১৯ এপ্রিল ২০১২, শুক্রবার, ০৭:২১:৫৯ অপরাহ্ন


দেশকে কামরূল আহসান
শ্রমিকের অবস্থার কোন পরিবর্তন হয়নি
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৯-০৫-২০২২
শ্রমিকের অবস্থার কোন  পরিবর্তন হয়নি কামরূল আহসান/ছবি সংগৃহীত


বর্তমান সরকার শ্রমিকদের কল্যানে নানা ধরনের কাজ করছে উল্লেখ করে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেষ হাসিনা বলেছেন, এরপরেও কিছু কিছু শ্রমিকনেতা বিদেশীদের কাছে সরকারের বিরুদ্ধে নানা ধরনের নালিশ করেন। এসব জায়গায় নালিশ না করে তার সঙ্গে কথা বলতে শ্রমিক নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান সরকার প্রধান। তার এমন বক্তব্যে দেশেন শ্রমিকদের মধ্যে ব্যাপার প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।

এবিষয়টি তুলে ধরে দেশের একজন শ্রমিক নেতা জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি কামরূল আহসানের সাথে কথা বলেন  দেশ পত্রিকার এ  বিশেষ প্রতিনিধির সাথে। 

সম্প্রতি আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে  কামরূল আহসান/ছবি সংগৃহীত 


১৯৮২ সালে শ্রমিক আন্দোলনের সাথে যুক্ত হন কামরূল আহসান। সংগঠনের নির্দেশে প্রথমে আদমজী জুটমিলে শ্রমিকদের সাথে সংগঠন গড়ার বিষয়ে যুক্ত হন তিনি। পরবর্তীতে কিছুকাল ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প শ্রমিকদের সংগঠন গড়ে তোলার কাজে,নির্মাণ শ্রমিকদের সংগঠন ও গার্মেন্ট শ্রমিকদের সংগঠিত করার কাজে নিয়োজিত এবং বর্তমানে দ্বিতীয় শ্রম আদালত ঢাকার সদস্য। এছাড়া কামরুল আহসান বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরের সদস্য। নিচে তার সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো। 

দেশ: প্রধানমন্ত্রী শেষ হাসিনা শ্রমিক নেতাদের ব্যাপারে সম্প্রতি যে অভিযোগ করেছেন সে ব্যাপারে আপনার বক্তব্য কি?

কামরূল আহসান: এই অভিযোগের ভিত্তি কি কি আমাদের জানা নেই। এই বিদেশী কারা, যারা আমাদের দেশের শ্রমিকদের ব্যাপারে এত আগ্রহী । তার কারণই বা কি? প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের মাধ্যমে আমরা এমন একটি তথ্য পেলাম;যা আমাদের বিস্মিত করেছে। আমরা স্পষ্ট বলতে চাই শ্রমিক আন্দোলনের মূল ধারার সাথে জড়িত কোন নেতা কেউই এধরনের কোন বিষয়ে জড়িত রয়েছেন বলে আমাদের জানা নেই। যদি কেউ এধরনের বিষয়ে জড়িত বলে চিহ্নিত হন তবে তা স্পষ্ট করা উচিত। তবে শ্রমিক আন্দোলনে বিশ্বব্যপী আমাদের অনেক ভাতৃপ্রতিম সংগঠন রয়েছে যাদের সাথে আমাদের মতবিনিময় হয়। মে দিবসসহ বিভিন্ন আর্ন্তজাতিক আয়োজনে সারা বিশ্বের শ্রমিকদের সাথে আমাদের মতবিনিময় হয়। 

এখানে কেউ কেনো বর্ণবাদি দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে মতবিনিময় করে না। সববাই সারা বিশ্বের নিজ নিজ দেশের পরিস্থিতি মতবিনিময়ে তুলে ধরেন। যা একটি স্বীকৃত বিষয়। তাই প্রধানমন্ত্রী যে বলেছেন বিদেশি বা সাদা চামড়া দেখলেই তাদের কাছে নালিশ করতে খুব পছন্দ করে- ঠিক না। উল্লখ্য, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন ’আমরা যে শ্রমিকদের জন্য এত কাজ করেছি তারপরও আমরা দেখি আমাদের দেশে কিছু কিছু শ্রমিক নেতারা আছেন তারা কোনো বিদেশি বা সাদা চামড়া দেখলেই তাদের কাছে নালিশ করতে খুব পছন্দ করে। আমি জানি না এ মানসিক দৈন্যতা কেন? বা এর সঙ্গে কী অন্য কোনো স্বার্থ জড়িত আছে? কোনো দেনা-পাওনার ব্যবস্থা আছে? সেটা আমি জানি না।’

দেশ: তাহলে দেশের প্রধানমন্ত্রী কেনো একথা বললেন? 

