২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০২:২০:৩৪ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


দেশের বর্তমান রাজনৈতিক চিত্র
আন্দোলনমুখী বিএনপির সামনে মারমুখী আওয়ামী লীগ
মাসউদুর রহমান
  • আপডেট করা হয়েছে : ০২-০৬-২০২২
আন্দোলনমুখী বিএনপির সামনে মারমুখী আওয়ামী লীগ


দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মিশন আওয়ামী লীগের এটা কারো অজানা নয়। গত দুই (২০১৪ ও ২০১৮) জাতীয় নির্বাচন কেমন হয়েছে ওই বিশ্লেষণের আর প্রয়োজন নেই। ফলে এবারের নির্বাচনে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে না হলে আমেরিকাসহ পশ্চিমা দেশসমূহে ঠাঁই নেই। কঠিন বার্তা পশ্চিমাদের। এতে নানা জটিলতায় পড়তে হবে ক্ষমতাসীনদের। দেশে গণতন্ত্র নেই তার বড় প্রমাণ দিয়ে দিয়েছে বাইডেন প্রশাসন। গণতান্ত্রিক সম্মেলনে বাংলাদেশের চেয়ে গণতন্ত্রের র‌্যাংকিংয়ে পেছনে পড়া দেশও ডাক পেয়েছে। বাংলাদেশকে গণতন্ত্র-বহির্ভূত এক কাতারে ফেলে দেয়ার যন্ত্রণা বর্তমান সরকার হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশ থেকে বহু সুবিধাবঞ্চিত ও আরো সুবিধা থেকে বাদ দেয়ার হুমকিও রয়েছে। 

সব মিলিয়ে সব দেশেরই একটা টার্গেট দিয়ে দিয়েছে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যাবস্থাকরণের। কিন্তু এ কর্মে বিএনপিকে বাগে আনা যাচ্ছেনা। বহু আন্দোলনের ডাক দেয়া থেকে শুরু করে এই ঈদের পর ওই ঈদের পর। তরুণ-যুবকদের অন্তত হাজারবার প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছেগত দুই বছর ধরে। কিন্তু বাস্তবে ছিটেফোঁটাও নেই মাঠে। বক্তৃতা-বিবৃতি ও এসি রুমের মধ্যেই যখন সব কার্যক্রম বিএনপির, তখন যেন তর আর সইছিলনা আওয়ামী লীগের। মন্ত্রীরা বহুদিন থেকে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েও বিএনপির নেতাদের চামড়ায় একটু আঁচড়ও লাগাতে পারছিলনা।

এতে অধৈর্য হওয়া আওয়ামী লীগ। তবে বিএনপি হালকা গরম হয়ে গিয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর এক বক্তব্যে। গত ১৭ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এক বক্তব্যকে কেন্দ্র করে বিএনপি যখন কিছুটা রিঅ্যাক্ট করতে গেছে, মাঠে নেমেছে। অমনিই সে সুযোগ লুফে নেয়া। বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যখন বাংলাদেশের ইতিহাসের সব আন্দোলনের সূতিকাগার, সেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই শুরু করে তারা। পদ্মাসেতু থেকে বিএনপি চেয়ারপারসনকে টুস করে ফেলে দেয়াকে হত্যার হুমকি ধরে নিয়ে উত্তাল হতে চেষ্টারত ছাত্রদলকে পিটিয়ে আন্দোলনের মাঠে নেমে গরম করার প্রাণান্ত চেষ্টা করে ছাত্রলীগ সফল মোটামুটি। 

১৭ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনেকটা রাগ-ক্ষোভ-অনুরাগের বশবর্তী হয়ে পদ্মাসেতু প্রসঙ্গে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কিছু কথা তুলে ধরে বলেছিলেন, ‘খালেদা জিয়া বলেছিল, জোড়াতালি দিয়ে পদ্মাসেতু বানাচ্ছে। সেতুতে যে স্প্যানগুলো বসাচ্ছে, এগুলো তার কাছে ছিল, জোড়াতালি দেয়া। বলেছিল, জোড়াতালি দিয়ে পদ্মাসেতু বানাচ্ছে, ওখানে চড়া যাবে না। চড়লে ভেঙে পড়বে। আবার তার সঙ্গে কিছু চামচাও। তাদেরকে এখন কী করা উচিত? পদ্মাসেতুতে নিয়ে গিয়ে ওখান থেকে টুস করে নদীতে ফেলে দেয়া উচিত।’

