২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৪:৩৬:৫৫ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে দরিদ্রমুক্ত দেশ গড়ে উঠবে - আসাদুজ্জামান খান কামাল ৭০ শতাংশ মৃত্যু অসংক্রামক রোগে, বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি ‘বিদেশে দেশবিরোধী অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আইনে ব্যবস্থা নিন’ ভূল স্বীকার করে সরে দাড়ানোয় একজনের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার বাফেলোতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে দুই বাংলাদেশী নিহত ‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান


চট্টগ্রাম সমিতির সাধারণ সভায় নতুন আহ্বায়ক কমিটির শপথ
উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়, ক্ষুদ্র একটি অংশের ওয়াকআউট
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৫-১১-২০২২
উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়, ক্ষুদ্র একটি অংশের ওয়াকআউট চট্টগ্রাম সমিতির নতুন আহ্বায়ক কমিটির শপথ গ্রহণ


চট্টগ্রাম সমিতির বিরোধ দীর্ঘদিনের। এতোদিন পর্যন্ত ছিলো দুটো কমিটি। একটি কমিটি সমিতির ভবন নিজেদের দখলে রেখেছিলো। বড় অংশটি বাইরে থেকেই নিজেদের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছিলেন। আদালতে মামলাও রয়েছে। তবে মনির-সেলিমের নেতৃত্বাধীন কমিটি সব সময়ই সমঝোতার পক্ষে ছিলো এবং আইনের মধ্যে ছিলো। একসময় তারাও সমিতির ভবনে যেতে চেয়েছিলেন কিন্তু তাদের ঢুকতে দেয়া হয়নি। মূলত পুলিশই উভয়পক্ষকে ভবন থেকে বের করে দেয়। এরপর থেকে বড় অংশটি আইনের প্রতি ছিলো শ্রদ্ধাশীল। অন্যদিকে হাবিব-বিল্লাহর অংশটি ভবনটি তাদের দখলে রাখে। বড় অংশটি মেলা করতে গেলে হাবিব-বিল্লাহর গ্রুপটি আদালতের স্মরণাপন্ন হয়। কিন্তু মামলায় তারা হেরে যায়। এরপর থেকেই চট্টগ্রাম সমিতির দৃশ্যপট পরিবর্তন হতে থাকে। মনির-সেলিমের নেতৃত্বাধীন অংশের পক্ষেই থাকে চট্টগ্রামবাসী। মামলা মোকদ্দমা চললেও উভয়পক্ষের মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা করা হয়। সমঝোতায় গতি লাভ করে হাবিব-বিল্লাহর অংশের মধ্যে বিরোধের কারণে। এই বিরোধ হাতাহাতি এবং ধাক্কাধাক্কি পর্যন্ত গড়ায়।

গত ২০ নভেম্বর ব্রুকলিনে চট্টগ্রাম সমিতির ভবনে বিকেলে ডাকা হয় বিশেষ সাধারণ সভা। অন্য অর্থে বলা যায়, দীর্ঘদিনের অচলাবস্থা নিরসনে সমঝোতা। সেই সমঝোতা অবশ্য হয়েছে। তবে সাধারণ সভায় বাগবিত-া করে ক্ষুদ্র একটি অংশ ওয়ার্ক আউট করে। সাধারণ সভায় সব কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। অর্র্থাৎ দুটো কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। গঠন করা হয় ১৫ সদস্য বিশিষ্ট নতুন আহ্বায়ক কমিটি। তবে আহবায়ক কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যে কয়েকজন এখনো বাইরে রয়েছেন, তাদের জন্য আমাদের দরজা সব সময় খোলা রয়েছে। মজার বিষয় হচ্ছে যাদের এক সময় ভবনে ঢুকতে দেয়া হয়নি, অপমান করা হয়েছে- তারাই এখন ভবনে এবং নেতৃত্বে। একেই বলে নিয়তির খেল!

