২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০৭:০৩:৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম :


কূটনীতিকদের ব্রিফিং প্রসঙ্গে মেনন
কথা না বলার মধ্যেই অনেক কথা রয়েছে
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০১-১১-২০২৩
কথা না বলার মধ্যেই অনেক কথা রয়েছে জাসদের সভায় মঞ্চে অতিথিবৃন্দ


বিএনপির ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ ঘিরে সহিংসতা এবং পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে গত ৩০ অক্টোবর সোমবার বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বিদেশি কূটনীতিকদের ব্রিফিংয়ের আয়োজন করে। ব্রিফিংয়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স, কানাডা, ইতালি, জাপান, চীন, ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিণ কোরিয়া, তুরস্ক, স্পেন, সিঙ্গাপুর, রাশিয়া, নেদারল্যান্ডস, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, ব্রাজিল, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়নের কূটনীতিক এবং জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। অপর দিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পাশাপাশি আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন উপস্থিত ছিলেন। সূচনা বক্তব্যে আব্দুল মোমেন পুরো ঘটনা তুলে ধরেন। তবে এরপর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক তার বক্তব্যের এক ফাঁকে  জানান যে ’এ সময় কূটনীতিকেরা কোনো প্রশ্ন করেননি। ’আর এবিষয়টির প্রতি তীক্ষ্ণ নজর দিয়ে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন মন্তব্য করে বলেছেন, এই কথা না বলার মধ্যেই অনেক কথা রয়েছে। 

ঢাকায় শহীদ কর্নেল তাহের মিলনায়তনে জাসদের ৫১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে জাসদ কেন্দ্রীয় কমিটি আয়োজিত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতেই রাশেদ খান মেনন এসব কথা বলেন। 

রাশেদ খান মেনন তার বক্তব্যে যা বলেন তা হলো বিএনপি-জামায়াতের ২৮ তারিখের তাণ্ডব বিদেশী রাষ্ট্রদূতদের দেখানো হলে তারা কোন কথা বলেনি। এই কথা না বলার মধ্যেই অনেক কথা রয়েছে। তারা এ দেশে অবাধ নিরপেক্ষ সুষ্ঠু নির্বাচন সহজে করতে দিবে না।

জাসদের এই আলোচনা সভায় দলের ৫১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে জাসদের প্রতিষ্ঠাতা সিরাজুল আলম খান, কাজী আরেফ আহমেদ, মেজর এম এ জলিল, আ স ম আবদুর রব, শাহজাহান সিরাজ, নুর আলম জিকু, বিধান কৃষ্ণ সেন, ক্যাপ্টেন শাজাহান, মার্শাল মনি, মোহাম্মদ শাজাহান, রুহুল আমিন ভূইয়া, মীর্জা সুলতান রাজা, শরীফ নুরুল আম্বিয়া, আ ফ ম মাহবুবুল হকসহ প্রতিষ্ঠাতা নেতাদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন এবং তাদের মধ্যে যারা বেঁচে আছন তাদের সুস্বাস্থ্য কামনা করেন। তিনি শহীদ কর্নেল আবু তাহের বীরউত্তম, জাতীয় বীর শহীদ কাজী আরেফ আহমেদ, শহীদ এডভোকেট মোশাররফ হোসেন, শহীদ বুদ্ধিজীবী চিশতি শাহ হেলালুর রহমান, শহীদ স্বপন কুমার চৌধুরি, শহীদ ডা. শামসুল আলম খান মিলন, শহীদ সিদ্দিক মাস্টার, শহীদ নিখিল চন্দ্র সাহা, শহীদ শাজাহান সিরাজ, শহীদ আবু তাহের খান খসরুসহ অগনিত শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। তিনি জাসদের যে অগনিত নেতা-কর্মীরা বড় বড় নেতাদের দল ত্যাগ-ভিন্ন দল গঠন-ভিন্ন দলে যোগ দেওয়ার পরও কোনো রকম বিভ্রান্ত না হয়ে জাসদের পতাকা উর্ধে তুলে ধরে রেখেছেন, বুক দিয়ে জাসদকে আগলে রেখেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও শুভেচ্ছা জানান। তিনি বলেন, জাসদ নেতাদের দল না, জাসদ কর্মীদের দল। 

