাংলাদেশে করা যায় এখানে আপনারা কেনো করছেন না প্রশ্ন করা হলে মেডিকেল বোর্ডের সদস্য গ্যাস্ট্রোলজির অধ্যাপক একেএম মহসিন বলেন, ‘‘ আমাদের এখানে লিভার ট্রান্সপারেন্ট হয় না। আমাদের এখানে একটা-দুইটা হয়েছে..বলতে পারেন যে, এক্সপেরিমেন্ট ব্যাসিসে। আমাদের এখানে লিভার ট্রান্সপারেন্টেশনের যে সেটআপ সেই সেটা আপ তৈরি হয় নাই, যে ম্যানপাওয়ার দরকার তা নেই, আমাদের কোনো সার্জারি নাই।”

‘‘ বেগম খালেদা জিয়ার ক্রিটিক্যাল অবস্থা। বাংলাদেশে তার ট্রিপস ও লিভার ট্রান্সপারেন্টের করার মতো সেটআপ নাই।”

মেডিকেল বোর্ডের প্রধান অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদার বলেন, ‘‘ বেগম খালেদা জিয়ার এখানে ভর্তি আছেন। এই পর্যন্ত তিনি চারবার ভর্তি হয়েছেন। তার অবস্থার জটিল।”

‘‘ ম্যাডামকে কেবিন থেকে সিসিইউতে নেয়া হয়েছে। কেবিন থেকে কখন একজন রোগীকে নেয়া হয় সিসিইউতে? যখন রোগীর অবস্থা ক্রিটিকাল থাকে যখন এভরি চান্স অব কলাপস, সার্টেনলি কলাপস। ম্যাডামের হৃদরোগ আছে, একটা রিং লাগানো আছে, দুইটা ব্লক আছে… যখন পানি বের করা হয় তখন চান্স অব কলাপস। সেই পানি বের করার জন্য উনাকে সেজন্য সিসিইউতে নিতে হয়েছে। এটা বাস্তবতা।”

বেগম খালেদা জিয়ার সর্বশেষ অবস্থা তুলে ধরে অধ্যাপক এফএম সিদ্দিকী বলেন, ‘‘ আপনারা দেখতে পারছেন আগে ভর্তি হতেন বাসায় যেতে পারতেন, এরপর ভর্তি হয়ে একটু বেশি সময় থেকেছেন আর এখন ভর্তি হয়ে তিনি বাসায় যেতে পারছেন না। এর থেকে আপনারা বুঝতে পারেন ম্যাডামের অবস্থাটা কোন পর্যায়ে।”

অধ্যাপক নুরুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘‘ উনার অনেকগুলো রোগ আছে। তার মধ্যে উনি লিভার সিরোসিসের কারণে বেশি কষ্ট পাচ্ছেন। লিভার সিরোসিসের অনেক জটিলতা আছে এর মধ্যে যেমন পেটে রক্তক্ষরণ হয়েছে এগুলো লিভার সিরোসিসের কারণে হয়েছে। উনার পেটে পানি আসা সেটাও লিভার সিরেোসিসের আরেকটি জটিলতা, বুকে পানি আসা আরেকটি মারাত্মক জটিলতা।”

‘‘ এবং পেটের পানির কারণে ইনফেকসন হওয়া সেটাও মারাত্মক জটিলতা লিভার সিরোসিসের কারণে। যেখানে মৃত্যু ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি। আল্লাহর রহমতে আমরা চিকিতসকরা আমাদের পক্ষে যতটুকু সম্ভব হয়েছে যার কারণে উনি হয়ত এই যাত্রা সেইভ হয়ে গেছেন। কিন্তু পেটের মধ্যে, বুকের মধ্যে যতক্ষন পানি থাকবে ততক্ষন মারাত্মক ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে.. একটা পর্যায়ে কোনো ঔষধে কাজ করবে না এই রকম অবস্থায় চলে যেতে পারে। সেই অবস্থায় মৃত্যু ঝুঁকি অনেক বেড়ে গেছে। এখন উনার(খালেদা জিয়া) পেটের পানি ও ‍বুকের পানি সরানোর জন্য আমরা যেটা করছি দেখেছেন আপনারা তাকে সিসিইউতে নিয়েছি কয়েকবার।”

তিনি বলেন, ‘‘ উনার এই জটিল অবস্থার মধ্যে আমরা উনাকে বাসায় নেয়ার অনুমতি দিচ্ছি না। দুইদিন পরপরই বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিচ্ছে এবং ইনফেকশন হওয়া জটিলতা হচ্ছে। রক্তে ইনফেকশন, পানির জন্য ইনফেকশন ইত্যাদি দেখা দিচ্ছে।”

‘‘ আপনারা জানতে চেয়েছেন যে, এই অবস্থায় কতদিন আমরা কি করব? জবাব হচ্ছে, আমাদের হাতে আর কোনো চিকিতসা নেই যে এই মুহুর্তে, সেটি হলো বারে বারে পানি বের করা এবং যেসব এন্টিবায়োটিক আছে সেগুলো দিয়ে চিকিতসা করা। কিন্তু আপনাদের অবগতির জন্য জানাচ্ছি এই এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করতে করতে সেগুলো রেজিটেন্স ডেভেলপ করে যাচ্ছে। অনেক উচ্চমাত্রার এন্টিবায়োটিকও উনার মধ্যে কাজ করছে না… এটি একটি বড় রকমের ঝুঁকি।  তাতে উনার জন্য চিকিতসার সুযোগ দেশে নয়, বিদেশে আছে। সেখানে উন্নত সেন্টারে নিয়ে ট্রিপস করলে উনার বুকে ও পেটে পানি জমা বন্ধ হতে পারে। এটা না করা গেলে এখানে যেকোনো মুহুর্তে উনার মৃত্য ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি।”

গত ৯ আগস্ট থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি আছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। লিভার জটিলতার কারণে অবস্থার অবণতি হলে তাকে কয়েক দফা ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিট(সিসিইউ)তে নিতে হয়েছে।

এরকম পরিস্থিতির মধ্যে খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর অনুমতি চেয়ে গত ২৫ সেপ্টেম্বর তার পরিবারের পক্ষ থেকে ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে। মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশ(খালেদা জিয়াকে দ্রুত বিদেশী পাঠানো জরুরী)সহ সেই আবেদনটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলে আবেদনটি নাকচ করে দেয় সরকার।

৭৮ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘদিন ধরে আথ্রাইটিস, হৃদরোগ, ফুসফুস, লিভার, কিডনি, ডায়াবেটিসহ প্রভৃতি রোগে ভোগছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাহী আদেশে দুর্নীতির দুই মামলায় ১৭ বছরের সাজা স্থগিত করার পর খালেদা জিয়া মুক্তি পেলেও বিদেশে তার চিকিতসা করা যাচ্ছে না। বিদেশে যাবেন না… এমন শর্তে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ ছয় মাসের জন্য মুক্তি পান বিএনপি নেত্রী। সরকার বলছে, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী এখন বিদেশে যেতে চাইলে খালেদা জিয়াকে কারাগারে গিয়ে আবেদন করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলন অধ্যাপক এসএমএ জাফর, অধ্যাপক শামসুল আরেফিন, অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, ডা. জাফর ইকবাল, ডা. আহসানুল আমিন, ডা. জিয়াউল হক, ডা. আতিকুর রহমান, ডা. আল মামুন, ডা. রফিকুল ইসলাম প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।


    

শেয়ার করুন