এ যেন এক বাঁধভাঙা জোয়ার, গত রোববার দুপুর ২টা থেকে লিটল বাংলাদেশ খ্যাত নিউইর্কে  চট্টগ্রাম অ্যাসোসিয়েশন অব নর্থ আমেরিকার  অফিস কক্ষে দুপুর ২টা থেকে থেকেই উৎসবমুখর পরিবেশে সমিতির আজীবন সদস্য, সাধারণ সদস্য, প্রাক্তন কার্যকরি কমিটির নেতৃবৃন্দসহ মুরব্বিরা নিউইয়র্ক, নিউজার্সি, ফিলাডেলফিয়া,  কানেকটিকাটসহ বিভিন্ন স্টেট থেকে সাধারণ সভায় জমায়েত হতে থাকেন। ঐক্যবদ্ধ চট্টগ্রাম সমিতির এই সভায় সবার ভেতর ছিল আনন্দের ঝিলিক।  

এখানে উল্লেখ্য, প্রায় একযুগ ধরে চট্টগ্রাম সমিতির অচলাবস্থা, হিসেবের অনিয়ম ও বিবাদের সমাধানকল্পে উভয় কমিটির সংখ্যাগুরু সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে, সংবিধানের ধারা রক্ষা করে, রেজুলেশনের মাধ্যমে ৪ নভেম্বর পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে এই সাধারণ সভার আহ্বান করা হয়।  

চট্টগ্রাম সমিতির আজীবন সদস্য ও প্রাক্তন প্রধান নির্বাচন কমিশনার সৈয়দ এম রেজার সভাপতিত্বে এবং নূরল আনোয়ারের সঞ্চালনায়  মঞ্চে উপবিষ্ট ছিলেন দুই কার্যকরি কমিটির কমিটির সভাপতি মনির আহামদ, আহসান হাবিব, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সেলিম ও মুক্তাদির বিল্লাহ। 

 সভার শুরুতে জনাব আনোয়ার  সূচনা বক্তব্যে সাধারণ সভার কার্যক্রম বর্ণনা ও  কর্মসূচি ঘোষণা করেন, যেখানে এজেন্ডা হিসেবে আসে ১) বিগত বিদ্যমান সকল কার্যকরি কমিটি ও ট্রাস্টি বোর্ড বা সকল প্রকার উপকমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা। ২) নতুন অন্তর্বর্তীকালীন কমিটি ঘোষণা। ৩) সাধারণ সদস্যদের প্রশ্ন-উত্তর পর্ব। 

 এরপর মাহাবুবুর রহমান বাদল, অন্তর্র্বর্তীকালীন কমিটির রূপরেখা ও সাংবিধানিক ধারা, উপধারা  ব্যাখ্য দিতে গিয়ে বলেন, এ কমিটিতে ১৫ জন সদস্য থাকবে। বৈষম্যহীনভাবে সকল মেম্বারদের সমান দায়িত্ব থাকবে। এই কমিটির মেয়াদ হবে ৬ মাস (বিশেষ প্রয়োজনে আরো তিন মাস বর্ধিত হতে পারে)। উক্ত ৬ মাসের মধ্যে একটি নিরেপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন, মেম্বারশিপ ও ভোটার তালিকা হাল নাগাদ করা, যাবতীয় দুর্নীতির ব্যাপারে জিরো টলারেন্সে  নিয়ে কোনো অডিট ফার্মের মাধ্যমে সকল পূর্ববর্তী কমিটির হিসাবের অডিট করানোসহ সমিতি ভবনের নিত্যনৈমিত্তিক কাজ দেখাশোনা করা।  

উপস্থিত নিরঙ্কুশ সদসদের প্রায় সকলের কণ্ঠ ভোটের ম্যাধমে অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির বাই ল’জ  ও রেজুলেশন অনুমোদন করেন।  

সাধারণ সভায় বক্তব্য রাখেন সাবেক সভাপতি যথাক্রমে মো. হানিফ, কাজী আজম, প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক আফসার উদ্দিন ও আবু তাহের, আবুল কাসেম ভূঁইয়া, মাকসুদুল হক চৌধুরী, তারিকুল হায়দার চৌধরী, আহমদ নবী, ইঞ্জিনিয়ার জাহঙ্গীর আলম প্রমুখ। 

অনুষ্ঠানের সভাপতি সৈয়দ এম রেজা ১৫ জনের অন্তর্র্বর্তীকালীন কমিটির নামের তালিকা ঘোষণা করেন। বিপুল করতালির মাধ্যমে তা অনুমোদিত হয়। এই সময়ই বাগবিতণ্ডা শুরু হয় এবং ক্ষুদ্র অংশটি ওয়াক আউট করে।

নুতন কমিটিকে শপথ বাক্য পাঠ করান চট্টগ্রাম সমিতির বয়োজ্যেষ্ঠ প্রবীণ আজীবন সদস্য, প্রাক্তন ট্রাস্টি বোর্ডের কো চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. শাহজাহান সিরিজী।  