এসময় হাসানুল হক ইনু তার বক্তব্যে বলেন, সাংবিধানিক ধারা অব্যাহত রাখতে যথাসময়ে নির্বাচন করতে হবে। রাজাকার-বিএনপি সন্ত্রাসী চক্রের সাথে জাতীয় ঐক্যের নামে কোন মিটমাট করা যাবে না। আগুনসন্ত্রাসীদের রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করেই সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, তাদের আসল উদ্দেশ্য নিরপেক্ষ নির্বাচন না, তাদের আসল উদ্দেশ্য আগুনসন্ত্রাস-সহিংসতা-নাশকতা-অন্তর্ঘাতের পথে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি করে নির্বাচন বানচাল করা এবং অস্বাভাবিক-অসাংবিধানিক সরকার আনা। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত ও তাদের রাজনৈতিক সঙ্গীদের এ আশা বাংলাদেশের জনগণ কখনই সফল হতে দিবে না। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৪ দলীয় জোট-মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকারের নেতৃত্বে ৭১ এর চেতনায় ফেরৎ যাবার সময় জঙ্গি-জামায়াত-বিএনপি চক্র নির্বাচন বানচালের গভীর ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। জঙ্গি-জামায়াত-বিএনপি চক্র ৭১-৭৫-২১ আগস্ট ও তাহের হত্যার খুনীদের আবার রাজনীতির ময়দানে ফেরৎ আনার মহা চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে। বিএনপি-জামায়াত গণতন্ত্রের ফেরেস্তা না, রাজনীতির শয়তান-সন্ত্রাসী দানব। খুনী-দণ্ডিত-আগুন সন্ত্রাসীদের কোন ছাড় নেই। তিনি বলেন, জঙ্গিবাদী-দুর্নীতি-লুটপাটকারীদের দমন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম এর ভেতরেই বৈষম্য অবসান করে সমাজতন্ত্রের পথের সংগ্রামও এগিয়ে নিতে হবে। 

এই আলোচনা সভায় সম্মানিত অতিথি হিসাবে লিখিত বক্তব্য পাঠান বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু এমপি। এ বক্তব্য পাঠ করেন জাসদের দফতর সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন।  এতে আমির হোসেন আমু অভিযোগ করে বলেন, আপনারা জানেন গত কয়দিন ধরে রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে বিএনপি ও জামাত দেশে তান্ডব চালাচ্ছে। ২৮ অক্টোবর দেশে এই প্রথমবারের মতো প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা করেছে। বিএনপির কর্মীরা পুলিশ ফাড়িতে অগ্নি সংযোগ করেছে, হাসপাতালে হামলা করেছে, পুলিশ কনস্টেবলকে পিটিয়ে হত্যা করেছে, নির্মমভাবে পিটিয়ে আহত করেছে অসংখ্য সাংবাদিক, হরতাল ও অবরোধের নামে বাস পুড়িয়ে মানুষ হত্যায় নেমেছে। তারা দেশকে অস্থিতিশীল করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চাচ্ছে। ১৪ দল তা হতে দেবে না। আসুন সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশি বিদেশি সকল ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়ন ও শান্তির স্বপক্ষে গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা অব্যহত রাখি।

এতে আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (মা-লে) এর সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, গণতন্ত্রী পার্টির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ এর আহ্বায়ক রেজাউর রশিদ চৌধুরী খাজা। অন্যদিকে জাসদের নেতৃবৃন্দের মধ্যে বক্তব্য রাখেন দলের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এমপি, কার্যকরি সভাপতি এড. রবিউল আলম, সহ-সভাপতি মীর হোসাইন আখতার, স্থায়ী কমিটির সদস্য মোশাররফ হোসেন, সহ-সভাপতি আফরোজা হক রীনা এমপি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাদের চৌধুরী, মো: মোহসীন, ওবায়দুর রহমান চুন্নু, জাতীয় শ্রমিক জোট-বাংলাদেশ এর সভাপতি সাইফুজ্জামান বাদশা, ঢাকা মহানগর উত্তর জাসদের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা শফি উদ্দিন মোল্লা, ঢাকা মহানগর পশ্চিম জাসদের সভাপতি মোঃ নুরুন্নবী, জাতীয় যুব জোটের সভাপতি শরিফুল কবির স্বপন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি রাশিদুল হক ননী প্রমুখ।

শেয়ার করুন