বিএনপি এটাতে রিঅ্যাক্ট করে বসে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক পথসভায় এর প্রতিবাদ করে ছাত্রদলের নবনির্বাচিত নেতৃবৃন্দ। তখনও কিছু না হলেও ছাত্রলীগ প্ল্যান করে দুপুরের ওই প্রোগ্রামের পর বিকেলে ছাত্রদলের ওপর হামলা চালায়। অথচ এটা এমন কিছুই ছিলনা। নরমাল একটা বিষয়, তুচ্ছ বিষয়। প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে পদ্মাসেতু থেকে ‘টুস’ করে ফেলে দেয়ার মতো বক্তব্য দিতে পারলে বিএনপির নেতাকর্মীরা রিঅ্যাক্ট করবে এটা স্বাভাবিক। তাই বলে এটাকে কেন্দ্র ছাত্রলীগের এভাবে কঠিন হামলা,নির্দয়ের মতো মার দেয়ার মতো পরিস্থিতি হয়নি। যেখানে বিএনপি আন্দোলনের নামে কোনো কর্মসূচি না দিয়ে সরকারকে শান্তিপূর্ণভাবে দেশ পরিচালনা করার সুযোগ দিয়ে আসছে বিগত একযুগ ধরে। ছাত্রদলও বিশ্ববিদ্যালয়ে মুখ বুজে চুপ করে যেখানে। 

মন্ত্রীরা উসকানি দিলেও বিএনপি নেতারা চুপ। তারা জানেন, দেশে চলমান অনেক ইস্যু নিয়ে মাঠ গরম করার রাজনীতিটা করা যায়। অনেক মন্ত্রী বলেছেনও, এমন পরিস্থিতি হলে আমরা দেখিয়ে দিতাম- এমন অনেক কিছু। বিএনপিকে উসকানি দিয়ে তারা আরো বলেছে- তাদের আন্দোলনের যোগ্যতা নেই, জনবিচ্ছিন্ন দল, বিএনপি নড়ছিলনা। তাছাড়া বিএনপি যদি এমনটা হয়েই থাকে তাহলে তো সেটাতে আওয়ামী লীগেরই লাভ। খামাখা বিএনপিকে খোঁচানো কেন? প্রধানমন্ত্রী নিজেও যখন আফসোস করে বলেছিলেন,‘দেশে শক্তিশালী বিরোধীদল নেই’। 

ফলে এটা বোঝাই যায় দেশে শক্তিশালী বিরোধীদল নেই। কিন্তু আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অমন এক শক্তিশালী বিরোধীপক্ষ দেখানো খুবই প্রয়োজন। যারা ভোটের মাঠে,রাজনীতির মাঠে,আন্দোলনের মাঠে নেমে গরম করে ফেলবে পরিস্থিতি। কিন্তু বিএনপি সেটা করছিলনা। তখন সরকারি দলের গা-জ্বালাপোড়া করা স্বাভাবিক। তাই বিএনপি সব বিরোধীদলকে মাঠে নামানোর যে মিশন সেটাতে প্রাথমিকভাবে তারা সাকসেস। কারণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সহাবস্থান ছাত্রলীগ-ছাত্রদলের সেটা গত একযুগেরও বেশি সময় ধরে। এ ক্রেডিট ছাত্রলীগের। সেখানে হঠাৎ করে তারা মারমুখী হওয়ার কথা না,যদি কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য না থাকতো। 

তাইতো একটা সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করছে বিধায় মিছিল করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে গেলে ছাত্রলীগের বেধড়ক গণপিটুনি ছাত্রদলকে? যাতে ৪৭ জনের তালিকা দিয়েছে বিএনপি, যারা ওই হামলায় আহত হয়েছেন। এমনকি পরের দিন বৃহস্পতিবারও হাইকোর্ট এড়িয়ে ঢুকেও পিটিয়ে ছাত্রদলসহ গোটাই বিএনপিকে চাঙ্গা করার মিশন সাকসেস করার মিশনে গিয়েছিল ছাত্রলীগ। যাদের পেছনে ছিল মহানগর দক্ষিণের নেতৃবৃন্দ ও ঢাকা কলেজের পদপ্রার্থীরা। 

তবে এখানে পলিটিক্স আরো আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অনেকে বলেছেন, সামনেই ছাত্রলীগের সম্মেলন। সেখানে পদ-পদবি পেতে নিজেদের প্রকাশ করারও একটা দারুণ শো ছিল এ কার্যক্রম। সব মিলিয়ে ছাত্রদলসহ গোটা বিএনপিকে একরকম গরম করে দিয়েছে ছাত্রলীগ। যার রেশ এখন গোটা দেশেই। বগুড়া,খুলনা,বরিশালসহ দেশের প্রায় সর্বত্র প্রতিবাদের ঝড় মিছিল মিটিং, বিক্ষোভে উত্তাল করার পরিস্থিতি বিএনপি ও তাদের অঙ্গসংগঠনের। এটা অনবরত চলছে।

চলবেও বেশ কিছুদিন। কারণ মিছিল-মিটিং মানেই প্রতিপক্ষের আক্রমণ। সাথে পুলিশের অ্যাকশন তো আছেই। ফলে এ মুহূর্তে বিএনপি মাঠে নেমেছে। আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনও বসে নেই। তবে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মোটামুটি দেশের অধিকাংশস্থানেই সোচ্চার বা মাঠে নেমেছে ছাত্রদল। যেমনটা সংগঠনের পক্ষ থেকে এক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বলা হয়- ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদ ঘোষিত কর্মসূচিতে মাগুরা, বগুড়া, বরগুনা, নেত্রকোনা, ফরিদপুর, শেরপুর, ফেনী, পটুয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া, হবিগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জ জেলাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পুলিশ ও ছাত্রলীগ কর্তৃক হামলা ও গ্রেফতারের ঘটনায় কেন্দ্রের ক্ষোভ ও নিন্দা প্রকাশ করা হয়েছে।

