২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৭:৫০:০৮ পূর্বাহ্ন


দেশকে অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম
আন্দোলনে অবশ্যই জনসমর্থন আছে
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৯-১১-২০২৩
আন্দোলনে অবশ্যই জনসমর্থন আছে অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম


বিএনপি’র শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম বলেছেন, আন্দোলনে অবশ্যই জনসমর্থন আছে। বিএনপি জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন করছে। গত ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশের পর থেকে বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু আন্দোলন থেমে থাকেনি। যে কোনো কর্মসূচিই ভালোভাবে পালিত হচ্ছে। রাজধানী ঢাকার সাথে সারাদেশের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। বিএনপির নেতাকর্মীরা কারাগারে থাকার পরেও সর্বত্র কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। এটা কারা করছে? এটা জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন এবং অংশগ্রহণের কারণেই কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। আমেরিকা থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকার সাথে সাক্ষাৎকারে তিনি একথা বলেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ। 

ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা (জাসাস)’র সাবেক উপদেষ্টা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদা দলের আহ্বায়ক এবং এর পাশাপাশি বাংলাদেশ শিক্ষক সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির দুই বার সাবেক সাধারণ সম্পাদক, দুই বার সাবেক যুগ্ম-সম্পাদক, পাঁচবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি সাবেক কার্যকর পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন। এছাড়াও তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির পাঁচ বার সিনেট সদস্য ছিলেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের সাদা দলের সাবেক আহ্বায়ক। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হল শাখার জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতিও ছিলেন। রাজনীতিতে একজন সজ্জন ব্যক্তি হিসাবে বিএনপি মহাসচিব বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মুক্তি দাবি করে পেশাজীবী মহল বিশেষ করে শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, ডাক্তারসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিদের পক্ষ থেকে সম্মিলিতভাবে যে কয়েকবার বিবৃতি দেয়া হয়েছিল। জানা গেছে, এব্যাপারে ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম ভূমিকা রেখেছিলেন। 

দেশ: বিএনপিসহ সমমনাদের আন্দোলন কোন দিকে আছে বলে মনে করেন?

ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম : বিগত কয়েকমাস যাবত বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতি, দফায় দফায় বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি, লোডশেডিংসহ বিভিন্ন জনদূর্ভোগ কমানোর দাবিতে এবং গণতন্ত্রের মাতা, বিএনপি চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে সুচিকিৎসা ও মুক্তির দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। আন্দোলনের এক পর্যায়ে তা এক দফায় রূপ নেয়। সেই আন্দোলন জনগণের আন্দোলন, সেটা বিএনপির একার আন্দোলন না। ১৮ কোটি জনতার দুমুঠো ভাত খেয়ে বেঁচে থাকার আন্দোলন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন, কথা বলার স্বাধীনতা চাওয়ার আন্দোলন, জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার আন্দোলন। আন্দোলনের দিক কখনো কোনো সমীকরণ মেনে চলে না। আন্দোলনের গতি-প্রকৃতি যে কোনো সময় পরিবর্তন হতেই পারে। তবে এই পরিবর্তনের পিছনে বিভিন্ন ফ্যাক্টর কাজ করে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ যেভাবে ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেছে তাতে তাদের দেশ ও জাতির কাছে ভোট চাওয়ার কোনো নৈতিক অবস্থান নেই। তারাও সেটা জানে যে বিএনপির মতো একটা দেশেপ্রেমিক জনপ্রিয় দলের সাথে নির্বাচন করে ক্ষমতায় যাওয়া সম্ভব নয়, আর সেজন্য তারা সব সময় ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং-এর মাধ্যমে ক্ষমতায় যাবার চেষ্টা করে। শুধু আওয়ামী লীগ একা রাজপথে বিএনপির সাথে কখনো মোকাবিলা করতে পারবে না। আর পারবে না বলেই পুলিশ, বিজিবি, সেনাবাহিনী এবং আদালত এই শক্তিগুলো কাজে লাগায়, প্রভাবিত করে তাদের পক্ষে কাজ করার জন্য। ব্যক্তিকে মোকাবেলা করা অতীব সহজ, কিন্তু রাষ্ট্র নিজে যখন সন্ত্রাসকে ক্ষমতায় যাবার বা টিকে থাকার হাতিয়ার হিসেবে নেয় তখন আন্দোলনের সমীকরণের ভিন্ন ভিন্ন চেহারা দেখা যায়। তবে বিএনপি একটা উদার গণতান্ত্রিক দল হিসেবে সঠিক পথেই আন্দোলন করছে। 