এ অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির সদস্যরা হলেন- মনির আহমদ, মো. নুরুল আনোয়ার, জয়নাল আবেদিন, ইকবাল হোসেন ভূঁইয়া, মোক্তাদির বিল্লাহ, মাকসুদুল হক চৌধুরী, তারিকুল হায়দার চৌধুরী, আহ্সান হাবিব, আবুল কাসেম, মেহ্বুবুর রহমান বাদল, মো. সেলিম, মো. আবু তাহের, মীর কাদের রাসেল, মো. হারুন মিয়া ও মো. সুমন উদ্দীন।

সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন যথাক্রমে প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আবদুর রহিম, মো. জাফর, মফজল আহমদ, রুহুল আমিন, আবু তালেব চান্দু, জসিম উদ্দিন, মিজানুর রহমান জাহাঙ্গীর, মো. শাহজাহান, কাওসার চৌধুরী,  ইব্রাহিম দিপু, আমজাদ হোসেন ভূঁইয়া, আসিফুর রহমান, মো.  আজিম, মো. ইদ্রিস, মো. ইয়াসিন, মো. রিদওয়ান, আনোয়ার হোসেন প্রমুখ। এ ছাড়াও বিগত উভয় কার্যকরি কমিটির প্রায় সকল সদস্য  উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে প্রাক্তন সভাপতি আহসান হাবিব ও মনির আহমেদ সমিতির বৃহত্তর স্বার্থে সংকটময় মুহূর্তে কার্যকরি কমিটির সদস্যরা মেয়াদ পূরণের আগেই কমিটি বিলুপ্তিতে সম্মতি দেয়ায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। 

 বক্তার বলেন, আমরা একটি ঐক্যের বন্ধন সৃষ্টির চেষ্টা করছি যেখানে চট্টগ্রাম সমিতি চলবে ‘স্বচ্ছতা’, ‘জবাবদিহিতা’ এবং সাধারণ জনগণের মতামতের ভিত্তিতে। ঐক্যবদ্ধ চট্টগ্রাম সমিতি যেন স্লোগান-সর্বস্ব না হয়।

ওয়াক আউট অংশের বিবৃতি

৫৪৫ ম্যাকডোনাল্ড অ্যাভিনিউ ব্রুকলিনে ১১/২০/২০২২ বিকাল ৩টার সময় অনুষ্ঠিত সাধারণ সভা একটি পক্ষের বয়কট। বয়কটের কারণসমূহ-

১. পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন না নিয়ে সাধারণ সভার আহ্বান। ২. কমিটির অনুমোদন ব্যতীত আহ্বায়ক কমিটি গঠন। ৩. অতীতে যারা এখনো হিসাব দেননি তাদের নিয়ে আহ্বায়ক কমিটি গঠন। ৪. হাবিব-বিল্লাহ দ্বারা বিগত ১৮ মাসের হিসাব না নেয়া। ৫. যাদের কমিটি বিলুপ্তি করা হয়েছে তাদের দিয়ে আহ্বায়ক কমিটি গঠন। ৬. জুন মাসের যে সাধারণ সভা করার কথা সে সাধারণ সভা নভেম্বর মাসে তড়িঘড়ি করে যাদের সাহায্য নিয়ে করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে অতীতে সমিতির সমিতিকে বিভাজন করা। ৭. বর্তমান ইলেকশন কমিশনের সাথে হাবিব-বিল্লাহ কমিটির কোনো হিসাব চূড়ান্ত না হওয়া। তদুপরি অবৈধভাবে কমিটি ভেঙে দিয়ে যাঁদের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ তাদের সাথে নিয়ে আহ্বায়ক কমিটির পদ ভাগাভাগি করা। 

যারা বিবৃতি দিয়েছেন তারা হলেন-  সিনিয়র সহ-সভাপতি মোহাম্মদ ফোরকান উদ্দীন, সহ-সভাপতি মো. নাজের উদ্দীন, সহ-সভাপতি সাহাব উদ্দীন চৌধুরী লিটন, কোষাধ্যক্ষ মতিউর চৌধুরী, দফতর সম্পাদক মো. সিকদার, সদস্য খোকন কে চৌধুরী, আশরাফ আলী খান লিটন, মোর্শেদ বাবু, মো. এস কে আমিন, নূর সাফা ও মেছবাহ উদ্দীন।

শেয়ার করুন