কামরূল আহসান: এই প্রশ্নের উত্তর তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীই বলতে পারেন। কারণ এসব বিষয়ে তিনি কখনো শ্রমিকদের সাথে বসেন নি।

দেশ: প্রধানমন্ত্রী কি শ্রমিকদের ভালো চান না? প্রধানমন্ত্রী কি শ্রমিকদের ভালো চান না? তিনিতো একিই সভায় মালিকেরও শ্রমিকদের স্বার্থ দেখতে পরামর্শ দিয়েছেন।

কামরূল আহসান: হয়তো তিনি ব্যাক্তিগতভাবে চান। কিন্তু রাষ্ট্রব্যবস্থা যে নীতি দ্বারা পরিচালিত তাতে ঐ নিয়মের বাইরে তার কিছু করার নেই। রাষ্ট্র ব্যবস্থায়  শাসক গোষ্ঠি হচ্ছে ধনবাদিরা। ক্ষমতার নিয়ন্ত্রক হচ্ছে আমলা, মুৎসুদ্দি ও বুর্জোয়া শ্রেণী; শোষণ ও মুনাফা করাই যেখানে নীতি, সেখানে কারো ব্যক্তিগত ভালো চাওয়ায় কিছু যায় আসেনা। এখানে বলতে চাই শ্রমিকের অধিকার কারো দয়াদাক্ষিণের বিষয় নয়। মালিকরা কখোনই শ্রমিকের স্বার্থ দেখবেনা। শ্রমিকের অধিকার আদায়ের পথ তাকেই বেছে নিতে হবে।

দেশ: আপনাদের মতে শ্রমিকদের বিরুদ্ধে সরকারের কাছে কারা বিষোদগার কুৎসা ছড়ায়?

কামরূল আহসান:  শ্রমিকরা হচ্ছে দেশের উৎপাদন ব্যবস্থার মুল শক্তি। আমদের দেশে শ্রমজীবী মানুষের সংখ্যা প্রায় ৬ কোটি ৮৫ লাখের মত যা দেশের জনসংখ্যার প্রায় এক তৃতীয়াংশ। শ্রমজীবী মানুষের জীবনমান উন্নয়ন সাংবিধানিক অধিকার। তাই সরকারেরই দায়িত্ব তাদের জীবনমান উন্নয়ন করা। সরকারর প্রধান হিসেবে হয়তো প্রধানমন্ত্রীর তাগিদ অনুভব করেন। কিন্তু বাস্তবে ‘অনেক কিছু করার যে বক্তব্য তা বাস্তবে শ্রমিকের প্রয়োজন মিটাতে পারছে না। শ্রমিকের আয় কমেছে। বাজার দরের উর্দ্ধগতির কারণে ব্যায় বেড়েছে। সংসার সামলাতে ত্রাহী অবস্থা। অন্যদিকে অতিতে অর্জিত অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। অপ্রাতিষ্ঠনিক খাতের শ্রমিকরা আইনী অধিকার বাইরে। নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চত নয়। শ্রমিকের দাবির প্রশ্ন যখন আসে তখন মালিক  ও  আমলারা এ কাজ করেন।

দেশ: দেশে কোন সেক্টরের শ্রমিকরা বেশি অবহেলিত?

কামরূল আহসান:  অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকেরা।

দেশ: শ্রমিকরা আপনার ভাষায় এতো খারাপ থাকলে ফুসে উঠছে না কেনো?

কামরূল আহসান:  সংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ শ্রমিক আন্দোলন গড়ে না উঠায়।

দেশ: এ সরকার শ্রমিকদের জন্য কি কিছুই করেনি? 

কামরূল আহসান:  বাংলাদেশের গত পঞ্চাশ বছরে শ্রমিকের অবস্থার কোন পরিবর্তন হয়নি। বৈষম্য বেড়েছে। এখনো দেশের জাতীয় ন্যূনতম মজুরি হয়নি। ট্রেডইউনিয়ন অধিকার খর্ব করা হচ্ছে। সামাজিক সুরক্ষা নেই।


শেয়ার করুন