দেশ: আপনি কি মনে করেন বিএনপিসহ সমমনাদের আন্দোলনে জনসমর্থন আছে?

ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম: আন্দোলনে অবশ্যই জনসমর্থন আছে। বিএনপি জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন করছে। গত ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশের পর থেকে বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু আন্দোলন থেমে থাকেনি। যে কোনো কর্মসূচিই ভালোভাবে পালিত হচ্ছে। রাজধানী ঢাকার সাথে সারাদেশের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। বিএনপির নেতাকর্মীরা কারাগারে থাকার পরেও সর্বত্র কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। এটা কারা করছে? এটা জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন এবং অংশগ্রহণের কারনেই কর্মসূচি পালিত হচ্ছে।

দেশ: বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিয়ে বিএনপিসহ সমমনারা কি ভুল করছে বলে মনে করেন?

ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম: বিএনপি নির্বাচনে না গিয়ে কোনো ভুল করেনি। বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের দল, মুক্তিযোদ্ধার দল, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তম স্বাধীনতার মহান ঘোষক। তিনি এ দেশে বাকশালের মাধ্যমে গঠিত একদলীয় শাসন থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক, তাঁর সহধর্মিণী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সারাজীবন গণতন্ত্রের জন্য আপোষহীনভাবে লড়াই করেছেন এবং এখনো করছেন। আর এজন্যই তিনি ইতোমধ্যে গণতন্ত্রের মাতা উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন। তাঁদের সন্তান দেশনায়ক তারেক রহমান তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত কাজ করেছেন দল ও দেশের জন্য। জনগণই বিএনপির শক্তি। জনগণের মৌলিক অধিকার আদায়ের জন্যই বিএনপি আন্দোলন করছে। অন্ন, বস্ত্র, খাদ্য, বাসস্থান, খাদ্য, শিক্ষা, কথা বলার অধিকার, ভোটের অধিকার নিশ্চিত করার জন্যই বিএনপি আন্দোলন করছে। ২/৪ টা এমপি হয়ে শেখ হাসিনার ভোট ডাকাতির মহোৎসবকে বৈধতা দেওয়ার জন্য নির্বাচন করার কোনো প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। কারণ শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচনই অবাধ, নিরপেক্ষ এবং সুষ্ঠু হতে পারে না।

দেশ: বিএনপি কি বিদেশের দিকে তাকিয়ে আন্দোলন করছে?

ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম: আমি একটু আগেও বলেছি যে বিএনপির চাওয়া জনগণের মৌলিক অধিকার ফিরে পাওয়া। মত প্রকাশের স্বাধীনতার মাধ্যমে নিজের ভোট নিজের পছন্দের প্রার্থীকে দিতে পারাটা জনগণের একটা মৌলিক অধিকার। সংবিধান অনুযায়ী জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হতে হবে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে। কিন্তু ২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১৫৪ জন এমপি নির্বাচিত হয়েছেন এবং বাকি আসনগুলোতে ভোটারের পরিবর্তে কুকুরের অবস্থানের চিত্র নিশ্চয়ই আমরা ভুলে যাইনি। ২০১৮ সালে দিনের ভোট আগের রাতেই সম্পন্ন করা হয়েছে। এই দু'টি নির্বাচনেই জনগণের প্রত্যক্ষ ভোট ছাড়া জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন যা সারাবিশ্ব জানে। বিদেশীরা অর্থাৎ গণতন্ত্রকামী দেশগুলোও চায় এদেশের নির্বাচনে জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করুক যা বিএনপির চাওয়ার সাথে মিলে যাচ্ছে। বিদেশীরাও চায় জনগণের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণের মাধ্যমে তারা তাদের জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করুক। বিশেষ করে বাইডেন প্রশাসন সারা বিশ্বে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য অত্যন্ত অনমনীয় ভূমিকা পালন করছেন।