সব মিলিয়ে যদি নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে দেখা যায়, তাহলে বাংলাদেশে বিরোধী মতের রাজনীতি করার অধিকার নেই। তারা মাঠে নামতে পারছেনা- বলে বিভিন্ন দেশে যা প্রচারিত হচ্ছে, সেটা যে এ মুহূর্তে সঠিক নয়, তার একটা বড় উদহারণ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে আওয়ামী লীগ। বিশেষ করে দ্বাদশ নির্বাচন সামনে রেখে তার মানে বাংলাদেশে বিরোধীদের আন্দোলনেরও সুযোগ আছে। গণতন্ত্র বিদ্যমান একটা একটা প্রমাণও এটা। ফলে এ পরিস্থিতির বড় একটা অর্জন আওয়ামী লীগ সরকারের পকেটে। লাভ বিএনপিরও কম নয়। নামতেই যারা সাহস করছিলনা। তারা নেমে পরিস্থিতি বুঝে নিজেদের গুছিয়ে নিচ্ছেন। জাতীয় নির্বাচনের আগে এক্ষুনি তৈরি হওয়ার একটা অভিজ্ঞতা নিয়ে রাখলো। 

তবে এ পরিস্থিতিটা আরো স্থায়ী রূপ দেয়ারও একটা প্ল্যান প্রোগ্রাম হয়তো রয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। কারণপদ্মাসেতু খুলে দেয়া হবে আগামী ২৫ জুন। ওই ডেটলাইন ঘিরে এমন পরিস্থিতির অবতারণা ঘটতেই পারে। স্বাভাবিক দৃষ্টিতে পদ্মাসেতু নির্মাণ বা বাস্তবায়নের একক কৃতিত্বটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। এটা মানতেই হবে। এ উপলক্ষে দেশের এত বিশাল একটা সাফল্যকে কেন্দ্র করে একটা আনন্দমুখর পরিবেশ তৈরি হওয়ার কথা স্বাভাবিকভাবে। দলমত নির্বিশেষে সবাইকে নিয়ে এটা উদ্ধোধন করলে আরো বাহবা পেত আওয়ামী লীগ সরকার। স্বাভাবিক দৃষ্টিতে বা দূরদর্শী পলিটিক্সে এটাই হবে। কিন্তু এ সুন্দর দিনক্ষণ সামনে রেখে কেনই যেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ দেশের সবাই একটা উত্তেজনাকর অবস্থায়।

যার সূচনাটা করে দিয়েছে ক্ষমতাসীনরাই। এটা আসলে সাধারণ দৃষ্টিতে শোভনীয় নয়। পদ্মাসেতু কেন্দ্র করে অনেক দায়িত্বশীলরা যেভাবে বক্তব্য দিচ্ছে, সেটা সত্যিই উসকানিমূলক। যেমনটা মির্জা ফখরুল সাঁতরে পদ্মা পার হবেন। বিএনপির ক্ষমা চাওয়া উচিত। উন্নয়নের জোয়ার দেখে বিএনপির গা-জ্বালাপোড়া করছে। এ জাতীয় কথা দায়িত্বশীল মন্ত্রীদের মুখে কী মানায়?

 দেশের প্রায় ১৮ কোটি মানুষ বোঝেন না কিছু? অবশ্যই তারা বোঝেন। পদ্মাসেতু তৈরিতে কার অবদান। দেশের মেগাপ্রজেক্টসমূহ বাস্তবায়ন কার হাত ধরে- এসব কিছু। অতীতে কী কী হয়েছিল ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু এগুলো মুখে বলে পরিস্থিতি জটিল করে দেশে অস্থিতিশীল করার প্রয়োজন নেই যদি বিরোধীদের নিয়ে প্ল্যান প্রোগ্রাম না-ই থাকে, তবে সত্যিই যদি এমনটা থাকে, তাহলে সামনের দিনগুলোতে আরো অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে ডেটলাইন ২৫ জুনকে কেন্দ্র করে। 

জনগণের অর্থে নির্মিত এমন সেতুর সুফল সবাই ভোগ করছেন। পদ্মাসেতুর সুফলও সবাই ভোগ করবেন। এখানে দলমত নির্বিশেষে ভিন্ন কিছু ভাবনার সুযোগ নেই। জাতীয় স্বার্থে অন্তত কিছু কিছু সময়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়া বাঞ্জনীয় বলে মনে করেন দেশের সাধারণ মানুষ।কিন্তু সে দিনক্ষণ সামনে রেখে কেমন পরিস্থিতির অবতারণা?


শেয়ার করুন