দেশ: বিএনপি যেভাবে আন্দোলন করে যাচ্ছে তা নিয়ে বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য উঠে আসছে। বলা হচ্ছে এ-ই আন্দোলনের ভবিষ্যত কি? এব্যাপারে কিছু বলেন?

ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম: বর্তমান আন্দোলন এক ফ্যাসিস্ট, এক নায়কের বিরুদ্ধে। পৃথিবীর কোনো ফ্যাসিস্ট বা একনায়কই আজীবন টিকে থাকতে পারেনি। ফ্যাসিস্ট হটাতে জনগণকে অনেক মূল্য দিতে হয় তবে আন্দোলন কখনো বৃথা যায় না। শুধু সময়ের অপেক্ষা মাত্র। ফ্যাসিস্ট হাসিনা জনগণ থেকে এখন সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। ক্ষমতার বাইরে আওয়ামী লীগ নাকি নিরাপদ নয় আর সেজন্যই যে কোনো মূল্যে ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারলে তারা নাকি বেঁচে যাবে। কিন্তু ফেরাউন, নমরূদরাও জানতো না যে ক্ষমতার স্বাদ সব সময় মধুর হয় না। শেখ হাসিনাও এখনো বুঝতে পারছেন না, তাই ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য খুন, গুম, হামলা, মামলা, গ্রেফতার করে টিকে থাকার চেষ্টা করছেন। কিন্তু জনগণের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণে আন্দোলনের মাধ্যমেই তার বিদায় হবে ইনশাআল্লাহ।

দেশ: বেশ কয়েকটি দল ও ব্যক্তি এই নির্বাচনে অংশ নেয়াকে কিভাবে দেখেন?

ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম : আমি এতে মোটেও অবাক হচ্ছি না। কারণ নির্বাচন ঘনিয়ে এলে কিছু কিছু কিংস পার্টির আবির্ভাব ঘটে। কিছু চরিত্রহীন রাজনীতিবিদ শুধুমাত্র এমপি হওয়ার জন্যই রাজনীতি করেন। জনগণের ন্যায্য দাবির দিকে না তাকিয়ে তারা তাকিয়ে থাকেন জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন কোনো দুর্বল সরকার তাদেরকে ডাকে কিনা। এমন বিশ্বাসঘাতক যুগে যুগে দেখা গেছে, এটা নতুন কিছু না। তাই এবারেও ব্যতিক্রম কিছু ঘটেনি। সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য বিএনপিকে ভাঙ্গার চেষ্টা তো কম করেনি। কিন্তু প্রতিবারই তারা ব্যর্থ হয়েছে। বিএনপি জনগণের দল, বিএনপি দেশপ্রেমিক দল। সমুদ্র থেকে এক ফোঁটা পানি সরিয়ে ফেললে যেমন সমুদ্র শুকিয়ে যায় না তেমনি বিএনপির মতো দেশের সর্ববৃহৎ ও জনপ্রিয় দল থেকে বা জোট থেকে জনবিচ্ছিন্ন ২/১টা লোভী প্রতিজ্ঞা বরখেলাপকারী চলে গেলে দলের বা জোটের কোনো ক্ষতি হয় না। বরং আগাছা পরিষ্কার হয়।

দেশ: এমন রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দেশ পত্রিকাকে সাক্ষাৎকার দিতে সময় দেয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। 

ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম : দেশ পত্রিকার প্রকাশক, সম্পাদকসহ সাংবাদিক ভাইদেরও আমার অনেক অনেক ধন্যবাদ।

শেয়ার করুন